আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
(পর্ব- ২৪) শেষ পর্ব
==================================================
===============================
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
(পর্ব- ২৪) শেষ পর্ব
==================================================
===============================
ইন্টারনেটের ষড়যন্ত্র এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনের
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
আমরা আবার দাওয়াত বিষয়ে ফিরে আসি। জিহাদের দাওয়াত ও মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ভাইদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবো ইনশা আল্লাহ। আশা করি এই কথাগুলো জিহাদি মানহাজের উন্নতি ও হেফাযতের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হবে।
৩৬. যেহেতু ফেতনা ফাসাদ যুলুম অবাধ্যতার মূল হলো কুফুরি শাসনব্যবস্থা। এই শাসনব্যবস্থাই সমস্ত ভালো কাজের শক্তি ও আন্দোলনকে খতম করে। আর খারাপ কাজের হেফাযত করে। তা ছড়ায় ও ব্যাপক করে। এজন্য জরুরি হলো, আমাদের ঘৃণা ও শত্রুতার মেরুদণ্ড এই কুফুরি শাসনব্যবস্থাকে বানানো এবং সমস্ত সাধারণ মানুষ ও দ্বীনদারদের কলম এবং তীর ও ভাষার মোড় এর নেতা ও রাখালদের দিকে ঘুরিয়ে দেয়া এবং এটাই আমাদের দাওয়াতের আসল উদ্দেশ্য হবে। আর এটা তখনই হতে পারে যখন আমাদের দাওয়াত সবধরনের দলাদলি থেকে মুক্ত থাকবে। আর দাওয়াতের মধ্যে আমরা শাখাগত মতপার্থক্যকে একদমই প্রশ্রয় দেব না। আমাদের মনে রাখতে হবে, যেভাবে শাখাগত মতপার্থক্য দ্বারা দলাদলি করা কুফুরি শক্তিকে শক্তিশালি করে তেমনিভাবে এটা জিহাদের দাওয়াতের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৩৭. ইন্টারনেটের যে পেইজগুলো দলীয় গোড়ামিকে জাগ্রত করে, তা থেকে পরিপূর্ণ রূপে দূরে থাকা এবং মানুষকে দূরে রাখা জরুরি।
৩৮. মিডিয়ার মধ্যে জিহাদের দাওয়াতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে, কিন্তু তার মাঝে পূর্ণ দ্বীনের দাওয়াত থাকবে। তারপর যেই সমস্ত দ্বীনী বিষয়ে কুফুরি শাসনব্যবস্থা সরাসরি আক্রমণ করে, যেমন পর্দা, পবিত্রতা, লজ্জা, ইসলামি জীবনাচার। এবিষয়ে মিডিয়ায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তেমনিভাবে কুফুরি শাসনব্যবস্থার প্রত্যেকটি দিক, গণতন্ত্র, সেক্যুলারিজম, অশ্লীলতা, উলঙ্গপনা, পারিবারিক ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়া, সেনাবাহিনীর অত্যাচার, অর্থনৈতিক দখলদারিত্ব ইত্যাদি সব কিছুর সমালোচনা করা হবে। এই শাসনব্যবস্থা সমস্ত খারাবির মূল তা স্পষ্ট করতে হবে। এর বিপরীতে শরয়ী শাসনের সৌন্দর্য্য, উপকারিতা, ফায়দা ও এর হুকুম বর্ণনা করা হবে।
৩৯. ইলমে দ্বীনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্তকারী ঐ কপালপোড়া, যে বাস্তবে দুনিয়ার জন্য নিজের দ্বীনকে বিক্রি করে দিয়েছে, যদি তাদের সমালোচনা করতে হয় তাহলে সংক্ষিপ্ত ও ভদ্র ভাষায় সমালোচনা করা হবে। এখানে মতবিরোধকারী সম্মানিত ওলামায়ে কেরাম ও দ্বীনদার ব্যক্তি নয়। তাদের সম্পর্কে আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে। এখানে উদ্দেশ্য ঐসকল আলেম যারা দুনিয়াদার, দরবারি এবং খারাপ কাজে প্রসিদ্ধ ।
৪০. কোন ব্যক্তি যদি দ্বীন ও জিহাদি আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে তার অবস্থান ভালো হয়, এবং দ্বীনের খেদমতে সে প্রসিদ্ধ হয়, তাহলে জিহাদি মিডিয়ার মধ্যে তার নাম উচ্চারণ করা ছাড়াই তার কাজের বিরোধিতা করা হবে। এভাবে করার দ্বারা মানুষ শেষ পর্যন্ত তার ক্ষতিকর হওয়াটা বুঝবে। তার প্রতি তাদের মানসিকতা পরিবর্তন হবে। তবে এর বিপরীত যদি মানুষ তার ভালো কাজে সন্তুষ্ট আর আমরা যদি তার নাম ধরে অথবা ছবি দিয়ে তাকে গালমন্দ করি তাহলে মানুষ তার পক্ষে কথা বলবে আর আমাদের কথা শুনবে না।
৪১. দাওয়াতের মধ্যে সর্বদা পার্শ্ব লড়াই (যেমন কুফুরি শাসনব্যবস্থা ও তার রক্ষকদেরকে রেখে অন্য শত্রু যেমন রাফেজিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা) থেকে বিরত থাকা হবে। বাস্তবতা হলো আমাদের সমস্ত পার্শ্ব শত্রুসহ সমস্ত ফেতনার হেফাযত এবং শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় বাধা হলো এই কুফুরি ব্যবস্থা। এই কুফুরি শাসনব্যবস্থার রক্ষকরা সর্বদা চায়, যেন দ্বীনদারদের কামানের মুখ তাদের দিকে না ফিরে। এজন্য আমেরিকা হোক বা স্থানীয় তাগুত হোক সর্বদা এই চেষ্টা করে যে, মুজাহিদরা পার্শ্ব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক, আর নিজেরা বেঁচে যাক। জিহাদি আন্দোলন এক হয়ে যদি সমস্ত শক্তি ও বিশেষ মাধ্যম এই শাসন ও তার নেতাদের ধ্বংস করায় ব্যয় করে, তাহলেই শুধু দ্বীন ও উম্মতের ফায়দা। যেদিন এই বাতিল শাসনব্যবস্থা ও তার লিডাররা ধ্বংস হয়ে যাবে সেদিন বড় থেকে বড় পার্শ্ব শত্রুও মুখ তুলে তাকাতে পারবে না। বরং তখন সে নিজের সংশোধনের চেষ্টা করবে অথবা নিজের দোষ আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে যাবে। সুতরাং দাওয়াতের ক্ষেত্রে পূর্ণ মনোযোগ বাতিল শাসনব্যবস্থার প্রতি থাকবে। যদি কোন পার্শ্ব যুদ্ধে জড়াতেই হয় তাহলে শুধু আত্মরক্ষা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে। তারপর আবার যত দ্রূত সম্ভব আসল যুদ্ধের দিকে ফিরে আসবে। ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানও শুরু থেকে এই হেকমতকে সামনে নিয়ে চলছে এবং এর ভালো ফলাফলও স্পষ্ট হয়েছে।
৪২. জিহাদি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা আমরা মানুষের জন্য সহজ করবো। যদি কোন ব্যক্তি জিহাদের মৌলিক উদ্দেশ্য ও মূলনীতির সাথে একমত হয়ে যায় এবং সে নিজেকে কোন বিশেষ মজমুআর কাছে অর্পণ করে, তাহলে তার ওপর ততটুকু বোঝা চাপানো যায় যতটুক সে বহন করতে পারে। বেশি করার শক্তি থাকলে সুন্দরভাবে উৎসাহ দেয়া যাবে।
এটা মোটেও উচিৎ হবে না যদি আমাদের থেকে মানুষ এই পয়গাম পায় যে, জিহাদি আন্দোলন শুধু তাকেই কবুল করে, যে তার সবকিছু ছেড়ে জিহাদে যোগ দেয়। যার মধ্যে এই হিম্মত নেই তার এখানে কোন কাজ নেই। বরং যে যতটুকু সঙ্গ দিতে পারে শুকরিয়ার সাথে তা-ই গ্রহণ করা হবে। সবকিছু আল্লাহর জন্য কুরবানি করার উৎসাহ দেয়া ভিন্ন বিষয়। আর এটা দরকারও। কিন্তু যে সামান্য পরিমাণে সাথে থাকে তাকে বেশি পরিমাণে সাথে থাকতে বাধ্য করা মোটেও ভালো কাজ নয়।
৪৩. দাওয়াতের ময়দানের ভাইয়েরা দাওয়াতকেই আসল জিহাদ মনে করবে না এবং এর ওপর সীমাবদ্ধও থাকবে না। তাদের জন্য লড়াই ও শাহাদাতের গুরুত্ব ও ফযিলত স্মরণ রাখা এবং জিহাদের ময়দানে যাওয়ার আন্তরিক ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকা জরুরি।
৪৪. দাওয়াত হোক, জিহাদ হোক, দাঈর নিজের তরবিয়ত হোক, কোন একটি ভালো জামাতের সাথে যুক্ত হয়ে তার অনুগত থাকা জরুরি। ইন্টারনেটে দাওয়াত প্রদানকারীরা নিজেরাও জিহাদি আন্দোলন ও জিহাদি নেতাদের সাথে আমলিভাবে যুক্ত থাকবে। অন্যদেরকেও যুক্ত করার চেষ্টা করবে। জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কাজ করার মাঝে অনেক ক্ষতি আছে। এটা মোটেও ভালো কাজ না।
৪৫. ইন্টারনেট দাওয়াতের ময়দান, জিহাদ ও মুজাহিদদের ক্ষতি করার একটি কার্যকর মাধ্যম। এখানে জিহাদের দাওয়াতের বেশে গোয়েন্দারা দাওয়াতকে নষ্ট করা, জিহাদি দলে নিজেদের গোয়েন্দা প্রবেশ করানোর জন্য এবং মুজাহিদদের গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করে। তাই প্রথমত নিজেরা সতর্ক থাকা, অন্য ভাইদেরকে সতর্ক করা জরুরি। জিহাদের দিকে আহবানকারী প্রত্যেককে বিশ্বাস করা যাবে না। দ্বিতীয়ত শত্রুদের এই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করার জন্য জিহাদের ময়দানের প্রশাসনিক প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রাখবে। তাযকিয়ার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অবলম্বন করা এবং নিজে মানহাজের ক্ষেত্রে গভীর জ্ঞান অর্জন করা। নেটের জগতে কাউকে অন্ধ বিশ্বাস করা যাবে না। নেটে আপনার সাথীর পদ্ধতি গ্রহণ করাও অসম্ভব নয়। এ আশংকা সর্বদাই থাকে যে, গোয়েন্দাদের কোন ব্যক্তি আপনার সাথীর লেখার পদ্ধতি নকল করবে। এজন্য নিজের সাথীর সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করবে এবং অফলাইনে ও অন্যান্য মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে।
৪৬. সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। সুতরাং নেটের দাঈ নেটে বসার আগে নিজের কাজ নির্ধারণ করে নিবে। নিজের নির্ধারিত কাজ ব্যতীত আগে-পরে আর কিছু করবে না। এই সতর্কতা অবলম্বন না করলে সময় অপচয় এবং বেহুদা কাজে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৪৭. শুধু নেটের দাওয়াতকে আসল মনে করবে না। দাঈগণ অফলাইনে চেইনের মাধ্যমেও দাওয়াত ছড়ানোর চেষ্টা করবে। এই পদ্ধতি অধিক কার্যকর ও বেশি উপকারী
৪৮. দাওয়াতি দলিল-দস্তাবেজ যেন বিভিন্ন ধরণের হয়। যাতে দাওয়াত ও জিহাদের লাইব্রেরীতে পরিমাণের সাথে বিষয়বস্তুও বেড়ে যায়। দ্বিতীয়ত জমাকৃত দলিল-দস্তাবেজ যেন সংরক্ষিত থাকে। ইন্টারনেটে আমাদের সমস্ত দলিলপত্র সুবিন্যস্তভাবে থাকা উচিৎ। যাতে সাধারণ পাঠক থেকে উচ্চস্তরের পাঠক পর্যন্ত সবাই জরুরি বিষয়গুলো সহজে পেয়ে যায়।
৪৯. ইন্টারনেটে উপস্থিত পেইজগুলোতে বন্ধু সার্কেল গঠিত হয়। সাধারণত তারাই আমাদের লেখাগুলো পড়ে। কিভাবে এই বন্ধু সার্কেলকে বাড়ানো যায় তার ফিকির করা। আর কিভাবে বেশি বেশি মানুষ আমাদের প্রাথমিক লেখাগুলো পড়ে তার চেষ্টা করা।
৫০. ইন্টারনেটে দাওয়াত প্রদানকারী ভাইয়েরা অফলাইনে নেককার মানুষের ছোহবতে থাকা জরুরি। যাতে ফেতনা থেকে বাঁচা যায়। চিন্তা-চেতনা ঠিক রাখার সাথে সাথে নযরের হেফাযতও হয়। এটা জরুরি বিষয়। নযর হেফাযতের দ্বারা মন মস্তিষ্ক পবিত্র থাকে, কাজে একাগ্রতা সৃষ্টি হয়।
৫১. সর্বশেষ আবেদন এই যে, নিজেদের দাওয়াত ও পদ্ধতির সর্বদা মুহাসাবা করতে থাকবেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবে।
এই সামান্য কিছু কথা দাওয়াতের মানহাজ সম্পর্কে বলার ছিলো। এবিষয়ে এখানেই লেখা শেষ করলাম। আল্লাহ আমাদের ইখলাছ দান করুন। আমাদের কথা ও কাজ দ্বারা দ্বীন ও উম্মতকে ফায়দা দান করুন। দাওয়াত ও জিহাদের প্রত্যেক কথা ও কাজে আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন। দ্বীন ও জিহাদের সত্যিকারের খেদমত করার তাওফিক দান করেন। আল্লাহ আমাদের সকল প্রচেষ্টা কবুল করেন। আমাদেরকে তার দীদার ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গ থেকে মাহরুম না করেন। আমীন।
আরও পড়ুন
২৩ তম পর্ব
Comment