আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
১৪তম পর্ব
==================================================
===============================
অধ্যায়ঃ ৬
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যঃ পরাজয়ের সংজ্ঞা
﴿ وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴾
“তোমরা হীনবল হয়োনা না এবং দুঃখিতও হয়োনা; তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মু’মিন হও।”
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যঃ পরাজয়ের সংজ্ঞা
পরাজয় বলতে কি বুঝায়? মানুষ কি নিহত হলেই পরাজয় হয়ে যায়? তবে পরাজয় বলতে কি বুঝায়? এর সত্যতা নিয়ে যে দ্বন্ধ তা হলো সেই আদর্শগত দ্বন্ধ যা শারীরিক যুদ্ধের ফলাফলের ক্ষেত্রে ধরা হয়। কিন্তু এর বিষয়বস্তু হল আদর্শের সংঘর্ষ। কোন ব্যক্তি যদি তার আদর্শ পরিত্যাগ করে, তাই হল তাঁর পরাজয়।
৮ ধরনের পরাজয় রয়েছেঃ
পরাজয়ের তৃতীয় অর্থঃ কুফ্ফাদের প্রতি ঝুকে পড়া
আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ وَإِنْ كَادُوا لَيَفْتِنُونَكَ عَنِ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ لِتَفْتَرِيَ عَلَيْنَا غَيْرَهُ وَإِذًا لَاتَّخَذُوكَ خَلِيلًا ﴾
“আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা হতে তারা পদস্খলন ঘটাবার চেষ্টা প্রায় চূড়ান্ত করেছিল যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে তার বিপরীত মিথ্যা উদ্ভাবন কর; তবে তারা অবশ্যই বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।”
এবং
﴿وَلَوْلَا أَنْ ثَبَّتْنَاكَ لَقَدْ كِدْتَ تَرْكَنُ إِلَيْهِمْ شَيْئًا قَلِيلًا ﴾
“আমি তোমাকে অবিচল না রাখলে তুমি তাদের দিকে প্রায় কিছুটা ঝুঁকে পরতে।”
সুতরাং কুফ্ফারদের প্রতি ঝূঁকে পড়া পরাজয়ের একটি বিশেষ রূপ।
আল্লাহ্ আরও বলেনঃ
﴿ وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ ﴾
“আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না, নতুবা আগুন তোমাদেরকে গ্রাস করবে। আর আল্লাহ্ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নেই। এবং কারও মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রাপ্তও হবে না।”
আল্লাহ্ এখানে আমাদেরকে একটি কঠিন সতর্কবাণী দিয়েছেন যে, কুফ্ফারদের দিকে ঝুঁকে পড়া আমাদের জাহান্নামের আগুনে নিয়ে যাবে।
পরাজয়ের চতুর্থ অর্থঃ কুফ্ফারদের আনুগত্য করা
আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿... وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا ﴾
“... তার মনকে আমার স্মরণ হতে গাফেল করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তি অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমালঙ্ঘন করা। আপনি তার আনুগত্য করবেন না।”
পরাজয়ের পঞ্চম অর্থঃ হতাশ হয়ে পড়া
পরাজয়ের ৫ম অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিজয় তা ত্যাগ করা; আশা হারিয়ে ফেলা। এটা এমন এক মানসিক অবস্থা যা ঈমানের সম্পূর্ণ বিপরীত। এটা কিভাবে সম্ভব যে, তুমি বিশ্বাস কর আল্লাহ্ আল-ক্বাযী, আল-আযীয এবং বিজয়ের আশা ছেড়ে দাও? এটা তো কুফরেরই একটা বৈশিষ্ট্য, এটা তো তারাই (কুফ্ফার) যারা আশা ত্যাগ করে, কিন্তু মুসলিমের কখনোই আশা ত্যাগ করা উচিত নয়। যদি তোমার মানসিক অবস্থা ‘বিজয়ী’র মত হয়, তবে বাস্তবিকই আল্লাহ্ পাকের তাওফিকে তুমি বিজয়ী হবে। বিজয়ের জন্য আশা পরিত্যাগ এক মস্ত বড় অন্যায়।
আজ কুফ্ফাররা তাদের বিশাল সামরিক বাহিনী ও প্রচার মাধ্যমগুলোতে যে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে, তার কারণে অনেক মুসলিমই আজ আশাহত। কিছু মুসলিম আজ মুজাহিদীনদের সাহায্য করা পরিত্যাগ করেছে এই ভেবে যে, এটা একটা ব্যর্থ কারণ, তারা তাদের নিজেদেরকেই বলে, কেন আমি আমার টাকা এই মুজাহিদীনদের পিছনে ব্যয় করব? তারা তো কখনও এমন শক্তিধর শত্রু যাদের পারমানবিক অস্ত্র এবং অপেক্ষমান সৈন্য আছে তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে যাচ্ছে না? কিভাবে এই মুজাহিদীনরা জয়ী হবে যখন কুফ্ফারদের শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম রয়েছে, অথচ জনগণের কাছে পৌঁছানোর মত মুজাহিদীনদের কোন প্রচার মাধ্যমই নেই? এই ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ধারণাই প্রকাশ করে যে, তারা আল্লাহ্ পাকের উপর বিশ্বাস হারিয়েছে। এই মুসলিমরা বিজয়ের অর্থ বলতে শুধু যুদ্ধ ক্ষেত্রের বিজয়কেই বোঝে এবং তাই তারা আশা ত্যাগ করেছে।
আমরা দেখেছি যে, শত্রুর বিরুদ্ধে দাড়াঁনো এবং যুদ্ধ করার পূর্বেই আজ এই উম্মাহর অনেকেই পরাজিত হয়েছে। প্রচার মাধ্যমের যে প্রচারণা এই উম্মাহ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তার কারণেই মুসলিমরা আজ কোন চেষ্টার পূর্বেই আশা হারিয়ে ফেলছে। যখন তারা মানসিকভাবেই পরাজিত, তখন তারা সেই পরাজয়ের কোন ইসলামিক তাৎপর্য বের করার চেষ্টা করে। তারা তাদের বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণের জন্য প্রমাণাদি উপস্থাপনের চেষ্টা করে।
শত্রু যতই শক্তিশালী হোক না কেন, একজন মুসলিমের কখনই বিজয়ের আশা ত্যাগ করা উচিত না। যদি এই পরাজয় আমরা আমাদের অন্তরে প্রবেশ করতে দিই, সেক্ষেত্রে আমরা সেই শ্রেষ্ঠত্ব হারাবো, যা এমনকি যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরাজয়ের পরও অক্ষুন্ন থাকে বলে আল্লাহ্ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। ঠিক যেমনটি হয়েছিল ‘গাযওয়াতুল উহুদে’ যখন আল্লাহ্ নাযিল করলেনঃ
﴿ وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴾
“তোমরা হীনবল হয়োনা এবং দুঃখিতও হয়োনা; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মু’মিন হও।”
অতএব, যদি আমরা সত্যিই ঈমানদার হবার দাবী করি, তবে বিজয়ের প্রতি বিশ্বাস হারানো আমাদের জন্য অনুমোদিত নয়।
পরাজয়ের ষষ্ঠ অর্থঃ জিহাদের ব্যানার (পতাকা) ছেড়ে দেয়া
জিহাদের পতাকা ছেড়ে দেয়া ,অর্থাৎ হাল ছেড়ে দেয়াও এক ধরনের পরাজয়। শত্রুরা আমাদের কাছে কি চায়? আমাদের সলাত বা রমাদানে রোযা রাখা নিয়ে তাদের কোন সমস্যা নেই। শত্রুরা যা বন্ধ করতে চায় সেটা হচ্ছে জিহাদ। তারা যা চায় তাই যদি আমরা তাদের দিই, তবে আমরাই হেরে গেলাম। তারা তো এটাই চায়। আজকের দিনে যে কেউ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ করছে না, সে বিনামূল্য শত্রুদেরকে এই বিজয় দিয়ে দিচ্ছে। বহু মুসলিমই বলে থাকে, “যেই মূহুর্তে কুফ্ফাররা জানতে পারবে যে, কেউ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ করতে চাচ্ছে, তখন থেকেই তাকে সর্বদা নিরীক্ষা করা হবে এবং তার জীবন দুঃসহ করে তোলা হবে।” কিন্তু এটা কোন অজুহাত হতে পারে না। যদি তারা আপনাকে সলাত পড়া থেকে বিরত রাখতে চাইত, তবে কি আপনি তাদের কথা শুনতেন? যদি তারা হিজাব পড়া নিষিদ্ধ করে দিত, আপনি কি তাদের কথা মেনে নিতেন? অতএব, জিহাদ আপনি যে রূপেই ছেড়ে দেন না কেন, হোক সেটা আক্বীদা বা ধারণা অথবা অস্ত্রাদি বহন করা বা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ ছেড়ে দেয়া, তবে সেটাই হবে পরাজয়ের একটি নিশান।
আরও পড়ুন
Comment