আল-আকসা মুক্ত করার জন্য মূলতঃ কারা কাজ করছে ?
(একটি পর্যালোচনা)
(একটি পর্যালোচনা)
ইসরায়েল নামক দখলদার ও অবৈধ রাষ্ট্রটির জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সার্বিক দিক থেকে আমেরিকা যেভাবে এটিকে সুরক্ষা করে যাচ্ছে,
তাতে পৃথিবীর প্রত্যেক সুস্থ-সজ্ঞান মানুষের কাছে এটি মেঘমুক্ত আকাশে মধ্য দিনের আলোর চেয়েও সুস্পষ্ট যে, যতক্ষণ পর্যন্ত ইসরায়েলকে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো শক্তি-সামর্থ আমেরিকার অবশিষ্ট থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ফিলিস্তিন, আমাদের আল-আকসা মুক্ত হবে না।
এমনকি প্রয়োজনে পুরো দুনিয়ার বিরুদ্ধে গিয়েও আমেরিকা ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে,যার প্রকৃষ্ট প্রমাণ সাম্প্রতিক জাতিসঙ্ঘ নামক কুফফার সংঘের সাধারণ পরিষদে
ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হওয়ার প্রেক্ষাপটে আমেরিকার অবস্থান এবং পদক্ষেপ।
মূলতঃ ইসরায়েল হচ্ছে আমেরিকার একটি সামরিক ঘাঁটি।
সুতরাং আমেরিকার শক্তি খর্ব এবং আমেরিকাকে দূর্বল করা ব্যতীত যারা ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার কথা বলছে, তারা হয় বেকুব নতুবা প্রতারক।
মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর যেসব শাসক ও নেতারা মুসলিমদেরকে এই দিবাস্বপ্ন দেখাচ্ছে যে,
ওআইসি আর জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন প্রস্তাব পাশ, নিন্দা জানানো ও ভোটাভুটির মাধ্যমে ফিলিস্তিন উদ্ধার হবে, তাদেরকে আমি মোটেও বোকা বলতে পারি না বরং তারা যে প্রতারক,
এ ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই।
আমেরিকা তার সর্বশেষ গুলি দিয়ে হলেও ইসরায়েলকে নিরাপত্তা দিয়ে যাবে।
সুতরাং ইসরায়েলের দখল থেকে ফিলিস্তিন ও আল-আকসা উদ্ধার করার মানে হচ্ছে আমেরিকাকে পরাজিত করা,
আমেরিকাকে আটলান্টিকের ওপারে তার নিজ ভূখণ্ডে তথা তার খোলসে ঢুকতে বাধ্য করা।
মুসলিম নামধারী শাসকগোষ্ঠীর মিলনমেলা এই মেরুদণ্ডহীন ওআইসি কিংবা জাতিসঙ্ঘ নামক কুফফার সংঘের এসব রাষ্ট্র কী কখনো ফিলিস্তিন ও আল-আকসা উদ্ধারের জন্য আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে কিংবা করতে সক্ষম ?
না, কস্মিনকালেও না।
তাহলে কীভাবে ফিলিস্তিন,জেরুজালেম, আল-আকসা উদ্ধার হবে ! আমেরিকা ধ্বংস হওয়া ব্যতীত কিছুতেই ইসরায়েল ছেড়ে যাবে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমেরিকাকে অর্থনৈতিক
ও সামরিক দিক থেকে দুনিয়াতে কারা দূর্বল করছে ?
যারা দূর্বল করছে, যারা আমেরিকার মেরুদণ্ডে আঘাত করছে, তারাই মূলতঃ ফিলিস্তিন উদ্ধারে লক্ষ্যে কাজ করছে।
যারা আমেরিকাকে (ওয়্যার অন টেরর তথা জিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে) বিগত ১৬ বছর ধরে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করিয়ে আমেরিকাকে অর্থনৈতিকভাবে চরমভাবে দূর্বল করে যাচ্ছে,
যারা আমেরিকাকে হাজার হাজার সৈন্যের লাশ উপহার দিয়েছে, ফলে আমেরিকা আজ কোথাও এককভাবে নিজেদের সৈন্য পাঠাচ্ছে না।
যারা গোটা দুনিয়াজুড়ে আমেরিকা ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে এক চরম অসম লড়াই চালিয়ে আমেরিকা ও তার দোসরদের ঘুম হারাম করে যাচ্ছে এবং আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও বরকতময় ইচ্ছায় দিন দিন আরো শক্তিশালী হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তারাই আমাদের ফিলিস্তিন এবং আল-আকসাকে উদ্ধারের লক্ষ্যে কাজ করছে।
আলহামদুলিল্লাহ্, উম্মাহর সেই মহানায়কেরাই আমেরিকা ও পৃথিবীর নতুন ইতিহাস তৈরির কারিগর।
খোরাসান থেকে বের হওয়া তালিবান ও আল-কায়েদার সেই জামা'আত আজ দুনিয়াব্যাপী আমেরিকা ও তার দোসরদের মস্তক অবনত করার এক চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে।
তালিবান, আল-কায়েদার এই আত-ত্বয়িফাতুল মানসূরাহ ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি ভূমিও অভিশপ্ত ইহুদী ও তাদের দোসর নাসারাদের জন্য ছেড়ে দিবে না বি-ইযনিল্লাহ।
এই মানহাজেরই এক মহান সিংহ শাইখ আবু মুস'আব আয-যারক্বাওয়ী রাহিঃ ইরাকে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের সময় বলেছিলেন,
نحن نقاتل في العراق ولكن عيونننا إلى بيت المقدس
অর্থাৎ "আমরা ইরাকে জিহাদ করছি কিন্তু আমাদের দৃষ্টি আকসার দিকে।"
এই মানহাজের মুজাদ্দিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহঃ ফিলিস্তিনের মুসলিমদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,
"إلى إخواننا في فلسطين نقول لهم: إن دماء أبنائكم هي دماء أبنائنا، وإن دمائكم دماؤنا، فالدم الدم، والهدم الهدم، ونشهد الله العظيم أننا لن نخذلكم حتى يتم النصر أو نذوق ما ذاق حمزة بن عبد المطلب، رضي الله عنه"
অর্থঃ "ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের প্রতি ! আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিশ্চয়ই আপনাদের সন্তানদের রক্ত মূলতঃ আমাদের সন্তানদের রক্ত। রক্ত রক্তই, আর ধ্বংস ধ্বংসই (রক্তের বদলে রক্ত,ধ্বংসের বদলে ধ্বংস) আর আপনাদের রক্ত মূলতঃ আমাদের রক্ত।
সুমহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি,
আমরা কখনো আপনাদেরকে লাঞ্ছিত করবো না। যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ বিজয় সম্পন্ন না হবে অথবা আমরা সেই স্বাদ আস্বাদন করবো, যা করেছিলেন হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাঃ।"
শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহঃ আরো বলেছেন,
"أقسم بالله العظيم الذي رفع السماء بلا عمد، لن تحلم أمريكا ولا من يعيش في أمريكا بالأمن قبل أن نعيشه واقعا في فلسطين، وقبل أن تخرج جميع الجيوش الكافرة من أرض محمد صلى الله عليه وسلم".
অর্থঃ "সেই মহান আল্লাহর নামে কসম করছি, যিনি আকাশকে খুটি বিহীন সুউচ্চে স্থাপন করেছেন। আমেরিকা এবং আমেরিকার অধিবাসীরা কিছুতেই শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বাস করার স্বপ্ন দেখতে পারে না, যে পর্যন্ত না আমরা (মুসলিমরা) ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে না পারবো এবং যে পর্যন্ত না মুহাম্মদ সাঃ এর ভূমি থেকে সকল কাফির সৈন্যবাহিনী বের না হবে।"
অন্যদিকে আমেরিকাকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতাকারী প্রত্যেক ব্যক্তি,সরকার, সেনাবাহিনী, সংগঠন এবং রাষ্ট্র মূলতঃ ফিলিস্তিন ও আল-আকসাকে ইসরায়েলের দখলে থাকার জন্য সরাসরি সহযোগিতা করছে।
কিন্তু কী সেলুকাস ! কী বিচিত্র এই দুনিয়া !
যেই তুরষ্ক ও এরদোগানের বাহিনী আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটোর অধীনে আফগানিস্তানে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছে, যেই তুরষ্ক আমেরিকাকে 'ইনসারলিংক' নামক সুবৃহৎ বিমানঘাঁটি প্রদান করে ইরাক-সিরিয়ায় সরাসরি মুসলিম হত্যা করছে এবং আমেরিকার হাতকে শক্তিশালী করছে !
যেই তুরষ্ক সোমালিয়াতে আমেরিকা ও জাতিসঙ্ঘের মদদপুষ্ট দালাল-মুরতাদ বাহিনীকে সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে সরাসরি সহায়তা আমেরিকার বিরাট খেদমতে নিয়োজিত আছে, যেই তুরষ্ক গতবছর ইসরায়েলে আগুন লাগার পর তা নিভানোর জন্য বিমান পাঠিয়েছিলো !
যেই সৌদি সরকার তার দেশে আমেরিকাকে সামরিক ঘাঁটি দেওয়া থেকে শুরু করে গোটা দুনিয়াতে আমেরিকার অপরিসীম সেবায় নিয়োজিত রয়েছে !
যেই সৌদি সরকার আমেরিকার সাথে মিলে ইয়েমেনে আল-কায়েদার মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
যেই ইরান ইসলামের চরম দুশমন নাস্তিক্যবাদী রাশিয়ার সাথে মিলে সিরিয়া-ইরাক-ইয়েমেন-লেবান-ইরানে সুন্নী মুসলিমদেরকে নির্বিচার হত্যা করে যাচ্ছে !
যেই কাতার মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকাকে তার সর্ববৃহৎ বিমানঘাঁটি করার সুযোগ করে দিয়েছে !
যেই পাকিস্তান আমেরিকার পক্ষে গ্রাউন্ড ফোর্স হয়ে পাকিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় (ওয়াজিরিস্তান, সোয়াত, মীর আলী সহ পুরো খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে) মুসলিমদেরকে নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন করে যাচ্ছে।
আমেরিকার হয়ে জিহাদ ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
সেই তুরষ্ক ও এরদোগান, সেই সৌদি আরব, সেই ইরান, সেই কাতার, সেই পাকিস্তান এবং ওআইসি নামক অথর্ব এক সংস্থা কর্তৃক 'জেরুজালেম' কে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা সম্ভবতঃ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ উপহাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
এরচেয়ে উপহাস ও প্রতারণা আর কী হতে পারে, যেসব দেশের শাসকেরা আমেরিকাকে বিভিন্নভাবে সরাসরি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করছে,
যারা আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, যারা আমেরিকার গ্রাউন্ড ফোর্সের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে, তারাই আবার ফিলিস্তিন ও আকসার জন্য মায়াকান্না দেখাচ্ছে।
শুধু হাজার বছর নয় বরং সম্ভবতঃ এটি মানবেতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহাসের অন্যতম।
মানুষের আকল ও বিবেকের সাথে কতটা নির্মম পরিহাস যে, যেসব লোকেরা দুনিয়াজুড়ে আমেরিকার ইসলামবিরোধী যুদ্ধের ঘনিষ্ঠ সহযোগী, যারা দুনিয়াজুড়ে আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সেবক ও সেবাদাস, সেই তাদেরকেই আবার ফিলিস্তিন ও আল-আকসা উদ্ধারে উম্মাহর নেতা ভাবা হচ্ছে !
বিপরীতে উম্মাহর যেসব সিংহরা আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়াজুড়ে আমেরিকা ও তার দোসরদের পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়ে যাচ্ছে, আমেরিকার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, আমেরিকান সৈন্যদের অন্তরাত্মায় ত্রাসের সঞ্চার ঘটাচ্ছে, উম্মাহকে সেই সোনালী দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে,
দুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমিগুলো আল্লাহর শরী'আহ দিয়ে পরিচালনা করছে,
আমেরিকা ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে পবিত্র ও বরকতময় জিহাদে রক্তের নদী উপহার দিচ্ছে,
সেই মহান ব্যক্তিদেরকে আমেরিকার সৃষ্টি,আমেরিকার তৈরি ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া হচ্ছে !!!
সেসব মানুষেরা কী তাদের আকল,বিবেক সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে ?
হায় আফসোস ! মানুষ যখন তার হৃদয় দিয়ে সত্যকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয় না, মানুষ যখন তার চোখ দিয়ে সত্যকে দেখতে সক্ষম হয় না, মানুষ যখন তার কর্ণ দিয়ে সত্যকে শ্রবণ করতে সক্ষম হয় না,
আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে মানুষের এই অবস্থাকে চতুষ্পদ জন্তুর অনুরুপ বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর আখ্যা দিয়েছেন (সূরাহ আ'রাফ-১৭৯ দ্রষ্টব্য)।
মানুষ কী তাহলে পশুর মতো বোধশক্তিহীন
হয়ে গেছে ?
সুবহানাল্লাহ ! উম্মাহর এক বিরাট অংশ কী চরম মাত্রায় চিন্তার বৈকল্যের শিকার।
উম্মাহ চিন্তার বন্ধাত্ব ও বৈকল্য থেকে বের হয়ে আল-আকসার দোস্ত-দুশমন চিনে সে অনুসারে আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা'র আকীদার ভিত্তিতে আল-আকসার সহযোগিতায় অগ্রসর হোক, এই কামনা করছি।
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে আল-আকসা মুক্ত করার বাস্তব পদক্ষেপের সাথে যুক্ত থেকে আল-আকসা মুক্ত করার সৈনিক হিসেবে কবুল করুন।আমীন, ইয়া রব্বাল 'আলামীন।
.
লেখাঃ সংগৃহীত
Comment