আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
২য় পর্ব
==================================================
===============================
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
২য় পর্ব
==================================================
===============================
ভূমিকা
প্রত্যেক আদর্শের কিছু স্থায়ী এবং কিছু পরিবর্তনশীল বিষয় থাকে। স্থায়ী বিষয়সমূহ সময়, ব্যক্তি অথবা স্থান এর উপর ভিত্তি করে হলেও কখনোই বদলায় না। পরিবর্তনশীল বিষয়সমূহ সময়ের সাথে, স্থানের সাথে অথবা ব্যক্তির সাথে পরিবর্তনশীল। উদাহরণস্বরূপ, সলাত কি স্থান, কাল, পাত্র ভেদে পরিবর্তন হয়? না, আমাদের শরীরসমূহ পূর্ববর্তী সাহাবাদের মত একই এবং আমাদের রবও একজন, সুতরাং এটা একটি স্থায়ী। পরিবর্তনশীল বিষয়ের উদাহরণ হল একজন খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি।
আজ আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো, জিহাদের স্থায়ী বিষয় সমূহ সম্পর্কে আলোচনা এবং তা স্মরণ রাখা ও সেই সাথে মানুষকে তা স্মরণ করিয়ে দেয়া। এটা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজ আমরা মানুষকে জিহাদের স্থায়ী বিষয় সমূহকে পরিবর্তনশীল বিষয়ে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করতে দেখছি এবং তা সমর্থনের উদ্দেশ্য হল, তা অনুসরণ না করা।
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাযিঃ) বলেন, “আমাকে যদি একটি সুন্দর মহিলার সাথে বিবাহ দেয়া হয় যাকে আমি ভালবাসি বা যদি আমাকে একটি সদ্যজাত পূত্র সন্তানের সুসংবাদ শোনানো হয়, তা আমার কাছে একটি বরফাচ্ছন্ন শীতল রাতে একটি সেনাদলের মাঝে পরদিন সকালে শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার তুলনায় কম পছন্দনীয় এবং প্রিয় হবে। আমি তোমাকে জিহাদে লিপ্ত থাকার উপদেশ দেই।”
এই কথাগুলো ছিল খালিদ (রাযিঃ) -এর মৃত্যুর পূর্বের কথা।
তৃতীয় দলপতি আব্দুল্লাহ্ বিন রাওয়াহা (রাযিঃ) মুতা’হর যুদ্ধে মুসলিম সেনাদলের দায়িত্ব নেন। তার এক চাচাতো ভাই তাকে এক টুকরো শুকনো গোশত খেতে দিয়ে বলেন যে “এটা দিয়ে নিজেকে শক্তিশালী কর। আজ তোমার উপর দিয়ে অনেক ধকল গিয়েছে।” তিনি তা ধরলেন এবং এক কামড় দিলেন, তখন তিনি নিজকে বললেন, “তুমি এখনও এই পৃথিবীতে?” গোশতের টুকরোটি ছুড়ে দিলেন এবং যুদ্ধ করলেন, যতক্ষণ না তিনি শহীদ হন।
আবু মুজানা আল আব্দী বলেন, আমি আবু আল খাসাসইয়াহ (রাযিঃ) -কে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলাম এবং বললাম আমি তার কাছে বাইয়্যাহ দেব, রসূলুল্লাহ্ ﷺ আমার থেকে বাইয়্যাহ নিলেন এর উপর ভিত্তি করে যে, আল্লাহ্ ছাড়া উপাস্য যোগ্য কোন মাবু’দ নেই, রসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর রসূল, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত পড়া, রামাজানের রোযা রাখা, যাকাত আদায় করা, হজ্জ পালন করা, এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা।” আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল ﷺ এগুলোর দু’টি আমি করতে পারবো না। প্রথমটি হল যাকাত, আমার মাত্র ১০টি উট রয়েছে। সেগুলো আমার পুরো সম্পত্তি। দ্বিতীয়ত হল জিহাদ। আমি শুনেছি যে কেউ যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পালিয়ে যায়, সে আল্লাহর গজবে নিপতিত হয়। আমি ভয় করি যে যদি যুদ্ধের সম্মুখীন হই, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হতে পারি এবং আমার আত্মা আমাকে পরাজিত করতে পারে। রসূলুল্লাহ্ ﷺ তার হাত শক্ত করে ধরলেন এবং নেড়ে বললেন, “জিহাদও না, সাদাকাও না! তবে তুমি কেমন করে জান্নাতে প্রবেশ করবে?” আবু আল খাসাসইয়াহ (রাযিঃ) বলেন, “রসূলুল্লাহ্ ﷺ অতঃপর যা উল্লেখ করেছিলেন তার প্রত্যেকটির উপর আমার বাইয়্যাহ নিলেন।”
অধ্যায়ঃ ১
প্রথম বৈশিষ্ট্যঃ কিয়ামত দিবস পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকবে
﴿ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴾
“তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল, যদিও তোমাদের নিকট তা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।”
“তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল, যদিও তোমাদের নিকট তা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।”
প্রথম বৈশিষ্ট্যঃ কিয়ামত দিবস পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকবে
সমগ্র পৃথিবী আজ ইসলামের একটি ইবাদতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, আর তা হচ্ছে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ। অনেক জাতি বিশেষ করে যারা শক্তিশালী, জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর বিরুদ্ধে লড়তে বিভিন্ন উৎস থেকে (সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক, প্রচারমাধ্যম, জনপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ, দল ইত্যাদি) জোড় চেষ্টা করছে। ধর্মীয় শক্তির দিক থেকে দেখলে, আমেরিকা এবং ইসরাঈল ধর্মীয় কারণে ইসরাঈলী রাষ্ট্রের জন্য একত্রে কাজ করছে, আর এর কারণটি হচ্ছে- মাসীয়াহর (ঈসা ) অবতরণ। রাজনৈতিক শক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে, সমগ্র পৃথিবীই আজ ইসলামী জঙ্গীবাদ দমন নিয়ে উদ্ধিগ্ন। পৃথিবীর প্রতিটি সরকারই মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ই রাজনৈতিকভাবে ইসলামের বিরূদ্ধে লড়তে (বিশেষ করে জিহাদের বিরূদ্ধে) একত্রিত হয়েছে। আর মিডিয়া সমস্ত জাতিকে ইসলামের আসল রূপ সম্পর্কে প্রতারিত করতে বেশ ভাল ভূমিকা রাখছে। তারা ইসলামকে এমন রূপে তুলে ধরছে, যা সত্যিই প্রতারণাপূর্ণ।
জিহাদের পূর্বে “তারবিয়্যাহ” কি সত্যিই (জিহাদ না করার) একটি যৌক্তিক ওজর?
আল্লাহ্ বলেন,
﴿ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَعَسَى أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴾
“তোমাদের জন্য ক্বিতালের (যুদ্ধ) বিধান দেয়া হল, যদিও তোমাদের নিকট তা অপছন্দনীয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস, সম্ভবত তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।”
এই আয়াতে মুসলিমদের যুদ্ধ করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। অনেক মুসলিম এবং ইসলামী জামা’আত বলে যে, জিহাদ করার পূর্বে, তারবিয়্যাহ অবশ্যক। তারা ব্যাপারটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যেন, “তারবিয়্যাহ হচ্ছে জিহাদের পূর্বে অবশ্য পূরণীয় একটি শর্ত। অতএব, এটি ছাড়া জিহাদ করা যাবে না।” যার মানে দাড়াচ্ছে যে, তারবিয়্যাহ জিহাদের পূর্বে অবশ্য পালনীয় হুকুম। অন্যরা বলে, “আমরা এখন মক্কী যুগের অবস্থায় আছি। অতএব এখন কোন জিহাদ নেই।” এটা কি যুক্তি সঙ্গত? জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ স্থগিত রাখার কোন ন্যায় সঙ্গত কারণ আছে কি? বুঝার সুবিধার জন্য এবার প্রশ্নটি একটু পরিবর্তন করা যাক। যদি কেউ রমাদান মাসে মুসলিম হয়, তবে কি আপনি তাকে বলবেন যে, রোযা রাখার পূর্বে তাকে তারবিয়্যাহ করতে হবে? তাকে কি বলবেন যে, আমরা এখন মক্কী অবস্থায় আছি অতএব, আপনাকে রোযা রাখতে হবে না? রোযা শুরু করার আগে আপনার ঠিক ১৫ বছর সময় আছে, কারণ সেই সময়ই রোযার আদেশ এসেছিল। অতএব, এর আগে রমাদানে একটি রোযাও না রেখে খাওয়া দাওয়া চালিয়ে যেতে পারেন। এটা আসলে কথার কথা। এমনটি কেউই বলে না। তাহলে কেবল জিহাদের বেলায় কেন আমরা এমনটি বলি? এদের মধ্যে পাথর্ক্য কোথায়, যেখানে জিহাদের হুকুম ও সিয়ামের হুকুমের ধরণ একই?
﴿... كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ ...﴾
“তেমাাদের উপর সিয়ামের বিধান দেয়া হল ...।”
﴿... كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ ...﴾
“তোমাদের উপর ক্বিতালের বিধান দেয়া হল ...।”
“তেমাাদের উপর সিয়ামের বিধান দেয়া হল ...।”
﴿... كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ ...﴾
“তোমাদের উপর ক্বিতালের বিধান দেয়া হল ...।”
দু’টি বিধানই সূরা আল-বাকারায় এসেছে। ‘তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেয়া হল’ এবং ‘তোমাদের জন্য ক্বিতালের বিধান দেয়া হল’; তাহলে আমরা এদের মধ্যে পার্থক্য করছি কেন? সত্যি বলতে গেলে, সিয়ামের বিধান জিহাদের পরে এসেছে। সিয়ামের বিধান এসেছে নবুয়্যতের ১৫ বছর পর আর জিহাদের বিধান এসেছে নবুয়্যতের ১৩ বছর পর। এদের মধ্যে ২ বছরের পার্থক্য কেন? অতএব, যুক্তিসঙ্গত কথা বললে, আমাদের বলতে হয়, সিয়াম পালনের পূর্বে তারবিয়্যাহ করতে হবে। আমরা কিভাবে জিহাদ ফী সাবিলিল্লার পূর্বে তারবিয়্যাহ বিধান দেই, যেখানে রসূল ﷺ তা করেন নি? যখন কেউ মুসলিম হত, তিনি কি তাকে শাইখদের কাছে পড়তে বলতেন এবং এরপর সে জিহাদ করার উপযুক্ত হত? তিনি কি বলতেন জিহাদ করার পূর্বে তোমার আরবী শিখতে হবে অথবা বিদেশে গিয়ে ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে আসতে হবে?
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ “আমর ইবন উকায়শ প্রাক-ইসলামী যুগে সুদের বিনিময়ে ঋণ দিয়েছিল, সেই টাকা ফেরত নেয়ার পূর্বে সে ইসলাম কবুল করাটা অপছন্দ করল। উহুদের (যুদ্ধের) দিন সে এসে জিজ্ঞাসা করলঃ ‘আমার অমুক ভাই কোথায়?’ তারা উত্তর দিলঃ ‘উহুদে,’ সে জিজ্ঞাসা করলঃ ‘অমুক কোথায়?’ তারা বললঃ ‘উহুদে’, সে জিজ্ঞাসা করলঃ ‘অমুক কোথায়?’ তারা বললঃ ‘উহুদে’ অতঃপর সে তার জামা পড়ে ঘোড়ায় চড়ে বসল, এরপর তাদের দিকে এগিয়ে চলল। মুসলিমরা যখন তাকে দেখল, তারা বলে উঠল, ‘দূরে থাক, আমর’, সে বলল, ‘আমি মুসলিম হয়েছি’ সে আহত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করল। অতঃপর তাকে আহত অবস্থায় তার পরিবারের নিকট নিয়ে যাওয়া হল। সা’দ ইবন মুআয (রাযিঃ) তাঁর বোনের কাছে এসে বললঃ ‘তাকে জিজ্ঞাসা কর তো (সে কিসের জন্যে যুদ্ধ করেছে) গোত্রের জন্য, তাদের ক্রোধের ভয়ে, নাকি আল্লাহর ক্রোধের ভয়ে।’ সে বললঃ ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের ক্রোধের ভয়ে।’ এরপর সে মৃত্যুবরণ করল এবং জান্নাতে প্রবেশ করল। সে আল্লাহর জন্য কোন (এক ওয়াক্ত) সলাতও আদায় করেনি।”
যখন সে মুসলিম হয়েছিল, রসূল ﷺ কি তাকে কুরআন ও হাদীস পড়তে বলেছিলেন? উকাইশ (রাযিঃ) কিছুই করেনি, কেবল আল্লাহর পথে জিহাদ করেছিল এবং শহীদ হয়েছিল। একজন মুসলিমের পক্ষে সর্বোচ্চ যে মর্যাদা তাই সে অর্জন করেছিল। একজন ইহুদীর চেয়ে অধিক তারবিয়্যাহ আর কার দরকার হতে পারে? মানুষ বলে জিহাদের পূর্বে বেশি তারবিয়্যাহ দরকার। বুখায়রীক উহুদের ময়দানে মুসলিম হয়েছিলেন এবং শহীদ হয়েছিলেন। রসূল ﷺ বলেনঃ “বুখায়রীক ইহুদীদের মধ্যে সর্বোত্তম।” সে কোন আত্মিক উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নেয়নি। তারপরও রসূল ﷺ তাঁকে ইহুদীদের মধ্যে সর্বোত্তম আখ্যা দিয়েছেন। কেন? কারণ সে ময়দানে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন। এটা তারবিয়্যাহকে ছোট করে দেখার জন্য নয়, কিন্তু যখন একে আমরা জিহাদের সাথে অত্যাবশ্যক পূর্বশর্ত হিসেবে জুড়ে দেই, তখন দেখা যায় যে, এটা আসলে জরুরী নয়। তাহলে, কেন মুসলিমদের জিহাদের পূর্বে তারবিয়্যাহ প্রয়োজন? কারণ আল্লাহ মহামহিম বলেন, “তোমাদের জন্য ক্বিতালের বিধান দেয়া হল এবং তোমরা তা অপছন্দ কর ...।” - এটাই কারণ। কারণ মানুষ এটা অপছন্দ করে এবং এর থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন উপায় বের করতে থাকে। অতএব তারা বলে যে, আমাদের তারবিয়্যাহ দরকার অথবা শত্রুপক্ষ বেশি শক্তিশালী। এটা মানুষের ফিতরাতের অংশ। আল্লাহ্ তাই বলেছেন। যুদ্ধের বাস্তবতাটা এরকমই যে বেশিরভাগ মানুষই তা অপছন্দ করে। সাহাবীদের সময়ও এমন ছিল, এখনও তাই আছে।
সালাহউদ্দিন رحمه الله -এর সময়কার কিছু উলামাঃ
সালাহউদ্দিন আল-আয়্যুবী رحمه الله -এর সময়, তিনি তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য সেচ্ছাসেবকদের আহবান করলেন এবং এর ফলে কিছু শাইখ ও তাদের ছাত্ররা যোগদান করল। খবর ছড়িয়ে পড়ল যে ক্রুসেডাররা সমগ্র ইউরোপ থেকে সেনাবাহিনী সমাবশে করেছে। তখনকার দিনের তিন শক্তিশালী রাজার নেতৃত্বে তিনটি বাহিনী এগিয়ে আসছিল। রিচার্ড দ্যা লায়ন হার্ট (সিংহ হৃদয়), ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ এবং জার্মানীর রাজা ফ্রেডরিক। ফ্রেডরিকের একারই ৩,০০,০০০ সৈন্য ছিল (৩ লক্ষ)। অতএব, যখন উলামারা এ খবর জানতে পারল, তারা সেনাবাহিনী ত্যাগ করে চলে গেল। এসব উলামাগণ তো জানত যে তাদের লড়াই করা উচিত। তারা জানত, এ ব্যাপারে কি হুকুম আছে। কিন্তু হুকুমের কথা জানা মানেই এই না যে কেউ যুদ্ধ করবে।
আল্লাহ্ আহ্কামুল হাকীমিন বলেনঃ
﴿ وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آَتَيْنَاهُ آَيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ ﴾﴿ وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ذَلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ﴾
“তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনাও যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন, অতঃপর সে তাকে বর্জন করে, পরে শয়তান তার পিছনে লেগে যায়, আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভূক্ত হয়। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতে পারতাম, কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়; তার উপর তুমি বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে এবং তুমি বোঝা না চাপালেও হাঁপায়। যে সম্প্রপ্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এইরূপ, তুমি বৃত্তান্ত বিবৃত কর যাতে তারা চিন্তা করে।”
এটা এমন একজন আলিমের কাহিনী যে হুকুম জানতো, কিন্তু তা মেনে চলেনি। কেন? আল্লাহ্ বলেনঃ “কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।” আল্লাহ্ তাকে কুকুরের সাথে তুলনা করেছেন। অতএব, কেবল জ্ঞান থাকাই পরিত্রাণ পাবার উপায় নয়। সেই জ্ঞান অনুযায়ী আমল করতে হবে। বেশিরভাগ মানুষই এই অবস্থানে এসে বলে যে, তাদের কাছে এই বিষয়ের উপরে কোন ফাতওয়া নেই; অতএব তারা কিছু করতে সক্ষম নয়। কিন্তু এটা কিয়ামতের দিন তাদেরকে বাঁচাবে না। যদি আপনি জানেন যে এটাই সত্য, তাহলে আপনাকে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে, কোন আলিম তা অনুসরণ করুক আর না করুক।
আরও পড়ুন
Comment