আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১২
==================================================
===============================
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১২
==================================================
===============================
জিহাদি আন্দোলনের রাস্তায় আসল বাধা
মানুষ তাদের কথা মানবে না, আমাদের কথা মানবে?
লাল মসজিদ ট্রাজেডির পর যখন সব মুজাহিদরা দুঃখিত ও মনকষ্টে ছিলো, তখন আমাদের মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত কিছু ভাই পাকিস্তানের এক বড় মুফতি সাহেবের ফটো নেতিবাচকভাবে প্রকাশ করেছিল। মুফতি সাহেবকে কাফের (নাউজুবিল্লাহ) ফতোয়া দেয়া হয়নি, ভদ্র ভাষায় কিছু সমালোচনা করা হয়েছিল।
শায়খ আবু ইয়াহইয়া রহিমাহুল্লাহকে আমি এই ভিডিওটি দেখালাম। তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন, ‘এই ছবি কেন লাগিয়েছে’?
আমি বললাম, ‘মুফতি সাহেব লাল মসজিদের ব্যাপারে এই মতামত পেশ করেছেন। তাছাড়া তিনি এই করেছেন, সেই করেছেন ইত্যাদি’।
তিনি বললেন, ‘আপনাদের এই কাজ সম্পূর্ণ ভুল’। তারপর তিনি বললেন, ‘এই মুফতি সাহেবের কত ভক্ত আছে? কত মানুষ তার জুমায় উপস্থিত হয়? স্পষ্টত লাখো মানুষ তাকে নিজেদের মুরুব্বি মনে করে। আর আপনার আমার কথা শোনার লোক কতজন? কতজন মানুষ আমাদের বলার দ্বারা এই মুফতি সাহেবকে খারাপ বলবে? আর কতজন মানুষ তার বলার দ্বারা আমাদেরকে খারাপ বলবে?
সাধারণ দ্বীনদার জনগণ আপনার তাকওয়া, জিহাদ, ইলম সম্পর্কে কিছুই জানে না। আপনি কে, আপনার মর্যাদা কী, তাও জানে না। কিন্তু আপনি যখন এমন প্রসিদ্ধ ব্যক্তিকে খারাপ বলবেন যাকে তারা সম্মান করে, তাহলে শুধু আপনার বলার দ্বারা তারা তাকে কেন খারাপ বলা শুরু করবে? এরপর যদি ওই মুফতি সাহেব আপনাদেরকে খারেজি বলে তাহলে তারা কেন আপনাকে খারেজি বলবে না? লোকেরা আপনাদের মাধ্যমে তাদেরকে চেনে না, বরং তাদেরকে দিয়ে আপনাদেরকে চেনে। সুতরাং তারা আপনাদের ব্যাপারে যা বলবে লোকেরা তাই মেনে নেবে’।
তারপর শায়খ দ্বীনী রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপারে দিক-নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘জনসাধারণের কাছে প্রসিদ্ধ এমন নেতাদের নাম উল্লেখ করে বা ছবি দিয়ে কোন সমালোচনা, দোষারোপ করা যাবে না। যদি কোন কারণে ছবি প্রকাশ করতেই হয়, তাহলে কোন প্রকার ঠাট্টা-বিদ্রূপ ছাড়াই, যত কম তিক্ত শব্দ ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। তারপর কথার ভঙ্গিতে কোন গোস্বা প্রকাশ না করা বরং কল্যাণকামিতা, সহানুভূতির প্রকাশ থাকা উচিৎ’।
তারপর আমি শায়খকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে গণতন্ত্রের কুফুরি এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতির গোমরাহি কীভাবে বর্ণনা করা হবে? কীভাবে মানুষের কাছে এই গোমরাহি স্পষ্ট হবে’?
শায়খ বললেন: ‘গণতন্ত্র বিষয়টাকে স্পষ্টভাবে কুফর বলবে, ইসলামি গণতন্ত্র নামের পরিভাষাকে স্পষ্টভাবে বাতিল বলে ঘোষণা করবে। দলিল প্রমাণের মাধ্যমে এই চিন্তা-চেতনার অসারতা প্রমাণ করবে। বলবে, এই দরজায় প্রবেশ করলে কুফুরি শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী হয়। এটা বাড়াবাড়ি, গুনাহের কাজ। কিন্তু এই সমালোচনায় নেতাদেরকে কাফের বলবে না। নেতাদের ছবি লাগিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করা যাবে না। নিজেদেরকে ভালো এবং তাদেরকে খারাপ হিসেবে প্রকাশ করবে না। তাদের সাথে যদি কঠোর আচরণ, ঠাট্টামূলক কথাবার্তা বলা হয়, তাহলে তাদের অনুসারীরা স্বজনপ্রীতিতে পড়ে যাবে। আপনাদের কথায় কান দেবে না এবং তাদের বিরোধিতা শত্রুতায় পরিণত হবে।”
জিহাদের দাঈ ভাইয়েরা!
এ সমস্ত দল ও ব্যক্তিবর্গের সাথে দলিল-প্রমাণের সাহায্যে ও দরদ-ব্যথা সহকারে মতবিরোধ হোক। তাদের প্রমাণাদি, কাজের পদ্ধতিরও খণ্ডন হোক। কিন্তু এই সমালোচনা তাকফিরের ভঙ্গিতে না হোক; বরং দরদের সাথে বুঝানোর জন্য হোক। তাছাড়া আরো একটি বিষয় হলো, যেই দ্বীনদাররা আমাদের বিরোধিতা করে, তাদের নিয়তের ওপর আঘাত করবো না। শুধু তাদের কাজ ও আমলের সাথে মতবিরোধ করবো।
আরেকটি সূক্ষ্ম বিষয় হলো, কোন ব্যক্তিকে যদি আপনি খারাপ মনে করেন, কিন্তু আপনার শ্রোতারা তাকে ভালো মনে করে এবং দ্বীনের খাদেম মনে করে, তাহলে আপনার খারাপ বলার দ্বারা, কাফের ফতোয়া দ্বারা আপনার কথা আপনার শ্রোতারা কখনও মানবে না। তাকে খারাপ না বলে তার খারাপ কাজকে খারাপ বলুন। দলিল-প্রমাণ, দরদ-ব্যথা ও বিনয়ের সাথে ওই বিষয়টি খারাপ হওয়া প্রমাণিত করুন। তাহলে শ্রোতারাই তাকে খারাপ বলা শুরু করবে, তার খারাবির বিরোধিতা করবে।
আরও পড়ুন
Comment