দাওয়াতের পদ্ধতি :
আল্লাহ স্বীয় রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন,ادْعُ إِلى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ- ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহল ১৬/১২৫)।
এ আয়াতে আল্লাহর পথে ডাকার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত মূলনীতি হল তিনটি (ক) হিকমত (খ) সদুপদেশ ও (গ) উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক। হিকমতের মর্ম হল সত্য-সঠিক বিষয়বস্তুকে অকাট্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে স্থান-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় রেখে উপস্থাপন করা। সদুপদেশের অর্থ যাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তার ইজ্জত-সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে তার কল্যাণ কামনার্থে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ও নম্রতার সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা। আর উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক করার অর্থ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিপক্ষকে তা বোঝানোর নিয়তে সত্যনিষ্ঠার সাথে ভদ্রোচিত ভাষায় যথোপযুক্ত যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করা, প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে বা জিদ সৃষ্টি হতে পারে এ জাতীয় আচরণ পরিহার করা এবং সর্বাবস্থায় মাত্রাবোধ ও ন্যায়-ইনসাফের পরিচয় দেওয়া।
অন্যত্রে বাতিলের সাথে আপোষহীনতা এবং জামা‘আতবদ্ধ দাওয়াতের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, قُلْ هذِهِ سَبِيلِي أَدْعُوا إِلَى اللهِ عَلى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحانَ اللهِ وَما أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- ‘তুমি বল এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)।
একই মর্মে তিনি আরো বলেন,وَلا يَصُدُّنَّكَ عَنْ آياتِ اللهِ بَعْدَ إِذْ أُنْزِلَتْ إِلَيْكَ وَادْعُ إِلى رَبِّكَ وَلا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘আর তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত সমূহ অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে সেগুলি থেকে ফিরিয়ে না নেয়। তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর এবং অবশ্যই তুমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৭)।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে স্বীয় কওমের নিকটে সদুপদেশের মাধ্যমে, হিকমত বা দলীল-প্রমাণ সহকারে এবং আপোষহীনভাবে দাওয়াত দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। আর বিতর্ক হ’লে তা উত্তম পন্থায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে নম্র আচরণের কথা উল্লেখ করে অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ، ‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
আলোচ্য আয়াতে পাঁচটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। (১) পরস্পরে কোমল হৃদয় হওয়া (২) পরস্পরকে ক্ষমা করা (৩) আপোষে পরামর্শ করা (৪) সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তা বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ হওয়া এবং (৫) আল্লাহর উপর ভরসা করা। আল্লাহর পথের দাঈদের জন্য উক্ত গুণগুলো অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, দাওয়াত গ্রহণে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। যা অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَيْطِرٍ তুমি তাদের উপরে দারোগা নও (গাশিয়াহ ৮৮/২২)।
তবে কোন মুনকার বা অন্যায় কর্ম হতে দেখলে ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيْمَانِ- ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় হ’তে দেখলে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। তাতে সক্ষম না হ’লে যবান দিয়ে প্রতিবাদ করবে। তাতেও সক্ষম না হ’লে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান’।[মুসলিম হা/৭৮; আলবানী মিশকাত ৩/১৪ পৃ; হা/৫১৩৭ ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ।]
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়: অন্যায় অনৈতিক, অপকর্ম,মুনকার ইত্যাদি বিষয় প্রতিরোধের আচরণ আর দাওয়াতের আচরণ কখনো এক নয়, দুই টার আচরণে ভিন্নতা রয়েছে।
আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীর যেসব গুণাবলী থাকা আবশ্যক :
১/সত্যবাদী হওয়া : আল্লাহর পথের দাঈকে অবশ্যই সত্যবাদী হ’তে হবে। দাঈর মধ্যে যদি মিথ্যার লেশমাত্র পাওয়া যায় তাহ’লে তার দাওয়াত ফলপ্রসু হবে না। কুরআন ও হাদীছে সত্যবাদিতার বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে এবং মুমিনদেরকে সত্যবাদীদের সাথী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)।
২/ধৈর্যশীল হওয়া : ধৈর্য মহৎ গুণ। আল্লাহর পথের দাঈদের এই মহৎ গুণে গুণান্বিত হ’তে হবে। নচেৎ দাওয়াত দানে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। কেননা আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দিতে গেলে অনেক বিপদ আসতে পারে, সেক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবিলা করতে হবে। আল্লাহ বলেন,وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ، الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ- ‘সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যাদের উপরে কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা ফিরে যাব’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-১৫৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘নিশ্চয়ই যারা ধৈর্যশীল, তারা তাদের পুরস্কার পায় অগণিত’ (যুমার ৩৯/১০)।
৩/কোমল স্বভাবের অধিকারী হওয়া : নম্রতা-ভদ্রতা ও কোমলতা আদর্শ মানুষের গুণ। দ্বীনের দাঈর মধ্যে অবশ্যই এ গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়। এ গুণের অধিকারী দাঈগণ দাওয়াতী কাজে সহজে মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কোমলতা অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেরাঊনের সাথে কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা মূসা ও হারূণ (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে বলেন,
اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى، فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى-
‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের নিকটে যাও, নিশ্চয়ই সে সীমালংঘণ করেছে। অতঃপর তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বল। সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীতি অবলম্বন করবে’ (ত্ব-হা ৩৯/৪৩-৪৪)।
রাসূল (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলেন,
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ-
‘আর আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমল হৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
৪/দ্বীনী কাজে একনিষ্ঠ হওয়া : দ্বীনি কাজে একনিষ্ঠতা ব্যতীত কখনও দাওয়াতী কাজে সফলতা আসবে না। আর ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করা। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ- ‘বল, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি’ (যুমার ৩৯/১১)।
৫//কথায় ও কাজে মিল থাকা : আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُولُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ، كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা কর না? তোমরা যা কর না তা বলা
আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক’ (ছফ ৬১/২-৩)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسرِيَ بِيْ رِجَالاً تُقرَضُ شَفَاهُهُمْ بِمَقَارِيْضَ مِنَ النَّارِ فَقُلتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيْلُ قَالَ الْخُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلاَ يَعْقِلُوْنَ.
‘যখন আমাকে মে‘রাজের রাতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি কিছু লোককে দেখলাম, যাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেওয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিব্রীল! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আপনার উম্মতের বক্তাগণ, যারা মানুষকে ভাল কাজের জন্য আদেশ করত এবং নিজেদেরকে ভুলে যেত, অথচ তারা কুরআন তেলাওয়াত করত। কিন্তু তারা চর্চা করত না’।[আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩২৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯১।]
অন্যত্র তিনি বলেন,
يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِي النَّارِ فَيُطْحَنُ فِيْهَا كَطَحْنِ الْحِمَارِ بِرَحَاهُ فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُوْلُوْنَ أَيْ فُلاَنُ مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَانَا عَنْ الْمُنْكَرِ قَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَلاَ آتِيْهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ الْمُنْكَرِ وَآتِيْهِ.
‘ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে
যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে তা করতাম না। আর খারাপ কাজ হ’তে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম’।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯, বাংলা মিশকাত, ৯ম খন্ড হা/৪৯১২ ‘আদব’ অধ্যায়, ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ।]
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদের সবাইকে যথাযথ আমল করার তাওফীক দান করুন।
ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই ধরে দিবেন, জাযাকাল্লাহ।
আল্লাহ স্বীয় রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন,ادْعُ إِلى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ- ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহল ১৬/১২৫)।
এ আয়াতে আল্লাহর পথে ডাকার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এতে বর্ণিত মূলনীতি হল তিনটি (ক) হিকমত (খ) সদুপদেশ ও (গ) উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক। হিকমতের মর্ম হল সত্য-সঠিক বিষয়বস্তুকে অকাট্য দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে স্থান-কাল-পাত্রকে বিবেচনায় রেখে উপস্থাপন করা। সদুপদেশের অর্থ যাকে দাওয়াত দেওয়া হবে তার ইজ্জত-সম্মানের প্রতি লক্ষ রেখে তার কল্যাণ কামনার্থে হৃদয়গ্রাহী ভাষায় ও নম্রতার সাথে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা। আর উৎকৃষ্ট পন্থায় বিতর্ক করার অর্থ সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা ও প্রতিপক্ষকে তা বোঝানোর নিয়তে সত্যনিষ্ঠার সাথে ভদ্রোচিত ভাষায় যথোপযুক্ত যুক্তি-তর্ক ও দলীল-প্রমাণ পেশ করা, প্রতিপক্ষের মনে আঘাত লাগতে পারে বা জিদ সৃষ্টি হতে পারে এ জাতীয় আচরণ পরিহার করা এবং সর্বাবস্থায় মাত্রাবোধ ও ন্যায়-ইনসাফের পরিচয় দেওয়া।
অন্যত্রে বাতিলের সাথে আপোষহীনতা এবং জামা‘আতবদ্ধ দাওয়াতের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, قُلْ هذِهِ سَبِيلِي أَدْعُوا إِلَى اللهِ عَلى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحانَ اللهِ وَما أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ- ‘তুমি বল এটাই আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র। আর আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)।
একই মর্মে তিনি আরো বলেন,وَلا يَصُدُّنَّكَ عَنْ آياتِ اللهِ بَعْدَ إِذْ أُنْزِلَتْ إِلَيْكَ وَادْعُ إِلى رَبِّكَ وَلا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ ‘আর তোমার প্রতি আল্লাহর আয়াত সমূহ অবতীর্ণ হওয়ার পর তারা যেন তোমাকে সেগুলি থেকে ফিরিয়ে না নেয়। তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর এবং অবশ্যই তুমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (ক্বাছাছ ২৮/৮৭)।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে স্বীয় কওমের নিকটে সদুপদেশের মাধ্যমে, হিকমত বা দলীল-প্রমাণ সহকারে এবং আপোষহীনভাবে দাওয়াত দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। আর বিতর্ক হ’লে তা উত্তম পন্থায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে নম্র আচরণের কথা উল্লেখ করে অন্যত্র আল্লাহ বলেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ، ‘আর আল্লাহর রহমতের কারণেই তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী কঠোর হৃদয়ের হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
আলোচ্য আয়াতে পাঁচটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। (১) পরস্পরে কোমল হৃদয় হওয়া (২) পরস্পরকে ক্ষমা করা (৩) আপোষে পরামর্শ করা (৪) সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর তা বাস্তবায়নে সংকল্পবদ্ধ হওয়া এবং (৫) আল্লাহর উপর ভরসা করা। আল্লাহর পথের দাঈদের জন্য উক্ত গুণগুলো অর্জন করা অত্যন্ত যরূরী।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, দাওয়াত গ্রহণে কাউকে বাধ্য করা যাবে না। যা অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, لَسْتَ عَلَيْهِمْ بِمُصَيْطِرٍ তুমি তাদের উপরে দারোগা নও (গাশিয়াহ ৮৮/২২)।
তবে কোন মুনকার বা অন্যায় কর্ম হতে দেখলে ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيْمَانِ- ‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোন অন্যায় হ’তে দেখলে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে। তাতে সক্ষম না হ’লে যবান দিয়ে প্রতিবাদ করবে। তাতেও সক্ষম না হ’লে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হ’ল দুর্বলতম ঈমান’।[মুসলিম হা/৭৮; আলবানী মিশকাত ৩/১৪ পৃ; হা/৫১৩৭ ‘সালাম’ অনুচ্ছেদ।]
এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়: অন্যায় অনৈতিক, অপকর্ম,মুনকার ইত্যাদি বিষয় প্রতিরোধের আচরণ আর দাওয়াতের আচরণ কখনো এক নয়, দুই টার আচরণে ভিন্নতা রয়েছে।
আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারীর যেসব গুণাবলী থাকা আবশ্যক :
১/সত্যবাদী হওয়া : আল্লাহর পথের দাঈকে অবশ্যই সত্যবাদী হ’তে হবে। দাঈর মধ্যে যদি মিথ্যার লেশমাত্র পাওয়া যায় তাহ’লে তার দাওয়াত ফলপ্রসু হবে না। কুরআন ও হাদীছে সত্যবাদিতার বহু ফযীলত বর্ণিত হয়েছে এবং মুমিনদেরকে সত্যবাদীদের সাথী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (তওবা ৯/১১৯)।
২/ধৈর্যশীল হওয়া : ধৈর্য মহৎ গুণ। আল্লাহর পথের দাঈদের এই মহৎ গুণে গুণান্বিত হ’তে হবে। নচেৎ দাওয়াত দানে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না। কেননা আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দিতে গেলে অনেক বিপদ আসতে পারে, সেক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে তা মোকাবিলা করতে হবে। আল্লাহ বলেন,وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ، الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ- ‘সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যাদের উপরে কোন বিপদ আসলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা ফিরে যাব’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-১৫৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,إِنَّمَا يُوَفَّى الصَّابِرُوْنَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ ‘নিশ্চয়ই যারা ধৈর্যশীল, তারা তাদের পুরস্কার পায় অগণিত’ (যুমার ৩৯/১০)।
৩/কোমল স্বভাবের অধিকারী হওয়া : নম্রতা-ভদ্রতা ও কোমলতা আদর্শ মানুষের গুণ। দ্বীনের দাঈর মধ্যে অবশ্যই এ গুণ থাকা বাঞ্ছনীয়। এ গুণের অধিকারী দাঈগণ দাওয়াতী কাজে সহজে মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে কোমলতা অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফেরাঊনের সাথে কোমল আচরণের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা মূসা ও হারূণ (আঃ)-এর উদ্দেশ্যে বলেন,
اذْهَبَا إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى، فَقُولَا لَهُ قَوْلًا لَيِّنًا لَعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى-
‘তোমরা উভয়ে ফেরাউনের নিকটে যাও, নিশ্চয়ই সে সীমালংঘণ করেছে। অতঃপর তার সাথে নম্র ভাষায় কথা বল। সম্ভবতঃ সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভীতি অবলম্বন করবে’ (ত্ব-হা ৩৯/৪৩-৪৪)।
রাসূল (ছাঃ)-কে আল্লাহ বলেন,
فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيْظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوْا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِيْنَ-
‘আর আল্লাহর রহমতে তুমি তাদের প্রতি (অর্থাৎ স্বীয় উম্মতের প্রতি) কোমল হৃদয় হয়েছ। যদি তুমি কর্কশভাষী ও কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হ’তে তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। কাজেই তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।
৪/দ্বীনী কাজে একনিষ্ঠ হওয়া : দ্বীনি কাজে একনিষ্ঠতা ব্যতীত কখনও দাওয়াতী কাজে সফলতা আসবে না। আর ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করা। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللهَ مُخْلِصًا لَهُ الدِّينَ- ‘বল, আমি নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি’ (যুমার ৩৯/১১)।
৫//কথায় ও কাজে মিল থাকা : আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لِمَ تَقُولُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ، كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল যা নিজেরা কর না? তোমরা যা কর না তা বলা
আল্লাহর দৃষ্টিতে অতিশয় অসন্তোষজনক’ (ছফ ৬১/২-৩)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
رَأَيْتُ لَيْلَةَ أُسرِيَ بِيْ رِجَالاً تُقرَضُ شَفَاهُهُمْ بِمَقَارِيْضَ مِنَ النَّارِ فَقُلتُ مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبْرِيْلُ قَالَ الْخُطَبَاءُ مِنْ أُمَّتِكَ الَّذِيْنَ يَأْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَيَنسَوْنَ أَنْفُسَهُمْ وَهُمْ يَتْلُوْنَ الْكِتَابَ أَفَلاَ يَعْقِلُوْنَ.
‘যখন আমাকে মে‘রাজের রাতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন আমি কিছু লোককে দেখলাম, যাদের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দ্বারা কেটে দেওয়া হচ্ছে। আমি বললাম, হে জিব্রীল! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আপনার উম্মতের বক্তাগণ, যারা মানুষকে ভাল কাজের জন্য আদেশ করত এবং নিজেদেরকে ভুলে যেত, অথচ তারা কুরআন তেলাওয়াত করত। কিন্তু তারা চর্চা করত না’।[আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/২৩২৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৯১।]
অন্যত্র তিনি বলেন,
يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُهُ فِي النَّارِ فَيُطْحَنُ فِيْهَا كَطَحْنِ الْحِمَارِ بِرَحَاهُ فَيَجْتَمِعُ أَهْلُ النَّارِ عَلَيْهِ فَيَقُوْلُوْنَ أَيْ فُلاَنُ مَا شَأْنُكَ أَلَيْسَ كُنْتَ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَانَا عَنْ الْمُنْكَرِ قَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوْفِ وَلاَ آتِيْهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنْ الْمُنْكَرِ وَآتِيْهِ.
‘ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে
যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে তা করতাম না। আর খারাপ কাজ হ’তে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজেই তা করতাম’।[বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯, বাংলা মিশকাত, ৯ম খন্ড হা/৪৯১২ ‘আদব’ অধ্যায়, ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ।]
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদের সবাইকে যথাযথ আমল করার তাওফীক দান করুন।
ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই ধরে দিবেন, জাযাকাল্লাহ।
Comment