তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন-দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: আব্দুল্লাহ আয্যাম- হিন্দুকুশ পর্বত চূড়ায় আল কুদসের জখম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
৭- তিনি মনে করতেন, পৃথিবীর যেকোন এক প্রান্তে সাধারণ জনগণের জিহাদের মাধ্যমে এমন একটি মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক, যার নেতৃবৃন্দ তাদের বিশাল বদান্যতার কারণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হবেন। তিনি বলেন:
“পৃথিবীর কোন অংশের উপর একটি মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠা করা মুসলমানদের জন্য এমন জরুরী, যেমন পানি ও বাতাস অতি জরুরী। এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এমন সুসংগঠিত ইসলামী আন্দোলন ব্যতিত সম্ভব নয়, যারা জিহাদকে নিজেদের বাস্তবতা ও বৈশিষ্ট্য হিসাবে গ্রহণ করে নেয় এবং যুদ্ধকে নিজেদের পোষাক ও আবরণ হিসাবে গণ্য করে।
ইসলামী আন্দোলন আম-জনসাধারণের জিহাদ ব্যতিত কখনোই মুসলিম সমাজ গঠন করতে পারবে না। ইসলামী আন্দোলনের হৃদয় হবে প্রতিক্রিয়াশীল এবং ব্রেইন হবে চিন্তাশীল। এটা এমন ছোট্ট বিস্ফোরক হিসাবে কাজ করবে, যা বৃহৎ বিস্ফোরক ডিভাইসটির বিস্ফোরণ ঘটাবে। তাই ইসলামী আন্দোলন জাতির সুপ্ত শক্তিকে বিকশিত করবে এবং তাদের হৃদয়ের গভীরে থাকা কল্যাণের ফল্গুধারা প্রবাহিত করবে।
যে মুসলিম জনসমষ্টি কিসরার সিংহাসন চুরমার করে দিয়েছিল, কায়সারের গৌরব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছিল, তাদের সমষ্টির মাঝে সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা স্বল্প ছিল। এমনকি আবু বকর সিদ্দিকের যামানায় যে গোত্রগুলো মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল, তারা তাওবা ঘোষণা করার পর ওমর রাযি. তাদেরকে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তালহা ইবনে খুওয়াইলিদ আল আসাদি, যিনি এক সময় নবুওয়াত দাবি করেছিলেন- তিনি কাদিসিয়ার উল্লেখযোগ্য বীরদের একজন হয়ে গেলেন। সা’দ রাযি. তাকে পারস্যের সংবাদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাতে উন্নত বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন।
পক্ষান্তরে যারা ধারণা করে মুষ্টিমেয় নিয়মতান্ত্রিক সৈনিকের পক্ষেই মুসলিম সমাজ গঠন করা সম্ভব, এটা একটা কল্পনা এবং প্রায় অসম্ভব ধারণা। এটা শুধু ইসলামী আন্দোলনের সাথে আরেকবার জামাল আব্দুন নাসেরের দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তিই ঘটাবে।
গণ-জিহাদি আন্দোলন পথের দৈর্ঘ, দুর্ভোগের তিক্ততা এবং বিশাল ত্যাগ অতিক্রম করার মাধ্যমে নিজেদের হৃদয়কে স্বচ্ছ করে তুলবে, ফলে তারা দুনিয়ার নিম্ন বাস্তবতা থেকে উর্ধ্বে উঠে যাবে এবং তাদের মন-মানসিকতা সামান্য টাকা-পয়সা, সাময়িক স্বার্থ ও তুচ্ছ ভোগ-সামগ্রীর বাক-বিতণ্ডা থেকে উঁচু হয়ে যাবে এবং হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। তা আত্মাকে পরিস্কার করে দিবে এবং কাফেলাকে পতিত নিম্নতা থেকে সুউচ্চ উচ্চতার দিকে পরিচালিত করবে, যারা দুর্গন্ধময় মাটি ও উদ্দেশ্যবাদি লড়াই থেকে অনেক দূরে থাকবে।
জিহাদের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার মাধ্যমে নেতৃত্ব গড়ে উঠে, এর ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে যোগ্যতা বিকশিত হয় এবং পুরুষরা তাদের বীরত্ব ও বাহাদুরি প্রকাশ করতে পারে।
................
আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী। তারা তো এই মহান কর্ম ও সুউচ্চ কুরবানির মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছিলেন। একারণেই উম্মত তাকে খলিফা মনোনয়নের ব্যাপারে একমত হয়ে গিয়েছিল। এর জন্য নির্বাচনী প্রচারণার প্রয়োজন হয়নি। ফলে আল্লাহর রাসূলের আত্মা সর্বোচ্চ বন্ধুর পানে জান্নাতের উদ্দেশ্যে উড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সকলের চক্ষুগুলো মাঠে অনুসন্ধানে লেগে গেল। তখন তারা আবু বকর থেকে শ্রেষ্ঠ কাউকে পেল না।
যে উম্মত জিহাদের চড়া মূল্য ব্যয় করে পাকা ফল কুড়ায়, তাদের জন্য তাদের রক্ত-ঘামে কুড়ানো ফসলের ব্যাপারে অবহেলা করা সহজ নয়। পক্ষান্তরে যারা দূতাবাসগুলোর পর্দার আড়ালে তৈরী সামরিক বিপ্লবের প্রথম বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে আসন গেড়ে বসে, তাদের জন্য যেকোন বিষয়েই শৈথিল্য করা সহজ। জনৈক আরবী কবি বলেন: (অর্থ)
• যে বিনাযুদ্ধে দেশ অধিকার করে নেয়, তার জন্য দেশ সমর্পণ করে দেওয়াও সহজ।
আর দীর্ঘ জিহাদি আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রকাশ লাভ করা সেরা ব্যক্তিদের নেতৃত্বে পরিচালিত জিহাদি উম্মাহর পক্ষে তাদের নেতৃত্বের ব্যাপারে শৈথিল্য করা বা তাকে বিপর্যস্ত করার ষড়যন্ত্র করা সহজ নয়। আর তাদের শত্রুদের পক্ষেও তাদেরকে তাদের বাহাদুরদের গতিবিধি সম্পর্কে সন্দেহে ফেলা সহজ নয়। দীর্ঘ জিহাদি আন্দোলন তাদের জাতির প্রতিটি সদস্যের মাঝে এই উপলব্ধি সৃষ্টি করে যে, তারা মূল্য আদায় করেছে এবং ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য কুরবানিতে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে তারা এই নবজন্মা সমাজের প্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মী হয়ে যায়, যার প্রসববেদনা সমস্ত উম্মাহকেই সহ্য করতে হয়েছে।
যেকোন ইসলামী সমাজের জন্য জন্মগ্রহণ আবশ্যক। আর যেকোন জন্মগ্রহণেরই জন্য পরিশ্রম আবশ্যক। আর যেকোন পরিশ্রমের জন্য ব্যথা-বেদনা আবশ্যক।”
তিনি আরো বলেন:
“আমরা যদি কাবুল থেকে আল কুদসের দিকে চলার ইচ্ছা রাখি, তাহলে এ পথটি হল ইসলামী দাওয়াতের পথ, যা যুবকদেরকে অস্ত্র বহন করা ও আকিদার জন্য লড়াই করার চেতনায় গড়ে তুলবে। তখনই তারা বিজয় লাভ করবে। এটা ছাড়া আমরা পানিতে চাষাবাদ করব, শূণ্যে বীজ বপন করব। তখন ব্যর্থতার পর ব্যর্থতাই আসবে। আর বিষয়টা শুধু ঘোষণা, স্লোগান, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও মুখরোচক কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কখনো তার গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে না।”
৮- তিনি যুবকদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি ও প্রতিরোধের সামনে আত্মসমর্পণ না করতে উৎসাহ দিতেন, এমনকি যদি এতে কাঙ্খিত ব্যক্তি শাহাদাত লাভ করেন, তবুও। তিনি বলেন:
“যে নিজ সম্পদ রক্ষার জন্য নিহত হয়, সে শহিদ। যে নিজ জীবন রক্ষার জন্য নিহত হয়, সে শহিদ। যে নিজ দ্বীন রক্ষার জন্য নিহত হয়, সে শহিদ এবং যে নিজ পরিবার রক্ষার জন্য নিহত হয়, সে শহিদ।”
এটি সহীহ হাদিস। ইমাম আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও আহমাদ রহ. সায়ীদ ইবনে যায়দ (রাযি.) থেকে বর্ণনা করেছেন। যা সহীহুল জামে এর ৬৩২১ নম্বর হাদিস।
ফিকহের মধ্যে এটাকে বলা হয়: ‘আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা’। আক্রমণকারী হল, যে নিজ শক্তিবলে অপরের সম্মান, জীবন ও সম্পদের উপর আক্রমণ করে।
চার মাযহাবের ফুকাহায়ে কেরাম ইজ্জতের উপর আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন। আর জীবন ও সম্পদের উপর আক্রমণকারীকে প্রতিহত করাও জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে ফরজ। ইমাম মালেক ও শাফী রহ. এর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মতও এর উপরই। চাই এতে আগ্রাসী মুসলিম নিহত হউক না কেন।
ইমাম জাস্সাস রহ. বলেন: এ ব্যাপারে কোন মতবিরোধ আছে বলে জানি না যে, যদি কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য তরবারি উত্তোলন করে, তখন সকল মুসলমানের উপর তাকে হত্যা করা ফরজ। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: সুতরাং যে আগ্রাসি দুশমন দ্বীন ও দুনিয়া বরবাদ করে দেয়, ঈমানের পর তাকে প্রতিহত করা অপেক্ষা বড় ফরজ কিছু নেই।
এই শরয়ী হুকুমের ব্যাপারে অজ্ঞতা মুসলমানদেরকে কত কষ্টের সম্মুখীন করেছে। কারণ গোয়েন্দা বাহিনীর লোক মধ্যরাতে এসে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যায়, কিন্তু সে তাকে হত্যা করে না একজন মুসলিমের রক্তপাতের ভয়ে।”
তিনি আরো বলেন:
কখনো কেউ জিজ্ঞেস করেন: একজন পুলিশ নামায পড়ে, রোজা রাখে। সে আমাকে ধরে থানায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে বলে তাকে হত্যা করা কি আমার জন্য জায়েয হবে?
কিন্তু সমস্ত ফুকাহায়ে কেরামের সর্বসম্মত মত হল, কোন মুসলমানের জন্য এমন কারো কাছে আত্মসমর্পণ করা জায়েয নয়, যে তার সম্মান নষ্ট করতে চাচ্ছে। তাই যখন আব্দুন নাসের একজন মুসলিম ভাইকে ধরে নিয়ে গিয়ে বিশ বছর কারাগারে আটকে রাখবে, তার স্ত্রীকে নিয়ে আসবে, তার সামনে তার স্ত্রীর সম্মান নষ্ট করবে, তখন সকল মুসলমানের সর্বসম্মত মত হল: মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উক্ত মুসলিমের আত্মসমর্পণ করা জায়েয় নেই।
সমস্ত ফুকাহায়ে কেরাম একমত পোষণ করেছেন যে, সম্মানের উপর আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা সর্বসম্মতভাবে ফরজ। তাই যখন আপনি পুলিশকে মধ্যরাতে আপনার ঘরে প্রবেশ করতে দিবেন, আর আপনার স্ত্রী ঘুমের পোষাকে উম্মুক্ত হয়ে আছে, তখন তারা তার আবরণ খুলে দেখবে, আপনি তার পাশে ঘুমিয়ে আছেন কি না। এতে আপনার সম্মান নষ্ট হল। আপনি বিশ্বজগতের প্রতিপালকের নিকট গুনাহগার। কারণ এখানে জুলুম হয়েছে। পুলিশের নামায রোজা তাকে হত্যা করার জন্য বাধা হবে না।”
৯- তিনি মুসলমানদেরকে, বিশেষ করে আলেমদেরকে আহ্বান করতেন, জালিম তাগুতদের সামনে প্রকাশ্যে হক কথা বলতে। এমনকি যদিও এতে সৎ কাজের আদেশ দানকারী ও অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদানকারী শহিদ হয়ে যায়।
তিনি বলতেন:
“‘মুমিন নিজ তরবারি ও যবান দ্বারা জিহাদ করে।’
এটি সহীহ হাদিস। ইমাম আহমাদ ও তবরানি রহ. কা’ব বিন মালিক রাযি. থেকে বর্ণনা করেছেন। যা সহীহুল জামে এর ১৯৩০ নম্বর হাদিস।
যবান দ্বারা জিহাদের একটি প্রকার হল: উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে জিহাদ ফরজ হওয়ার ফাতওয়া। বিশেষ করে যখন তা শাসকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয়। এ সময় ফাতওয়া প্রদান করা নিজের জীবনের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হয়। কারণ এতে কখনো আলেমের চাকুরি চলে যেতে পারে, কখনো তাকে করারুদ্ধ করা হতে পারে, কখনো ফাঁসিতে ঝুলানো হতে পারে। একারণেই একমাত্র একনিষ্ঠ আমলদার আলেমগণকেই জিহাদি বিষয়ে ফাতওয়া জিজ্ঞেস করা হবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. ‘আল-ফাতাওয়াল কুবরা’ ৪/১৮৫ এ বলেন: জিহাদী বিষয়াবলীতে এমন বিশুদ্ধ দ্বীনদার লোকদের ফাতওয়া গ্রহণ করা উচিত, যাদের দুনিয়াবাসীর অবস্থার ব্যাপারে বিস্তৃত জ্ঞান আছে। তবে তাদের ফাতওয়া নয়, যাদের মাঝে দুনিয়ার বাহ্যিক চিন্তাটাই প্রভাবশালী। সুতরাং তাদের ফাতওয়া গ্রহণ করা হবে না। আর এমন দ্বীনদারদের ফাতওয়াও গ্রহণ করা হবে না, যারা দুনিয়ার অবস্থার ব্যাপারে বিস্তৃত জ্ঞান রাখে না।”
অর্থাৎ যে জিহাদী বিষয়াবলীতে ফাতওয়া প্রদান করবে, তার জন্য শর্ত হচ্ছে: গবেষণা করে সারকথা বের করতে সক্ষম হওয়া এবং যুদ্ধের প্রকৃতি ও যোদ্ধাদের অবস্থা সম্পর্কে জানা।”
তিনি আরো বলেন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: শহীদগণের সর্দার হলেন হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব এবং সেই ব্যক্তি, যে জালিম বাদশার সামনে দাঁড়িয়ে তাকে আদেশ-নিষেধ করে। ফলে জালিম বাদশা তাকে হত্যা করে ফেলে। (ইমাম তিরমিযী রহ. হাদিসটি বর্ণনা করেছেন)
এটা ইসলামে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের গুরুত্ব বুঝায়। সমাজে অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ করা ফরজ, চাই এটা মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে হোক, যদি শাসক ফাসিক বা জালিম হয়। আর কাফের শাসকের ক্ষেত্রে তো কোন অবস্থায়ই চুপ থাকা জায়েয নেই। তার নেতৃত্বও বৈধ নয়। সমস্ত উম্মাহর পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ফরজ।
তিনি আরো বলেন:
“হে মুসলিমগণ! জিহাদ আপনাদের জীবন, জিহাদ আপনাদের সম্মান এবং জিহাদের সাথেই আপনাদের অস্তিত্ব সম্পর্কিত। হে দায়ীগণ! সূর্যের নিচে আপনাদের কোন মূল্য নেই, যদি আপনারা অস্ত্র আগলে না ধরেন এবং তাগুত জালিম কাফিরদের ভোগ-বিলাসিতা প্রত্যাখ্যান না করেন।
নিশ্চয়ই যারা ধারণা করে আল্লাহর দ্বীন জিহাদ, যুদ্ধ, রক্ত ও লাশ ব্যতিত বিজয়ী হয়ে যাবে, এ সকল লোক কল্পনার জগতে বাস করে, এই দ্বীনের প্রকৃতি বুঝে না।”
Comment