আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা আলা বলেন,
দুনিয়াবি সকল কিছুতেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত রীতিনীতি (Universal Law) বিদ্যমান, যা চিরন্তন ও সুসাব্যস্ত।
আসবাবের জগতে আল্লাহ তা আলার রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, যা মহান সত্তার প্রজ্ঞাপূর্ণ নিযামের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- পানি ১০০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করে এবং কখনই তা ৮০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করবে না। আল্লাহ তা আলার তাওফিকের কথা ভিন্ন। সেবিষয়ে আলোচনা অন্যত্র হতে পারে।
একইভাবে রাস্ট্র, শাসনকর্তৃত্ব বা নের্তৃত্ব ইত্যাদিও জাগতিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন খাবার-পানীয়-পোশাকও জাগতিক বিষয়। এসব ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ার অনুগমন করা আমাদের দায়িত্ব। আর এর মাধ্যমেই হালাল রিযক ও সতর আবৃতকরণ ইবাদতে পরিণত হয়।
অনুধাবনের সুবিধার্থে ভিন্নভাবে আবারও বলছি- রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক তামকিন লাভ কিংবা নের্তৃত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি কাফির-মুসলিম উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান। সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ (যেমন- বাস্তবসম্মত সামরিক, রাজনৈতিক তৎপরতা ইত্যাদি) কিংবা গুণাবলি অর্জন (যেমন- বদান্যতা, বীরত্ব, সাহসিকতা, সহনশীলতা বা বিচক্ষণতা ইত্যাদি) ব্যাতীত কাফির-মুমিন কারো পক্ষেই তামকিন লাভ বা যথাযথ নের্তৃত্বের প্রতিপালন সম্ভব নয়।
তবে আমাদের জন্য সুসংবাদ এই যে, জাগতিক আসবাবগ্রহণ এবং আল্লাহ তা আলার সৃষ্টিগত মূলনীতির যথাযথ অনুসরণের ক্ষেত্রে শরিয়াহর চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা আলার তাওফিক ও সাহায্যলাভে সমর্থ হবো; যা আমাদের সীমিত সামর্থ্য, সল্প আসবাব ও অন্যান্য ছোটখাটো বিচ্যুতি সত্ত্বেও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাবে বি ইয নিল্লাহ।
“যে পথে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়, যে পথে একটি জাতি তাদের তরবিয়ত সম্পন্ন করে এবং যে পথে তারা উন্নতি লাভ করে সে পথগুলো অবশ্যই কিছু সৃষ্টিগতভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মনীতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সীরাত গভীরভাবে অধ্যায়ন করে আমাদেরকে এই ভেবে অবাক হতে হয় যে,তিনি এই মূলনীতিগুলোকে কত চমৎকারভাবেই না অনুধাবন করেছিলেন। এবং কী প্রখর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই না সেগুলোকে ইসলামের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছেন।
সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসা মানুষসহ সকল সৃষ্টির প্রকৃতিতে দেয়া বিধানগুলোই সেই প্রাকৃতিক নিয়ম। সেগুলো স্থান-কাল-পাত্রের ভিন্নতা সত্ত্বেও অভিন্ন প্রকৃতির। প্রকৃতিতে নির্ধারিত আল্লাহ্* তা’আলা প্রদত্ত বিধানগুলো নিঃসন্দেহে অনেক।”
– শায়খ আলী আস সাল্লাবী
“কুরআনের গবেষক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই খুঁজে পাবেন যে, প্রকৃতিতে নির্ধারিত আল্লাহ্*র মূলনীতিগুলোতে কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন নেই। কুরআন এই রীতিনীতিগুলোর দিকে মুসলিমদের দৃষ্টি গভীরভাবে আকর্ষণ করে।
ফলে তারা এগুলো থেকে শিখবে এবং সে অনুযায়ী চলতে পারবে। যুগ যুগ ধরে এগুলো অনুযায়ীই ব্যাক্তি,সমাজ, রাষ্ট্র ও জগতের সবকিছু পরিচালিত হয়ে আসছে।
সেই পৃথিবীর শুরু থেকেই প্রকৃতি যেভাবে আল্লাহ্*র বিধান মেনে চলে আসছে, আজও কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সেভাবেই চলছে। পৃথিবীর কোনো কিছুই আপন খেয়ালবশে, অনর্থকভাবে চলে না। বরং সবকিছুই স্বতঃসিদ্ধ বিধান মেনে চলে।
মুসলিমরা যখন এমূলনীতিগুলো নিয়ে গভীরভাবে অধ্যায়ন করবে এবং এগুলোর পেছনে নিহিত প্রজ্ঞা অনুধাবন করবে, তখন তারা পৃথিবীতে ঘটা বিষয়াদির পেছনের রহস্যও বুঝতে পারবে।
বুঝতে পারবে তাদেরকে এমূলনীতিসমূহের আলোকেই চলতে হবে।
আর ঠিক তখনই অর্জিত হবে সফলতা ও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রজ্ঞা, এবং তারা কর্মহীন ভরসার উপর ভিত্তি করে বসে থাকবে না।
সাথে বস্তুগত এমন পদক্ষেপও গ্রহণ করবেন যা তাদেরকে সফলতা অর্জনে সহায়তা করবে।
প্রাকৃতিক শ্বাশ্বত যে রীতিনীতিগুলো মানুষের জীবনকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে তার উপযোগিতা কখনো কালের আবর্তনে হারিয়ে যাওয়ার নয়, বরং এর উপযোগিতা সর্বজনীন, সর্বকালীন”।
– উস্তাদ সাইয়্যিদ কুতুব রহঃ , (ফি যিলালিল কুরআন, ১/৪৭৮)
“প্রকৃতিতে আবহমান কাল থেকে চলে আসা আল্লাহ্*র দেয়া নিয়মনীতিগুলো সবচেয়ে ভালো হৃদয়ঙ্গম করতে পারে একজন মুসলিমই। কারণ কুরআন ও নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহয় এগুলোর কথা বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
এবং এরই মধ্যে দিয়ে সফলতা ও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুধাবন করা উচিত যে, সফলতা তাদের কাছে আপনা-আপনি ধরা দেবে না। হঠাৎ আকাশ থেকে অবতীর্ণও হবে না। কিংবা অন্ধের মত আন্দাজে হাতড়ে বেড়ালেও হাতের মুঠোয় চলে আসবে না।
বরং এর জন্য কুরআনে কিছু নিয়মনীতি বাতলানো আছে। তাদের কাছে সে সফলতা তখনই ধরা দিবে, যখন তারা সেগুলো অনুধাবন করবে। এবং অন্ধভাবে নয়, বরং বুঝেশুনে সেগুলো অনুযায়ী চলতে পারবে।”
(জীলুন নাসরিল মানশুদ , পৃ:২৫)
“আল্লাহ্* তা’আলার রীতিনীতি এবং ব্যাক্তি,সমাজ ও বিভিন্ন জাতির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক যে নিয়ম রয়েছে সুষ্ঠুরূপে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রথম শর্তই হলো, আমাদেরকে তা বুঝতে হবে।
বরং বলা ভালো এর খুঁটিনাটি প্রতিটি দিক, এর ব্যাপ্তি আমাদেরকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে হবে।”
– শায়খ আলি আস সাল্লাবি
“তোমরা প্রকৃতির মাঝে নিহিত আল্লাহ্*র রীতিনীতির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ো না। কারণ এগুলো বড় বড় বিজয় লাভের মাধ্যম। বরং এগুলো রপ্ত করো, সঠিকভাবে ব্যাবহার করো।
এদের গতিপথের প্রবহমানতা পালটে দেও। এসবের কিছু রীতিকে অন্য কিছু রীতির প্রভাব প্রতিকারে কাজে লাগাও। এবং এরপরই, কেবল এরপরই, সাহায্য ও চূড়ান্ত বিজয় আসার জন্য অপেক্ষা করো। তখন বিজয় তোমাদের থেকে থাকবে মাত্র কয়েক পা দূরে।”
– শায়খ হাসানুল বান্না (রহঃ)
“আমি দৃঢ়তার সাথে এ কথা বলতে চাই যে ইসলামি রাস্ট্র একমাত্র শরয়ী পদ্ধতিতেই (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে) প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আর এটিই বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এটা যেমন ইতিহাস থেকে প্রমাণিত, তদ্রুপ মহাজাগতিক পদ্ধতির সাথেও সামন্জস্যপূর্ণ। শরীয়তের বিধানাবলী জাগতিক বিষয়াবলী থেকে নেয়া হয় না। বরং, কুরআন-সুন্নাহ থেকে নেয়া হয়।
ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসৃত পন্থা দুর্বোধ্য কোন বিষয় নয়। আর কোন বোধসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শরীয়তের ও বাস্তবতার চাহিদার বিপরীত পথে চলা অসম্ভব। জাগতিক বিষয়াবলির সাথে শরীয়তের কোন দ্বন্দ্ব নেই। বরং জাগতিক বিষয়াবলির দিকে লক্ষ্য রেখেই শরীয়তের বিধানাবলী অবতীর্ণ হয়েছে।”
– সম্মানিত শায়খ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি (হাফিজাহুল্লাহ)
সংক্ষেপে আলোচনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল –
– আল্লাহ তা আলার প্রজ্ঞাপূর্ণ নিযামের সাথে সংঘাতে না জড়ানো সাফল্যের পূর্বশর্ত।
– বিজয়ের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
– রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট ও সুসাব্যস্ত পথ ও পদ্ধতি।
– সৃষ্টিগত রীতিনীতির সঠিক ব্যাবহার ব্যাতীত সফলতা অর্জন সম্ভব নয়।
– গৎবাঁধা প্রবহমানতা পাল্টাতে অব্যাহত ফিকর ও প্রচেষ্টা উম্মাহর জন্য আবশ্যক।
– কিছু রীতিনীতির প্রভাব প্রতিকারে অন্য কিছু রীতিনীতিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো।
– বিজয় মুহূর্তের জন্য সবরের সাথে অধীর আগ্রহে থাকা কাম্য।
سُنَّۃَ مَنۡ قَدۡ اَرۡسَلۡنَا قَبۡلَکَ مِنۡ رُّسُلِنَا وَ لَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا تَحۡوِیۡلًا
“আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে আমি পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেনা।”
(সূরা ইসরা, ১৭ঃ৭৭)
“আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে আমি পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেনা।”
(সূরা ইসরা, ১৭ঃ৭৭)
আসবাবের জগতে আল্লাহ তা আলার রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, যা মহান সত্তার প্রজ্ঞাপূর্ণ নিযামের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- পানি ১০০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করে এবং কখনই তা ৮০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ফুটতে শুরু করবে না। আল্লাহ তা আলার তাওফিকের কথা ভিন্ন। সেবিষয়ে আলোচনা অন্যত্র হতে পারে।
একইভাবে রাস্ট্র, শাসনকর্তৃত্ব বা নের্তৃত্ব ইত্যাদিও জাগতিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন খাবার-পানীয়-পোশাকও জাগতিক বিষয়। এসব ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়ার অনুগমন করা আমাদের দায়িত্ব। আর এর মাধ্যমেই হালাল রিযক ও সতর আবৃতকরণ ইবাদতে পরিণত হয়।
অনুধাবনের সুবিধার্থে ভিন্নভাবে আবারও বলছি- রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক তামকিন লাভ কিংবা নের্তৃত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি কাফির-মুসলিম উভয়ের ক্ষেত্রেই সমান। সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ (যেমন- বাস্তবসম্মত সামরিক, রাজনৈতিক তৎপরতা ইত্যাদি) কিংবা গুণাবলি অর্জন (যেমন- বদান্যতা, বীরত্ব, সাহসিকতা, সহনশীলতা বা বিচক্ষণতা ইত্যাদি) ব্যাতীত কাফির-মুমিন কারো পক্ষেই তামকিন লাভ বা যথাযথ নের্তৃত্বের প্রতিপালন সম্ভব নয়।
তবে আমাদের জন্য সুসংবাদ এই যে, জাগতিক আসবাবগ্রহণ এবং আল্লাহ তা আলার সৃষ্টিগত মূলনীতির যথাযথ অনুসরণের ক্ষেত্রে শরিয়াহর চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা আলার তাওফিক ও সাহায্যলাভে সমর্থ হবো; যা আমাদের সীমিত সামর্থ্য, সল্প আসবাব ও অন্যান্য ছোটখাটো বিচ্যুতি সত্ত্বেও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছাবে বি ইয নিল্লাহ।
“যে পথে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পায়, যে পথে একটি জাতি তাদের তরবিয়ত সম্পন্ন করে এবং যে পথে তারা উন্নতি লাভ করে সে পথগুলো অবশ্যই কিছু সৃষ্টিগতভাবেই প্রাকৃতিক নিয়মনীতির ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সীরাত গভীরভাবে অধ্যায়ন করে আমাদেরকে এই ভেবে অবাক হতে হয় যে,তিনি এই মূলনীতিগুলোকে কত চমৎকারভাবেই না অনুধাবন করেছিলেন। এবং কী প্রখর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই না সেগুলোকে ইসলামের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছেন।
সৃষ্টির শুরু থেকেই চলে আসা মানুষসহ সকল সৃষ্টির প্রকৃতিতে দেয়া বিধানগুলোই সেই প্রাকৃতিক নিয়ম। সেগুলো স্থান-কাল-পাত্রের ভিন্নতা সত্ত্বেও অভিন্ন প্রকৃতির। প্রকৃতিতে নির্ধারিত আল্লাহ্* তা’আলা প্রদত্ত বিধানগুলো নিঃসন্দেহে অনেক।”
– শায়খ আলী আস সাল্লাবী
“কুরআনের গবেষক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিমাত্রই খুঁজে পাবেন যে, প্রকৃতিতে নির্ধারিত আল্লাহ্*র মূলনীতিগুলোতে কোনো পরিবর্তন-পরিবর্ধন নেই। কুরআন এই রীতিনীতিগুলোর দিকে মুসলিমদের দৃষ্টি গভীরভাবে আকর্ষণ করে।
ফলে তারা এগুলো থেকে শিখবে এবং সে অনুযায়ী চলতে পারবে। যুগ যুগ ধরে এগুলো অনুযায়ীই ব্যাক্তি,সমাজ, রাষ্ট্র ও জগতের সবকিছু পরিচালিত হয়ে আসছে।
সেই পৃথিবীর শুরু থেকেই প্রকৃতি যেভাবে আল্লাহ্*র বিধান মেনে চলে আসছে, আজও কোনোরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সেভাবেই চলছে। পৃথিবীর কোনো কিছুই আপন খেয়ালবশে, অনর্থকভাবে চলে না। বরং সবকিছুই স্বতঃসিদ্ধ বিধান মেনে চলে।
মুসলিমরা যখন এমূলনীতিগুলো নিয়ে গভীরভাবে অধ্যায়ন করবে এবং এগুলোর পেছনে নিহিত প্রজ্ঞা অনুধাবন করবে, তখন তারা পৃথিবীতে ঘটা বিষয়াদির পেছনের রহস্যও বুঝতে পারবে।
বুঝতে পারবে তাদেরকে এমূলনীতিসমূহের আলোকেই চলতে হবে।
আর ঠিক তখনই অর্জিত হবে সফলতা ও প্রতিষ্ঠা পাওয়ার প্রজ্ঞা, এবং তারা কর্মহীন ভরসার উপর ভিত্তি করে বসে থাকবে না।
সাথে বস্তুগত এমন পদক্ষেপও গ্রহণ করবেন যা তাদেরকে সফলতা অর্জনে সহায়তা করবে।
প্রাকৃতিক শ্বাশ্বত যে রীতিনীতিগুলো মানুষের জীবনকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে তার উপযোগিতা কখনো কালের আবর্তনে হারিয়ে যাওয়ার নয়, বরং এর উপযোগিতা সর্বজনীন, সর্বকালীন”।
– উস্তাদ সাইয়্যিদ কুতুব রহঃ , (ফি যিলালিল কুরআন, ১/৪৭৮)
“প্রকৃতিতে আবহমান কাল থেকে চলে আসা আল্লাহ্*র দেয়া নিয়মনীতিগুলো সবচেয়ে ভালো হৃদয়ঙ্গম করতে পারে একজন মুসলিমই। কারণ কুরআন ও নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহয় এগুলোর কথা বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।
এবং এরই মধ্যে দিয়ে সফলতা ও পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ক্ষেত্রে মুসলিমদের অনুধাবন করা উচিত যে, সফলতা তাদের কাছে আপনা-আপনি ধরা দেবে না। হঠাৎ আকাশ থেকে অবতীর্ণও হবে না। কিংবা অন্ধের মত আন্দাজে হাতড়ে বেড়ালেও হাতের মুঠোয় চলে আসবে না।
বরং এর জন্য কুরআনে কিছু নিয়মনীতি বাতলানো আছে। তাদের কাছে সে সফলতা তখনই ধরা দিবে, যখন তারা সেগুলো অনুধাবন করবে। এবং অন্ধভাবে নয়, বরং বুঝেশুনে সেগুলো অনুযায়ী চলতে পারবে।”
(জীলুন নাসরিল মানশুদ , পৃ:২৫)
“আল্লাহ্* তা’আলার রীতিনীতি এবং ব্যাক্তি,সমাজ ও বিভিন্ন জাতির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক যে নিয়ম রয়েছে সুষ্ঠুরূপে সেগুলো বাস্তবায়নের প্রথম শর্তই হলো, আমাদেরকে তা বুঝতে হবে।
বরং বলা ভালো এর খুঁটিনাটি প্রতিটি দিক, এর ব্যাপ্তি আমাদেরকে অনুধাবন ও উপলব্ধি করতে হবে।”
– শায়খ আলি আস সাল্লাবি
“তোমরা প্রকৃতির মাঝে নিহিত আল্লাহ্*র রীতিনীতির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ো না। কারণ এগুলো বড় বড় বিজয় লাভের মাধ্যম। বরং এগুলো রপ্ত করো, সঠিকভাবে ব্যাবহার করো।
এদের গতিপথের প্রবহমানতা পালটে দেও। এসবের কিছু রীতিকে অন্য কিছু রীতির প্রভাব প্রতিকারে কাজে লাগাও। এবং এরপরই, কেবল এরপরই, সাহায্য ও চূড়ান্ত বিজয় আসার জন্য অপেক্ষা করো। তখন বিজয় তোমাদের থেকে থাকবে মাত্র কয়েক পা দূরে।”
– শায়খ হাসানুল বান্না (রহঃ)
“আমি দৃঢ়তার সাথে এ কথা বলতে চাই যে ইসলামি রাস্ট্র একমাত্র শরয়ী পদ্ধতিতেই (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর মাধ্যমে) প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আর এটিই বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এটা যেমন ইতিহাস থেকে প্রমাণিত, তদ্রুপ মহাজাগতিক পদ্ধতির সাথেও সামন্জস্যপূর্ণ। শরীয়তের বিধানাবলী জাগতিক বিষয়াবলী থেকে নেয়া হয় না। বরং, কুরআন-সুন্নাহ থেকে নেয়া হয়।
ইসলামি রাস্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের পূর্ববর্তীদের অনুসৃত পন্থা দুর্বোধ্য কোন বিষয় নয়। আর কোন বোধসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শরীয়তের ও বাস্তবতার চাহিদার বিপরীত পথে চলা অসম্ভব। জাগতিক বিষয়াবলির সাথে শরীয়তের কোন দ্বন্দ্ব নেই। বরং জাগতিক বিষয়াবলির দিকে লক্ষ্য রেখেই শরীয়তের বিধানাবলী অবতীর্ণ হয়েছে।”
– সম্মানিত শায়খ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনি (হাফিজাহুল্লাহ)
সংক্ষেপে আলোচনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল –
– আল্লাহ তা আলার প্রজ্ঞাপূর্ণ নিযামের সাথে সংঘাতে না জড়ানো সাফল্যের পূর্বশর্ত।
– বিজয়ের জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
– রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট ও সুসাব্যস্ত পথ ও পদ্ধতি।
– সৃষ্টিগত রীতিনীতির সঠিক ব্যাবহার ব্যাতীত সফলতা অর্জন সম্ভব নয়।
– গৎবাঁধা প্রবহমানতা পাল্টাতে অব্যাহত ফিকর ও প্রচেষ্টা উম্মাহর জন্য আবশ্যক।
– কিছু রীতিনীতির প্রভাব প্রতিকারে অন্য কিছু রীতিনীতিকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো।
– বিজয় মুহূর্তের জন্য সবরের সাথে অধীর আগ্রহে থাকা কাম্য।
Comment