আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১৪
==================================================
===============================
জিহাদি আন্দোলনের রাস্তায় আসল বাধা
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১৪
==================================================
===============================
জিহাদি আন্দোলনের রাস্তায় আসল বাধা
ইন্টারনেটের ট্র্যাজেডিঃ জযবা ও চেতনা গ্রহণ
ইন্টারনেটের ট্র্যাজেডি হলো; এখানে জিহাদি পেইজ আপডেটকারী, ট্রেন্ড চালনাকারী, দাওয়াত প্রদানকারী এবং কমেন্টকারী কারোরই আসল আকৃতি সাধারণত দেখা যায় না। সে তাকওয়া, আখলাকের অধিকারী দ্বীনের দাঈ, মুজাহিদ? নাকি এসব থেকে মুক্ত দ্বীনের দুশমন? তার আসল অবস্থা ইন্টারনেটে জানা যায় না বরং স্ক্রিনে যা লেখা থাকে, যা দেখা যায় তাই তার পরিচয় হয়ে যায়। এখানে যেহেতু নিজের পরিচয় গোপন করা সহজসাধ্য, তাই খুব সহজে মানুষের জযবা অর্জন করা যায়। আর দ্বীনের শত্রু বন্ধু সেজে দ্বীনদার লোকদের ক্ষতি করা যায়।
যদি শরয়ী ইলম, জিহাদের বুঝ, নেককার লোকদের সোহবত এবং দ্বীনী আখলাকের কমতি থাকে, তবে এমন ব্যক্তি যেকোন সময় তাদের জালে ফেঁসে দ্বীনের শত্রুদের চিন্তাকে জিহাদের আসল মেজায মনে করতে পারে। বিশেষ করে যখন এই লোক বিশটি কথার মধ্যে পনেরটি সঠিক বলে, আর পাঁচটি কথা এমন বলে যা জিহাদের রোখ পরিবর্তন ও নবীনদেরকে গুলুর মধ্যে ফাঁসানোর জন্য বলে। ফলে এই পাঁচটি কথাই ওই পনেরটি কথাকে নষ্ট করে দেয়। দ্বীনের দুশমন এই কথাগুলো দ্বারা শ্রোতাকে গোমরাহ করে দেয়। এজন্য আমাদের জন্য জরুরি হলো সঠিক জিহাদ ও গুলুকারীদের মাঝে পার্থক্যের বিষয়গুলো জানা।
গুলুকারীদের সাথে এখতেলাফের কারণ
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে, যদি আমরা একটু সেদিকে লক্ষ করি তাহলে জিহাদি আন্দোলনকে গুলু তথা সীমালঙ্ঘন থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে। তা হলো, গুলুকারীদের সাথে আমাদের মতবিরোধ উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে নয়। তারাও কুফুরি শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠাকে লক্ষ্য বানিয়েছে। আমরাও তাকে লক্ষ্য মনে করি। মতবিরোধ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, মতবিরোধ হলো লক্ষ্যে পৌঁছার রাস্তা নিয়ে।
গুলুআক্রান্ত ব্যক্তিরাও আসলে উদ্দেশ্যকেই উদ্দেশ্য বলে। কিন্তু দাওয়াতের পদ্ধতি কী হবে? তা নিয়ে হলো মতবিরোধ। গুলু আক্রান্ত ব্যক্তিরা শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য, লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যেই পদ্ধতি অবলম্বন করে তা শরিয়ত বহির্ভূত এবং জিহাদি আন্দোলনকে ধ্বংসকারী পদ্ধতি। শুধু তাই নয় বরং তা জিহাদের দাওয়াতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি একটি আলাদা বিষয় যে, কেউ কেউ কাজের পদ্ধতিতে মতবিরোধ থাকার কারণে লক্ষ্য তথা শরিয়ত প্রতিষ্ঠার বিষয়টির ক্ষেত্রেও একমত হয় না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে কখনো কখনো উদ্দেশ্যও পরিবর্তন হয়ে যায়।
এই ধরণের ব্যক্তিরা নিজেদের কম বুঝের কারণে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পদ্ধতির মধ্যেও বাড়াবাড়ির শিকার হয়। কিন্তু বলার ক্ষেত্রে তারা ও আমরা শরিয়ত প্রতিষ্ঠা ও দ্বীনের বিজয় উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে থাকি। সুতরাং ইন্টারনেটের পাঠকগণ এবং জিহাদের মুহিব্বিন কুফুরি নেযামকে ভালো মন্দ বলা, মুজাহিদদের সমর্থন করা এবং ‘হয়তো শরিয়ত নয়তো শাহাদাত” এই শ্লোগানকে হক্ক যাচায়ের মাপকাঠি হিসেবে মোটেও যথেষ্ট মনে করবেন না।
কুফুরি শাসনব্যবস্থার পতন ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠাই আসল বিষয়, এটা সত্য। এই আসল বিষয় যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি তার কাজের পদ্ধতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই দাওয়াত ও কিতালের মাঝে কী জায়েয কী নাজায়েয, তা খেয়াল করে দেখতে হবে। কী কাজ করলে উদ্দেশ্য পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়, আর কোন কাজ করলে উদ্দেশ্যের পথ দীর্ঘ হয়ে যায়, সেটা বিশ্লেষণ করতে হবে। দাওয়াতের কোন পদ্ধতি জিহাদের উপকার করে আর কোন পদ্ধতি জিহাদের ক্ষতি করে, এটার ওপর গবেষণা করতে হবে। আর এ সমস্ত বিষয়গুলোই মতবিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এর মাঝেই জিহাদি আন্দোলনের সফলতা ও ব্যর্থতা নিহিত।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কাজের পদ্ধতির এই পার্থক্য দ্বারাই আসল নকল চেনা যায়। কিন্তু যদি এদিকে খেয়াল না করা হয় বরং যে-ই জিহাদের কথা বলে তাকেই যদি নিজেদের সফর সঙ্গী, জিহাদের সৈনিক মনে করা শুরু করি, তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জিহাদের ইতিহাসে অনেকবার এমন হয়েছে যে, জিহাদের দাওয়াতই জিহাদি আন্দোলনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য খুবই জরুরি বিষয় হলো, আমরা জিহাদের বন্ধু সেজে থাকা শত্রুদের থেকে জিহাদি আন্দোলনকে হেফাযত করবো। আর তাদের মোকাবেলায় আমাদের ভিতরগত নিরাপত্তা জোরদার করবো।
আরও পড়ুন
Comment