Announcement

Collapse
No announcement yet.

নবীজির জান-মান রক্ষায় সাহাবায়ে কেরামের চেতনা ও আদর্শ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নবীজির জান-মান রক্ষায় সাহাবায়ে কেরামের চেতনা ও আদর্শ


    নবীজির জান-মান রক্ষায় সাহাবায়ে কেরামের চেতনা ও আদর্শ

    এক. কথাটা যেই বলুক বড়ই সত্য কথা বলেছে, ‘রাসূলের অপমানে কাঁদে না যদি তোর মন, মুসলিম নয় মুনাফিক তুই রাসূলের দুশমন।

    দুই: খুবই আশ্চর্য লাগছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে, কিন্তু এরপরো আমরা কোটি কোটি মুসলমান এখনো জীবিত আছি! অথচ সাহাবীদের চেতনা তো ছিল, হয় শাতিমে রাসূলকে হত্যা করবো না হয় নিজে শহিদ হবো? আজ কি আমাদের মধ্যে এমন একজনও নেই যে ফ্রান্সের নাগরিকদের হত্যা করবে, তাদের কোন দূতাবাস উড়িয়ে দিবে?
    তিন. আলহামদুলিল্লাহ মুসলিম বিশ্ব ফ্রান্সের পণ্য ব্যাপকভাবে বয়কট করা শুরু করেছে। ফ্রান্সের এতে টনক নড়েছে। তারা মুসলিম বিশ্বকে বয়কট না করার আহ্বান জানিয়েছে। ইনশাআল্লাহ বয়কট চলতে থাকলে তারা এ ঘৃণ্য অপকর্ম বন্ধ করতে বাধ্য হবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার এধরণের বয়কট কোন স্থায়ী সমাধান নয়। তারা হয়তো কিছুদিনের জন্য ক্ষান্ত হবে, কিন্তু সুযোগ পেলে আবারো এ ধরণের কাজ করবে। তাই শাতিমদের শায়েস্তা করার স্থায়ী ও টেকসই পথ হলো জিহাদের মাধ্যমে কাফেরদের শক্তি নিঃশেষ করে দেয়া এবং শাতেমদের এক এক করে হত্যা করা। এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীদের আদর্শ। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

    أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُم بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَقَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ ۗ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

    তোমরা কি সেই দলের সাথে যুদ্ধ করবে না; যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রাসুলকে বহিষ্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো, আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দান করবেন, তাদেরকে লাঞ্চিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, মুমিনদের অন্তর জুড়িয়ে দেবেন এবং তাদের মনের ক্ষোভ দূর করবেন। আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহর জ্ঞানও পরিপূর্ণ, তারঁ হিকমত পরিপূর্ণ।”। -সূরা তাওবাহ: ১৩-১৫

    চার. নিঃসন্দেহে আমাদের দিল ব্যথিত হচ্ছে, কিন্তু কতটুকু? আমরা কি এখনো হাসি-তামাশা করছি না? আজ যদি আমাদের মা-বোন-কন্যা বা স্ত্রী ধর্ষিতা হতো তাহলে কি আমাদের মুখে হাসি আসতো? রাতে ঘুম হতো? শক্তি নাই বলে কি জীবনটা পূর্বের মতোই চলতে থাকবে? এটা কি প্রমাণ করে না রাসূলের ভালোবাসা আমাদের নিকট আমাদের পরিবার-পরিজনের চেয়েও কম?

    পাঁচ. আমরা হয়তো জায়নামাযে বসে কাঁদছি? বদদোয়া করছি। এ বদদোয়াও সুন্নাহর অংশ। কিন্তু শুধু কান্না কি হাঁতে চুড়ি পরা অবলা নারীদের অভ্যাস নয়, যাদের নিকট জুলুমের প্রতিশোধ নেয়ার মতো ক্ষমতা থাকে না। তাহলে আমরা কেমন পুরুষ? আল্লাহ তায়ালা তো আমাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, রাসূলকে কষ্টপ্রদানকারীদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার। কিন্তু আমরা যেন সেই দায়িত্ব আবার আল্লাহকেই দিয়ে দিতে চাচ্ছি। আমাদের হাবভাবে মনে হয়, আমরাও যেন বনী ইসরাইলের মতোই বলতে চাচ্ছি, হে আল্লাহ আমরা যুদ্ধ করতে পারবো না, আপনার সাহায্যের ওয়াদা থাকলেও আমরা জিহাদ করবো না, জিহাদের প্রস্তুতিও নিবো না। আপনিই যা করার করুন। (নাউযুবিল্লাহ)

    ছয়. কোন হতভাগা মুসলিম এ কথাও বলছে যে, ফ্রান্সের এ কাজ তো কতিপয় উগ্রপন্থীর কর্মের প্রতিক্রিয়া। তারা শাতিমদের হত্যা করেছে বলেই তো আজ ফ্রান্স এ কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, ইতিহাসে এর অনেক নজীর রয়েছে যে, পরাজিত জাতি নিজেদের মুক্তিদাতা প্রকৃত বীরদের চিনতে ভুল করেছে। স্থায়ী লাঞ্ছনা ও যিল্লতি হতে মুক্তির উদ্দেশ্যে যখন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং এর কারণে সাময়িক কষ্টের শিকার হতে হয়েছে, তখন মুক্তির মশালধারীকেই অভিযুক্ত করা হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালামকেও বনী ইসরাইল বলেছিলো,

    قَالُوا أُوذِينَا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَأْتِيَنَا وَمِنْ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا قَالَ عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

    তারা বললো, আমাদেরকে তো আপনার আগমনের আগেও উৎপীড়ন করা হয়েছে এবং আপনার আগমনের পরেও (উৎপীড়ন করা হচ্ছে) মুসা বললো, তোমরা এই আশা রাখো, আল্লাহ তোমাদের দুশমনকে ধ্বংস করবেন এবং যমিনে তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কি রূপ কাজ করো। -সূরা আরাফ: ১২৯

    সুতরাং কুরআন হতে শিক্ষাগ্রহণ করুন। বনী ইসরাইলের মতো কথা বলবেন না।
    সাত. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যারা শারীরিক কষ্ট দিয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ষমা করেছেন, কিন্তু যারা রাসূলের ইজ্জতে আঘাত করেছে, তাকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, রাসূল তাদেরকে ক্ষমা করেননি। কেননা রাসূলকে শারীরিক কষ্ট-আঘাত করলে তা তাঁর দেহ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি-ব্যঙ্গ করা হলে সেই আঘাত আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন ইসলামের উপর আসে। যে ধর্মের নবীকে অপমান করা হয়, সেই ধর্মের আর কিই বা বাকী থাকে?

    এখন আমি এমন কিছু হাদিস ও আছার পেশ করবো যা থেকে বুঝা যাবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের প্রতি সাহাবীদের মনোভাব কি ছিল। এক্ষেত্রে তাদের চেতনা ও আদর্শ কি ছিল? আর যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তি করা তাকে শারীরিক কষ্ট দেয়ার চাইতেও বেশি গুরুতর, তাই শারীরিক কষ্ট থেকে নবীজিকে প্রতিরক্ষার হাদিস-আছারগুলো তাঁর সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।

    ১. শাতিম আবু জাহলের প্রতি মুয়ায বিন আফরা ও মুয়ায বিন আমরের মনোভাব


    عن عبد الرحمن بن عوف، عن أبيه، عن جده، قال: بينا أنا واقف في الصف يوم بدر، فنظرت عن يميني وعن شمالي، فإذا أنا بغلامين من الأنصار - حديثة أسنانهما، تمنيت أن أكون بين أضلع منهما - فغمزني أحدهما فقال: يا عم هل تعرف أبا جهل؟ قلت: نعم، ما حاجتك إليه يا ابن أخي؟ قال: أخبرت أنه يسب رسول الله صلى الله عليه وسلم، والذي نفسي بيده، لئن رأيته لا يفارق سوادي سواده حتى يموت الأعجل منا، فتعجبت لذلك، فغمزني الآخر، فقال لي مثلها، فلم أنشب أن نظرت إلى أبي جهل يجول في الناس، قلت: ألا إن هذا صاحبكما الذي سألتماني، فابتدراه بسيفيهما، فضرباه حتى قتلاه، ثم انصرفا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فأخبراه فقال: «أيكما قتله؟»، قال كل واحد منهما: أنا قتلته، فقال: «هل مسحتما سيفيكما؟»، قالا: لا، فنظر في السيفين، فقال: «كلاكما قتله، سلبه لمعاذ بن عمرو بن الجموح»، وكانا معاذ ابن عفراء، ومعاذ بن عمرو بن الجموح. صحيح البخاري: 3141 صحيح مسلم: 1752

    আবদুর রাহমান বিন আউফ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দণ্ডায়মান, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়স্ক দু’জন আনসার যুবকের মাঝখানে রয়েছি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাদের অপেক্ষা শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি, তখন তাঁদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, চাচা! আপনি কি আবূ জাহেলকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা; তাকে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গালমন্দ করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখতে পাই, তবে আমার দেহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে অবধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় মুগ্ধ হলাম। এরপর দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে অনুরূপ বলল। কিছুক্ষণ পরই আমি আবূ জাহেলকে দেখলাম, সে মানুষের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
    তখন আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের মধ্যে কে তাঁকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করল, আমি তাকে হত্যা করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের তরবারী তোমরা মুছে ফেলোনি তো? তারা বলল, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বললেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার থেকে প্রাপ্ত মালামাল মুয়ায ইবনু আমর ইবনু জামুহের জন্য। তারা দু’জন হল, মুয়ায ইবনু আ’ফরা ও মুয়ায ইবনু ‘আমর ইবনু জামূহ। -সহিহ বুখারী: ৩১৪১; সহিহ মুসলিম: ১৭৫২

    ২. শাতিম প্রিয়তমা হলেও তার নিস্তার নেই


    عن ابن عباس: أن أعمى كانت له أم ولد تشتم النبي - صلى الله عليه وسلم - وتقع فيه فينهاها، فلا تنتهي، ويزجرها فلا تنزجر، قال: فلما كانت ذات ليلة جعلت تقع في النبي - صلى الله عليه وسلم - وتشتمه، فأخذ المغول فوضعه في بطنها، واتكأ عليها فقتلها، فوقع بين رجليها طفل، فلطخت ما هناك بالدم، فلما أصبح ذكر ذلك لرسول الله - صلى الله عليه وسلم -، فجمع الناس، فقال: "أنشد الله رجلا فعل ما فعل لي عليه حق إلا قام" فقام الأعمى يتخطى الناس وهو يتزلزل حتى قعد بين يدي النبي - صلى الله عليه وسلم - فقال: يا رسول الله، أنا صاحبها، كانت تشتمك وتقع فيك، فأنهاها فلا تنتهي، وأزجرها، فلا تنزجر، ولي منها ابنان مثل اللؤلؤتين، وكانت بي رفيقة، فلما كان البارحة جعلت تشتمك وتقع فيك، فأخذت المغول فوضعته في بطنها، واتكأت عليها حتى قتلتها، فقال النبي -صلى الله عليه وسلم-: "ألا اشهدوا أن دمها هدر». رواه أبو داود (4361) وقال الحافظ ابن حجر في بلوغ المرام (ص: 454) : رواته ثقات. وقال الشوكاني في الدراري المضية شرح الدرر البهية (2/ 406) : رجال إسناده ثقات. وقال الشيخ شعيب في تعليقه على سنن أبي داود: إسناده قوي.

    ইবনে আব্বাস রাযি. সূত্রে বর্ণিত, জনৈক অন্ধ লোকের একটি ক্রীতদাসী ছিলো। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিতো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ লোকটি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতো না। সে তাকে ভৎর্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিতে শুরু করলো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে লাগলো, সে একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে রেখে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করলো। তার দু’পায়ের মাঝখানে একটি শিশু পতিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো। ভোরবেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘটনাটি অবহিত হয়ে লোকজনকে সমবেত করে বলেন, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি একাজ করেছে, তার উপর যদি আমার কোন অধিকার থেকে থাকে, তবে যেন সে উঠে দাড়ায়।
    একথা শুনে অন্ধ লোকটি মানুষের ভিড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এসে বসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই নিহত দাসীর মনিব। সে আপনাকে গালাগালি করতো এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতো। আমি নিষেধ করতাম; কিন্তু সে বিরত হতো না। আমি তাকে ধমক দিতাম; কিন্তু সে তাতেও বিরত হতো না। তার গর্ভজাত মুক্তার মতো আমার দু’টি ছেলে আছে, আর সে আমার খুব প্রিয়পাত্রী ছিলো। গত রাতে সে আপনাকে গালাগালি শুরু করে এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বললে, আমি তখন একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার পেটে স্থাপন করে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা সাক্ষী থাকো, তার রক্ত বৃথা গেলো (অর্থাৎ তাকে হত্যার কারণে কিসাস বা দিয়ত নেয়া হবে না।) -সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৬১ হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী, শাওকানী ও শায়েখ শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

    শাতেমের সাথে নিরাপত্তা চুক্তি (যিম্মা/সন্ধি/আমান) থাকলেও তাকে হত্যা করা হবে এবং এক্ষেত্রে ইমামের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই


    عن علي: أن يهودية كانت تشتم النبي صلى الله عليه وسلم وتقع فيه، فخنقها رجل حتى ماتت، فأبطل رسول الله صلى الله عليه وسلم دمها. رواه داود 4362)) وقال الإمام ابن تيمية في الصارم المسلول (ص: 61) : وهذا الحديث جيد ... وله شاهد حديث ابن عباس الذي يأتي.


    আলী রাযি. বলেন, জনৈক ইহুদী নারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কটূক্তি ও গালি-গালাজ করতো। এ কারণে কোন একব্যক্তি শ্বাসরুদ্ধ করে তাকে মেরে ফেলে। রাসূলুল্লাহ্* সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ নারীর খুনের বদলা বাতিল বলে ঘোষণা করেন। -সুনানে আবু দাউদ: ৪৩৬২; ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

    ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,

    وهذا الحديث نص في جواز قتلها لأجل شتم النبي صلى الله عليه وسلم ودليل على قتل الرجل الذمي وقتل المسلم والمسلمة إذا سبا بطريق الأولى لأن هذه المرأة كانت موادعة مهادنة لأن النبي صلى الله عليه وسلم لما قدم المدينة وادع جميع اليهود الذين كانوا بها موادعة مطلقة (الصارم المسلول على شاتم الرسول ص: 62(

    এই হাদিস প্রমাণ করে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গালি দিলে নারী হলেও তাকে হত্যা করা হবে এবং গালিদাতা যিম্মি হলেও তাকে হত্যা করা হবে। কেননা এই মহিলার সাথে মুসলমানদের সন্ধিচুক্তি ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার পর সকল ইহুদীদের সাথে সন্ধিচুক্তি করে নিয়েছিলেন। -আসসারিমুল মাসলূল: ৬২


    আঘাতে জর্জরিত ও মৃত্যুমুখ অবস্থায় সাদ বিন রবী রাযি. এর আনসারীদের প্রতি ওসিয়্যত

    عن خارجة بن زيد بن ثابت، عن أبيه، قال: بعثني رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم أحد لطلب سعد بن الربيع، وقال لي: إن رأيته فأقرئه مني السلام، وقل له: يقول لك رسول الله: كيف تجدك؟ قال: فجعلت أطوف بين القتلى فأصبته وهو في آخر رمق وبه سبعون ضربة ما بين طعنة برمح وضربة بسيف ورمية بسهم، فقلت له: يا سعد، إن رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرأ عليك السلام، ويقول لك: «خبرني كيف تجدك؟» قال: على رسول الله السلام، وعليك السلام قل له: يا رسول الله، أجدني أجد ريح الجنة، وقل لقومي الأنصار: لا عذر لكم عند الله أن يخلص إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وفيكم شفر يطرف، قال: وفاضت نفسه رحمه الله رواه الحاكم 4906 وقال «هذا حديث صحيح الإسناد، ولم يخرجاه» ووافقه الذهبي، ثم أخرج الحاكم من طريق ابن إسحاق أن عبد الله بن عبد الرحمن بن أبي صعصعة حدَّثه عن أبيه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «من ينظر لي ما فعل سعد بن الربيع؟» فذكر الحديث بنحو منه. وقال الذهبي تاريخ الإسلام (1/ 119) فهو شاهد لما رواه خارجة. ويشهد له أيضا ما رواه مالك في الموطأ (3/663) عن يحيى بن سعيد بمعناه مرسلا
    بعثني رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم أحد لطلب سعد بن الربيع، وقال لي: إن رأيته فأقرئه مني السلام، وقل له: يقول لك رسول الله: كيف تجدك؟ قال: فجعلت أطوف بين القتلى فأصبته وهو في آخر رمق وبه سبعون ضربة ما بين طعنة برمح وضربة بسيف ورمية بسهم، فقلت له: يا سعد، إن رسول الله صلى الله عليه وسلم يقرأ عليك السلام، ويقول لك: «خبرني كيف تجدك؟» قال: على رسول الله السلام، وعليك السلام قل له: يا رسول الله، أجدني أجد ريح الجنة، وقل لقومي الأنصار: لا عذر لكم عند الله أن يخلص إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم وفيكم شفر يطرف، قال: وفاضت نفسه رحمه الله

    যায়েদ বিন সাবেত রাযি. বলেন, উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সাদ ইবন রবী রাযি. কে খোঁজ করতে পাঠালেন এবং আমাকে বলে দিলেন, যদি তুমি তাকে দেখতে পাও, তবে তাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানিয়ে বলবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে জিজ্ঞেস করছেন, তোমার কি অবস্থা? আমি নিহতদের মাঝে তাকে খুঁজে পেলাম, তখন তিনি মৃত্যুমুখে ছিলেন, তার শরীরে তীর-তরবারী-বর্শার সত্তরটি আঘাত ছিল। আমি তাকে বললাম, হে সাদ! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে সালাম জানাচ্ছেন এবং জিজ্ঞেস করছেন, তোমার কি অবস্থা? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল ও তোমার প্রতি সালাম। তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলো, আমি তো জান্নাতের ঘ্রাণ পাচ্ছি। আর আমার আনসারী কওমকে বলো, যদি তোমাদের কারো জান বাকী থাকাবস্থায় কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছে যায় তবে আল্লাহ তায়ালার নিকট তোমাদের কোন উযর বাকী থাকবে না! এ কথা বলেই তিনি জীবন উৎসর্গ করলেন। -মুয়াত্তা মালেক: ৩/৬৬৩; মুস্তাদরাকে হাকেম: ৪৯০৬ ইমাম যাহাবী রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

    রাসূলের প্রতিরক্ষায় সাতজন আনসারীর জীবন উৎসর্গকরণ


    عن أنس بن مالك، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم أفرد يوم أحد في سبعة من الأنصار ورجلين من قريش، فلما رهقوه، قال: «من يردهم عنا وله الجنة؟» - أو «هو رفيقي في الجنة» -، فتقدم رجل من الأنصار، فقاتل حتى قتل، ثم رهقوه أيضا، فقال: «من يردهم عنا وله الجنة؟» أو «هو رفيقي في الجنة» -، فتقدم رجل من الأنصار، فقاتل حتى قتل، فلم يزل كذلك حتى قتل السبعة، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لصاحبيه: «ما أنصفنا أصحابنا» ورواه مسلم (1789).

    আনাস বিন মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উহুদ যুদ্ধের দিন কেবল সাতজন আনসার ও দুজন কুরাইশ (মুহাজির) সাথীসহ (শক্রবাহিনী কর্তৃক) অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং তারা তাকে বেষ্টন করে ফেলে, তখন তিনি বললেন, কে আমার পক্ষ থেকে শক্রদের প্রতিহত করবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। অথবা বললেন, সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে। তখন আনসারদের মধ্য হতে একব্যক্তি অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ শুরু করল এবং পরিশেষে শহীদ হলো। তারপর পুনরায় তারা তাঁকে বেষ্টন করে ফেললো এবং অনুরূপভাবে (লড়াই করতে করতে তাঁদের) সাতজনই শহীদ হলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীদ্বয়কে লক্ষ্য করে বললেন, আমরা সঙ্গীদের প্রতি সুবিচার করিনি। (আমরা বেঁচে রইলাম, অথচ তারা শহীদ হলেন।) –সহিহ মুসলিম: ১৭৮৯

    বিশেষ দ্রষ্টব্য: যারা তানযীমে যুক্ত আছেন তাদের জন্য আমিরদের অনুমতি ব্যতীত আক্রমন করা ঠিক হবে না। এটা সামগ্রিক বিচারে তানযীমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে যারা তানযীমে যুক্ত নেই তারা লোন উলফ হামল করতে পারেন। তাদের জন্য লোনউলফ ম্যাগাজিনে (পৃ: ১৭) ফরাসী নাগরিকদের টার্গেট হিসেবে বহু পূর্বেই সিলেকশন করে দেয়া হয়েছে আর এখন তো ফরাসিদের অপরাধের মাত্রা আরো বেড়েছে।

    চলবে ইনশাআল্লাহ
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    বিশেষ দ্রষ্টব্য: যারা তানযীমে যুক্ত আছেন তাদের জন্য আমিরদের অনুমতি ব্যতীত আক্রমন করা ঠিক হবে না। এটা সামগ্রিক বিচারে তানযীমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে যারা তানযীমে যুক্ত নেই তারা লোন উলফ হামল করতে পারেন। তাদের জন্য লোনউলফ ম্যাগাজিনে (পৃ: ১৭) ফরাসী নাগরিকদের টার্গেট হিসেবে বহু পূর্বেই সিলেকশন করে দেয়া হয়েছে আর এখন তো ফরাসিদের অপরাধের মাত্রা আরো বেড়েছে।
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

    Comment


    • #3
      আলহামদুলিল্লাহ,, এমন একটি পোস্ট আশা করছিলাম। আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন আমীন।
      ===[[[২০১৩সাল]]]=== কতিপয় নাস্তিক আমাদের প্রাণের চেয়ে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যঙ্গ করে বাংলার জমিনে বসে বসে। ২০১১ সালে আমার একজন ছাত্র ভাই যিনি নেটে একটিভ ছিলেন, একদিন আমাদেরকে বলল, ভাইয়েরা নেটে তো এমন কিছু হচ্ছে যা মেনে নেয়া যায় না, বললাম কী হচ্ছে??? ওনি আমাদেরকে নাস্তিকদের বিষয়টি খুব সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণভাবে বলে ছিলেন। ওনি কতক নাস্তিকের সাথে ডিবেইড করেছিলো, আমরা অব্যশ্য নিষেধ করি। ওনি আমাদের বলেছিলেন, [[[[ মনে হচ্ছে নাস্তিকরা গোটা দেশ দখল করে নিচ্ছে]]]] আরো বলে ছিলো লন্ডনেও অনেক নাস্তিক ইসলামের বিরুদ্ধে অনলাইন যুদ্ধে লিপ্ত। আমার কাছে বিষয়টি খুব ভয়ের ছিলো। এভাবে ২ বছর কেটে গেলো। ২০১৩ সালে আমার আরেক সাথীর সাথে নাস্তিকদের লম্ফঝম্প নিয়ে কথা হলো,ওনিও বিষয়টি ভয়ানকভাবে উল্লেখ্য করলো! তখন আরো ভয় পেয়ে গেলাম। আর আল্লাহর কাছে সাহায্যের দুয়া করতে থাকি। ব্লগে আমাদের রাসূল, আমাদের পবিত্রা মাতাগনদের নিয়ে,আমাদের রব্বে কারীমকে নিয়ে রাজিবসহ বেশ কয়েকজন নাস্তিক কুৎসা রটাতে থাকে। হেফাজত আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। আর তখনই আসলো খুশির খবর। আল্লাহর সৈনিকগন রাজিবকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরপর জাহান্নামে যাওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো। একে একে অনেক স্বঘোষিত নাস্তিক দেশ ত্যাগ করে যে যার মতো করে চলে গেলো।এখনো কিন্তু আছে, ঘাপটি মেরে আছে।
      আল্লাহ, আমাকে মুজাহিদ হিসেবে কবুল করুন আমীন।

      Comment


      • #4
        মাশা আল্লাহ, অনেক উপকারী ও তথ্যবহুল আলোচনা। বারাকাল্লাহু ফিক।
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          Originally posted by আদনানমারুফ View Post
          বিশেষ দ্রষ্টব্য: যারা তানযীমে যুক্ত আছেন তাদের জন্য আমিরদের অনুমতি ব্যতীত আক্রমন করা ঠিক হবে না। এটা সামগ্রিক বিচারে তানযীমের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে যারা তানযীমে যুক্ত নেই তারা লোন উলফ হামল করতে পারেন। তাদের জন্য লোনউলফ ম্যাগাজিনে (পৃ: ১৭) ফরাসী নাগরিকদের টার্গেট হিসেবে বহু পূর্বেই সিলেকশন করে দেয়া হয়েছে আর এখন তো ফরাসিদের অপরাধের মাত্রা আরো বেড়েছে।
          প্রিয় ভাই! আল্লাহ্ আপনার ইলমে বারাকা দান করুন, এই সময় এমন পোষ্টের খুবই দরকার ছিলো,
          আপনার কমেন্টের টিকা টা মূল পোষ্টের নিচে যোগ করলে মনে হয় ভালো হতো,,
          কারণ লেখাটা বিভিন্ন জায়গাতে শেয়ার হবে,তখন বিঃদঃ টা থাকবে না।

          Comment


          • #6
            Originally posted by Rumman Al Hind View Post
            আপনার কমেন্টের টিকা টা মূল পোষ্টের নিচে যোগ করলে মনে হয় ভালো হতো,,
            কারণ লেখাটা বিভিন্ন জায়গাতে শেয়ার হবে,তখন বিঃদঃ টা থাকবে না।
            জাযাকাল্লাক আখি, যুক্ত করে দিয়েছি, সুপরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।
            الجهاد محك الإيمان

            জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

            Comment


            • #7
              আসসালামু আলাইকুম,, সুপ্রিয় ভাইয়েরা।...........
              [এ ব্যাপারে আপনার কোন কিছু জানার থাকলে একক মশওয়ারাতে বলতে পারেন।-মডারেটর]
              বিলাসিতা জিহাদের শুত্রু,শাইখ উসামা রাহ।

              Comment


              • #8
                আলহামদুলিল্লাহ, আপনার লেখাটা সুন্দর হয়েছে প্রিয় ভাই। জাযাকাল্লাহ
                আপনার নতুন পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম...............!
                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment

                Working...
                X