কিন্তু ইনসাফের দাবিমতে আমি এটা উল্লেখ করব যে, আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ একজন বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি রাষ্ট্রীয় তদন্তবিভাগের প্রতিবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করলেন, যখন তিনি বিচার কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিচারমন্ত্রীর সাক্ষাতের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করলেন, এমনকি টেলিফোনেও সাড়া দিতে অস্বীকার করলেন এবং বিচারমন্ত্রী বিচার কার্যক্রমে ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করার প্রতিবাদে কোন একটি ইজলাসে আসা থেকে বিরত থাকেন। শায়খ ওমর আব্দুর রহমানও (আল্লাহ তাকে কারামুক্ত করুন!) তার আদালতের বক্তব্যগুলোর কোন একটিতে এ বিষয়ে ইঙ্গিত দেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি বিচার শুনানির শুরুতে প্রতিজন আসামির বক্তব্য লিপিবদ্ধ করলেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি সমস্ত আসামিদেরকে ফরেনসিক ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন, তাদের নির্যাতনের চিহ্নগুলোর এক্সরে রিপোর্ট বের করার জন্য।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি রাষ্ট্রীয় তদন্ত বিভাগের অফিসারকে আদালত কক্ষ থেকে তাড়িয়ে দেন। তবে তারা `হল’ এর সাথে ঘেষা বারান্দায় চলে যায় আর তাদের কতককে আদালতের গার্ডের পোষাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি ডক্টর ওমর আব্দুর রহমানকে তিনদিন ব্যাপী তার ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি শায়খ সালাহ ইসমাঈলের সাক্ষ্য প্রদানের আহ্বান গ্রহণ করেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি ইজলাসের শুরুতে আসামিদেরকে কয়েক দশকবার তাদের বক্তব্য প্রদান করার সুযোগ দেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি এমন রায় প্রকাশ করেছেন, যা ক্ষমতাসীন সরকার ও তার নিরাপত্তা বাহিনীর গালে চপেটাঘাত ছিল।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি রায়ের ভূমিকায় পূর্বোল্লেখিত ভয়ংকর বাস্তবতাগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি তার রায়ে আসামিদের নির্যাতনের ব্যাপারে তদন্ত কমিশন খোলার জন্য প্রসিকিউশনের নিকট আবেদন করেন।
এ সকল ব্যাপারগুলোতে মুহাম্মদ আব্দুল গাফ্ফার একজন বাহাদুর ছিলেন। তিনি সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। স্রোতের বিপরীতে যাত্রা করেছিলেন। নিজেকে অনেক বিপদ ও কষ্টের সম্মুখীন করেছিলেন। এমন সময় এটা করেছিলেন, যখন সরকারের সমস্ত বাহিনীগুলো এই ভয়ংকর মামলায় মুসলিম যুবকদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই মামলা, যাতে প্রসিকিউটর তার চিরাচরিত স্বভাবমত জল্লাদদের সাথে কলঙ্কজনক যোগসাজস করেছিল।
কিন্তু এতসব কিছুও তার একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বিচারের উৎসের দিক থেকেও নয় এবং রায় কার্যকর করার দিক থেকেও নয়।
বিচারের উৎসের দিক থেকে নয় কেন? কারণ আমরা বর্ণনা করেছি যে, মানব রচিত আইন দ্বারা শাসনকারী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদি বিচারক কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী জালিম, ফাসেক, কাফের।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ ১০৯ জন মুসলিমকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ অভিযোগে, তথা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অভিযোগে কারাদণ্ড দিয়ে যে রায় প্রকাশ করেছেন, তার দায়ভার অবশ্যই তিনি বহন করবেন, যদিও তিনি মহান লক্ষ্য ও শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য করে এই রায়ে সহজ পরিস্থিতির বিবেচনা করেছেন, যেমনটা তিনি তার রায়ের ভূমিকায় স্পষ্টভাবে বলেছেন এবং যদিও তার এই মামলার রায়ে একটি মৃত্যুদণ্ডাদেশও ছিল না।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ তার রায়ের প্রেক্ষাপটে বলেছেন- আদালত শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে শরিয়া আইন দ্বারা বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য, কিন্তু আইনত: মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার করতে বাধ্য- তার এ বক্তব্যও তাকে দায়ভার থেকে মুক্তি দিবে না। কারণ শরিয়ার পাল্লায় এ কথার কোন মূল্য নেই। কারণ তিনি এমন কোন বলপ্রয়োগের শিকার ছিলেন না, যা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য, যার ফলে নিজেকে বাধ্য-অপারগ দাবি করতে পারেন!!
আর রায় কার্যকরের দিক থেকেও ন্যায়পরায়ণ বিচারক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কেন? কারণ এই রায়ে কয়েকটি সমালোচনার বিষয় রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, আব্দুল গাফ্ফার অনেক সময়ই তার রায়ের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত রেকর্ড ও নির্দেশিত রেকর্ডের উপর নির্ভর করেছেন, যেগুলোর ব্যাপারে তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, এগুলো বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে।
আরেকটি হল, অনেক সময় তিনি তার রায়ের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের সম্মুখে সংঘটিত তদন্ত রেকর্ডের উপর নির্ভর করেছেন, যার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিতভাবেই জানেন যে, তদন্ত বিভাগ ও প্রসিকিউটরের যোগসাজসে আসামিদেরকে পুনরায় নির্যাতনের জন্য নিয়ে যাওয়ার এক ভয় ও আতঙ্কের পরিস্থিতির মধ্যে তা সম্পন্ন হয়েছে।
এর একটি উদাহরণ হল, যা জনৈক সম্মানিত ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি প্রসিকিউটরের নিকট একটি স্বীকারুক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন শুধু এ জন্য যে, তিনি যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন এবং কারাগারে যে ব্যবহার দেখেছেন, তাতে তার পরিপূর্ণ বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি পুলিশদের হাতে মারা পড়বেন। তিনি উদাহরণ হিসাবে আমার নিকট বর্ণনা করেন, যখন তিনি অন্যদের সাথে তোরা অভ্যর্থনা করাগারে যাত্রা করলেন, তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য সুপরিচিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। সেখানে তারা সৈন্যদের কাতারের মধ্যখান দিয়ে অতিক্রম করার সময় লাগাতার কয়েক ঘন্টা প্রহারের সম্মুখীন হলেন। সৈন্যরা তার মাথার উপর লোহার শিকল দিয়ে মারত, যা তার বিশ্বাস জন্মিয়েছিল যে, তারা তাকে মেরেই ফেলবে।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদের অনেকগুলো রায় মানবরচিত আইনেরও নীতিমালা বহির্ভূত হওয়ার সবচেয়ে স্পষ্ট দৃষ্টান্ত হল, শহিদ বাহাদুর ইসাম আল কামারির ব্যাপারে জিহাদি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা ও পুলিশের সাথে লড়াই করার অভিযোগে তার দু’টি রায়। একটি দশ বছরের, আরেকটি ৫ বছরের। অথচ কাগজপত্রে ইসাম আল কামারির উপর আরোপিত অভিযোগের ব্যাপারে একটি অকাট্য দলিলও ছিল না।
যারা ব্যাপারটিকে শরিয়ার মাপকাঠিতে মাপেন না, তাদের কেউ হয়ত আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। কিন্তু ব্যাপার তো এর চেয়ে অনেক বড় ও গুরুতর। এখানে তো শরিয়া বিরোধী আইন-কানুনের মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী সরকারকে সহযোগীতার ব্যাপার।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদের একটি কথা লোকমুখে প্রচারিত আছে, যা তার থেকে বর্ণনা করা হয়, তবে এটা কতটুকু সঠিক তা আমি জানি না- তিনি নাকি বলেন: যদি এই মামলায় তিনি বিচার না করতেন, তাহলে অন্য এমন কোন বিচারক বিচার করত, যে এসকল যুবকদেরকে শাস্তি দিত- এটাও ওযর হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ অবসরে যাওয়ার পর আইনজীবি পেশা গ্রহণ করলেন। তিনি আদালতে মুসলিম যুবকদের পক্ষে লড়ই করতেন। তাহলে কি তিনি মানবরচিত আইন দিয়ে শাসনকারী ধর্মনিরপেক্ষ বিচারক হিসাবে তার অতিত জীবন থেকে তাওবা করলেন? এছাড়া যে সমস্ত মাজলুমদের উপর জুলুমের রায় দেওয়া হয়ে গেছে তাদের হক কোথায় যাবে?
আদালতের রায়ের ভিত্তিতে প্রসিকিশন বিভাগ রায়ে প্রমাণিত নির্যাতনের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে দেয়। এ ছিল ক্রমবর্ধমান জিহাদি স্রোতের সামনে সরকার প্রকম্পিত হওয়ার বহি:প্রকাশ এবং হুসনি মোবারক যে শুধু নিজে বাঁচতে চায়, তার বহি:প্রকাশ। চাই এতে তার পঞ্চাশোর্ধ পুলিশ ও তদন্ত অফিসারকে বলি দিতে হোক না কেন।
প্রসিকিউশন বিভাগ নির্যাতনের ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত শুরু করল। বিখ্যাত জিহাদ মামলার আসামিদেরকে ডেকে আনল তারা যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন তার ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য। প্রসিকিউটর কর্তৃক থানার মধ্যস্থতায় বারবার আমাকে ডেকে পাঠানোর সংবাদটি পুলিশ আমার কাছে না পৌঁছাতে চেষ্টা করল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় জনৈক ভাই আমাকে নির্যাতনের ঘটনাবলীর সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাকলেন। আমি যখন তদন্তকারী আইন উপদেষ্টার নিকট উপস্থিত হলাম, সে আমাকে জানালো যে, বিশেষভাবে আমার সাথে সম্পর্কিত নির্যাতনের ঘটনাবলী তদন্ত করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ডাকা হয়েছিল। এরপর সে তার অফিস থেকে আমার ব্যাপারে সমন আদেশের একটি বাণ্ডিল বের করে দেখালো আর আশ্চর্য প্রকাশ করল, কিভাবে আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না। আমি তাকে জানালাম, আমার নিকট কোন সমনই পৌঁছেনি এবং এটি পুলিশের চক্রান্ত।
অতঃপর তদন্তকারি আমার নির্যাতনের তদন্তের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে দিল। আমি চলে গেলাম। তদন্তের মাঝে আমি তদন্তকারীকে বললাম: এই তদন্তের লাভ কী? প্রায় তিন বছর আগে সংঘটিত নির্যাতনের ব্যাপারে আপনারা তদন্ত করছেন, অথচ সরকার সেই একই সরকার, নির্যাতন এখনো অব্যাহত। তাহলে এ সবের কী ফায়দা? সে একজন অভিজ্ঞ লোকের মত বিচক্ষণতার সাথে বলল: মিশরের ইতিহাসে এই প্রথম দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। তাই এটিই সুযোগ, এটি গনিমত হিসাবে গ্রহণ করুন। আর সে আমার সাথে পরিস্কারভাবে বলল: সরকার যতই এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, মিশরে কখনো নির্যাতন বন্ধ হবে না।
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে, অতঃপর মুজাহিদগণের কুরবানির বদৌলতে কার্যতই স্বৈরাচারি, স্বেচ্ছাচারি ও আগ্রাসি শাসনব্যবস্থা শেষ হল এবং কৃত্রিমভাবে নির্দোষ সাজা কিছুটা জবাবদিহিতামূলক ও স্বাধীনতা প্রদানকারী শাসনব্যবস্থা এল। এটা এ পথের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা রক্ত ও কুরবানি ব্যতিত ফলেনি। এটাও মুজাহিদগণের জন্য একটি শিক্ষা যে: সরকারকে তাদেরকে অন্ধকারে নির্যাতন করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশআল্লাহ।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর প্রসিকিউশন বিভাগ আমার উপর তিন বছরের বাধ্যতামূলক নজরদারির আদেশ জারি করল। এটা একটা মন্দ নীতি। পুরাতন চোর-বাটপারদের উপর এটা কার্যকর করা হয়। তাদেরকে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়। এই আইন মোতাবেক পুলিশের অধিকার আছে নজরদারিকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা বা তাকে সন্ধা থেকে সকাল পর্যন্ত নিজ বাড়িতে থাকা বাধ্যতামূলক করা। আর নজরদারিকৃত ব্যক্তিকে প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিতে হবে এবং সে পুলিশের অনুমতি ব্যতিত নিজ বাসস্থান ও শহর ছেড়ে যেতে পারবে না।
অর্থাৎ এটা হল, কারাগারের পরিশিষ্ট। আমি জানতে পারলাম, এটি প্রসিকিউশন ও তদন্তবিভাগের যোগসাজসে মুক্তিপ্রাপ্তদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি চক্রান্ত। আমি আরো জানতে পারলাম যে, আদালতের রায়ে এ আদেশ ছিল না। আরো জানতে পেরেছি যে, যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তথা অননুমোদিত অস্ত্র ও সরঞ্জাম জমা করা- এর উপর বাধ্যতামূলক নজরদারির বিধান প্রয়োগ করা যায় না। একারণে আমি আইনের বইগুলোতে এ পদ্ধতির ব্যাপারে অধ্যয়ন করতে প্রবৃত্ত হলাম। তাই আমি জানতে পারলাম- বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূণ- এটা হল মিশরের উপর উপনিবেশবাদি বৃটিশদের চাপিয়ে দেওয়া একটি পদ্ধতি। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইকারী মুজাহিদগণকে দমন করার জন্য এটা করা হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম, এরা তাদেরই শিষ্য, এখনো পর্যন্ত একই পথে হাটছে।
বাধ্যতামূলক নজরদারির পাশাপাশি সরকারি গোয়েন্দা বিভাগ আমার উপর ২৪ ঘণ্টা গোপন নজরদারি করার একটি পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমি আল্লাহর অনুগ্রহে তাদের দস্তরখান উল্টে দিলাম। আল্লাহর শক্তি ও সাহায্যে কিছু ঘুষের মাধ্যমে আমি তাদেরকে নজরদারি করার একটি সিস্টেম চালু করলাম। ফলে তাদের নিকট আমার সংবাদগুলো যেত আর আমার নিকট তাদের সংবাদগুলো আসত।
এই অবরোধ সত্ত্বেও আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, লড়াই থেকে নিবৃত্ত হব না। তাই সরকারের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আক্রমণ শুরু করলাম। নির্যাতনের ঘটনাবলীর বিরোধিতাকারী পত্রিকাগুলোকে সাহায্য করতে লাগলাম। এমনিভাবে বন্দিদেরকে নির্যাতনের ব্যাপারে প্রসিকিউশন বিভাগের সাথে কারাগারের ডাক্তারদের যোগসাজস ও ডাক্তারদের তত্ত্ববধানে নির্যাতনের বিষয়টি নিয়েও নাড়া দিলাম।
একদা আমি নির্যাতনের সংবাদগুলোর ফটোগ্রাফ করতে গেলাম ছোট্ট একটি দোকানে, যার মালিকের একটি ফটোগ্রাফার মেশিন ছিল। তখন দোকানদার একজন সাধারণ মিশরীয়ের স্বভাবমত আমাকে জিজ্ঞেস করল: যখন আপনাদের উপর এতকিছু হয়েছে, তাহলে যারা আপনাদের উপর সীমালঙ্ঘন করল, তাদের থেকে আপনারা প্রতিশোধ নিচ্ছেন না কেন? আমি তাকে উত্তর দিলাম: এটাই যুদ্ধের একটা অংশ। আর আমরা তাদের থেকে আমাদের নিজ হাতেই প্রতিশোধ গ্রহণ করব ইনশআল্লাহ। আমি আল্লাহর সাহায্যে আশা করছি, তাকে যা বলেছি, তা সত্যই বলেছি।
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৭ম পর্ব
৮ম পর্ব
৯ম পর্ব
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি বিচার শুনানির শুরুতে প্রতিজন আসামির বক্তব্য লিপিবদ্ধ করলেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি সমস্ত আসামিদেরকে ফরেনসিক ডাক্তারের নিকট নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন, তাদের নির্যাতনের চিহ্নগুলোর এক্সরে রিপোর্ট বের করার জন্য।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি রাষ্ট্রীয় তদন্ত বিভাগের অফিসারকে আদালত কক্ষ থেকে তাড়িয়ে দেন। তবে তারা `হল’ এর সাথে ঘেষা বারান্দায় চলে যায় আর তাদের কতককে আদালতের গার্ডের পোষাকে ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি ডক্টর ওমর আব্দুর রহমানকে তিনদিন ব্যাপী তার ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি শায়খ সালাহ ইসমাঈলের সাক্ষ্য প্রদানের আহ্বান গ্রহণ করেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি ইজলাসের শুরুতে আসামিদেরকে কয়েক দশকবার তাদের বক্তব্য প্রদান করার সুযোগ দেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি এমন রায় প্রকাশ করেছেন, যা ক্ষমতাসীন সরকার ও তার নিরাপত্তা বাহিনীর গালে চপেটাঘাত ছিল।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি রায়ের ভূমিকায় পূর্বোল্লেখিত ভয়ংকর বাস্তবতাগুলোর স্বীকৃতি দিয়েছেন।
তিনি বাহাদুর ছিলেন, যখন তিনি তার রায়ে আসামিদের নির্যাতনের ব্যাপারে তদন্ত কমিশন খোলার জন্য প্রসিকিউশনের নিকট আবেদন করেন।
এ সকল ব্যাপারগুলোতে মুহাম্মদ আব্দুল গাফ্ফার একজন বাহাদুর ছিলেন। তিনি সরকারের সাথে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। স্রোতের বিপরীতে যাত্রা করেছিলেন। নিজেকে অনেক বিপদ ও কষ্টের সম্মুখীন করেছিলেন। এমন সময় এটা করেছিলেন, যখন সরকারের সমস্ত বাহিনীগুলো এই ভয়ংকর মামলায় মুসলিম যুবকদের থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই মামলা, যাতে প্রসিকিউটর তার চিরাচরিত স্বভাবমত জল্লাদদের সাথে কলঙ্কজনক যোগসাজস করেছিল।
কিন্তু এতসব কিছুও তার একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বিচারের উৎসের দিক থেকেও নয় এবং রায় কার্যকর করার দিক থেকেও নয়।
বিচারের উৎসের দিক থেকে নয় কেন? কারণ আমরা বর্ণনা করেছি যে, মানব রচিত আইন দ্বারা শাসনকারী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদি বিচারক কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী জালিম, ফাসেক, কাফের।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ ১০৯ জন মুসলিমকে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ অভিযোগে, তথা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অভিযোগে কারাদণ্ড দিয়ে যে রায় প্রকাশ করেছেন, তার দায়ভার অবশ্যই তিনি বহন করবেন, যদিও তিনি মহান লক্ষ্য ও শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য করে এই রায়ে সহজ পরিস্থিতির বিবেচনা করেছেন, যেমনটা তিনি তার রায়ের ভূমিকায় স্পষ্টভাবে বলেছেন এবং যদিও তার এই মামলার রায়ে একটি মৃত্যুদণ্ডাদেশও ছিল না।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ তার রায়ের প্রেক্ষাপটে বলেছেন- আদালত শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে শরিয়া আইন দ্বারা বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করতে বাধ্য, কিন্তু আইনত: মানবরচিত আইন দ্বারা বিচার করতে বাধ্য- তার এ বক্তব্যও তাকে দায়ভার থেকে মুক্তি দিবে না। কারণ শরিয়ার পাল্লায় এ কথার কোন মূল্য নেই। কারণ তিনি এমন কোন বলপ্রয়োগের শিকার ছিলেন না, যা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য, যার ফলে নিজেকে বাধ্য-অপারগ দাবি করতে পারেন!!
আর রায় কার্যকরের দিক থেকেও ন্যায়পরায়ণ বিচারক হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কেন? কারণ এই রায়ে কয়েকটি সমালোচনার বিষয় রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল, আব্দুল গাফ্ফার অনেক সময়ই তার রায়ের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত রেকর্ড ও নির্দেশিত রেকর্ডের উপর নির্ভর করেছেন, যেগুলোর ব্যাপারে তিনি নিশ্চিতভাবে জানেন যে, এগুলো বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে।
আরেকটি হল, অনেক সময় তিনি তার রায়ের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশনের সম্মুখে সংঘটিত তদন্ত রেকর্ডের উপর নির্ভর করেছেন, যার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিতভাবেই জানেন যে, তদন্ত বিভাগ ও প্রসিকিউটরের যোগসাজসে আসামিদেরকে পুনরায় নির্যাতনের জন্য নিয়ে যাওয়ার এক ভয় ও আতঙ্কের পরিস্থিতির মধ্যে তা সম্পন্ন হয়েছে।
এর একটি উদাহরণ হল, যা জনৈক সম্মানিত ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি প্রসিকিউটরের নিকট একটি স্বীকারুক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন শুধু এ জন্য যে, তিনি যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন এবং কারাগারে যে ব্যবহার দেখেছেন, তাতে তার পরিপূর্ণ বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে, তিনি পুলিশদের হাতে মারা পড়বেন। তিনি উদাহরণ হিসাবে আমার নিকট বর্ণনা করেন, যখন তিনি অন্যদের সাথে তোরা অভ্যর্থনা করাগারে যাত্রা করলেন, তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য সুপরিচিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। সেখানে তারা সৈন্যদের কাতারের মধ্যখান দিয়ে অতিক্রম করার সময় লাগাতার কয়েক ঘন্টা প্রহারের সম্মুখীন হলেন। সৈন্যরা তার মাথার উপর লোহার শিকল দিয়ে মারত, যা তার বিশ্বাস জন্মিয়েছিল যে, তারা তাকে মেরেই ফেলবে।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদের অনেকগুলো রায় মানবরচিত আইনেরও নীতিমালা বহির্ভূত হওয়ার সবচেয়ে স্পষ্ট দৃষ্টান্ত হল, শহিদ বাহাদুর ইসাম আল কামারির ব্যাপারে জিহাদি সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা ও পুলিশের সাথে লড়াই করার অভিযোগে তার দু’টি রায়। একটি দশ বছরের, আরেকটি ৫ বছরের। অথচ কাগজপত্রে ইসাম আল কামারির উপর আরোপিত অভিযোগের ব্যাপারে একটি অকাট্য দলিলও ছিল না।
যারা ব্যাপারটিকে শরিয়ার মাপকাঠিতে মাপেন না, তাদের কেউ হয়ত আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবেন। কিন্তু ব্যাপার তো এর চেয়ে অনেক বড় ও গুরুতর। এখানে তো শরিয়া বিরোধী আইন-কানুনের মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী সরকারকে সহযোগীতার ব্যাপার।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদের একটি কথা লোকমুখে প্রচারিত আছে, যা তার থেকে বর্ণনা করা হয়, তবে এটা কতটুকু সঠিক তা আমি জানি না- তিনি নাকি বলেন: যদি এই মামলায় তিনি বিচার না করতেন, তাহলে অন্য এমন কোন বিচারক বিচার করত, যে এসকল যুবকদেরকে শাস্তি দিত- এটাও ওযর হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
আব্দুল গাফ্ফার মুহাম্মদ অবসরে যাওয়ার পর আইনজীবি পেশা গ্রহণ করলেন। তিনি আদালতে মুসলিম যুবকদের পক্ষে লড়ই করতেন। তাহলে কি তিনি মানবরচিত আইন দিয়ে শাসনকারী ধর্মনিরপেক্ষ বিচারক হিসাবে তার অতিত জীবন থেকে তাওবা করলেন? এছাড়া যে সমস্ত মাজলুমদের উপর জুলুমের রায় দেওয়া হয়ে গেছে তাদের হক কোথায় যাবে?
আদালতের রায়ের ভিত্তিতে প্রসিকিশন বিভাগ রায়ে প্রমাণিত নির্যাতনের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে দেয়। এ ছিল ক্রমবর্ধমান জিহাদি স্রোতের সামনে সরকার প্রকম্পিত হওয়ার বহি:প্রকাশ এবং হুসনি মোবারক যে শুধু নিজে বাঁচতে চায়, তার বহি:প্রকাশ। চাই এতে তার পঞ্চাশোর্ধ পুলিশ ও তদন্ত অফিসারকে বলি দিতে হোক না কেন।
প্রসিকিউশন বিভাগ নির্যাতনের ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত শুরু করল। বিখ্যাত জিহাদ মামলার আসামিদেরকে ডেকে আনল তারা যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন তার ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য। প্রসিকিউটর কর্তৃক থানার মধ্যস্থতায় বারবার আমাকে ডেকে পাঠানোর সংবাদটি পুলিশ আমার কাছে না পৌঁছাতে চেষ্টা করল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় জনৈক ভাই আমাকে নির্যাতনের ঘটনাবলীর সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ডাকলেন। আমি যখন তদন্তকারী আইন উপদেষ্টার নিকট উপস্থিত হলাম, সে আমাকে জানালো যে, বিশেষভাবে আমার সাথে সম্পর্কিত নির্যাতনের ঘটনাবলী তদন্ত করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমাকে ডাকা হয়েছিল। এরপর সে তার অফিস থেকে আমার ব্যাপারে সমন আদেশের একটি বাণ্ডিল বের করে দেখালো আর আশ্চর্য প্রকাশ করল, কিভাবে আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম না। আমি তাকে জানালাম, আমার নিকট কোন সমনই পৌঁছেনি এবং এটি পুলিশের চক্রান্ত।
অতঃপর তদন্তকারি আমার নির্যাতনের তদন্তের জন্য একটি সময় নির্ধারণ করে দিল। আমি চলে গেলাম। তদন্তের মাঝে আমি তদন্তকারীকে বললাম: এই তদন্তের লাভ কী? প্রায় তিন বছর আগে সংঘটিত নির্যাতনের ব্যাপারে আপনারা তদন্ত করছেন, অথচ সরকার সেই একই সরকার, নির্যাতন এখনো অব্যাহত। তাহলে এ সবের কী ফায়দা? সে একজন অভিজ্ঞ লোকের মত বিচক্ষণতার সাথে বলল: মিশরের ইতিহাসে এই প্রথম দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে তার দায়িত্বের ব্যাপারে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। তাই এটিই সুযোগ, এটি গনিমত হিসাবে গ্রহণ করুন। আর সে আমার সাথে পরিস্কারভাবে বলল: সরকার যতই এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, মিশরে কখনো নির্যাতন বন্ধ হবে না।
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে, অতঃপর মুজাহিদগণের কুরবানির বদৌলতে কার্যতই স্বৈরাচারি, স্বেচ্ছাচারি ও আগ্রাসি শাসনব্যবস্থা শেষ হল এবং কৃত্রিমভাবে নির্দোষ সাজা কিছুটা জবাবদিহিতামূলক ও স্বাধীনতা প্রদানকারী শাসনব্যবস্থা এল। এটা এ পথের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা রক্ত ও কুরবানি ব্যতিত ফলেনি। এটাও মুজাহিদগণের জন্য একটি শিক্ষা যে: সরকারকে তাদেরকে অন্ধকারে নির্যাতন করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশআল্লাহ।
কারাগার থেকে বের হওয়ার পর প্রসিকিউশন বিভাগ আমার উপর তিন বছরের বাধ্যতামূলক নজরদারির আদেশ জারি করল। এটা একটা মন্দ নীতি। পুরাতন চোর-বাটপারদের উপর এটা কার্যকর করা হয়। তাদেরকে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয়। এই আইন মোতাবেক পুলিশের অধিকার আছে নজরদারিকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রাখা বা তাকে সন্ধা থেকে সকাল পর্যন্ত নিজ বাড়িতে থাকা বাধ্যতামূলক করা। আর নজরদারিকৃত ব্যক্তিকে প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিতে হবে এবং সে পুলিশের অনুমতি ব্যতিত নিজ বাসস্থান ও শহর ছেড়ে যেতে পারবে না।
অর্থাৎ এটা হল, কারাগারের পরিশিষ্ট। আমি জানতে পারলাম, এটি প্রসিকিউশন ও তদন্তবিভাগের যোগসাজসে মুক্তিপ্রাপ্তদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি চক্রান্ত। আমি আরো জানতে পারলাম যে, আদালতের রায়ে এ আদেশ ছিল না। আরো জানতে পেরেছি যে, যে অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তথা অননুমোদিত অস্ত্র ও সরঞ্জাম জমা করা- এর উপর বাধ্যতামূলক নজরদারির বিধান প্রয়োগ করা যায় না। একারণে আমি আইনের বইগুলোতে এ পদ্ধতির ব্যাপারে অধ্যয়ন করতে প্রবৃত্ত হলাম। তাই আমি জানতে পারলাম- বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূণ- এটা হল মিশরের উপর উপনিবেশবাদি বৃটিশদের চাপিয়ে দেওয়া একটি পদ্ধতি। তাদের বিরুদ্ধে লড়াইকারী মুজাহিদগণকে দমন করার জন্য এটা করা হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম, এরা তাদেরই শিষ্য, এখনো পর্যন্ত একই পথে হাটছে।
বাধ্যতামূলক নজরদারির পাশাপাশি সরকারি গোয়েন্দা বিভাগ আমার উপর ২৪ ঘণ্টা গোপন নজরদারি করার একটি পদ্ধতি চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমি আল্লাহর অনুগ্রহে তাদের দস্তরখান উল্টে দিলাম। আল্লাহর শক্তি ও সাহায্যে কিছু ঘুষের মাধ্যমে আমি তাদেরকে নজরদারি করার একটি সিস্টেম চালু করলাম। ফলে তাদের নিকট আমার সংবাদগুলো যেত আর আমার নিকট তাদের সংবাদগুলো আসত।
এই অবরোধ সত্ত্বেও আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, লড়াই থেকে নিবৃত্ত হব না। তাই সরকারের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আক্রমণ শুরু করলাম। নির্যাতনের ঘটনাবলীর বিরোধিতাকারী পত্রিকাগুলোকে সাহায্য করতে লাগলাম। এমনিভাবে বন্দিদেরকে নির্যাতনের ব্যাপারে প্রসিকিউশন বিভাগের সাথে কারাগারের ডাক্তারদের যোগসাজস ও ডাক্তারদের তত্ত্ববধানে নির্যাতনের বিষয়টি নিয়েও নাড়া দিলাম।
একদা আমি নির্যাতনের সংবাদগুলোর ফটোগ্রাফ করতে গেলাম ছোট্ট একটি দোকানে, যার মালিকের একটি ফটোগ্রাফার মেশিন ছিল। তখন দোকানদার একজন সাধারণ মিশরীয়ের স্বভাবমত আমাকে জিজ্ঞেস করল: যখন আপনাদের উপর এতকিছু হয়েছে, তাহলে যারা আপনাদের উপর সীমালঙ্ঘন করল, তাদের থেকে আপনারা প্রতিশোধ নিচ্ছেন না কেন? আমি তাকে উত্তর দিলাম: এটাই যুদ্ধের একটা অংশ। আর আমরা তাদের থেকে আমাদের নিজ হাতেই প্রতিশোধ গ্রহণ করব ইনশআল্লাহ। আমি আল্লাহর সাহায্যে আশা করছি, তাকে যা বলেছি, তা সত্যই বলেছি।
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৭ম পর্ব
৮ম পর্ব
৯ম পর্ব
Comment