Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ০৬ || জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ || - শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)] || ১১তম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ০৬ || জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ || - শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)] || ১১তম পর্ব

    আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
    কর্তৃক পরিবেশিত
    জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
    -শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
    [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
    এর থেকে
    ১তম পর্ব

    ==================================================
    ===============================


    ইসলামে বিজয়ের ১১ টি অর্থ রয়েছেঃ


    বিজয়ের প্রথম অর্থঃ ৮টি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিজয়

    বিজয়ের সপ্তম অর্থঃ তোমার আদর্শের বিজয়

    তোমার আদর্শের বিজয় হচ্ছে বিজয়ের সপ্তম অর্থ। আদর্শের সমারোহে তোমার আদর্শই সর্বোৎকৃষ্ট। তোমার আদর্শ এবং মূলনীতি জয়ের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। কখনও এটা সত্যিকার অর্থে জয়ী হয়, যখন তুমি তোমার রক্ত দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ কর। ইব্রাহিম (আঃ) যুক্তির মাধ্যমে তার নিজ গোত্রের বিরুদ্ধে তাঁর এই আদর্শে জয়ী হয়েছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেনঃ


    ﴿أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آَتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

    তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখ নাই, যে ইব্রাহীমের সাথে তাঁর রব সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ্ তাকে কর্তৃত্ব দান করেছিলেন। যখন ইব্রাহীম বলল, তিনি আমার রব যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই। ইব্রাহীম বলল, আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্ব দিক হতে উদয় করান, তুমি তাকে পশ্চিম দিক হতে উদয় করাও। অতঃপর যে কুফরী করেছিল, সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ্ যালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।”

    সূরা বুরুজে ছেলেটির কাহিনী যা গর্তের ঘটনার জন্ম দেয় তা হচ্ছে, রাজাটি ছেলেটিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। রাজার লোকেরা তাকে পর্বত হতে নিক্ষিপ্ত করে এবং সমুদ্রে ডুবিয়ে দিতে চায়। কিন্তু প্রত্যেকবার রাজা ব্যর্থ হয়। ছোট ছেলেটি তখন রাজার কাছে এল এবং বলল, “যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও, তবে আমার একটি তীর নাও এবং বল বিসমিল্লাহ; অতঃপর আমাকে আঘাত কর,তাহলে তুমি আমাকে মারতে পারবে। কিন্তু তোমাকে তা করতে হবে আল্লাহর নামে।” ছোট ছেলেটি আরেকটি শর্ত জুড়ে দিল যে, রাজাকে তা প্রত্যেকের সামনে করতে হবে। যখন প্রত্যেকে দেখল যে, রাজা এ তরুণকে আল্লাহর নামে হত্যা করতে সমর্থ হল, তখন কি ঘটল? তখন তারা সবাই মুসলিম হয়ে গেল এবং এটা ঠিক তাই, যা ছোট ছেলেটি চেয়েছিল এবং ঠিক তা, যা রাজা এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। রাজা এই তরুণকে নির্মূল করতে চেয়েছিল তার বিশ্বাসের কারণে এবং এই কারণে প্রত্যেকে মুসলিম হয়ে গেল। সে এই তরুণের ‘দাওয়া’-কে ভয় পেয়েছিল এবং এখন তার এই দাওয়া পুরো রাজত্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে তরুণটি দাওয়ার জন্য মূল্য পরিশোধ করেছে এবং এ মূল্য ছিল তার নিজের রক্ত। আমরা আমাদের সমসাময়িককালে সাইয়েদ কুতুবের رحمه الله মত মানুষদের দেখি। তিনি কালি এবং নিজ রক্ত দিয়ে লিখেছেন। শায়খ আব্দুল্লাহ আজ্জাম رحمه الله এবং শায়খ ইউসুফ আল উয়াইরি رحمه اللهতারা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বই লিখেছেন এবং তাঁদের মৃত্যুর পর এসব বইকে জীবন্ত করতে আল্লাহ্ যেন তাঁদের আত্মাকে এসব বইয়ের শব্দের মধ্যে প্রবেশ করে দিয়েছেন। এই ত্যাগ তাঁদের এই শব্দগুলোকে নতুন জীবন দিয়েছে।

    রসূলুল্লাহ্ বলেছেন, “একটি তাইফাহ্ সব সময়ে বিজয়ী থাকবে।” এখানে বিজয়ী থাকার অর্থ এই নয় যে তারা সব সময়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে জয় লাভ করতে থাকবে; বরং বিজয়ী থাকা অর্থ হচ্ছে তাদের দাওয়াহ্ সব সময়ে চালু থাকবে। তারা যুদ্ধে হেরে যেতে পারে কিন্তু তাদের দাওয়াহ্ বিজয় লাভ করবে এবং সর্বত্র ছড়িয়ে পরবে। কেউই তাদের দাওয়াহ্-কে বন্ধ করতে পারবেনা। এটি হচ্ছে সেই আদর্শ যার মাধ্যমে এই দলকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম শক্তিশালী রাখবে।

    বিজয়ের অষ্টম অর্থঃ কারামাহর মাধ্যমে শত্রুকে ধ্বংস করা

    আল্লাহ্ মুজাহিদীনদের শত্রুদের অলৌকিক উপায়ে বা ঘটনার মাধ্যমে ধ্বংস করবেন। এটা এ কারণে যে মুজাহিদীনরা তাদের সর্বোচ্চ সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছে। মুজাহিদীন এবং শত্রুদের শক্তির ব্যাপক ব্যবধানের কারণে আল্লাহ্ তাদের অলৌকিক উপায়ে সাহায্য করবেন। এই ধরনের ঘটনা ঘটে যখন মুজাহিদীনরা তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধের জন্য চেষ্টা চালায়যেহেতু তারা আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। আল্লাহ্  বলেনঃ


    ﴿فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ مُبْتَلِيكُمْ بِنَهَرٍ فَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَنْ لَمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِنْهُمْ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُمْ مُلَاقُو اللَّهِ كَمْ مِنْ فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ

    অতঃপর তালূত যখন সৈন্যবাহিনীসহ বাহির হল সে তখন বলল, আল্লাহ্ এক নদীর মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে কেউ তা থেকে স্বাদ গ্রহণ করবে না সে আমার দলভূক্ত আর যে কেউ তা হতে পান করবে সে আমার দলভূক্ত নয়; কিন্তু সে ছাড়া যে তার হস্তে এক কোষ পানি নিয়ে পান করবে। অতঃপর অল্প সংখ্যক ব্যতীত তারা তা হতে পান করল। সে এবং তার সঙ্গী ঈমানদারগণ যখন তা অতিক্রম করল, তখন তারা বলল, জালূত ও তার সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নেই। কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হবে তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে। আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন।”

    কিন্তু তাদের সবর থাকতে হবে।

    মু’সা  এবং ফিরআউনের মধ্যকার সংঘর্ষের প্রতি দৃষ্টি দাও। মুসা  এর পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল করেছেন, তারপর আল্লাহ্ অলৌকিকভাবে ফিরআউনকে ধ্বংস করলেন।

    যখন রসূলুল্লাহ্ কুরাইশদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য যুদ্ধ করলেন এবং সত্য পরিত্যাগ করার ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান দেখলেন, তিনি তাদের বিরুদ্ধে দো’আ করলেন, যেন আল্লাহ্ তাদেরকে দূর্ভিক্ষ এবং অনাহারে সাত বছর রাখে যেমনটি রেখেছিলেন ইউসুফ -এর লোকদেরকে। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেন, “তারা এক দূর্ভিক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হল যা তাদের এত অভূক্ত রেখেছিল যে শেষে তারা সবকিছু খেতে শুরু করল যেমন- মৃত জীব, চামড়া এবং এরূপ সবকিছু যা তারা হাতের কাছে পেত।”

    যখনই আকাশের দিকে ফিরে তাকাত তারা ধোয়া দেখতে পেত, ক্ষুধার তাড়নায় তারা এমনই ঘোরাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। আবু সুফিয়ান মুহাম্মদ এর নিকট এলেন এবং বললেন, “হে মুহাম্মদ , তুমি মানুষকে ভাল কাজ করতে বল এবং তুমি তাদেরকে পরিবারের প্রতি দয়ালু হতে বল, সুতরাং তুমি আল্লাহর কাছে আমাদেরকে রক্ষা করতে দো’আ কর।”

    এখন সে মুহাম্মদ এর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছেন যাতে তিনি তাদের জন্য দো‘আ করে। আল্লাহ্  বলেনঃ


    ﴿ فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ ﴾

    অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধূম্রাচ্ছন্ন হবে

    এইসব লোকরা ঘোরাচ্ছন্ন ছিল কারণ, কেউ যখন অত্যন্ত ক্ষুধার্ত থাকে তার অনুভূতি আক্রান্ত হয়। তাদের শ্রবণশক্তি দূর্বল হয় এবং দৃষ্টিশক্তিও দূর্বল হয়ে যায়।

    সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিণতি সমসাময়িককালের একটি মজবুত প্রমাণ। মুজাহিদীনরা সংখ্যায় কম ছিল, শক্তি, অস্ত্র-সস্ত্র এবং ক্ষমতার দিক দিয়েও সোভিয়েতের তুলনায় দূর্বল ছিল। কিন্তু যেহেতু সোভিয়েতরা আল্লাহর শত্রু ছিল, তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদের শত্রু ছিল, আল্লাহ্ তাদেরকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দিলেন। যেমন- দারিদ্রতা, ধ্বংস, দূনীর্তি এবং অন্যান্য শাস্তি, যতক্ষণ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে না গেল। জিহাদ এবং মুজাহিদীনদের কারণে এটা আলাদা হয়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। আল্লাহ্ তাদের সহায়তা করেছেন। কিছু লোক যুক্তি দেখায় যে, সমাজতান্ত্রিক হওয়ার কারণে সোভিয়েত ধসে পড়েছিল। এই যুক্তির মূল সমস্যা হল, আরও অনেক সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল যারা ভেঙ্গে যায় নি। কেউ যুক্তি দেখাবে যে, এটা তাদের ঋণের জন্য হয়েছে, হতে পারে। কিন্তু আমেরিকা সে সময় অধিক ঋণগ্রস্ত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের এই ধসে পড়ার ব্যাখ্যা শুধু একটাই হতে পারে- মুজাহিদীন ফী সাবিলিল্লাহ। আমরা আজ বলতে পারি যে, কোন জাতি যত শক্তিশালীই হোক না কেন, যদি তারা আল্লাহর আউলিয়ার (বন্ধু) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে মনস্থ করে, তবে তারা তাদের সমাপ্তির ব্যাপারে আশ্বস্ত হতে পারে। হতে পারে তাদের এই সমাপ্তি মুজাহিদীনের হাতে অথবা মুজাহিদীনদের বিপক্ষে যুদ্ধের পরিণামে আসতে পারে। কারণ একটি হাদীসে কুদসীতে রসূলুল্লাহ্ বলেন, আল্লাহ্  বলেনঃ “যে কেউ আমার আউলিয়ার বিরূদ্ধে দাড়ায়, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।”



    আরও পড়ুন
    ১০ম পর্ব

Working...
X