আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ৫
==================================================
===============================
দাওয়াতের মানহাজ ও পদ্ধতি
দাঈর সফলতা অর্জনে তিনটি বিষয় ঠিক রাখা জরুরি।
১) ঐ দৃষ্টিভঙ্গি বা আকীদা-বিশ্বাস যার দিকে সে দাওয়াত দিচ্ছে।
২) দাঈর কথা ও কাজ তার দাওয়াত অনুযায়ী থাকা।
৩) দাওয়াতের পদ্ধতির মধ্যে সে কোন আখলকের সাথে দাওয়াত দিচ্ছে।
এমনিতেও এই তিনটি বিষয় পরস্পর একটি আরেকটির সাথে সম্পৃক্ত।
কারণ দৃষ্টিভঙ্গি যা হবে, ফিকির ও আমলের তরিকায়ও তারই প্রভাব পড়বে, তারই ঘ্রাণ দাওয়াতের মধ্যেও পাওয়া যাবে। কিন্তু কিছু জায়গায় এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। যেমন ফিকির ও প্রভাব ভালো কিন্তু দাওয়াতের মধ্যে কঠোরতা থাকে। সুতরাং দাঈর ফরজ তখনই আদায় হবে, যখন এই তিনটি বিষয় বাড়বাড়ি ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত হবে। এমন যদি হয় তাহলে দাঈ আল্লাহর কাছে কামিয়াব হবে, আল্লাহ যদি চান তাহলে তার দাওয়াত কার্যকর হয়ে শ্রোতাদের অন্তরে প্রবেশ করবে। এর বিপরীতে দাঈ যদি এমন তরিকা অবলম্বন করে, যা তার দাওয়াতের সাথে মিলে না, তাহলে সে নিজের ধারণায় যদিও হকের দাওয়াত দিচ্ছে, কিন্তু তরিকা সুন্নত অনুযায়ী না হওয়ার কারণে, তার শক্ত ব্যবহারের কারণে খুব কম মানুষই ফায়দা পাবে। এই ধরণের দাওয়াত মানুষের থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণ হয়। কোন দাওয়াত ব্যর্থ হওয়ার জন্য এটিই যথেষ্ট যে, দাওয়াত প্রদানকারী নিজেই দাওয়াতের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন–
يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ ﴿١﴾ قُمْ فَأَنذِرْ ﴿٢﴾ وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ ﴿٣﴾ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ ﴿٤﴾ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ ﴿٥﴾ وَلَا تَمْنُن تَسْتَكْثِرُ ﴿٦﴾ وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ ﴿٧﴾
অর্থ: হে চাদরাবৃত! (১) উঠুন, সতর্ক করুন, (২) আপন পালনকর্তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করুন, (৩) আপন পোশাক পবিত্র করুন (৪) এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন। (৫) অধিক প্রতিদানের আশায় অন্যকে কিছু দিবেন না। (৬) এবং আপনার পালনকর্তার উদ্দেশে সবর করুন। (৭) [সুরা মুদ্দাসসির ৭৪:১-৭]
মুমিনের জন্য নিজের কথাবার্তার সংশোধন খুব জরুরি। কারণ কথাবার্তার সংশোধনের মাধ্যমেই অন্তর ও আমলের সংশোধন হয়। এজন্য আল্লাহ তা’আলা নিজের বান্দাদেরকে খুব সুন্দর ভাষায় কথা বলার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَقُل لِّعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوًّا مُّبِينًا ﴿٥٣﴾
অর্থ: আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন এমন কথা বলে যা অতি উত্তম। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। (৫৩) [সুরা আল-ইসরা ১৭:৫৩]
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে কথা বলার ক্ষেত্রে ইনসাফ ও ভদ্রতা বজায় রাখতে বলেছেন, কথায় যাতে জুলুম না থাকে।
আল্লাহ মুমিনদেরকে আদেশ করেছেন –
وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُواْ
অর্থ: যখন তোমরা কথা বল ইনসাফের সাথে বল। [সুরা আন-আনআম ৬:১৫২]
তাই আমরা যখন কথা বলবো তখন ইনসাফের সাথে বলবো। এই দ্বীনের দাঈর গুণ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে যে, সে এই ঘোষণা দেয়; কেউ এই দ্বীনের চাহিদা পূরণ করুক বা না করুক আমিই সবার আগে পূরণ করবো।
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
অর্থ: আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি এরই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। [সুরা আন-আনআম ৬:১৬২]
সুতরাং দাঈ সর্বদা চেষ্টা করবে নিজের ফিকির ও মানহাজও যেন সুন্নত অনুযায়ী হয়। কর্ম ও দাওয়াতের পদ্ধতিও যেন সুন্নত অনুযায়ী হয়। যেই হকের দাওয়াত দিচ্ছে তার কাজের মধ্যে তার নমুনা যেন পাওয়া যায়। আর তার দাওয়াতের মধ্যেও যেন সর্বদা তার ঘ্রাণ পাওয়া যায়। ফিকির ও আমলের মানহাজ এবং কর্ম ও দাওয়াতের পদ্ধতি যদি হক ও এক হয় তখন দাওয়াতে সফলতা আসবে ইনশা আল্লাহ।
Comment