আন-নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”|| তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!|| দ্বিতীয়পর্ব।।‘গণতন্ত্র মুসলিমদের যা ছিনিয়ে নিল...’।।উস্তাদউসামামাহমুদহাফিযাহুল্লাহএরথেকে || ৩য় পর্ব
==================================================
=====
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”|| তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!|| দ্বিতীয়পর্ব।।‘গণতন্ত্র মুসলিমদের যা ছিনিয়ে নিল...’।।উস্তাদউসামামাহমুদহাফিযাহুল্লাহএরথেকে || ৩য় পর্ব
==================================================
=====
بِسْمِ اللّہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد...
الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد...
হামদ ও সালাতের পর-
পাকিস্তানে বসবাসরত আমার দ্বীন প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
প্রথম পর্বে আলোচনা করা হয়েছিল যে, বর্তমানে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে (পাকিস্তানে) আল্লাহর দ্বীন চূড়ান্ত সংকটময় অবস্থায় রয়েছে। তাছাড়া এখানকার ধর্মীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আমাদের দ্বীনি ভাইয়েরা ধর্মহীনতার বিরুদ্ধে বাঁধ হওয়ার পরিবর্তে স্বয়ং তারাই তার স্রোতে ভেসে চলেছেন এবং দ্বীনি রাজনৈতিক দলগুলো বাতিলদের বিজয় ও ক্ষমতায়নকে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়, জেনে বা না জেনে গ্রহন করে নিয়েছেন। পাশাপাশি এ বিষয়টিও আরজ করেছিলাম যে, এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণগুলো বহিরাগত নয় বরং অভ্যন্তরীণ। বর্তমান পর্বে সেই কারণগুলোর মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মৌলিক কারণ ‘গণতন্ত্র’ নিয়ে আজ আপনাদের সামনে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ!
হায় আফসোস! গণতন্ত্রের অনিষ্টতা যদি শুধু এটাই হত যে, এর দ্বারা ইসলামের বিজয় অর্জন করা সম্ভব না, তাহলে এই বিষয় নিয়ে আমরা এত মাথা ঘামাতাম না। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়! বরং বাস্তবতা হচ্ছে: গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম কখনোই বিজয় লাভ করতে পারবে না। আর এই বাস্তবতাকে কেবল কোন অন্ধ লোকের পক্ষেই অস্বীকার করা সম্ভব। পাকিস্তান, মিসর, আল-জাযায়ের, তুরস্ক, তিউনিসিয়া প্রভৃতি দেশগুলোই নয় বরং পুরো ইসলামী বিশ্ব এর বাস্তব সাক্ষী। তবে যে কথা বলা প্রয়োজন, অনুভূতি জাগানোর জন্য যে কথা বলা উচিত এবং যার জন্য আমরা আপনাদের নিকট হাত জোড় করে নিবেদন করি; তা হলো- আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা এই পথ(গণতন্ত্র)পরিহার করুন। কেননা, দ্বীনের ধারক-বাহকরা যখন এই পথে পা বাড়ান, তখন দ্বীনকে বিজয়ী করা তো অনেক পরের কথা, স্বয়ং তাদের দ্বীন শংকার মধ্যে পড়ে যায়। এই পথে চলার দ্বারা দ্বীনের উন্নতি সাধন করা তো অসম্ভব, কিন্তু এর দ্বারা স্বয়ং দ্বীনের ধারক-বাহকরা ধর্মহীনতা প্রচার-প্রসারের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে পরিগণিত হন। তাদের কারণে কাফিরদের শক্তি-সামর্থ বেড়ে যায় এবং অসৎ কর্মকান্ডের উন্নতি সাধিত হয়।
এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির শয়তানী দিকটা হলো: শরয়ীভাবে পালনীয় আবশ্যকীয় আমল এবং দ্বীনি দায়িত্ব পালন করাটা তাদের(ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের) জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। যা থেকে মুক্ত হতে পারার মধ্যেই দ্বীনের ধারক-বাহকরা তাদের রাজনৈতিক সফলতা দেখতে পায়!
আমার প্রিয় ভাইয়েরা!
বাতিলকে পরিহার করা, বাতিলকে বাতিল বলা এবং বাতিলদের বিরোধিতা করা সেইসাথে অসৎকাজকে প্রকাশ্যভাবে অসৎ বলা, যারা এই সমস্ত অসৎকাজের প্রচার-প্রসার করে,তাদের থেকে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া এবং তাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো এসব কাজ সকল মুসলমানের উপর শরয়ীভাবে অপরিহার্য। পাশাপাশি তা সকল দ্বীনী জামা’আত প্রতিষ্ঠার প্রকৃত উদ্দেশ্যও বটে। কিন্তু আপনি নির্বাচনভিত্তিক রাজনীতির ফলাফল দেখুন। এর পুরো ইতিহাস সাক্ষী যে, গণতন্ত্র কল্যাণ বা অকল্যাণ, সত্য বা মিথ্যা, বন্ধুত্ব বা শক্রতার মাপকাঠি নয়। বরং গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বন্ধুত্ব ও শক্রতার মাপকাঠি ঠিক করে দেয় স্বার্থ। এ কারণেই দ্বীনের ধারক-বাহকরা যখন এই ময়দানে অবতীর্ণ হন, তখন জুলুম, নির্লজ্জতা, অসৎকাজ এবং কুফরী মতবাদের মত অনিষ্টতা প্রচার-প্রসারকারীদেরকে প্রতিহত করা তো পরের কথা, সেই অবস্থার প্রেক্ষিতে এ সকল ফ্যাসাদকে ফ্যাসাদ বলে আখ্যায়িত করাটাও তাদের আয়ত্বে থাকে না। বরং এই ফ্যাসাদগুলো রক্ষা করা যেহেতু তাদের রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়, তাই তারা তাদের(অনিষ্টতা প্রচার-প্রসারকারীগণ)কে সন্তুষ্ট রাখা নিজেদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসাবে স্থির করে নেয়।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
আপনারা জানেন যে, ইসলাম ও কুফরের সংঘাত চিরন্তন। মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-
}وَلَايَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا{.(سورةالبقرة:217)
“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দিবে, যদি তারা সক্ষম হয়।” (সূরা বাকারা-২১৭)
সুতরাং কাফিররা আমাদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ সেই সময় পর্যন্ত চালু রাখবে যতক্ষন না তারা মুসলমানদেরকে তাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে না দিবে। বর্তমানে শুধু আমেরিকা ও পশ্চিমারা নয় বরং সকল কুফর বিশ্ব মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে লিপ্ত আছে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, বর্তমানে খৃষ্ট ধর্মের দিকে বা অন্য কোন নতুন ধর্মের দিকে দাওয়াত দেয়া হয় না, বরং সাধারণভাবে সকল মুসলমানকে এবং বিশেষভাবে দ্বীনি ভাইদেরকে যার দিকে আহবান করে থাকে, তা হলো: গণতন্ত্রের নর্দমাতে প্রবেশ করার দাওয়াত। যখন দ্বীনের ধারক-বাহকদেরকে গণতন্ত্রের নর্দমাতে প্রবেশের করাতে পারবে, তখন-ই কেবল আল্লাহ তা‘আলার দুশমন কাফিরদের এই সকল নেতাদের চিত্তের স্থিরতা ফিরে আসে। এ কারণেই তো সকাল-সন্ধ্যা সর্বদা গণতন্ত্রের দিকে কেবল আহবান করা হয়ে থাকে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন যে, আমেরিকার পক্ষ থেকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একটিই বার্তা, আর এটার জন্যই সে লড়াই করে; তার একটা হলো: গণতন্ত্র আর অন্যটি হলো: পুঁজিবাদ (সুদী ব্যবস্থাপনা)।
সাম্প্রতিক সময়েও মুজাহিদীনের কাছে বৈশ্বিক কাফিরদের এই একটিই দাবি যে, তোমরা গণতন্ত্রে অংশগ্রহন কর! এক্ষেত্রে তোমরা যে কোনভাবে অংশগ্রহন কর না কেন তাতে কোন সমস্যা নেই। চাই দ্বীনদারির সাথে অংশগ্রহন কর বা বদদ্বীনির সাথে অংশগ্রহন কর। এসব কিছুই মেনে নেয়া হবে। ইসলাম নিয়ে অংশগ্রহন করতে চাও? শরীয়তের কথা বলতে চাও? তাহলেও কোন সমস্যা নেই। তথাপি তোমরা গণতন্ত্রে অংশগ্রহন কর! দাঁড়ি, পাগড়ি, নামায ও রোযা সবকিছুই এখানে পালন করতে পারবে। সুতরাং শুধুমাত্র একবার গণতান্ত্রিক রাজনীতির ময়দানে অবতীর্ণ হও!... যদি একবার আপনারা এই ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে যান, তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ-অনুযোগ শেষ হয়ে যাবে। তখন আপনাদের আর কোন ধরণের পেরেশানী থাকবে না। টার্গেটকৃত চিহিৃত ব্যক্তিদের তালিকা থেকে আপনাদের নাম বাদ দিয়ে দেয়া হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক সাহায্যের বন্ধ দরজা আপনাদের জন্য খুলে দেয়া হবে। সর্বোপরি আপনাদের থেকে সব ধরণের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হবে। আফগানিস্তান,[1] ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সোমালিয়া ও মালিসহ সকল স্থানের মুজাহিদীনের দিকে আপনি একটু লক্ষ করুন! তাতে দেখতে পাবেন যে, সকল স্থানের মুজাহিদীনের নিকট তাদের এই একটিই দাবি। (তা হলো-তোমরা গণতন্ত্রে অংশগ্রহন কর।)
এখন কথা হচ্ছে: এই গণতন্ত্রের মাঝে এমন কি বিষয় আছে? যার কারণে “ইসলামী গণতন্ত্র” এর বৈশ্বিক নেতাকেও বৈশ্বিক কাফিরদের ভাল লাগে, তাকে পছন্দ করে?! মনে করুন এখনকার তথাকথিত ইসলামী গনতন্ত্রে ইসলাম, নিরাপত্তা, ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠাসহ সকল ধরনের কল্যাণ বিদ্যমান থাকলেও তা কাফিরদের পছন্দের। আফগানিস্তানে ইমারতে ইসলামী বিদ্যমান থাকাবস্থায় এই কল্যাণগুলো বিদ্যমান ছিল, কিন্তু সেখানে গণতন্ত্র ছিল না । তাই কুফফারদের দল এই সকল কল্যাণকে গ্রহন করে নেয় নাই। তাহলে এর মূল কারণ কী, এর নিগুড় রহস্য কী?! যে কারণে আমাদের দ্বীনদার ভাইদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও ধর্মহীনদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির মাঝে কোন পার্থক্য বাকি নেই? কি সেই উপাদান?! যার কারণে এই পথে কল্যাণ স্থিমিত হয়ে যায় আর অকল্যাণের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি পায়।
[1] আফগানিস্তান হলো সেই দেশ, যেখানে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মাদ ওমর রাহিমাহুল্লাহর জিহাদী কাফেলার নাম গত তিন দশক ধরে ইসলামী ইতিহাসের একটি সোনালী অধ্যায় হয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পাশাপাশি তালেবান মুজাহিদীনরা শরয়ী দাওয়াত ও জিহাদের পথে দ্রুত বিজয় ও সাফল্য লাভে দুর্দান্ত যাত্রা করে চলছেন। অন্যদিকে অতি দুঃখের বিষয়ও বিদ্যমান রয়েছে, তা হলো কিছু মানুষ পদ ও সম্মানের মোহ এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অন্যান্য ব্যাধির কারণে ফরয জিহাদের ক্ষেত্রে দৃঢ়পদ থাকার নেয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বর্তমানে সেই দূর্ভাগারা গণতন্ত্রের নর্দমাতে পতিত হয়ে আমেরিকার সন্তোষলাভের আশায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসন্তোষ লাভের কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন।(প্রকাশ থাকে যে, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তোষ ও তাঁর দুশমনের সন্তোষ কোন এক পথে একই সঙ্গে অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়!) গুলবুদ্দীন হেকমতিয়ারে উদাহারণ আপনাদের সামনে রয়েছে। তিনি যখন ‘জিহাদী সফর’ সমাপ্ত করে আমেরিকান মেড ডেমোক্র্যাটিক সিস্টেমে যোগদান করলেন, তখন কিভাবে আমেরিকার (দখলকৃত) কাবুলে তাকে লাল গালিচায় ‘আফগানী’ স্বাগতম জানানো হয় এবং কিভাবে আল্লাহর দুশমন কুফরী বিশ্বের সকল নেতারা তাকে “ তিনি এখন আমাদের দুশমন নন” মর্মে সনদ প্রদান করেন...মহান আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদের সকলের নেক আমলগুলোকে বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করেন এবং খাতিমা বিল খাইরের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত না করেন। আমীন।
আরও পড়ুন
২য় পর্ব ---------------------------------------------------------------------------------------- ৪র্থ পর্ব
Comment