তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ:
আব্দুল্লাহ আয্যাম- হিন্দুকুশ পর্বত চূড়ায় আল কুদসের জখম
আব্দুল্লাহ আয্যাম- হিন্দুকুশ পর্বত চূড়ায় আল কুদসের জখম
কেউ আফগান জিহাদের আলোচনা করতে গিয়ে দাওয়াত ও জিহাদের অগ্রসেনানি শহীদ আব্দুল্লাহ আয্যামের আলোচনা উল্লেখ না করে পারবে না। যিনি ছিলেন ইলম অনুযায়ী আমলকারী আলেম। আমরা তার ব্যাপারে এমনটাই ধারণা করি। আমরা আল্লাহর থেকে সামনে বেড়ে তার পবিত্রতা বর্ণনা করছি না। শায়খ আব্দুল্লাহ আয্যাম ছিলেন জিহাদ ও মুজাহিদগণের খেদমতে ত্যাগ, বিসর্জন ও আন্তরিক পরিশ্রমের এক বিরল দৃষ্টান্ত।
তার টার্গেট ছিল সমস্ত দখলকৃত মুসলিম ভ‚মিগুলোকে উদ্ধার করা এবং সেগুলোকে কাফেরদের কর্মচারি, দালাল, তাগুত শাসকগোষ্ঠী থেকে পবিত্র করার জন্য আফগান জিহাদকে একটি ঘাটি বানানো। জিহাদের অগ্রসেনানি শায়খ শহীদ আব্দুল্লাহ আয্যামের চিন্তা-চেতনার সকল দিকগুলো এ পরিচ্ছেদে তুলে ধারা আমার সাধ্যের বাইরে। আমি এখানে শায়খের চিন্তা-চেতনার এমন কতিপয় বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করব, যেগুলো তারই শিষ্য দাবিকারি কতিপয় লোক বিকৃত ও আড়াল করার প্রয়াস চালাচ্ছে এবং মানুষের সামনে এটা তুলে ধরতে চাচ্ছে যে, শায়খ আরব মুজাহিদগণকে আফগান জিহাদের মেহমান মনে করতেন, যারা আফগানিস্তান থেকে সেভিয়েত ইউনিয়নের প্রস্থানের পর বিদায় নিবে এবং নিজ নিজ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে ফিরে যাবে। যেন তারা এ সকল মিথ্যা দাবির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার পক্ষে সাফাই গাইছে। হয়ত আমার এই সামান্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই মহান অগ্রসেনানির জীবনী বর্ণনার কিছুটা দায়িত্ব আদায় করা যাবে, যার যথাযথ মূল্যায়ন করে অধ্যয়ন ও আহরণ করা হয়নি।
১- শায়খ রহ. একথার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে ব্যাকুল ছিলেন যে, স্পেনের পতনের পর থেকেই জিহাদ ফরজে আইন এবং মুসলিমদের প্রতিটি ভ‚মি মুক্ত করার পূর্ব পর্যন্ত তা ফরজে আইন ই থাকবে। শুধু আফগানিস্তান মুক্ত করার দ্বারা জিহাদ থেমে যাবে না। শায়খ রহ. বলেন:
“আজ পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমান গুনাহগার, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন একটি ইসলামী ভূখন্ড কাফেরদের করতলগত আছে। প্রত্যেক মুসলিমকে স্পেনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, আফগানিস্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, ফিলিস্তীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, ফিলিপাইনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এসকল হারানো ভূমিগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
তিনি আরো বলেন:
“কখনোই জিহাদ এই কারণে অপছন্দনীয় হতে পারে না যে, অমুক আলেম এটা করছে না। জিহাদ মহান আল্লাহর পক্ষ হতে প্রতিটি যামানায় ফরজ। হয়ত ফরজে আইন- যেমনটা বর্তমানে চলছে, তথা ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে স্পেন পতনের পর থেকে আমাদের আজকের দিন পর্যন্ত। এখন জিহাদ উম্মতে মুসলিমার প্রত্যেকের উপর ফরজে আইন এবং এখন মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্য গুনাহগার, কারণ এখনো স্পেন পুনরুদ্ধার হয়নি। বুখারা পুনরুদ্ধার হয়নি। ফিলিস্তীন পুনরূদ্ধার হয়নি, আফগানিস্তান পুনরূদ্ধার হয়নি। এক সময় ইসলামের ভ‚মি ছিল- এমন প্রতিটি ভূমি পুনরায় মুসলমানদের হাতে ফিরে আসা পর্যন্ত জিহাদ ফরজে আইন হিসাবেই বাকি থাকবে। শুধু আফগানিস্তান মুক্ত করা বা ফিলিস্তীন মুক্ত করার দ্বারা নয়, বরং কোন এক সময় ইসলামের পতাকাতলে ছিল, এমন প্রতিটি ভূখন্ড মুক্ত হওয়ার দ্বারা মুক্ত হওয়া যাবে। তাই জিহাদ শুধু আজ ফরজে আইন নয় এবং শুধু আফগানিস্তানে ফরজে আইন নয়, বরং ইসলামের প্রথম ভ‚মিটি কাফেরদের হাতে পতন হওয়ার পর থেকেই ফরজে আইন। এটি সকল উলামায়ে কেরামের নিকট স্বীকৃত মূলনীতি।”
তিনি আরো বলেন:
“তাই এমনটা ধারণা করবেন না যে, আপনি আফগানিস্তানে এক বছর, দু’বছর বা পাঁচ বছর জিহাদ করলেই আপনার থেকে জিহাদের ফরজে আইন রহিত হয়ে যাবে বা আফগানিস্তানের পর যখন পারবেন ফিলিস্তীনে গিয়ে যুদ্ধ করবেন... যখন পারবেন বুখারায়... যখন পারবেন, ইসলামের এমন কোন ভূখন্ডে গিয়ে জিহাদ করবেন, যেখানে অস্ত্র ধারণ করতে পারেন... এর দ্বারাই আপনার ফরজে আইন রহিত হয়ে যাবে না। বরং কেবলমাত্র মৃত্যু বরণ করার দ্বারাই রহিত হবে, নামাযের মত। যেমনিভাবে নামায মানুষ থেকে রহিত হয় না, একমাত্র মৃত্যু বরণ করা ব্যতিত, তেমনি জিহাদও বর্তমান সময়ে কারো থেকে রহিত হবে না, একমাত্র মৃত্যুবরণ করা বা এমন অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী হওয়া ব্যতিত, যার কারণে অচল ও অন্ধ হয়ে যায়।
﴿لاَ يَسْتَطِيعُونَ حِيلَةً وَلاَ يَهْتَدُونَ سَبِيلاً﴾ “যারা কোন উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং (বের হওয়ার) কোন পথও পায় না।”
২- এরই ভিত্তিতে তিনি জিহাদ থেকে পিছনে বসে থাকাকে ফিসক মনে করতেন
তিনি বলেন:
“আপনি যদি জিহাদের ভ‚মি ছেড়ে যান, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এই সাক্ষ্য সঙ্গে বহন করুন: ﴿فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾ “তবে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ ফায়সালা প্রকাশ করেন। আর আল্লাহ ফাসিক (অবাধ্য)দেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না।”
নিজের সাথে ফিসকের সাক্ষ্য বহন করুন। যদিওবা আপনি রাত্রিজাগরণ করে ইবাদত করেন এবং দিবসে রোজা রাখেন। আপনি যদি নিজ দেশে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করেন আর দিবসে রোযা রাখেন, তবু আপনি ফাসিক, পাপিষ্ঠ। এখন ভূ-পৃষ্ঠে যে-ই জিহাদ না করে, সে-ই ফাসিক, যদিও তিনি মসজিদের কবুতর হন কিংবা ইবাদতগোযার, দুনিয়াবিমুখ হন।”
তিনি আরো বলেন:
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতেন যে, জিহাদের প্রথম শত্রু হল ভোগ-বিলাসিতা। তথা কামনা-বাসনায় ডুবে যাওয়া। এটা কিভাবে হবে না? যেখানে সপ্তাকাশের উপর থেকে তাদের (তথা বিলাসীদের) ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, আল্লাহ বলেন:
﴿وَإِذَآ أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَجَاهِدُواْ مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُوْلُواْ الطَّوْلِ مِنْهُمْ﴾. أصحاب الغنى. ﴿أُوْلُواْ الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُواْ ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِينَ {৮৬} رَضُواْ بِأَن يَكُونُواْ مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَى قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لاَ يَفْقَهُونَ﴾. ﴿اسْتَأْذَنَكَ أُوْلُواْ الطَّوْلِ﴾. ﴿وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ كَافِرُونَ﴾. ﴿إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ كَافِرُونَ﴾. ﴿وَإِذَا أَرَدْنَا أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُواْ فِيهَا فَحَقَّ عَلَيْهَا الْقَوْلُ فَدَمَّرْنَاهَا تَدْمِيرًا﴾"
“আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর রাসূলের সঙ্গী হয়ে জিহাদ কর’- এ মর্মে যখন কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তাদের (অর্থাৎ মুনাফেকদের) মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা তোমার কাছে অব্যাহতি চায় এবং বলে, যারা (ঘরে) আছে, আমাদেরকেও তাদের সঙ্গে থাকতে দিন। তারা পেছনে থেকে যাওয়া নারীদের সঙ্গে থাকাতেই আনন্দ বোধ করে। তাদের অন্তরে মোহর করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা অনুধাবন করে না(যে, তারা আসলে কী করছে!)।”
“তাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে, তারা তোমার কাছে অব্যাহতি চায়।”
“আমি যে-কোন জনপদে কোন সতর্ককারী নবী পাঠিয়েছি, তার বিত্তশালী লোকেরা বলেছে, তোমরা যে বার্তাসহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।”
“তোমরা যে বার্তাসহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।”
“আমি যখন কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন তাদের বিত্তবান লোকদেরকে (ঈমান ও আনুগত্যের) হুকুম দেই, কিন্তু তারা তাতে নাফরমানীতে লিপ্ত হয়, ফলে তাদের সম্পর্কে কথা চূড়ান্ত হয়ে যায় এবং আমি তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলি।”
তিনি আরো বলেন:
“আমি মনে করি, অন্য কোন কিছুই জিহাদ পরিত্যাগের দায়ভার থেকে মুক্তি দিবে না, চাই তা দাওয়াত, লিখনী বা অধ্যাপনা হোক না কেন। আমি মনে করি, আজ পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিমের ঘাড়ে জিহাদ ও ‘কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ’ পরিত্যাগের দায়ভার বর্তাবে। প্রতিটি মুসলিমই বন্দুক পরিত্যাগের গুনাহ বহন করছে। সমস্যাগ্রস্ত লোকগণ ব্যতিত যে-ই হাতে বন্দুক ধারণ করা ব্যতিত আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, সে গুনাহগার অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। কারণ সে কিতাল পরিত্যাগকারী। আর এখন পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিমের উপর কিতাল ফরজে আইন।”
Comment