আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
শেষ পর্ব
==================================================
===============================
কর্তৃক পরিবেশিত
জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
-শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
[এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
এর থেকে
শেষ পর্ব
==================================================
===============================
অধ্যায়ঃ ৬
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যঃ পরাজয়ের সংজ্ঞা
﴿ وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴾
“তোমরা হীনবল হয়োনা না এবং দুঃখিতও হয়োনা; তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মু’মিন হও।”
ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যঃ পরাজয়ের সংজ্ঞা
পরাজয় বলতে কি বুঝায়? মানুষ কি নিহত হলেই পরাজয় হয়ে যায়? তবে পরাজয় বলতে কি বুঝায়? এর সত্যতা নিয়ে যে দ্বন্ধ তা হলো সেই আদর্শগত দ্বন্ধ যা শারীরিক যুদ্ধের ফলাফলের ক্ষেত্রে ধরা হয়। কিন্তু এর বিষয়বস্তু হল আদর্শের সংঘর্ষ। কোন ব্যক্তি যদি তার আদর্শ পরিত্যাগ করে, তাই হল তাঁর পরাজয়।
৮ ধরনের পরাজয় রয়েছেঃ
পরাজয়ের সপ্তম অর্থঃ সামরিক বিজয়ের আশা ছেড়ে দেয়া
সামরিক জয়ের আশা ছেড়ে দেয়াটাও এক ধরনের পরাজয়। এটা পঞ্চমটার মতই।
পরাজয়ের অষ্টম অর্থঃ শত্রুকে ভয় পাওয়া
মৃত্যুর মত শত্রুকে ভয় পাওয়া, যে ব্যাপারে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
“তোমরা কোন অবস্থায়ই তাদের ভয় করবে না, বরং আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা (সত্যিকার অর্থে) ঈমানদার হও।”
আত্-তাঈফা আল মানসুরাহ্ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন, “কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া তারা করে না।”
সামরিক পরাজয়ের পর কোন মুসলিমের এটা বলা উচিত নয় যে, “আমাদের পরাজয়ের কারণ হচ্ছে, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।”
﴿... فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴾
“... সুতরাং যদি তোমরা মু’মিন হও তবে তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর।”
﴿... وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ...﴾
“... এবং তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না...।”
“... সুতরাং যদি তোমরা মু’মিন হও তবে তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর।”
﴿... وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ...﴾
“... এবং তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করে না...।”
যদিও এই ব্যাপারটা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন, কিন্তু ধরে নিই মুসলিমরা তাদের যথাসাধ্য ভাল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে, সেক্ষেত্রে আমরা এ ব্যাপারে শুধু এক দৃষ্টিকোণ থেকেই আলোচনা করব, যদি তুমি তোমার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাক, তবে ফলাফলের জন্য প্রস্তুতির অভাবকে দায়ী করা অন্যায়। কারণ সংখ্যা এবং প্রস্তুতি (অর্থাৎ অস্ত্রসস্ত্র, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি) বিজয়ের কোন কারণ নয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন,
﴿لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِينَ﴾
“আল্লাহ্ তো বহু জায়গায়ই তোমাদের সাহায্য করেছেন, (বিশেষ করে) হুনায়েনের দিনে (যে সাহায্য করেছিলেন তা স্মরণ করো) যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের উৎফুল্ল করে দিয়েছিল, অথচ সংখ্যার এ বিপুলতা তোমাদের কোনই কাজে আসেনি, যমীন তার বিশালতা সত্তে¡ও তোমাদের উপর সংকুচিত হয়ে পড়েছিল, অতঃপর তোমরা (এক সময়) ময়দান ছেড়ে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে গেলে।”
যখন মুসলিমরা ভেবেছিল তারা সংখ্যায় প্রচুর, এবং তাদের এই স্পষ্ট সংখ্যাধিক্যের কারণে তারা বিজয়ী হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই তারা পরাজিত হয়েছিল। এটা এক আশ্চর্যের বিষয় যে, মুসলিমদের যখনই আমরা সংখ্যায় কম হিসেবে দেখি, তখনই তারা জয়লাভ করে আবার যখনই তারা সংখ্যায় অনেক থাকে- পরাজিত হয়। অতএব পরজয়ের জন্য আমাদের কখনই সংখ্যায় কম হওয়াকে দায়ী করা উচিত নয়। ঠিক যেমন- আল্লাহ্ বলেনঃ
﴿ أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُمْ مِثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّى هَذَا قُلْ هُوَ مِنْ عِنْدِ أَنْفُسِكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ﴾
“যখনি তোমাদের উপর (উহুদ যুদ্ধের) বিপদ নেমে এল, তখনি তোমরা বলতে শুরু করলে, (পরাজয়ের) এ বিপদ কিভাবে এলো ? অথচ (বদরের যুদ্ধে) এর চাইতে দ্বিগুণ (পরাজয়ের) বিপদ তো তোমরাই তাদের ঘটিয়েছিলেঃ (হে নবী) তুমি বলো, এটা এসেছে তোমাদের নিজেদের কারণেই, আল্লাহ্ সববিষয়ের উপরে ক্ষমতাবান।”
অতএব, যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরাজয়ের কারণ অনেক হতে পারেঃ
১. আল্লাহ্ আমাদের পরীক্ষা করতে চান।
২. আল্লাহ্ হয়ত আমাদের এর মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করতে চান।
৩. অথবা আমাদের গুনাহের বা অন্যায়ের কারণেই আমরা পরাজিত হই ।
যাই হোক না কেন, পরাজয় কখনই সংখ্যা স্বল্পতার জন্য নয়। এটা অনুমান করা ভুল হবে যে, আফগানিস্থানের মুজাহিদীনরা বিশ্বের কুফ্ফারদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে তাদের শক্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছে কেবল তাদের সংখ্যা ও সরঞ্জামের স্বল্পতার জন্য। এই অনুমান করাই ভুল, কারণ মুজাহিদীনদের তাদের শত্রুর সমান প্রস্তুতির আল্লাহ্ -র কোনই প্রয়োজন নেই, বরং আল্লাহ্ চান যেন আমরা আমাদের যথাসাধ্য ভাল প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং তা শত্রুর প্রস্তুতির সমান, বেশি বা অনেক কমও হতে পারে। যেমন আল্লাহ্ বলেন, “তাদের (সাথে যুদ্ধের) জন্য তোমরা যথাসাধ্য সাজসরঞ্জাম, শক্তি ও ঘোড়া প্রস্তুত রাখ।” অতএব, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে। এটা যদি আমাদের শত্রুর ১০% বা ১০০% ও হয় তাই ভাল, এই সমতার ভিত্তি কখনই এটা নয় যে, আমাদের শত্রুর কি আছে, বরং এই সমতার ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর হুকুমের অনুসরণ, প্রস্তুতি গ্রহণও যার আওতাভূক্ত, কখনও যদি আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণের সমতা আমাদের শত্রুর এক দশমাংশও হয়, তখনও আল্লাহ্ তাঁর ‘শারীয়াহ’-তে যা হুকুম দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ করে থাকলে- আমরা এরপর কৈফিয়ত হতে মুক্ত ।
সারসংক্ষেপঃ
চলুন পরাজয়ের ৮টি প্রয়োগকে পুনঃআলোচনা করা যাক-
১. আল-কুফ্ফারদের পদ্ধতির অনুসরণ; এটা হতে পারে ধর্ম, জীবন ব্যবস্থা, চিন্তাধারা ইত্যাদি।
২. আল-কুফ্ফারদের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেয়া; ইসলামের মাধ্যমে আমাদের তাদের অপমানিত করা উচিত এবং তাদের এমন সুযোগ দেয়া উচিত নয় যে, তারা আমাদের সবুজ সংকেত দেবে।
৩. আল-কুফ্ফারদের দিকে ঝুকে পড়া।
৪. আল-কুফ্ফারকে মেনে চলা।
৫. জয়ের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলা, এই ধারণা হারিয়ে ফেলা যে, আল্লাহই সর্ব-শক্তিমান এবং যাকে ইচ্ছা তিনি বিজয় দান করে থাকেন বা করতে পারেন।
৬. জিহাদের ঝান্ডা পরিত্যাগ করা। যদি তারা নিষিদ্ধ করে, তবে কি তুমি রোযা পরিত্যাগ করবে?
৭. সামরিক বিজয়ের আশা পরিত্যাগ করা।
৮. আল্লাহ-কে ভয় করার পরিবর্তে শত্রুকে ভয় করা।
তালিবান এবং উপসংহার
তালিবানরা এমন ক্ষেত্রে শক্তি সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছে, যেখানে অন্য মুসলিমরা করতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও তালিবানরা শত্রুর ক্ষমতা সম্পর্কে জানত। যা হোক, তারা এই যুদ্ধে যোগদানের সিদ্ধান্ত এজন্যই গ্রহণ করেছে, কারণ তারা অনুধাবন করেছে যে, কি কি অস্ত্র আছে তার উপর কখনই বিজয় নির্ভর করে না; বরং তা নির্ভর করে আল্লাহ্ করুণার উপর।
আমরা এখানে যেসব আদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করেছি তা ছিল বিজয়ের পথে প্রথম পদক্ষেপ, কারণ এই আদর্শের বিপরীত ধারণা সমূহই এই ‘উম্মাহ’র আন্তরিক ইচ্ছা ও শক্তিকে নির্মূল করতে পারে। অতএব, আমাদের অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে এসব ধারণা থেকে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন। সঠিক উপলব্ধি, মানসিক স্থিরতা ও জিহাদের আক্বীদা-ই হলো বিজয়ের পথে প্রথম পদক্ষেপ এবং এসব ছাড়া আমাদের জয়ের কোন সুযোগই নেই, কারণ এটা হল ‘আক্বীদাগত’ যুদ্ধ অর্থাৎ ‘সত্যের বিরূদ্ধে ‘মিথ্যা’র লড়াই।
ফলাফলের ব্যর্থতা কখনই ভুল পরিকল্পনা বা ভুল পদ্ধতির নির্দেশ করে না। এটা খুবই সম্ভব যে সঠিক পরিকল্পনা সত্তে¡ও বিপরীত ফলাফল প্রাপ্তি হয়। আমরা এটা বলতে পারি না যে, যেহেতু আমাদের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি, তাই আমাদের পরিকল্পনাই ভুল। এটা কখনই সঠিক উপলব্ধি নয়।
আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি। তিনি যেন আমাদের তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন, আমরা যা শিখলাম তা পালন করার তৌফিক দেন। যেহেতু শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যই হল তার যথাযথ পালন। আল্লাহ্ -র কাছে আমরা কামনা করি, তিনি যেন আমাদের তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন যারা ‘শাহাদা’র পদমর্যাদায় উন্নীত। আল্লাহ্ যেন আমাদের তাদের অন্তর্ভূক্ত করেন যারা ‘জান্নাতুল ফিরদাউসে’ প্রবেশ করে। আল্লাহ্ যেন আমাদের রক্ত, আমাদের প্রচেষ্টাকে রোজ কিয়ামতের দিনে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও আনুগত্যের সাক্ষ্য হিসেবে কবুল করেন। আমীন ইয়া রাব্বুল আ’লামীন ।
অনুবাদঃ
আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
মারকাজ সাদা আল-জিহাদ
গ্লোবাল ইসলামিক মিডিয়া ফ্রন্ট
আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
মারকাজ সাদা আল-জিহাদ
গ্লোবাল ইসলামিক মিডিয়া ফ্রন্ট
আরও পড়ুন
১৪তম পর্ব
Comment