Announcement

Collapse
No announcement yet.

“ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ- ২

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ- ২

    “ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ- ২


    ২- অতঃপর ১৯৬৭ সালের লজ্জাজনক পরাজয়ের সময় আসল। মানুষ দুর্ণীতিবাজ সরকারের বিকৃতি, অক্ষমতা এবং কিভাবে সরকারের বাহিনী মাত্র ৬ ঘন্টায় দিগ্বিদিক পলায়ন করতে বিদিশা হয়ে গেল তা প্রত্যক্ষ করল। এর কারণে মিশরীয়দের চোখে সরকারের ভাবমূর্তি পড়ে যাওয়া অনিবার্য ছিল। তারা জালিম সরকারের মোকাবেলায় ঠাট্টা-বিদ্রুপকেই একমাত্র হাতিয়ার বানিয়েছিল। আমার মনে হয় মিশরীয় জনগণ সাধারণভাবে আব্দুন নাসেরের ব্যাপারে এবং বিশেষত: তার পরাজয়ের ব্যাপারে যে পরিমাণ রম্য-রস ও কৌতুকের ছড়াছড়ি দেখেছিল, তা আগে কখনো দেখেনি।

    অপরদিকে ১৯৬৭ সালের পরাজয় মিশরেরর জিহাদী আন্দোলনগুলোর জন্য নতুন এক উপাদান যোগ করে, যা তার ক্রমবর্ধমান যাত্রায় প্রভাব সৃষ্টি করে। কারণ সেই জুলুম ও স্বৈরাচারের স্তম্ভ ভূপাতিত হয়ে গেছে, যার অনুসারীরা জনগণের সামনে এই চিত্র অংকন করতে প্রয়াস পেয়েছিল যে, সে হল চিরস্থায়ী নেতা, যাকে পরাজিত করা যাবে না।

    প্রতিটি ভাষণে হুমকি ধমকি প্রদানকারী ও প্রতিপক্ষের প্রতি আগ্রাসী নেতা এমন একজন মানুষে পরিণত হল, যে জিহ্বা বের করে হাপাতে হাপাতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে ছুটছে। যেন কিছুটা হলেও সম্মান রক্ষা হয়।

    জিহাদী আন্দোলন বুঝতে পারল যে, এই মূর্তিকে উইপোকা খেয়ে দুর্বল করে ফেলেছিল, অতঃপর পরাজয়ের ভূমিকম্প তাকে জমীনে ধ্বসিয়ে দিয়েছে। তাই সে তার গণকদের অচেতনতা ও পূজারীদের আর্তচিৎকার সহ মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে গেছে। ফলে জিহাদী আন্দোলনের সংকল্প বহুগুণ বেড়ে গেল। তারা বুঝতে পারল, তাদের ঘোর দুশমন ছিল একটি মূর্তি, যা মিডিয়ার প্রাচরণা এবং নিরস্ত্র-নিরীহদের উপর শক্তি প্রদর্শন ও জুলুমের দ্বারা তৈরী হয়েছিল।


    ৩- পরাজয়ের তিন বছর পর জামাল আব্দুন নাসেরের মৃত্যুর মাধ্যমে নাসিরী সরকার শেষ আঘাতের সম্মুখীন হল। ওই তিন বছর আরব জাতীয়তাবাদের লিডারের সকল উপাখ্যান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পরাজয়ের গ্লানি টানতে টানতে কাটাতে হয়েছিল। আর সেই আরব জাতীয়তাবাদও অচিরেই ইসরাঈলের সাথে সাগরে নিক্ষিপ্ত হবে।

    জামাল আব্দুন নাসেরের মৃত্যু শুধু এক ব্যক্তির মৃত্যু ছিল না। বরং এটা তার সেই আদর্শেরও মৃত্যু ছিল, যা সংশ্লিষ্ট ভূমিতে নিজের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছিল। তার সেই জনপ্রিয় কিংবদন্তীরও সমাপ্তি ছিল, যা সিনাই মরুভূমির বালুরাশির মাঝে মিশে গেছে।

    জামাল আব্দুন নাসেরের বিশাল জানাযা সেই চৈতন্যহারা অবস্থার অবশিষ্ট অংশটুকুই ছিল, যা তার শক্তিশালী মিডিয়ার কারসাজিতে মিশরীয় জনগণের মাঝে প্রভাব বিস্তার করে ছিল এবং এটা ছিল মিশরীয় জনগণ কর্তৃক তাদের মৃত ফেরাউনকে শেষ বিদায় জানানোর একটি অনুষ্ঠান, যার অল্পকাল পরেই তারা নিজেদের জন্য আরেক ফেরাউন গ্রহণ করে নিল, যে তাদেরকে ভিন্নদিকে পরিচালিত করেছিল এবং তাদেরকে নতুন স্বপ্ন দেখাতে লাগলো।
    কয়েক বছর যেতে না যেতেই জামাল আব্দুন নাসেরের নামটি মিশরীয় জনগণের মাঝে ঘৃণা ও ভ্রুক্ষেপহীনতার মিশ্র অনুভূতি ছাড়া কিছুই সৃষ্টি করত না।


    ৪- আনওয়ার সাদাতের ক্ষমতারোহন ছিল মিশরে নতুন এক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সূচনা। রাশিয়ান যুগ শেষ হয়ে আমেরিকান যুগের সূচনা।

    এভাবে প্রতিটি পরিবর্তনই প্রথমে দুর্বল অবস্থায় শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে শক্তিশালী হতে থাকে। সময় যাওয়ার সাথে সাথে তার নিদর্শনগুলোও প্রকাশিত হতে থাকে অধিক থেকে অধিকতর।

    আনওয়ার সাদাত পুরাতন শাসনব্যবস্থার অবশিষ্ট নিয়ম-নীতিগুলো বিলোপ করতে লাগল। অবশিষ্ট নিয়ম-নীতিগুলোর মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে তার শক্তিশালী অস্ত্র ছিল দীর্ঘকালের বাকরূদ্ধ জনগণকে কিছুটা স্বাধীনতা প্রদান।

    ইসলামী আন্দোলনের উপর থেকে কিছুটা চাপ উঠে যাওয়ার সাথে সাথেই বোতলের জিন বের হতে লাগল। জনগণের তীব্র ইসলামী চেতনা প্রকাশিত হল। মুসলিম যুবকরা কয়েক বছরের ভেতরেই বিশ্ববিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-সংঘসমূহের আসনগুলো হতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার আসনগুলো ছিনিয়ে নিল এবং ইসলামী আন্দোলন বিভিন্ন সমিতির দিকে দৌঁড়-ঝাপ শুরু করল।

    ইসলামী আন্দোলনের উত্থানের এক নতুন যুগ শুরু হল। কিন্তু এটা পূর্বেরটারই পুনরাবৃত্তি ছিল না। তবে পূর্বেরটার আদর্শের উপরই প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং তার অভিজ্ঞতা, গবেষণা ও ঘটনাবলী থেকে উপকৃত হয়েছিল।

    ইসলামী আন্দোলন তার উন্নতির ধাপগুলো হতে এক নতুন ধাপে প্রবেশ করল, যখন তার যুবকদের মাঝে গভীরভাবে এ উপলব্ধি হয়েছিল যে, অভ্যন্তরীণ শত্রুও ভয়াবহতায় বহি:শত্রুর চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এমনিভাবে শরয়ী দলিল ও বাস্তব ঐতিহাসিক তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এ উপলব্ধি আরো শক্তিশালী হতে লাগল।

    আর পুরাতন নেতৃবৃন্দের মধ্যে কিছু লোক তখনও সেই পুরাতন চিন্তার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছিল এবং এখনো খাচ্ছে যে, যুদ্ধ হবে শুধুমাত্র বহি:শত্রুর সাথে; ইসলামী আন্দোলন ও সরকারের সাথে কোন সংঘর্ষ নেই। কিন্তু নতুন চিন্তাধারা ছিল শরয়ী ভিত্তির মাধ্যমে সুগভীর এবং বাস্তব ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সুস্পষ্ট।


    ৫- সামরিক শিল্প কলেজের সংগঠন:

    এই সংগঠনটির গঠন শুরু হয় শহীদ সালিহ সারিয়্যাহর মিশরে পৌঁছার মাধ্যমে। তিনি সায়্যিদা যয়নাব আল-গাজালী ও উস্তাদ হাসান হাযিবী রহ.দের মত ইখওয়ানের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করতে লাগলেন এবং যুবকদের কয়েকটি গ্রুপ তৈরী করা ও তাদেরকে ইসলামের সাথে শত্রুতাকারী মিশরের ক্ষমতাসীন সরকারের মোকাবেলা করার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করতে মনোযোগী হলেন।

    উস্তাদ সালিহ সারিয়্যাহ একজন মুহাদ্দিস ছিলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন এবং আইনে শামছ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। এমনিভাবে একাধিক শরয়ী বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। একবার চিকিৎসা অনুষদের জনৈক ব্যক্তি শায়খ সালিহ সারিয়্যাহকে যুবকদের মাঝে ভাষণ দেওয়ার জন্য আহ্বান করলে চিকিৎসা অনুষদের একটি ইসলামিক ক্যাম্পে তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়ে যায়। আমি শুধু এই আগন্তুকের ভাষণ শোনার মাধ্যমেই বুঝতে পেরেছিলাম যে, তার কথার ভিন্ন একটি তাৎপর্য আছে এবং তিনি ইসলামকে সাহায্য করার ব্যাপারে উন্নত চিন্তা-চেতনা লালন করেন। তাই আমি এই পর্যটকের সঙ্গে সাক্ষাত করার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু কোন চেষ্টাই সফল হল না।

    উস্তাদ সালিহ সারিয়্যাহর গঠিত গ্রুপটি ব্যাপকতা লাভ করল এবং সামরিক শিল্প কলেজের কিছু সংখ্যক ছাত্রকে সৈন্য হিসাবে গড়ে তুলতে সমর্থ হল, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন কারিম আনাদুলি।

    যুবকরা উস্তাদ সালিহ সারিয়্যাহকে মোকাবেলা শুরু করার ব্যাপারে চাপ দিতে লাগল। তাদের চাপের কারণে তিনিও সরকার পরিবর্তনের চেষ্টার ব্যাপারে একমত হয়ে গেলেন। যার সারকথা ছিল, জামাতের সদস্যগণ চুপিসারে সামরিক শিল্প কলেজের প্রহরীর উপর আক্রমণ করবে, যাতে যুবকদের বিরাট অংশ কলেজের ভিতর প্রবেশ করে ফেলতে পারে। তারপর একের পর এক বিকল্প লিডারদের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ভিতরে থাকা ভাইদের সাহায্যে রাতের অন্ধকারে সামরিক শিল্প কলেজের অস্ত্র, গাড়ী ও সাঁজোয়াযানগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিবে। তারপর প্রাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়নের সদর দপ্তর অভিমুখে যাবে, আনওয়ার সাদাত ও তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে তাদের সমাবেশের মাঝে হত্যা করার জন্য।

    কিন্তু বিপ্লবের প্রচেষ্টা সফল হল না। কারণ এতে স্থানীয় পরিস্থিতি ও উপযুক্ত প্রস্তুতির অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। মূলত: এ প্রচেষ্টার জন্য প্রয়োজন ছিল কলেজের গার্ডদের উপর আক্রমণে নিয়োজিত যুবকদেরকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া। এছাড়া একাধিক স্তরে পরিকল্পনাটি নরম কাঁচের ন্যায় ছিল।

    কিন্তু যে বিষয়টি আমি গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি, তা হল: আব্দুন নাসেরের ক্রমাগত আক্রমণের পর ইসলামী আন্দোলন এটা প্রমাণ করেছে যে, তারা সমূলে উৎপাটিত হওয়ার উর্ধ্বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহে নিরাশ ও অক্ষম হওয়ার চেয়ে শক্তিশালী।

    তাই সে ইসলামী আন্দোলনই ১৯৬৫ সালের জুলুম-নির্যাতনের মাত্র কয়েক বছর পর নতুন একটি প্রজন্ম সৃষ্টি করে ফেলল, যাদেরকে নিয়ে দ্বিতীয়বার ইসলামের সাথে শত্রুতাকারী ও আমেরিকার সাথে বন্ধুত্বকারী সরকারের মোকাবেলায় অস্ত্র উত্তোলন করে জিহাদের ময়দানে নেমে পড়েছে।

    এ অভিযান প্রমাণ করেছে যে, মুসলিম যুবকগণ পুরাতন রাশিয়াপন্থী নাসিরী শাসন আর নতুন আমেরিকাপন্থী সাদাতি শাসনের মাঝে কোন পার্থক্য করে না; তারা উভয়েই শত্রুতার ক্ষেত্রে সমান।

    যদিও এ অভিযান প্রথম চান্সেই দমন করে ফেলা হয়েছে, কিন্তু এটা আন্দোলনের গতিপথে নতুন পরিবর্তনের পূর্বাভাস ছিল। কারণ ইসলামী আন্দোলন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা (নাসিরী সরকারের আগ্রাসী আক্রমণসমূহের পর) এ সরকার ও তার আক্রমণসমূহের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধারণ করবে, যেন সরকারের সামনে প্রমাণ করে দিতে পারে: জুলুম-অত্যাচার দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সফল হওয়া যাবে না এবং আব্দুন নাসেরের জাহান্নামের দারোগাগণ ১৯৬৫ সালের হামলায় যেটাকে জিহাদী আন্দোলন নিশ্চি‎হ্ন করার আক্রমণ বলে ধারণা করেছিল, সেটা ব্যাপক আগুনের প্রথম স্ফুলিঙ্গ ছিল মাত্র।
    উক্ত দলটিকে ন্যাক্কারজনক শাস্তি দেওয়ার পর আদালতে হাজির করা হলে উস্তাদ সালিহ সারিয়্যাহ এবং ভাই কারিম আনাদুলি ও ভাই তালাল আনসারীর ব্যাপারে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হল।

    অতঃপর সরকার এ তিনজনকে প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমার আবেদন করার ব্যাপারে দর কষাকষি করতে লাগল। এতে তালাল আনসারী ক্ষমার আবেদন পেশ করলেন, ফলে তার দণ্ডাদেশ হালকা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হল। পক্ষান্তরে সালিহ সারিয়্যাহ ও কারিম আনাদুলি এটা প্রত্যাখ্যান করলেন।
    একদিন সকল রাজবন্দীরা আপিল কারাগারের নিকট এক অপ্রশস্ত খোলা চত্তরে উস্তাদ সালিহ সারিয়্যাহর চারপাশে একত্রিত হল, যেখানে দীর্ঘ নি:সঙ্গ বন্দিত্বের মাঝে কিছু সময়ের জন্য কারাকর্তৃপক্ষ তাকে আসতে দিত। তারা সকলে তাকে ক্ষমার আবেদন করতে পীড়াপীড়ি করতে লাগল। তখন তিনি মুমিনের ঈমানী দৃঢ়তা নিয়ে বললেন: আনওয়ার সাদাত তার নিজের বিষয়েই কী করতে পারবে যে, আমার জীবন দীর্ঘ করবে?? তারপর তাদেরকে বললেন: তোমরা এই দুঃখে ভরা কারাগার আর তাতে প্রদত্ত নিম্নমানের খাবার এবং এই বন্ধ বাথরুমগুলো দেখ, যেখানে আমরা এই খাবার ফেলি, এগুলোই প্রকৃতপক্ষে দুনিয়া। তাহলে কেন আমরা এগুলোকে আঁকড়ে থাকব??

    মৃত্যুদণ্ডের পূর্বে শেষ সাক্ষাতে উস্তাদ সালিহ সারিয়্যাহর স্ত্রী আসলেন। তার সাথে তার নয় সন্তানও এসেছিল কারাগারে তাকে দেখার জন্য। তখন তিনি (রহ.) তাকে বললেন: তুমি যদি ক্ষমার আবেদনের ব্যাপারে আস, তাহলে তুমি তালাক!!

    ফাঁসি কার্যকরের দিন কারা ও তদন্ত পুলিশগণ কারিম আনাদুলির নিকট আসলো তাকে বেঁধে ফাঁসির কাষ্ঠে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন তিনি তাদের নিকট শাহাদাতের সুন্নাহ হিসাবে দু’রাকাত সালাত আদায়ের সুযোগ চাইলেন। এটা হল সেই সুন্নাহ, যার প্রচলন করেছিলেন মহান সাহাবী খুবাইব ইবনে আদী রাযি.। তখন তাকে রাষ্ট্রীয় পুলিশী তদন্ত বিভাগের প্রধান, পাপিষ্ঠ অফিসার আদিল মুজাহিদ বলল: এক্ষুণি যার কাছে যাচ্ছ, তার কাছে গিয়েই দু’রাকাত পড়িও!!

    আদিল মুজাহিদ ছিল সে সকল অপরাধের গুরুদের একজন, যারা তদন্তের বিভিন্ন স্তরে মুসলিম যুবকদেরকে সর্বপ্রকার নির্যাতন করত। তার আত্মম্ভরিতা ও আত্মপ্রবঞ্চনা এ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছল যে, একদা তদন্ত কার্যক্রম শেষ করার কিছুক্ষণ পর সে একাকি কোন প্রহরা ছাড়া সেই কারাকক্ষে ঢুকল, যেখানে সামিরক শিল্পের মুসলিম যুবকগণ ছিলেন। ফলে দুই জমজ মুজাহিদ ভাই আদিল ফারিস ও ভাই সালাহ ফারিস তাকে ভাগে পেয়ে গেলেন। তারা তাকে বেধরক পেটালেন। অতঃপর তার চোখ খুলে ফেললেন, যাতে এর পর আর তদন্ত বিভাগে কাজ করতে না পারে। অতঃপর আদিল ও সালাহ মিশর থেকে হিজরত করেন। আদিল ফারিস আফগানিস্তান চলে যান। সেখানে উত্তর আফগানিস্তানের নাহরঈনের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।


    ৬- সামরিক শিল্প সংগঠনের যারা কারাগার থেকে বের হয়েছিলেন তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক কয়েক বছর পর পরপর দু’বার সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে ১৯৭৭ সালের গ্রুপটি গ্রেফতার হওয়ার মাধ্যমে, আর দ্বিতীয় প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় নিজেদের মাঝে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার চর থাকার ফলে ১৯৭৯ সালে মুজাহিদ যুবকদের গ্রেফতারের মাধ্যমে।


    ৭- মুহাম্মদ আব্দুস সালাম ফাররাজ রহিমাহুল্লাহ ছিলেন দ্বিতীয় গ্রুপের গ্রেফতার থেকে বেঁচে যাওয়া লোকদের মধ্যে একজন। মুহাম্মদ আব্দুস সালাম কায়রো, জিযা ও উত্তর মিশরে নব উদ্যমে আন্দোলন শুরু করেন।

    ঠিক এ সময়েই মিশরের দক্ষিণাঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ছাত্র-সংঘগুলোর উপর সালাফী জিহাদী স্রোত আছড়ে পড়ে। তারা সরকারের সাথে তোষামোদমূলক পরিকল্পনায় প্রবেশ করার কারণে ইখওয়ানের কার্যকলাপগুলো প্রত্যাখ্যান করেন।

    দক্ষিণ মিশরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সকল যুবকরা শায়খ ওমর আব্দুর রহমানের ব্যাপারে জানতে পারল এবং নিজেদের সভা-সেমিনার ও অনুষ্ঠানগুলোতে তাকে আমন্ত্রণ করতে লাগল।

    বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রভাব প্রতিষ্ঠার পর এ সকল যুবকদের মনোযোগ আকৃষ্ট হল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জনগণের মাঝে কাজ করার জন্য। তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল, ইসরাঈলের সাথে সন্ধি করা ও সাদাত কর্তৃক ইরানের সম্রাটকে মিশরে স্বাগতম জানানোর উপর আপত্তি করে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করা।

    আব্দুস সালাম ফাররাজ ও তার সাথীগণ দক্ষিণ মিশরের যুবকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গেলেন। আর এ দু’টি আন্দোলন মিলিত হওয়ার মাধ্যমেই শায়খ ওমর আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে আল-জামাতুল ইসলামিয়্যাহ গঠিত হল।


    ************************
    প্রথম পর্বের লিংক:
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 12-24-2020, 09:27 AM.

  • #2
    আলহামদুলিল্লাহ
    অনেক উপকারী পোষ্ট ৷
    আল্লাহ ভাইকে জাযায়ে খায়ের দান করুন ৷ আমিন
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

    Comment


    • #3
      মাশা আল্লাহ, অনেক সুন্দরভাবে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে...ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকুক, এই কামনা রবের দরবারে...

      প্রিয় ভাই- নিচের দু’টি বিষয় লক্ষ্য করুন-

      ১. প্রতি পর্বের/সিরিজের সাথে তার আগের পর্বের/সিরিজের লিংক পোস্টের শেষে বা কমেন্টে যুক্ত করে দিলে ভাল হয়।
      এতে নতুন পাঠকদের জন্য আগের পর্ব/সিরিজ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে, ইনশা আল্লাহ

      ২. নিচের বানানগুলো এডিট করে নিলে ভাল হয়-

      *দূর্ণীতিবাজ == দুর্নীতিবাজ
      *ঠাট্ট == ঠাট্রা
      *অত:পর == অতঃপর
      *নিরিহদের == নিরীহদের
      *জ্ঞা-বিজ্ঞানের= জ্ঞান-বিজ্ঞানের
      *দু:খে == দুঃখে
      ----------------
      শুকরান লাকুম
      “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

      Comment


      • #4
        Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
        মাশা আল্লাহ, অনেক সুন্দরভাবে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে...ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকুক, এই কামনা রবের দরবারে...

        প্রিয় ভাই- নিচের দু’টি বিষয় লক্ষ্য করুন-

        ১. প্রতি পর্বের/সিরিজের সাথে তার আগের পর্বের/সিরিজের লিংক পোস্টের শেষে বা কমেন্টে যুক্ত করে দিলে ভাল হয়।
        এতে নতুন পাঠকদের জন্য আগের পর্ব/সিরিজ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে, ইনশা আল্লাহ

        ২. নিচের বানানগুলো এডিট করে নিলে ভাল হয়-

        *দূর্ণীতিবাজ == দুর্নীতিবাজ
        *ঠাট্ট == ঠাট্রা
        *অত:পর == অতঃপর
        *নিরিহদের == নিরীহদের
        *জ্ঞা-বিজ্ঞানের= জ্ঞান-বিজ্ঞানের
        *দু:খে == দুঃখে
        ----------------
        শুকরান লাকুম
        মাশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা ভাইকে আমাদের মাথার তাজ হিসেবে কবুল করুন আমীন
        মুসলিম হয়ে জন্মেছি আমি ইসলাম আমার ধর্ম
        লড়বো আমি খোদার পথে এটাই আমার গর্ব।

        Comment


        • #6
          হে আল্লাহ্ রাষ্ট্রীয় পুলিশী তদন্ত বিভাগের প্রধান,
          পাপিষ্ঠ অফিসার আদিল মুজাহিদ এর উপর
          আপনার লা'নত এবং এরমত যত শয়তান
          বর্তমান রয়েছে তাদের উপরও আপনার লা'নত
          ধ্বংস করুন এই সব তাগুত জালিমদের আমিন।

          Comment


          • #7
            Originally posted by salahuddin aiubi View Post
            আসলে অনুবাদক ভাইয়ের কাছে এখন বাংলা অভিধান নেই। যার কারণে কিছু শব্দের বানান সন্দেহ হওয়া সত্ত্বেও যাচাই করতে পারেন না। মুনশি আব্দুর রহমান ভাইকে অসংখ্য জাযাকাল্লাহ।
            আল্লাহুম্মা আমীন। ওয়া ইয়্যাকা জাযাল্লাহু খাইরান।
            ----------------
            দৃষ্টি আকর্ষণ:
            প্রিয় ভাইয়েরা- আমরা যারা লেখালেখি করি, তাদের সকলেরেই বাংলা শুদ্ধ বানানের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা উচিত।
            এজন্য অভিধানকে সঙ্গী বানাতে হবে। যখনই কোন বানানে সন্দেহ দেখা দিবে, তখনই অভিধান খুলে দেখে নিতে হবে।
            এভাবে নিয়মিত চর্চা অব্যাহত রাখলে আমাদের সকলের বানান সমস্যা দূর হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
            দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে, আমাদের অধিকাংশ ভাইয়েরা অভিধান খোলার কষ্টটুকু করতে চান না বা গাফলতি করেন-
            অথবা মনে করেন- পরে একসময় দেখে নিব, কিন্তু পরে আর দেখা হয় না। এভাবেই চলতে থাকে...তো এমনটা কাম্য না।
            আল্লাহ আমাদের সকল ভাইদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন ও শুদ্ধ বানানের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন
            --------------
            যাদের কাছে হার্ডকপি বাংলা অভিধান নেই, তারা পিসিতে/ল্যাপটপে পিডিএফ ফাইল থেকে সহযোগিতা নিতে পারি, ইনশা আল্লাহ
            নিচে লিংক দিয়ে দিচ্ছি...কারো প্রয়োজন থাকলে নামিয়ে নিবেন ও এই অধমকে আপনার নেক দু‘আয় স্মরণ রাখবেন...

            বাংলা অভিধান - বাংলা একাডেমি

            https://www.sendspace.com/file/2x5bp8
            Last edited by Munshi Abdur Rahman; 12-24-2020, 09:23 AM.
            “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

            Comment


            • #8
              সুপ্রিয় ভাইয়েরা,, বাংলা অভিধানের এপস/ সফটওয়্যার আছে???
              অনুগ্রহ হেল্প করলে ভালো হয়।
              ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

              Comment


              • #9
                Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
                দৃষ্টি আকর্ষণ:
                প্রিয় ভাইয়েরা- আমরা যারা লেখালেখি করি, তাদের সকলেরেই বাংলা শুদ্ধ বানানের প্রতি সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা উচিত।
                এজন্য অভিধানকে সঙ্গী বানাতে হবে। যখনই কোন বানানে সন্দেহ দেখা দিবে, তখনই অভিধান খুলে দেখে নিতে হবে।
                এভাবে নিয়মিত চর্চা অব্যাহত রাখলে আমাদের সকলের বানান সমস্যা দূর হয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
                দুঃখজনক হলেও একথা সত্যি যে, আমাদের অধিকাংশ ভাইয়েরা অভিধান খোলার কষ্টটুকু করতে চান না বা গাফলতি করেন-
                অথবা মনে করেন- পরে একসময় দেখে নিব, কিন্তু পরে আর দেখা হয় না। এভাবেই চলতে থাকে...তো এমনটা কাম্য না।
                আল্লাহ আমাদের সকল ভাইদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন ও শুদ্ধ বানানের প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন
                --------------
                যাদের কাছে হার্ডকপি বাংলা অভিধান নেই, তারা পিসিতে/ল্যাপটপে পিডিএফ ফাইল থেকে সহযোগিতা নিতে পারি, ইনশা আল্লাহ
                নিচে লিংক দিয়ে দিচ্ছি...কারো প্রয়োজন থাকলে নামিয়ে নিবেন ও এই অধমকে আপনার নেক দু‘আয় স্মরণ রাখবেন...

                বাংলা অভিধান - বাংলা একাডেমি

                https://www.sendspace.com/file/2x5bp8
                আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন
                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment

                Working...
                X