আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১৩
==================================================
===============================
জিহাদি আন্দোলনের রাস্তায় আসল বাধা
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১৩
==================================================
===============================
জিহাদি আন্দোলনের রাস্তায় আসল বাধা
ইন্টারনেটে জিহাদের দাওয়াত
ইন্টারনেট আধুনিক যুগের এমন এক ফেতনা, যার ভয়াবহতা প্রকাশের জন্য ফেতনা শব্দও যথেষ্ট নয়। মোবাইলের স্ক্রিনে আঙ্গুলের কয়েকটি স্পর্শ অনেক মজার। কিন্তু এটা এমন ভয়ানক এক খাদ, যার প্রশস্ততা ও গভীরতার কোন সীমারেখা নেই। ইন্টারনেটের এই সয়লাবের কারণে প্রবৃত্তির চাহিদা ও (দ্বীনের ব্যাপারে) সংশয় অনেক বেশি বেড়েছে। এখন মানুষের মন মস্তিষ্ক স্বাধীনভাবে কাজ করে না। বরং কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিন এখন মানুষের মন মস্তিস্ককে পরিচালনা করে।
এই ইন্টারনেট কত জীবনকে লাগাতার চিন্তায় মগ্ন করে দিয়েছে, আর কত প্রবৃত্তিকে সীমাহীন পিপাসায় লিপ্ত করে দিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। কত হতভাগার জীবনকে এই অজগরের সাথে বন্ধুত্বই শেষ করে দিয়েছে। মানব ইতিহাসে শয়তান সম্ভবত এমন সহজ আর কোন ফেতনার উপায় বের করতে পারে নি। আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে শয়তান যা অর্জন করতে পারছে ইতিপূর্বে এত সহজে এত অর্জন করতে পারেনি। শয়তান এখন খুব সহজেই মানুষকে নিজের শয়তানির জালে ফাঁসিয়ে ক্ষতি ও ধ্বংসের অন্ধকার গর্তে ফেলে দিচ্ছে।
এতকিছু সত্ত্বেও এই ভয়ানক ফেতনা কিছু কিছু কারণে দ্বীন ও জিহাদের একটি মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যেহেতু মন-মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করার জন্য এটি একটি সহজ মাধ্যম, তাই সফলতার দিকে আহ্বানকারী দাঈগণও নিরুপায় হয়ে এটাকে ব্যবহার করেন।
বর্তমানে যুবকদের একটি শ্রেণি ইন্টারনেটে দাওয়াত পেয়েই জিহাদি আন্দোলনে শরিক হচ্ছে। জিহাদের ময়দানেও কিছু সংখ্যক মুজাহিদ নেটের সাথে যুক্ত থাকেন। এজন্য জিহাদি মানহাজের কাজও একটা স্তর পর্যন্ত নেটেই হচ্ছে।
বাস্তবে নেটের এই দাওয়াতি কাজ দ্বারা ‘সর্বাত্মকভাবে জিহাদি আন্দোলনের খুব বেশি উপকার হচ্ছে’ তা নয়। ফায়দা তো তখন হবে যখন এই দাওয়াতি কাজে লিপ্ত ভাইয়েরা, বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত থেকে, দাওয়াতের শরয়ী আদব রক্ষা করে দাওয়াত প্রদান করবেন। যদি দাওয়াত গুলুতে আক্রান্ত হয়, দাওয়াতের মূলভিত্তি যদি জ্ঞান, বিবেকের বিপরীতে শুধু জযবা ও ভাসাভাসা কথা হয়, যদি জিহাদের দাওয়াতের নামে এমন শরিয়ত বহির্ভূত পন্থা অবলম্বন করা হয় যাতে মানুষ আরো দূরে সরে যায় -তাহলে এর দ্বারা শুধু জিহাদি দাওয়াতই নষ্ট হয় না, বরং এই দাওয়াত জিহাদি আন্দোলন নষ্ট হওয়ার বড় একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিকট অতীতে প্রত্যেক চক্ষুষ্মানই দেখেছে, আইএসের খারেজী গোষ্ঠী তৈরি করা, যুবকদেরকে বাড়াবাড়ির অন্ধকারে নিক্ষেপ করা এবং শরিয়তবহির্ভূত দাওয়াতের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট অনেক বড় অবদান রেখেছে। তবে নেটের প্রচারণা সমষ্টিগতভাবে দাওয়াতের একটি মেজাজ সৃষ্টি করে। কিন্তু দাওয়াতের এই মেজাজ যদি বেআদবির সাথে হয় এবং এর পদ্ধতি যদি অশালীন ও শরিয়তবহির্ভূত হয়, তাহলে তা দ্বীনের দাওয়াত ও মুজাহিদদের এত ক্ষতি করে, যা দ্বীনের দুশমনরাও করতে পারে না।
র্যান্ডের রিপোর্ট
দশ-বার বছর পূর্বে আমেরিকার ‘RAND Corporation’ এর একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে: জোর-জবরদস্তি করে জিহাদি আন্দোলনকে ধ্বংস করা কষ্টকর। এই আন্দোলন আমাদের বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও উন্নতি লাভ করছে। এই স্রোত তখনই বন্ধ হবে যখন জিহাদি আন্দোলনে এমন চিন্তা লালিত হবে এবং জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা এমন কাজ করা শুরু করবে, যাতে ‘জিহাদ’ নিজে নিজেই ঘৃণিত হয়ে যায় এবং জিহাদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ শেষ হয়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী এটা তখনই হতে পারে, যখন জিহাদি দলের মাঝে আমরা এমন ব্যক্তি তালাশ করবো, যারা সর্বদা নিজেদেরকে সঠিক মনে করে। মুসলমান জনসাধারণ এবং অন্যান্য দ্বীনদারদের সাথে খুব শক্ত আচরণ করে এবং যারা তাদের সাথে একটু দ্বিমত করে তাকেই কাফের ফতোয়া দেয়। রিপোর্টের মধ্যে বলা হয়েছে, ‘এই মেজাজের যদি উন্নতি করা যায় তাহলে জিহাদি আন্দোলনকে ধ্বংস করা, জিহাদিদের হাতে তার শিকড় কাটা এবং জিহাদের দাওয়াতকে ধ্বংস করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে’। রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছে যে, এই ধরণের লোক নেটেই পাওয়া সম্ভব। এবং তাদেরকে নেটের মাধ্যমেই জিহাদিদের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব।
আরও পড়ুন
Comment