Announcement

Collapse
No announcement yet.

আইএস কতৃক সৃষ্ট সংশয় নিরসন। গনতান্ত্রিক দলসমূহের উপরে হামলা করার বিষয়টিতে আল কায়েদা ও আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ হতে কোন দলটি বিচ্যুত হয়েছে? আল কায়েদা নাকি আইএস?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আইএস কতৃক সৃষ্ট সংশয় নিরসন। গনতান্ত্রিক দলসমূহের উপরে হামলা করার বিষয়টিতে আল কায়েদা ও আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ হতে কোন দলটি বিচ্যুত হয়েছে? আল কায়েদা নাকি আইএস?







    আইএস কতৃক সৃষ্ট সংশয় নিরসন। গনতান্ত্রিক দলসমূহের উপরে হামলা করার বিষয়টিতে আল কায়েদা ও আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ হতে কোন দলটি বিচ্যুত হয়েছে? আল কায়েদা নাকি আইএস?






    ইমেজ ডাউনলোড করুন




    ​​​​​
    আইএস কতৃক সৃষ্ট সংশয় নিরসন। গনতান্ত্রিক দলসমূহের উপরে হামলা করার বিষয়টিতে আল কায়েদা ও আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ হতে কোন দলটি বিচ্যুত হয়েছে? আল কায়েদা নাকি আইএস?


    বাজাউর হামলা এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ





    ২০২৩ ঈসায়ী সনের ৩০ জুলাই রবিবার, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাজাউর জেলায় খাওয়ারিজ দাওলা / আইএস ইসলামি গনতান্ত্রিক সংগঠন জমিয়ত উলেমা ইসলাম - ফজল দলটির সম্মেলনে ভয়াবহ বোমা হামলা চালায় । আইএসের চালানো বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই ৫০ জন মুসলিম নিহত এবং ২০০ জন মুসলিম আহত হন, সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ তে পৌছেছে। পুলিশ কর্মকর্তা শওকত আব্বাস জানান নিহত ৫৪ জনের মধ্যে ২৩ জনই শিশু যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে।


    নৃশংস এই হামলাটি সংঘটিত হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই তেহরিক-ই-তালেবানের মুজাহিদগন এক বিবৃতিতে এই বেদনাদায়ক হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং নিহত মুসলিম ভাইদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।














    পরবর্তীতে দাওলা / আইএস তাদের অফিশিয়াল মিডিয়া আমাক এর মাধ্যমে মুসলিমদের উপরে চালানো নৃশংস এই হামলার দায় স্বীকার করে। টুইটার, ফেসবুক, টেলিগ্রাম সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় দাওলা / আইএস সমর্থকগণ এই সাধারণ মুসলিম এবং মুসলিম শিশুদের হত্যা এবং মুসলিমদের রক্ত ঝড়ানো নিয়ে আনন্দ উদযাপনে মেতে উঠেন। সাধারণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা তাদের আচরণ দেখে যুগপত বিস্ময়ের সঙ্গে তাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছিলেন। তারা প্রশ্ন করছিলেন, " এটা কেমন খিলাফাহ? যারা কিনা মুসলিম উম্মাহকে নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে মুসলিম উম্মাহর রক্ত ঝড়িয়ে উল্লসিত হচ্ছে " , এরা কেমন মুজাহিদ? " যারা কিনা সাধারণ মুসলিমদের হত্যার মাঝে সফলতা খুজছে"















    আল কায়েদা উপমহাদেশ ( AQS) এর পক্ষ হতে বাজাউরে অপরাধী গোষ্ঠী আইএস কতৃক সংগঠিত এই হামলা সম্পর্কিত একটি বিবৃতি প্রদান করা হয়।












    বিবৃতিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশের বাংলা অনুবাদ নিচে প্রদান করা হলো

    ❝......। দুই মাস পূর্বে বেলুচিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর উপরে পরিচালিত আক্রমণ এবং সম্প্রতি জমিয়তে ইসলামীর উপরে সংঘটিত আক্রমণ সমূহ ইসলামী শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এই ধরনের আক্রমণ সমূহ পরিচালনা করার অনুমোদন ইসলাম দেয়না । অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রতীয়মান হয় যে এই ধরনের আক্রমণ সমূহের পিছনে সাধারণত বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী গোয়েন্দা সংস্থা এবং অপরাধী খাওয়ারেজ গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের এসব আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পবিত্র জিহাদকে নৃশংসতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা এবং মুজাহিদদের চরিত্রে কালিমালেপন করা। তারা এসকল আক্রমনের মাধ্যমে মুজাহিদ এবং সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করার পাশাপাশি বিরোধের বীজ বপন করার চেষ্টা করে। মুজাহিদদের জিহাদের একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে সমগ্র পৃথিবীর মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের নিপীড়িত জনসাধারণের জীবন, সম্পদ এবং সন্মানের হেফাজত করা।.....❞

    সংশয়ের উথান



    ​​​​ঘটনাপ্রবাহের এ পর্যায়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক আইএস মতাদর্শীর ফেসবুক প্রোফাইলের একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ আমার দৃষ্টিগোচর হয়। প্রবন্ধটিতে লেখক বাজাউরে সাধারন মুসলিমদের উপরে আইএসের চালানো এই নৃশংস হামলার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে তানজিম আল কায়েদা ফি বিলাদির রফেদাইন বা আল কায়েদা ইন ইরাক এবং এর আমীর আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃকে নিয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যাচার করেন। তাদের নিকৃষ্ট খাওয়ারেজ মতাদর্শকেই আল কায়েদার প্রকৃত আদর্শ বলে দাবি করেন । প্রবন্ধটিতে প্রকৃত সত্য গোপন করে আংশিক সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণ করে মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদ ভাই-বোনদের বিভ্রান্ত করার স্পষ্ট অপপ্রয়াস দৃশ্যমান হয় । যার ফলশ্রুতিতে প্রকৃত সত্য উম্মাহর সম্মুখে উপস্থাপন করার অতীব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।

    উৎসুক পাঠক চাইলে নিচের লিংক সমূহ হতে আইএসের প্রোপাগাণ্ডা মূলক প্রবন্ধটি পড়ে নিতে পারেন...






    লেখক তার প্রবন্ধটিতে তথ্য-প্রমাণ ও দলিল উপস্থাপনের পরিবর্তে বাগাড়ম্বর ও অন্তঃসারশূন্য বাক্যের সাহায্যে প্রবন্ধের কলেবর বৃদ্ধি করেছেন। অবশ্য লেখক তার মিথ্যাচারের পক্ষে প্রকৃত-সত্য তথ্য-প্রমান পাবেন কোথায়? সেজন্যই বোধহয় বাগাড়ম্বর ও অন্তঃসারশূন্য বাক্য সমূহের আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে!

    আইএসের প্রোপাগাণ্ডা মূলক প্রবন্ধের মূল বক্তব্য



    ​​​দীর্ঘ প্রবন্ধটিতে আইএস মতাদর্শী লেখক মূলত যা বুঝাতে চেয়েছেন তাহলোঃ-

    আল কায়েদা ইন ইরাকের সন্মানিত আমীর শহিদ আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ সর্বপ্রথম ২০০৫ সালের ৩০ জানুয়ারিতে গনতন্ত্রপন্থীদের উপরে সশস্ত্র আক্রমণ ও ফেদায়ী বোমা আক্রমণের সূচনা করেন।

    যার ধারাবাহিকতায় আইএস/ দাওলা গনতন্ত্রপন্থীদের উপরে সারাবিশ্বব্যাপী সশস্ত্র হামলা পরিচালনা করছে। সুতরাং আইএস ই প্রকৃত আল কায়েদা ও আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ ধারন করে আছে।

    আর আল কায়েদা গনতন্ত্রপন্থীদের উপরে হামলা করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে এবং আইএসের হামলার নিন্দা করছে। সুতরাং আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ ও আল কায়েদার প্রকৃত আদর্শ হতে আল কায়েদা বিচ্যুত হয়েছে।

    সংশয় নিরসন এবং প্রকৃত সত্য উন্মোচন




    প্রকৃত সত্য উন্মোচনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালের জানুয়ারী ও ডিসেম্বরে ইরাকে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচন দুটোর ঘটনাপ্রবাহ এবং নির্বাচনকালীন সময়ের আল কায়েদা ইন ইরাক এর কার্যক্রমের যথাযথ বর্ণনা নিম্নে তুলে ধরা হলো....
    ২০০৫ এর জানুয়ারীর নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবং ঘটনাপ্রবাহ





    ১৯ মার্চ ২০০৩ ক্রুসেডার রাস্ট্র আমেরিকা মুসলিম ভূখন্ড ইরাকের ওপরে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। আগ্রাসন শুরু করার পর আমেরিকা ইরাকে গঠন করে Coalition Provisional Authority যার সরকার প্রধান ছিল জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং প্রশাসক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছে যথাক্রমে জে গার্নার (২০০৩) এবং পল ব্রেমার (২০০৩-২০০৪)। ২০০৪ সালের ২৮ জুন আমেরিকা সিআইএ এর চিহ্নিত দালাল শিয়া নেতা আইয়াদ আলাভীকে সরকার প্রধান করে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করে। আইয়াদ আলাভীর রাজনৈতিক সংগঠনের নাম ইরাকি লিস্ট। পরবর্তীতে ইরাকের জনগণের হাতে ইরাককে তুলে দেওয়ার ( মিথ্যা প্রতিশ্রুতির) প্রক্রিয়া হিসেবে ২০০৫ সালের ৩০ জানুয়ারি ইরাকে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা হয়। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল এটা একটা প্রহসনের নির্বাচন হবে যেখানে আমেরিকা শিয়াদের মধ্যে হতে তাদের পছন্দমত গোলামদের ক্ষমতার চেয়ারগুলোতে বসিয়ে ইরাককে দীর্ঘমেয়াদে শোষন করবে।


    এমতাবস্থায় ২৩ জানুয়ারি আল কায়েদার ইন ইরাকের সন্মানিত আমীর শহিদ আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ইরাকের সাধারণ সুন্নি মুসলিমদের এই নির্বাচন বয়কট করার আহ্বান জানান। ইরাকের সাধারন সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে তার এই আহ্বান অত্যন্ত চমকপ্রদ ভাবে প্রভাব বিস্তার করে, ইসলামপন্থী সুন্নিদের পাশাপাশি সাধারণ এবং বাথিস্ট সুন্নিরাও এই নির্বাচন বয়কট করে। ( সুন্নি মুসলিম দ্বারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত মুসলিমদের বোঝানো হয় ; ইরাকের মুসলিমরা প্রধানত শিয়া এবং সুন্নি এই দুই দলে বিভাজিত )


    আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর প্রথম কার্যকর প্রভাববিস্তারকারী পদক্ষেপ ছিল এই নির্বাচন বয়কটের আহ্বানটি। তার এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুন্নি ভোটারদের ৯৮% এর বেশি ২০০৫ সালের জানুয়ারীর এই নির্বাচন বয়কট করে এবং ২% এর ও কম সুন্নি ভোটার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে।


    আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ নির্বাচনের পূর্বে দেওয়া তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট করেন যে নির্বাচনের বিরোধিতা করার অন্যতম কারন হচ্ছে আমেরিকানরা এই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের অনুগত একটি শিয়া সরকার গঠন করবে যারা সাধারণ সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপরে লুটতরাজ করার পাশাপাশি মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপরে বিভ্রান্ত শিয়া মতবাদ চাপিয়ে দিবে।


    এরপর ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় আল কায়েদা ইন ইরাক ভোটকেন্দ্র সমূহে সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করতে থাকে। ৯ টি ফিদায়ী হামলা সহ মোট ১০০টি হামলায় ৩৫ জন শিয়া ও ক্রসেডারদের হত্যা করেন আল কায়েদা ইন ইরাকের মুজাহিদ গন।


    ৩০ জানুয়ারির নির্বাচন এবং আল কায়েদা ইন ইরাকের হামলা সমূহ পর্যবেক্ষণ করে প্রাপ্ত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহঃ-


    ১) ৯৮% সু্ন্নি মুসলিম ভোটার ভোট বয়কট করার কারনে ভোট কেন্দ্র গুলোতে কেবল ক্রুসেডার ও শিয়াদেরই উপস্থিতি ছিল।

    ২) আল কায়েদা ইন ইরাকের হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ভোটকেন্দ্র এবং ভোট দিতে যাওয়া শিয়া ভোটার।

    ৩) আল কায়েদা ইন ইরাকের আক্রমণ সমূহে কোনো সাধারণ সুন্নি মুসলিম হতাহত হননি।


    উপরে ২০০৫ এর জানুয়ারীর নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রদত্ত তথ্যের সূত্রঃ-

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/Janu...ntary_election

    ইনসাইড আর্মি অব টেরর

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/2005_in_Iraq


    ২০০৫ এর ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট এবং ঘটনাপ্রবাহ


    ২০০৫ সালে জানুয়ারীর নির্বাচনের পর ১৫ অক্টোবর গনভোটের মাধ্যমে ইরাকের নতুন সংবিধান নির্বাচন করলে সেই সংবিধানের আওতায় পুনরায় ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। তবে এই নির্বাচনের পূর্বে আল কায়েদা ইন ইরাকের কিছু ভুল যুদ্ধকৌশলের ফলে ইরাকের গোষ্ঠী শাসিত সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য একটা অংশ মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং পাশ্চাত্যের মানসিক গোলাম রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ ও পথভ্রষ্ট উলামাদের অপতৎপরতার ফলে কট্টর সুন্নি মুসলিমগন ব্যতীত অন্য সাধারণ সুন্নি মুসলিম জনগন এই নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে ইরাকের সুন্নি মুসলিম ভোটারদের ৮০% ই অংশগ্রহণ করে। এই নির্বাচনে সুন্নি মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক জোট ছিল ইরাকি অ্যাকর্ড ফ্রন্ট । ইরাকি অ্যাকর্ড ফ্রন্টের নেতৃত্বে ছিল ইরাকের ইসলামি গনতান্ত্রিক সংগঠন ইরাকি ইসলামিক পার্টি । ইরাক ইসলামিক পার্টি হলো সাইয়েদ কুতুব মতাদর্শের ইসলামী গণতান্ত্রিক সংগঠন এবং বৈশ্বিকভাবে ইখওয়ান বা মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্তর্ভুক্ত । অর্থাৎ মিসরের ইখওয়ান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর অনুরূপ আদর্শের অনুসারী। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের এই নির্বাচনের দিন আল কায়েদা ইন ইরাক ভোটকেন্দ্র বা ভোটার কোথাও ই কোনো আক্রমণ পরিচালনা করেনি।



    ১৫ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যকার আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহঃ-

    ১) সুন্নি ভোটারদের ৮০% ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন সুতরাং ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার উভয় ক্ষেত্রেই শিয়া-সুন্নি সংমিশ্রিত অবস্থায় ছিল।
    ২) ভোটের দিন আল কায়েদা ইন ইরাকের পক্ষ হতে ভোট কেন্দ্র এবং ভোটার কোথাও ই কোনো হামলা চালানো হয়নি।


    উপরের ২০০৫ এর ডিসেম্বরের নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রদত্ত তথ্যের সূত্রঃ-

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/Dece...ntary_election

    ইনসাইড আর্মি অব টেরর

    https://en.m.wikipedia.org/wiki/2005_in_Iraq



    জানুয়ারীর নির্বাচনে আল কায়েদা ইন ইরাক কতৃক হামলা করা এবং ডিসেম্বরের নির্বাচনে হামলা করা হতে বিরত থাকার কারন অনুসন্ধান

    ২০০৫ এর জানুয়ারীর নির্বাচনে আল কায়েদা ইন ইরাক কতৃক সর্বাত্মক হামলা পরিচালনা করা হলেও ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোনো প্রকার হামলা পরিচালনা না কারন নিহিত রয়েছে শিয়া এবং গনতান্ত্রিক ইসলামি দলসমূহের ব্যাপারে আল কায়েদার কর্মকৌশল বা নীতিমালার ভিন্নতার মধ্যে। নিম্নে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো....

    শিয়া (রাফেযী), কাদিয়ানী ও ইসমাইলীদের ব্যাপারে আল কায়েদার কর্মকৌশল

    ১। আল কায়েদা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে শিয়া (রাফেযী), কাদিয়ানী এবং ইসমাইলীদের কাফের মনে করে এবং মুসলমানদের মাঝে এসব ফিরকাগুলোর গোমরাহি স্পষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করে।
    ২। আল কায়েদার কৌশল হলো, জালেম কুফরি শাসনব্যবস্থা এবং তার রক্ষক সশস্ত্র শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো পার্শ্ব যুদ্ধে জড়িত না হওয়া। এজন্য শিয়া (রাফেযী), কাদিয়ানী কিংবা ইসমাইলীরা যদি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ'র বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ না করে, তাদের বিরুদ্ধে জামাআতও যুদ্ধে জড়িত হয় না, বরং নিজেদের সম্পূর্ণ মনযোগ নিবিষ্ট করে কুফরি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যা এসকল ফিরকাসহ দ্বীনের সকল দুশমনের প্রতিরক্ষা করে এবং তাদের প্রতিষ্ঠার জন্য পৃষ্ঠপোষকতাকরে।
    ৩। শিয়া (রাফেযী), কাদিয়ানী এবং ইসমাইলীদের কেউ যদি আহলুস সুন্নাহ'র বিরুদ্ধে আগ্রাসনে লিপ্ত হয়, তাহলে এই আগ্রাসনকে বন্ধ করার জন্য তাদের নেতাদের ও যোদ্ধাদের পূর্ণ জবাব দেয়া হবে৷ যদিও এক্ষেত্রেও কুরআনের বাণীর ভিত্তিতে এটিই অগ্রগণ্য বিবেচ্য হবে যে, প্রতিরক্ষা সংস্থা এবং ক্ষমতায় থাকা শিয়া (রাফেযী) ও কাদিয়ানী নেতৃত্বকে দৃষ্টান্তমূলক জবাব দেয়া, যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ'র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
    ৪। যতক্ষণ পর্যন্ত কুফরি শাসনব্যবস্থার পরাজয় না হবে, এসব ফিরকাগুলোর ব্যাপারে আল কায়েদা উপরোল্লেখিত কৌশলের ভিত্তিতে কাজ করবে। বিজয়ের পর উম্মতের উলামায়ে কেরাম তাদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবেন, তার উপরই আমল করা হবে ইনশাআল্লাহ।
    ৫। শিয়া (রাফেযী), কাদিয়ানী এবং ইসমাইলীদের এসব লোক, যারা নিম্নে উল্লেখিত আল কায়েদার মূল লক্ষ্যবস্তুর কোনো একটির অন্তর্ভুক্ত, তাদেরকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ'র প্রতি বিদ্বেষের জন্য নিশানা বানানো হবে।
    আল কায়েদার সামরিক আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু সমূহ

    ১) শরীয়ত প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধক এবং আমেরিকার আধিপত্য বজায় রাখা রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র শক্তি, যা গুরুত্বের ক্রমানুসারে নিম্নরূপঃ

    ক. গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের অফিসার এবং কর্মী।
    খ. সশস্ত্র বাহিনীর (সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, এফসি) উচ্চপর্যায়ের অফিসার।
    গ. আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ( কাউন্টার টেররিজম ডিপার্টমেন্ট, পুলিশ) উচ্চপর্যায়ের অফিসার।

    ২) ঐসব মন্ত্রী ও উচ্চ পর্যায়ের ব্যুরোক্র্যাট অফিসার, যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত।
    ৩)ঐসব অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্রবাহিনীর অফিসার ও প্রাক্তন শাসক, যারা শরীয়ত প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছে।
    ৪) নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননাকারী। আমাদের মা-বাবারা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য কুরবান হোক! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানের জন্য যদি নিজেদের সবকিছুও কুরবান করতে হয়, তাতেও আমরা দ্বিধা করবো না এবং সর্বমূল্যে হলেও আমরা আমাদের প্রিয় হাবীব মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষা করবো ইনশাআল্লাহ।
    ৫) আমাদের বন্দী ভাইবোনদেরকে মুক্ত করার জন্য–

    ক. কারাগারে আক্রমণ করা
    খ. জেলখানার আইজি, সামরিক প্রতিষ্ঠানের অফিসার এবং পশ্চিমা দেশের নাগরিকদের অপহরণ

    ৬) ভূখণ্ডে ধর্মহীনতার প্রচলনকারী মুলহিদ (ইসলামের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ ঐসব ব্যক্তি, যারা নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে)। কেননা আমাদের সমাজকে ধর্মহীনতা থেকে বাঁচানো আমরা ফরজ মনে করি। তবে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের অনুমতি ব্যতীত নিজ থেকে এমন অপারেশন করার অনুমতি আমরা আমাদের মুজাহিদদেরকে দেই না। তাছাড়া জামাআত এমন বিষয়ে হক্বপন্থী উলামায়ে কেরাম থেকে ফাতওয়া নেয়াকে আবশ্যক মনে করে এবং এরপর সকল মাসলাহা-মাফসাদা (লাভ-ক্ষতি) যাচাই করে লক্ষ্যবস্তুর ব্যাপারে ফয়সালা দেয়।
    ৭) দ্বীনদার শ্রেণীর মানুষদের হত্যাকারী। কেননা আমরা দ্বীনদার শ্রেণী ও হক্বপন্থী আলেমদেরকে রক্ষা করা আমাদের বিশেষ দায়িত্ব মনে করি এবং এক্ষেত্রেও লক্ষ্যবস্তু নির্ণয় করার জন্য আল কায়েদার সংশ্লিষ্ট শাখার আমীর এবং নায়েবে আমীরের অনুমতি নেয়া জরুরী।


    ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহের ব্যাপারে আল কায়েদার কর্মকৌশল



    ১। আল কায়েদা গণতন্ত্রকে আমরা শরীয়তের আলোকে কুফরি মনে করে। এতে যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে যে কোনো দলের অন্তর্ভুক্তি শরীয়ত প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের পরিবর্তে কুফরি শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করে। তারপরও আল কায়েদা কখনোই গণতন্ত্রে অংশ নেয়া প্রত্যেক ব্যক্তিকে কাফের মনে করে না।

    ২। গণতন্ত্রে অংশ নেয়া ইসলামী দলগুলোর অংশ নেয়ার অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেয় যেমন মাদরাসাগুলোর সুরক্ষা, পার্লামেন্টের মাধ্যমে ধর্মহীনতার বন্যাকে বাঁধ দেয়া অথবা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামী শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। দ্বীনের সেবা অথবা শরায়ত প্রতিষ্ঠার জন্য পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার এসব ব্যাখ্যাকে আল কায়েদা বাতিল মনে করে। কিন্তু এসব কারণে না আল কায়েদা তাদের তাকফির করে না তাদেরকে সামরিক টার্গেট বানানো জায়েয মনে করে। তবে যেহেতু তাদের এই কাজ কুফরি শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে, এজন্য আল কায়েদা দাওয়াতের মাধ্যমে তাদেরকে এই হারাম কাজ থেকে বিরত রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করে।

    ৩। এসব জামায়াতের সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ'-এর মত নেক কাজগুলোকে আল কায়েদা খোলাখুলি উৎসাহিত করে এবং গণতান্ত্রিক খেল-তামাশা ও অন্যান্য ভুলত্রুটির বিষয়ে প্রকাশ্য সমালোচনা ও নসিহত করে।

    সুতরাং এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে আল কায়েদা কখনোই গনতান্ত্রিক ইসলামিদল সমূহকে ঢালাও তাকফির করে না এবং তাদের সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা জায়েয মনে করে না।


    ২০০৫ এর জানুয়ারীর নির্বাচনে হামলা করার কারন



    ২০০৫ সালের জানুয়ারীর নির্বাচনে অংশ নেওয়া বৃহত্তম শিয়া রাজনৈতিক জোট দুটি হলো

    ১)ইরাকি লিস্ট
    ২)ন্যাশনাল ইরাকি অ্যালায়েন্স

    ইরাকি লিস্ট শিয়া জোটটি ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনে সর্বাত্মক ভাবে সহায়তা করে। বিশস্ত মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায় ইরাকি লিস্ট শিয়া জোটটির নেতা আইয়াদ আলাভী ছিল সিআইএ এর বিশস্ত পাপেট । ২০০৪ সালের ২৮ জুন আমেরিকা অন্তর্বতীকালীন সরকারের নামে ইরাকি লিস্টের নেতা তাদের বিশস্ত গোলাম আইয়াদ আলাভীর হাতেই ইরাকের ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলো।


    ইরাকি লিস্টের মতো করে ন্যাশনাল ইরাকি অ্যালায়েন্স জোটের অন্তর্ভুক্ত দলসমূহ ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইরানের বিশস্ত দোসর।


    ইরাকি লিস্ট এবং ন্যাশনাল ইরাকি অ্যালায়েন্সের রাজনৈতিক দল সমূহের নেতারা ছিল ইরাকে আমেরিকান দখলদারিত্বের পৃষ্ঠপোষক এবং অন্যতম সুবিধাভোগী। আর এই রাজনৈতিক দল সমূহের কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে আমেরিকান দখলদারদের সাহায্য করা, সুন্নি মুসলিমদের উপরে নির্যাতন করা, রাসূল সাঃ এর অবমাননা করা সহ আরো অনেক গুরুতর অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। যেসব অপরাধের কারনে আল কায়েদা শিয়াদের সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা জায়েয মনে করে এই শিয়া রাজনৈতিক জোটের অন্তর্ভুক্ত দলসমূহের নেতা ও কর্মীরা সেসকল অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।


    ২০০৫ এর জানুয়ারীর নির্বাচনে সুন্নি মুসলিমরা অংশ না নেওয়ায় ভোটকেন্দ্র সমূহে কেবল শিয়া ভোটারদেরই উপস্থিতি ছিল। অতএব এই নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারদের উপরে হামলা পরিচালনা করলে কেবলমাত্র শিয়ারাই আক্রান্ত হবে। আল কায়েদা ইন ইরাকের সামনে আমেরিকা ও ইরানদের দোসর শিয়াদের আক্রমণ করার এই সুবর্ণ সুযোগ আসলে আল কায়েদা ইন ইরাকের মুজাহিদগণ ভোটকেন্দ্র এবং শিয়া ভোটারদের টার্গেট করে ১০০ টি হামলা পরিচালনা করেন এবং ৩৫ জনকে জাহান্নামে প্রেরন করেন।


    ২০০৫ এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে হামলা না করার কারন


    ২০০৫ এর ডিসেম্বরের এই নির্বাচনে ইসলামি গনতান্ত্রিক দল "ইরাকি ইসলামিক পার্টি" নেতৃত্বে সুন্নিদের গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক জোট ইরাকি অ্যাকর্ড ফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহন করে।

    এই নির্বাচনে সুন্নি ভোটারদের ৮০% অংশগ্রহণ করে। সুতরাং ভোটকেন্দ্র সমূহে ভোটারদের মধ্যে শিয়া - সুন্নি সংমিশ্রন ছিল। ভোট কেন্দ্র এবং ভোটারদের উপরে হামলা চালালে শিয়াদের পাশাপাশি সাধারণ সুন্নি মুসলিম ও ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহের নেতা-কর্মী নিহত ও আহত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল।

    উপরে উল্লেখ করা আল কায়েদার কর্মকৌশলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি নীতি হলো...

    ক) আল কায়েদা কখনোই গণতন্ত্রে অংশ নেয়া প্রত্যেক মুসলিমকে কাফের মনে করে না।

    খ) আল কায়েদা ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহকে তাকফির করে না এবং তাদেরকে সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা জায়েয মনে করে না।

    আর এ কারনেই আল কায়েদা ফি বিলাদির রফেদাইন বা আল কায়েদা ইন ইরাক এর আমীর আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ২০০৫ এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে হামলা চালানো হতে সম্পূর্ণরুপে বিরত থাকেন।


    আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ও আল কায়েদার কর্মকৌশল বা আদর্শের অভিন্নতা


    আল কায়েদা ফি বিলাদির রফেদাঈন তথা আল কায়েদা ইন ইরাক এর আমীর আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ কতৃক ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে সর্বাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং ১৫ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কোনো আক্রমণ পরিচালনা হতে বিরত থাকেন। কোনো জামায়াহ কিংবা ব্যাক্তির আদর্শ সবচেয়ে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে তার কার্যক্রমের মধ্যে। ২০০৫ এর জানুয়ারী ও ডিসেম্বরের নির্বাচনের সময় আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর কার্যক্রম বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্টরুপে প্রতিতাভ হয় যে, গনতান্ত্রিক দলসমূহের ব্যাপারে আল কায়েদার কর্মকৌশল বা আদর্শ "ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহকে তাকফির না করা এবং তাদেরকে সামরিক টার্গেট বানানোও জায়েয মনে না করা" অনুসরণ করার কারনেই আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আক্রমণ করা হতে বিরত থাকেন।

    অতএব এটা সুস্পষ্ট যে, গনতান্ত্রিক দলসমূহের ব্যাপারে আল কায়েদা ফি বিলাদির রফেদাঈন ও তার আমীর আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর কর্মকৌশল বা আদর্শ এবং তানজিম আল কায়েদার কর্মকৌশল বা আদর্শ এক ও অভিন্ন। আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ছিলেন আল কায়েদার আদর্শের প্রতি অনুগত একজন মুজাহিদ।

    আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ হতে আইএসের বিচ্যুতি


    দাওলা দুই মাস পূর্বে জামায়াতে ইসলামী এবং সম্প্রতি জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম - ফজলের সমাবেশে সশস্ত্র আক্রমণ পরিচালনা করে। দাওলার এই আক্রমণে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনসাধারণ আহত-নিহত হয়। জমিয়তের সমাবেশের আক্রমণে কেবল যুবক-শিশুই নিহত হয় ২৩ জন।

    অপরদিকে আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ইরাকের ২০০৫ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে সাধারণ মুসলিম জনসাধারণ এবং ইসলামি গনতান্ত্রিক সংগঠন ইরাকি ইসলামিক পার্টি অংশগ্রহণ করায় নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র এবং ভোটারদের উপর আক্রমণ করা হতে বিরত থাকেন।

    সাধারণ মুসলিম জনসাধারণকে সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হতে আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ সর্বদা বিরত থাকতেন এবং সুযোগ পাওয়ামাত্র ক্রুসেডারদের দোসর কাফের শিয়া রাজনৈতিক জোটদ্বয়ের অন্তর্ভুক্ত দলসমূহের উপরে সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করতেন, অপরদিকে দাওলা তাগুত, ধর্ম নিরপেক্ষ ও নাস্তিক দলসমূহ বাদ দিয়ে বেছে বেছে সাধারণ মুসলিম এবং ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহের উপরে সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করে।

    সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর আদর্শ আর দাওলার আদর্শের মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য বিদ্যমান। দাওলা কখনোই আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর প্রকৃত আদর্শের ধারক নয় বরং দাওলা আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর উপরে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা একটি নিকৃষ্ট জামায়াহ।

    আল কায়েদা ও মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ কে নিয়ে দাওলার করা মিথ্যাচারের জবাব


    দাওলার প্রোপাগাণ্ডা মূলক প্রবন্ধের নবম প্যারায় লেখক তানজিম আল কায়েদাকে দুটো প্রশ্ন করছেন এবং আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর উপরে নিকৃষ্ট মিথ্যা অপবাদ আরোপ করার চেষ্টা করেছেন, নিম্নে তার জবাব প্রদান করা হলো।

    দাওলার প্রশ্নঃ- তারা আজকে দা ও লা তু ল ইসলামের হা ম লা কে নিন্দা জানাচ্ছে, তবে তারা কেন শাইখ যা র কা ও য়ী র হামলাকে নিন্দা জানায় না?

    উত্তরঃ- আল কায়েদা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ হতে শিয়াদের কাফের মনে করে। ২০০৫ এর জানুয়ারীর নির্বাচনে অংশ নেওয়া শিয়া রাজনৈতিক জোট গুলো ইরাকের মার্কিন দখলদারিত্বের পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা পালন করছিলো। সুতরাং আল কায়েদার সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের নীতিমালা অনুযায়ী শিয়া রাজনৈতিক দলসমূহের উপরে হামলা পরিচালনা করাকে আল কায়েদা অবৈধ কিংবা নাজায়েজ মনে করে না। অতএব আল কায়েদা কেনো আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ এর হামলার নিন্দা জানাবে ?


    দাওলার প্রশ্নঃ- তারা কেন শাইখ যা র কা ও য়ী কে খারেজি বলে অপবাদ দেয় না?

    উত্তরঃ- কেননা ইসলামি শরীয়তের আলোকে শিয়াদের হত্যা করা খারেজীদের গুণ নয় বরং শরীয়াহসম্মত।

    দাওলার মিথ্যাচার ও মিথ্যা অপবাদঃ- আমাদের ভাই আব্দুল্লাহ আল মুহাজির (বাজাওরে হা ম লা কা রী) যদি গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের উপর হা ম লা করে থাকে তবে শাইখ যা র কা ও য়ী রাহিমাহুল্লাহ সাধারণ ভোটারদের উপর হা ম লা চালিয়েছেন। তবে তিনি কেন এর কারণে তাদের নিকট খারেজি সাব‍্যস্ত হন না?

    উত্তরঃ-
    প্রবন্ধের এই অংশে লেখকের বৃদ্ধিবৃত্তিক কদর্যতা এবং দাওলার চিরাচরিত মিথ্যাবাদী চরিত্রের পরিপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

    লেখক দাবি করছে বাজাউরে দাওলা যেমন ইসলামি গনতান্ত্রিক দলের সমাবেশে হামলা করেছে তেমনি হামলা নাকি আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ পরিচালনা করেছেন। অথচ তথ্য-প্রমানের আলোকে এটা সুস্পষ্ট যে আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ আমেরিকানদের দোসর শিয়া রাজনৈতিক জোট সমূহের ভোটকেন্দ্র এবং শিয়া ভোটারদের উপরে হামলা করেছেন। কোনো ইসলামি গনতান্ত্রিক দলের সদস্য, সাধারণ মুসলিম ভোটার এবং ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহের সমাবেশে বোমা হামলা করেননি।

    সুতরাং লেখকের দাবিটি আবু মুসআব আয যারকাওয়ী এর প্রতি দাওলার করা নিকৃষ্ট মিথ্যাচারের এক জলজ্যান্ত নমুনা



    পরিশিষ্ট


    ইসলামি গনতান্ত্রিক দলসমূহের ব্যাপারে আল কায়েদার যে আদর্শ /কর্মকৌশল অর্থাৎ তাকফির না করা, সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ না করা। সেই আদর্শ বা কর্মকৌশল এর উপরে আল কায়েদা আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ হতে শুরু করে আজ পর্যন্ত অটল ও অবিচল রয়েছে। খাওয়ারিজ অপরাধী গোষ্ঠী দাওলা ই পথভ্রষ্টতা ও বিচ্যুতির নিকষ কালো আধারে পথ হারিয়েছে।

    আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ ক্রুসেডার ও শিয়াদের প্রতি একটু বেশিই কঠোর মনোভাব পোষন করতেন কিন্তু তিনি কখনোই খাওয়ারিজ দাওলার মতো ইসলামি শরীয়ত ও আল কায়েদা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকনির্দেশনার বাইরে গিয়ে সাধারণ মুসলিম জনসাধারণকে সামরিক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে নির্ধারণ করেননি।

    আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ শাহাদাত বরনের পূর্ব পর্যন্ত আল কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা এবং কর্মকৌশলের পরিপূর্ণ রুপে অনুসরণ করেছেন।

    সুতরাং মুসলিম উম্মাহর প্রতি নিবেদন করবো, আল কায়েদা, আবু মুসআব আয যারকাওয়ী রহিঃ, কিংবা অন্য যেকোনো বিষয়ে মিথ্যাবাদী খাওয়ারিজ অপরাধী গোষ্ঠী দাওলা কতৃক আনিত কোন তথ্য যাচাই বাছাই না করে গ্রহন করবেন না।



    মিথ্যাচার , প্রোপাগাণ্ডা, প্রবঞ্চনা যেন দাওলার সমর্থকরা তাদের চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিনত করে নিয়েছে। নিজেদের নিকৃষ্ট অপকর্ম সমূহ ঢাকার জন্য কুরআন হাদিসের অপব্যাখ্যা হতে শুরু করে মুজাহিদ আলিম, মুজাহিদীন আমিরদের উপরে মিথ্যা অপবাদ আরোপ, মিথ্যাচার, গালিগালাজ এমন কোন হীন অপকর্ম নেই যা দাওলার সদস্য ও সমর্থকরা করেনি।

    আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদদের রক্তপিপাসু খাওয়ারিজ সন্ত্রাসীগোষ্ঠী দাওলার নোংরা ছোবল হতে মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদদের হেফাজত করেন। আমীন।



    আইএসের পথভ্রষ্টটা ও গোমরাহি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান অর্জন করতে সহায়ক কিছু লিংক নিম্নে প্রদান করা হলো। লিংক গুলো হতে নিজে উপকৃত হোন এবং অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিন।নিরাপত্তার জন্য লিংক সমূহ টর ব্রাউজার অথবা মিলিটারি গ্রেডের ভিডিএন দিয়ে ভিজিট করবেন
    দায়েশ ও খাওয়ারিজ আর্কাইভ – আইএস বা কথিত ইসলামিক স্টেট সম্পর্কিত বিশাল বাংলা সংকলন



    https://dawahilallah.com/forum/জিহাদি-প্রকাশনা/ডকুমেন্টারি/18528-দায়েশ-ও-খাওয়ারিজ-আর্কাইভ-আইএস-বা-কথিত-ইসলামিক-স্টেট-সম্পর্কিত-বিশাল-বাংলা-সংকলন




    অপরাধী গোষ্ঠী খাওয়ারিজ দাওলা সম্পর্কিত অডিও, ভিডিও, পিডিএফ এর আর্কাইভ


    https://archive.org/details/khaoarij_archive_alfirdaws

    Last edited by Muhsin Farhat; 08-09-2023, 12:33 PM.
Working...
X