তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন-দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: আব্দুল্লাহ আয্যাম- হিন্দুকুশ পর্বত চূড়ায় আল কুদসের জখম
(পূর্ব প্রকাশের পর)
১০- তিনি মনে করতেন, কোন জামাতের সাথে বাইআতবদ্ধ থাকা জিহাদি কর্মকাণ্ড তো দূরের কথা, কোন নেক কাজের জন্যই বাধা হতে পারে না। তিনি বলেন:
“বাইআত সর্বদা পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে হয়। কারণ এটা হল পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি। গুনাহ ও জুলুমের কাজে বাইআত জায়েয নয়। যেমন কিছু লোক একটি বিশেষ কাজের জন্য বাইআত করল। তারপর কিছুদিন পর বাইআতকারীকে এমন কর্মকাণ্ড করতে বলা হল, যাতে আল্লাহ সন্তুষ্ট নন এবং শরীয়ত তার অনুমোদন করে না। যেমন অমুকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর, অমুকের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি কর, অমুক অমুকের গোপন দোষগুলো অনুসন্ধন কর।
একজন মুসলিম একাধিক ব্যক্তিকে একাধিক বাইআত দিতে পারে। যেমন এক শায়খকে বাইআত দিল তার সাথে জিহাদ করার ব্যাপারে। আরেকজনকে বাইআত দিল তার হাত ধরে ইলম ও শিষ্টাচার শিখার জন্য। এ বাইআতগুলোর মাঝে কোন সাংঘর্ষিকতা নেই। কেউ কারো নিকট একটি বিষয়ে বাইআত গ্রহণ করলে তার জন্য তাকে প্রত্যেক বিষয়ে আনুগত্য চাপিয়ে দেওয়া জায়েয় নয়। কারো জন্য নিজের বাইআতের দোহাই দিয়ে বাইআতকারীকে এমন পুণ্যকর্ম থেকে বাধা দেওয়া জায়েয় নয়, যেটা সুস্পষ্টভাবে কিতাব-সুন্নায় এসেছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ- জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। কারণ তখন এই বাইআত হয়ে যাবে গুনাহের উপর বাইআত। “আর আনুগত্য হয় ভালো কাজে।” “স্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির আনুগত্য জায়েয নেই। উভয়টি সহীহ হাদিস।”
১১- এই পরিচ্ছেদটি সমাপ্ত করব শায়খের সেই বক্তব্যগুলো দিয়ে, যেখানে মনে হয়েছে, যেন শায়খ অদৃশ্যের সংবাদ পাঠ করছেন:
“হে ভাইয়েরা! আমরা মাজলুম। আমাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। আমাদেরকে আমাদের সম্মানের উপর আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে আমাদের ঘরের ভেতরে আক্রমণকারীকে বাধা প্রদান করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমাদেরকে চোরের দিকে হস্ত প্রসারণ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যে চোর আমাদের ঘুমের ঘরে ঢুকে গেছে। তাহলে এর পর কী হবে? এরপর ফেরেশতাগণ আমাদেরকে প্রশ্ন করবেন: ﴿فِيمَ كُنتُمْ﴾؟ “তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?”
তখন কী উত্তর থাকবে? তখন প্রথম শ্রেণীর লোকদের এই উত্তর থাকবে: ﴿كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الأَرْضِ﴾ “আমাদেরকে যমীনে অসহায় করে রাখা হয়েছিল।”
তখন ক্ষমতাময় রবের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া হবে: ﴿فَأُوْلَئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَسَاءتْ مَصِيرًا﴾ “সুতরাং এরূপ লোকদের ঠিকানা জাহান্নাম এবং তা অতি মন্দ ঠিকানা।”
নিশ্চয়ই আমাদের চিন্তাধারা হল আফগানিস্তান মুক্ত করা। হ্যা, অবশ্যই আফগানিস্তান মুক্ত করতে হবে। কারণ এটা আমাদের দ্বীনের অংশ এবং আমাদের দায়িত্বে আরোপিত অত্যাবশ্যকীয় ফরজ। আরো চিন্তাধারা হল বাইতুল মাকদিস মুক্ত করা, আল-আকসাকে তাওহীদের ছায়াতলে এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকাতলে ফিরিয়ে আনা। ﴿قَاتِلُواْ الَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ الْكُفَّارِ وَلِيَجِدُواْ فِيكُمْ غِلْظَةً﴾ “তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর আর তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা পায়।”
কিন্তু যেমনটা আমি আপনাদেরকে বলেছি- আমাদের হাতগুলো বেঁধে রাখা হয়েছে, হাতগুলোকে ঘাড়ের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, পা গুলোতে শিকল ও বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাসও নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আমাদেরকে শাস্তির হুশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে, হৃদয়ের স্পন্দন থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, অন্তরের একেকটি নড়চড়াও গুণে রাখা হয়েছে। তাহলে এরপর আর কী করার আছে? আমাদেরকে অবশ্যই জিহাদের জন্য একটি ভ‚মি খুঁজে বের করতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা রবের দরবারে ওযর পেশ করতে পারব এবং নিজেদেরকে সমস্ত দেশগুলো মুক্ত করার জন্য প্রস্তুত করতে পারব।
যারা ধারণা করেন, আফগানিস্তানে জিহাদ মানে হল ফিলিস্তীনের ইসলামী ইস্যু সম্পর্কে উদাস হয়ে যাওয়া, এরা ভুল ধারণাকারী, বেখবর। তারা জানেন না কিভাবে নেতৃত্ব প্রস্তুত করা হয়? কিভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়? কিভাবে অঙ্কুর স্থাপন করা হয়, যেন তার অধীনে বিশাল ইসলামী সেনাবাহিনী একত্রিত হতে পারে, যার মাধ্যমে পৃথিবীকে মহা বিশৃঙ্খলা থেকে পবিত্র করা হবে। আপনারা এবং আরো অনেক মানুষ আমাদেরকে আপত্তি করে: আপনারা ফিলিস্তীন ছেড়ে আফগানিস্তান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমরা আফগানিস্তান নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের উপর আফগানিস্তানের মুসলিম মুজাহিদ জনগণকে সাহায্য করা ফরজ। আমাদের উপর আফগানিস্তানের ভ‚মিকে পবিত্র করা ফরজ।
.......................
নিশ্চয়ই আফগানিস্তানই ফিলিস্তীন এবং ফিলিস্তীনই আফগানিস্তান। এক দুঃখ আরেক দুঃখকে জাগিয়ে তুলে। কিন্তু আমরা চাই না, আমাদের অন্তর থেকে জিহাদের স্ফুলিঙ্গ মরে যাক। আমরা চাই না এই দ্বীনের ব্যাপারে, নিপিড়ীতদেরকে উদ্ধার করার ব্যাপারে এবং আমাদের শিরা ও ধমনির গভীরে অবস্থিত মুসলিম ভ‚মিগুলোকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদের তীব্র চেতনা নিভে যাক। আমরা চাই স্ফুলিঙ্গ প্রজ্জলিত থাকুক। তাই আমাদেরকে অবশ্যই জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে। জিহাদ সারা জীবনের ফরজ। আফগানিস্তান, ফিলিস্তীন, ফিলিপাইন এবং এমন প্রতিটি স্থানের জন্য, যেখানে জালিম সম্রাট ও বাদশাহরা সীমালঙ্ঘন করেছে।
.......................
হয়ত কেউ বলবে: আপনি যদি কোন একটি ইস্যু প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, তখনই সমগ্র বিশ্ব এক ধুনক থেকে আপনার প্রতি তীর নিক্ষেপ করবে, সর্বস্থান থেকে আপনার দিকে তীর তাক করবে। আমরা তাদেরকে বলছি: আমরা এখনই আন্তর্জাতিক ইহুদিচক্র, আমেরিকা ও ইসলামী বিশ্বে প্রতিটি প্রান্তরের তাদের দালালদের মধ্যে এই দু’টি বিষয় অনুভব করছি এবং তাদের থেকে সর্বপ্রকার দুর্ভোগ আস্বাদন করছি। এমনকি জিহাদভূমিতে প্রবেশ করতেও, এমনকি পাকিস্তানে প্রবেশ করতেও।
.............
সম্প্রতি দু’বছর পূর্বে ইহুদিরা এ ব্যাপারে সজাগ হয়েছে যে, এই জিহাদ ইসলামী বিশ্বের যুবকদেরকে জাগিয়ে তুলেছে, তাদরেকে তাদের গভীর অলসতা থেকে ঝাঁকুনি দিয়েছে, তাদের অন্তরের গভীরে এই দ্বীনের ব্যাপারে আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তুলেছে এবং যে ইজ্জত নষ্ট করা হয়েছে, যে রক্ত প্রবাহিত করা হয়েছে, যে সম্পদ ছিনতাই করা হয়েছে এবং যে প্রাণ হরণ করা হয়েছে, তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের পৌরষ জাগিয়ে তুলেছে। তাই ইহুদিরা সচেতন হল। কঠোরতা আরোপ করতে শুরু করল। চাপ সৃষ্টি করতে লাগল।
.....................
আমরা মুসলমান। আমরা মুজাহিদ ইনশআল্লাহ। আমরা যেকোন স্থানের মৃত্যুর জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করে নিয়েছি। হোক পাকিস্তানের ভূমিতে গুপ্তহত্যা কিংবা আফগানিস্তানের ভিতরে হত্যা কিংবা মসজিদে আকসার চত্তরের উপরে মৃত্যু। আমরা নিজেদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার জন্য উৎসর্গিত করেছি। আমরা আশা করি, আল্লাহ এ দুর্বল প্রাণগুলোকে সাহায্য করবেন এবং এই শীর্ণ দেহ ও হাড়গুলোকে শক্তিশালী করবেন এব আমাদেরকে এ পথের উপর অটল রাখবেন।
......................
আমরা আল্লাহর নিকট আশা রাখি, আমরা এ পথেই শহীদ হিসাবে মৃত্যুবরণ করব। এমনিভাবে আমরা বিশ্বাস রাখি, আমরা যেখানেই নিহত হই, যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ি আমরা শহীদ, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তরে জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার নিহত বহাল থাকে এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ধমনিতে যুদ্ধ-জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প থাকে। আমি পূর্বেও আপনাদেরকে বলেছি, আমি একজন দুর্বল বান্দা হয়ে ঘোষণা করছি: হয়ত আমাকে আগামীকাল এ পথ থেকে বের করে দেওয়া হবে, কিন্তু এটা হকের পথ। আমরা আল্লাহর নিকট অবিচলতা কামনা করছি। যদি আমরা এ পথে পড়ে যাই, যেভাবেই পড়ে যাই- আমেরিকান গুলিতে, কিংবা কোন গাদ্দার বা জালিমের গুলিতে কিংবা কমিউনিষ্টদের গুলিতে, তাহলে আমরা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহর মাঝে এই বিশ্বাস রাখি যে, আমরা শহীদ। আমরা বিশ্বাস রাখি, আল্লাহর হুকুমে আমরা পৌঁছিয়ে গেছি, সাক্ষী হয়ে গেছি এবং নিজেদের প্রাণ পেশ করে দিয়েছি, যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ত বিশুদ্ধ থাকে এবং সংকল্প অটুট থাকে।”
আশা করি, শায়খ শহীদ আব্দুল্লাহ আয্যামের উত্তরাধিকার স্বত্ত্বের এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ সেই মন্দ চিত্র অপসারণ করবে, যা তার সাথেই সম্পর্কিত কিছু লোক তার সাথে যুক্ত করতে চায়। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, যেন এটা এই মহান মুজাহিদের প্রতি সামান্য কর্তব্য পালন হিসাবে গ্রহণযোগ্য হয়, যিনি নিজের পশ্চাতে মূল্যবান উত্তরাধিকার সম্পদ রেখে গেছেন, মুসলমানদের উপর যার যথাযথ মূল্যায়ন করা আবশ্যক।
আল্লাহ আব্দুল্লাহ আয্যামের প্রতি রহম করুন! কারণ আল্লাহ তাকে শাহাদাতের মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং তাকে বেঁচে থেকে এমন অনেক লোককে দেখা থেকে পরিত্রাণ দান করেছেন, যাদের তিনি প্রশংসা করতেন.. এমনকি তাদের অধিক প্রশংসার কারণে সমালোচিতও হতেন। কারণ তিনি আফগান জিহাদের উপর আপতিত সকল আপত্তির জবাব দিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। আমি আরো স্পষ্টভাবে বলব: আল্লাহ তাকে এমন অনেক লোককে দেখা থেকে পরিত্রাণ দান করেছেন, যাদের তিনি প্রশংসা করতেন কিন্তু তারা ক্রুশের পতাকাতলে এবং তার জঙ্গীবিমান ও ট্যাংকের প্রহরায় কাবুলে দিকে প্রত্যাবর্তন করে!
Comment