আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১
==================================================
===============================
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১
==================================================
===============================
প্রথম কথা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সমস্ত প্রশংসা এবং যথাযথ তা’রীফ আল্লাহ তা’য়ালার জন্য, দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। অতঃপর, আল্লাহ তা’য়ালার অনুগ্রহে জিহাদের দিকে আহ্বানকারীগণ, বিশেষকরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জিহাদের দাওয়াতের খেদমতকারীগণকে উদ্দেশ্য করে সম্মানিত শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ বার্তা “দাওয়াতের পদ্ধতি এবং জিহাদের মানহাজের হেফাজত” “নাওয়ায়ে আফগান জিহাদ” পত্রিকায় কিস্তি আকারে ধারাবাহিকভাবে প্রচার হওয়ার পর একত্রে একটি বই আকারে দাঈ ও মুজাহিদ ভাইদের সামনে রয়েছে। মুহতারাম শাইখ উসামা মাহমুদ (মুদ্দা যিল্লুহু) এই লেখাতে নিজে বলেন,
“আমরা যেমন মুজাহিদ তেমনি দ্বীন ও জিহাদের দাঈও, একই সময়ে কিতালের দায়িত্বও আমাদের, দাওয়াতের দায়িত্বও আমাদের। যে শক্তিগুলো অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর কুফুরি নেজাম চাপিয়ে রেখেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা যেমন অস্ত্র তুলে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে গেছি, তেমনি উম্মতে মুসলিমাকে এ সকল জালেমের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণের দাওয়াতও আমরা দিচ্ছি। যুদ্ধের ময়দানকে আমরা প্রয়োজনীয় মনে করি আর দাওয়াতের ময়দানকে আবশ্যক মনে করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধের ময়দানে কঠোর ছিলেন, রক্ত প্রবাহিত করেছেন, মাথা দ্বিখণ্ডিত হওয়া এবং দ্বিখণ্ডিত করতে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র সীরাত সাক্ষ্য দেয় ‘দাওয়াতের ময়দানে তাঁর মোবারক নীতি কঠোরতা নয়, বরং নম্রতা’।”
আমরা উম্মতে ওসাতাহ তথা মধ্যপন্থী উম্মাহ, দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্রে ইনসাফের ওপর চলা এক জাতি। এই মধ্যপন্থা এবং ইনসাফের ব্যাপারে উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ এই প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন এবং এই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন যে, দাওয়াতের উদ্দেশ্য এবং উপকারী নীতি কী? এবং দাওয়াতের সেই পদ্ধতিটি কী, যা স্বয়ং জিহাদি আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর এবং যার দ্বারা উল্টো শত্রুদের ফায়দা হয়? এমনভাবে শাইখ দাওয়াতের পথ থেকে জিহাদি আন্দোলনে জোড়া লাগানো এবং যারা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের সামনে বাধা তৈরি করতে এমন কিছু বিষয় আলোচনা করেছেন, যার দ্বারা ইনশাআল্লাহ জিহাদি মানহাজের হেফাজতও হবে এবং উন্নতিও হবে।
মুহতারাম উস্তাদ প্রথম দিকে আলোচ্য বিষয়গুলোর কিছু অংশকে তুলনামূলক বিস্তারিত করেছেন। আর শেষে জিহাদের দাঈগণের খেদমতে কিছু আরজি, কয়েকটি শিরোনামের অধীনে নম্বর দিয়ে দিয়ে অতি সহজ এবং সকলের বোধগম্য করে আলোচনা করেছেন। এ বিষয়গুলো লেখাটির ফায়দা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা এই লেখাটিকে ব্যাপকভাবে জিহাদ ও দাওয়াতের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে এবং বিশেষভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা জিহাদের দাওয়াহ দিচ্ছেন তাদের জন্য উপকারী করে দেন, আমীন। দরুদ ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর। আর আমাদের শেষ প্রার্থনা, সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালকের জন্য।
সম্পাদক
নাওয়ায়ে আফগান জিহাদ
জুমাদাল উলা, ১৪৪১ হিজরি
জানুয়ারি ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
কিছু পদ্ধতি এমন যা দাওয়াতের জন্য ক্ষতিকর
এ বিষয়ে আলোচনা করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে ইন্টারনেটে জিহাদের প্রতি দাওয়াত বিষয়ক কিছু পেইজ দেখে। এসকল পেইজের পরিচালকগণ একদিকে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কারণ তারা এই চতুর্মুখী ফেতনার সময়ে জিহাদের দিকে দাওয়াতের ঝাণ্ডা উঁচু করে বাতিলের বিরোধিতা করছে। এমনকি তারা এই বাতিল শাসনব্যবস্থা দূর করার উপায় একমাত্র জিহাদকেই সাব্যস্ত করেছে। এদিক থেকে তাদের যত প্রশংসাই করা হোক না কেন তা কম হবে। কারণ, বর্তমানে যেখানে ‘যামানার ফেরাউনদের’ অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার এবং তাদের মন জয় করার জন্য বড় বড় ব্যক্তিরাও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সেখানে এই ভাইয়েরা জালেমদের প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে, নিজেদের জান হাতে নিয়ে তাদের জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছে।
সেই সাথে জিহাদের দাওয়াতের বিরোধিতাকারীদেরকে তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া খণ্ডন দেখে তাদের ইখলাসেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। এই ভাইদের ইখলাসের সামনে শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা ঝুঁকে যায়। কিন্তু তার পরিণতি দেখে অতি আফসোসের সাথে বলতে হয় - এই সম্মানিত ভাইদের কারো কারো দাওয়াতের পদ্ধতি ও খণ্ডনের তরিকা মোটেও সঠিক নয়।
আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে কাফেরদের সাথেও হেকমত, উত্তম নসিহত ও সর্বোত্তম পদ্ধতিতে আলোচনা-পর্যালোচনা ও মুনাযারা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফেরাউনের সাথে পর্যন্ত দাওয়াতের ক্ষেত্রে নরম ব্যবহারের তাকিদ করেছেন। কিন্তু এসকল পেইজে কী আম, কী খাস, ওলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার লোকদের ব্যাপারেও অত্যন্ত কঠিন এবং বিদ্রূপাত্মক কথা লেখা হয়। যে সকল মতবিরোধকারীদেরকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টার দরকার ছিলো, তাদেরকে এমনভাবে সম্বোধন করা হয় যার মাঝে কোন ধরনের সহানুভূতি ও কল্যাণকামীতার ঘ্রাণও থাকে না।
যে কোন মুসলমানকেই নিন্দা করা, বিদ্রূপ করা, অভিশাপ দেয়া হারাম। কিন্তু দেখে মনে হয় যেন এটাই এক্ষেত্রে দাওয়াতের আসল পদ্ধতি। যে ব্যক্তি একশতে একশ আমার মতকে সমর্থন করবে সে আমার আপন, আর যে সামান্য একটু বিরোধিতা করবে সেই দুশমন! তার মুসলমান হওয়ার ব্যাপারেই সন্দেহ! তাকফিরে মুআয়্যিন (তথা নির্দিষ্টভাবে কাউকে কাফের আখ্যায়িত করা) এর কাজ, যা গভীর ইলমের অধিকারী, বিচক্ষণ ও প্রজ্ঞার অধিকারী আলেমদের কাজ, এখানে তা খুব হালকাভাবে দেখা হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের ওপর খুব সহজেই কুফুরির ফতোয়া দিয়ে দেয়া হয়। এখানে বিরোধিতাকারী দ্বীনদারদের প্রতি কল্যাণকামিতা নেই, কোন হারাম কাজে সতর্ক করেই ক্ষান্ত হওয়া নেই। আছে শুধু গালমন্দ, নিন্দা, বিয়ে ভেঙে যাওয়ার হুমকি এবং তাদেরকে সরাসরি ক্ষতি করার চেষ্টা। তাদের ব্যাপারে এমন এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা মুখে আনাও অসম্ভব। নব্য মুরজিয়া, ধর্মীয় হিজড়া এমন আরও অশ্রাব্য কথাবার্তা।
হে আল্লাহ! এ কেমন দাওয়াত! এরা কীভাবে মনে করে যে, তাদের দ্বারা ইসলামের কোন খেদমত হতে পারে! দাওয়াতের এ পদ্ধতি আইএস এর আত্মপ্রকাশের পূর্বেও অনেক জোরেশোরে চালু ছিলো। যখন আইএস আত্মপ্রকাশ করল তখন জিহাদের পথে আহবানকারী এই সকল দাঈ এই ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে এর প্রভাবে প্রভাবিত ব্যক্তিরাও এই ফেতনায় লিপ্ত হয়ে গেলো। খুব কম সংখ্যক লোকই প্রকাশ্যে এই খারেজিদের দলভুক্ত হওয়া থেকে মুক্ত ছিল।
বাস্তবতা হলো দাওয়াত ও জিহাদের সফরে কলব যখন ইনসাফ থেকে সরে যায় তখন বিনয় অহংকারে, ভাষার শালীনতা অশালীনতায় রূপান্তরিত হয় এবং অন্তরের নম্রতা কাঠিন্যের রূপ ধারণ করে। তারপর সে ব্যক্তি নিজেও গোমরাহির পথে চলে এবং অন্যকেও গোমরাহির পথ প্রদর্শন করে।
আমি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলছি, এই ভাইয়েরা বিষয়টি বুঝুক আর আর না বুঝুক, ইতিহাস সাক্ষী এই ধরণের দাওয়াতের দ্বারা জিহাদের খুব কমই ফায়দা হয়েছে। কারণ এখানে দাওয়াত কম হয় আর লোকদেরকে জিহাদ থেকে বিমুখ করা হয় বেশি। এ ধরণের দাওয়াত জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরকেও অনেক সময় পথভ্রষ্ট করে দেয় এবং তাদেরকে সীমালঙ্ঘন ও তাকফিরের অন্ধকারে নিমজ্জিত করার মাধ্যম হয়।
আমি আবারও বলছি, উল্লিখিত ভাইদের ইখলাস নিয়ে কোন কথা বলছি না। কিন্তু শুধুমাত্র ইখলাস কখনো যথেষ্ট নয়। ইখলাসের সাথে সাথে আমাদের ফিকির ও আমল সুন্নত অনুযায়ী হওয়া চাই। আল্লাহর কাছে যেই ইখলাস গ্রহণযোগ্য তা হলো, আমরা হক্ক জেনে তার সামনে আমাদের মাথা ঝুঁকিয়ে দিব। আত্মসমালোচনা হবে আমাদের মূলভিত্তি। আমাদের কথা ও কাজ যেন শরিয়ত অনুযায়ী হয়, সেজন্য সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এর বিপরীতে আমরা যদি ওই সকল কাজকে সঠিক বলি, যাকে আমাদের অন্তর সঠিক বলে তাহলে তা ওই ইখলাস নয় যা আল্লাহর নিকট নাজাতের মাধ্যম; বরং এটা হবে নফসের চাহিদা পূরণ, যা সমস্ত খারাবির মূল। নফসের অনুসরণ মানুষকে গোমরাহি ও অপবিত্রতার এমন গভীরে পৌঁছে দেয়, যার পরিণতি দুনিয়াতে পশুত্ব এবং আখেরাতে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুন। আল্লাহ আমাদেরকে নফসের চাহিদা অনুযায়ী চলা থেকে হেফাযত করুন। দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিজেকে শরীয়তের অনুগামী করে রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সুতরাং জিহাদের পথে আহবানকারী দাঈগণের জন্য জরুরি হল, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দাওয়াতের পদ্ধতি বোঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। আল্লাহর মনোনীত পদ্ধতিতেই জিহাদের খেদমত হতে হবে। অতএব দাওয়াতের ওই পদ্ধতি থেকে বেঁচে থাকতে হবে যা দাওয়াতের কোন পদ্ধতিই নয় এবং যার দ্বারা জিহাদের খেদমতের চাইতে ক্ষতিই বেশি হয় ।
আরও পড়ুন
২য় পর্ব
Comment