তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন-তৃতীয় পরিচ্ছেদ: মিশরের অভিযান সমূহ
(পূর্ব প্রকাশের পর)
ঙ. মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনী সিনাইয়ের উত্তরাঞ্চলে ন্যাক্কারজনক হামলা করে। তাতে প্রায় ৩ হাজার পুরুষ, নারী ও শিশুকে গ্রেফতার করে। এক্ষেত্রে কোন ধরণের মূল্যবোধ বা নৈতিকতার তোয়াক্কা করেনি। তাদের মধ্যে অনেকে লাগাতার নির্যাতনের কারণে নিহত হন।
এ সকল অপরাধযজ্ঞের সামান্য বিবরণ এর কয়েকজন ভুক্তভোগীর ভাষায়ই নিম্নে উল্লেখ করব। আলোচনা দীর্ঘায়িত করার জন্য আমি পাঠকদের নিকট ক্ষমা চাচ্ছি।
বিবরণ:
“তাদের থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত একজন বলেন: তদন্তে যারা উপস্থিত হয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ লাল চেহারা ও মাথা মুন্ডিত ছিল। তারা কালো চশমা পরত এবং কোন কথা বলত না।
.................
তারা রাতে আমাদের থেকে অনেক লোককে ধরে লাযুগলীতে নিয়ে যেত। তাদের সাথে তাদের বোন, চাচাত ভাই ও অন্যান্যদেরকেও নিয়ে যেত। তাদেরকে মেরে ফেলার পরও মারধর করত। অতঃপর তারা এগুলো কম্বলে জড়িয়ে বাসের স্যুটকেস স্টোরে নিয়ে ফেলত ‘তোরা’য় নিয়ে যাওয়ার জন্য।
........................
১৪০ জন সম্মানিত নারীকে বন্ধক হিসাবে গ্রেফতার করা হয়।
............
মহাসড়কের উপর নারীদের চেহারা থেকে নিকাব ছিনিয়ে নেয়... এখন আর নারীরা একা একা মহা সড়কে হাটেন না। সন্দেহের ভয়ে পুরুষগণ দাড়ি কামিয়ে ফেলেছেন।
..........................
তারা আমাকে আল আরিশের রাজ্য নিরাপত্তা অফিসে নিয়ে যায়...। আমার মায়ের নাম নিয়ে গালি দেয়... আমাকে বলে: হে বেশ্যার বাচ্চা... তুই কি পাগল হয়ে গেছিস...আমি চিৎকার করে উঠলাম, তাদেরকে বললাম: আপনাদের সকলের থেকে শ্রেষ্ঠ লোক আমার মায়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছে... তারা লাঠি দিয়ে আমার মাথায় দশটি আঘাত করল... আমি ৩০০ বা ২০০ বনি আদমের মুখোমুখি হয়েছি...যাদের পুরুষগণও চিৎকার করছিল এবং নারীরাও চিৎকার করছিল।
...........
আল আরিশের নিরাপত্তা অফিসে চতুর্দিক থেকে চিৎকার ও আওয়াজ শোনা যেত... তার পুরুষরা এবং নারীরাও। তারা আমাকে গালি-গালাজ করল। আমি তাদের জবাব দিলাম... আমি সেখানে ১০ মিনিটের মত ছিলাম, তাদের মাঝে চরম দুর্ভোগ দেখেছি..আরো কিছু লোকের উপর নির্যাতন হতে দেখেছি.. আমি নিজ চোখে দেখেছি, তাদের পুরুষদের পোষাক ছিড়ে ফেঁড়ে গেছে..তাদের পোষাকে ও শরীরের নিচে বিদুৎস্পৃষ্ট করেছে।
................
নির্বাসন চলাকালীন সেখানে ১৫ জন লোক ছিল, যারা অধিকাংশ সময়ই ব্যারেজে থাকত। এরা আল আরিশের প্রবেশপথে অবস্থিত আল মদন গ্রামের আল হাজি ফ্লিফেলের আত্মীয়স্বজন, যিনি তাবার ঘটনাবলীতে অভিযুক্ত ছিলেন। তারা সমস্ত গ্রামের লোকদেরকে গ্রেফতার করে। যাদের মধ্যে পুরুষও ছিল, শিশুও ছিল ৫ জন.. একবার আমার ভাগ্নে তার ছোট ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে সঁপে দেন। তারা তার পরিবর্তে বড় ভাইকে নিয়ে যাচ্ছিল.. সে (মেয়ে) পাঁচদিন যাবত বসে রইল, অতঃপর তারা তাকে বের করে দিল। (এই পরিবারের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে সম্মানিত নারীও আছেন।)
.......
সকাল বেলা তারা মেশিনগান ও পিস্তল দিয়ে বাড়ি ও আলমারিগুলো তল্লাশি করল। তারা আসামী সম্পর্কে এবং সে কখন আসে, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। আমরা বললাম: আমরা তাকে দেখিনি, একদিন যাবত সে বাইরে গেছে। রমযানের প্রথমদিনে আমাদের সাথে ইফতার করেনি.. তারা আসামীর ছোট সন্তানকে ধরে নিয়ে গেল, যাতে আসামী নিজেকে সুপর্দ করে.. তার ভাইকেও গ্রেফতার করল.. মানুষ ভয়ে আছে.. তার কন্যা নিজেকে সঁপে দিল, যেন তারা তার ছোট ভাইকে ছেড়ে দেয়.. সেখানে তাদেরকে নিজেদের কাছে ৫ দিন রেখে তারপর ছেড়ে দেয়.. তিনি চার মাস বা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের গর্ভবতী ছিলেন.. বের হওয়ার পর গর্ভ ফেলে দেন..একটি ছোট্ট মাংসখণ্ড, যা চার মাস পরে আসে.. পরিবার চিৎকার করতে থাকে, নারীরা ভীত-সন্ত্রস্ত্র.. এমনকি পুরুষরা তাদের দাড়ি মুণ্ডন করে ফেলেন.. তারা পুরুষদেরকে তাদের দাড়িতে ধরে বাঁধত। চুল তাদের হাতে উঠে আসত, সাথে থাকত রক্ত.. হাসবিয়াল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল। (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম ব্যবস্থাপক।)
.....................
বিশ বছর যাবত আমরা ইহুদিদের দখলে আছি। আমাদের মাঝে কখনো এটা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেনি।
.............
আমরা সরকার থেকে এ সব সহ্য করছি। আমাদের মাঝে এই দখলদারিত্বের ব্যাপারে কোন প্রতিক্রিয়া নেই। এটা কী?
..................
আল আরিশের রাজ্যনিরাপত্তা পরিষদের মসজিদে শত শত লোক আটক ছিল। তারা তাদেরকে মসজিদের ওয়াশার দিয়ে পিটাত।
.............
আমার চাচাত বোন ও দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের নিয়ে যায়।
............
আমার ভাই আত্মসমর্পণ করলেন, যখন তিনি জানতে পারলেন তারা তার মাকে নিয়ে যাবে।
.................
গৃহগুলোতে নারীরা ব্যতিত কেউ অবশিষ্ট ছিল না। এমনকি নারীদেরকেও তারা নিয়ে যেত.. মেয়েরা রাস্তায় চলার সময় নিকাব মুখের উপর শক্তভাবে বেঁধে নিত। যাকে ইচ্ছা হত, ধরে নিয়ে যেত.. ভীষণ আতঙ্ক.. তারা বলত: ছুটির পর এটা পূর্ণ করবে।
....................
তারা ১২ বছরের কন্যাদেরকে নিয়ে যেত.. মেয়েটি ঘর থেকে পলায়ন করল.. তখন প্রায় ১৩ দিন পর্যন্ত আল আরিশের সমস্ত বাহিনী তার বাড়িতে অবস্থান করল।
..............
তারা হামাদাকে বারবার নিয়ে গিয়েছিল। সে গর্ভবতী ছিল। তারা তাকে আরবিতে জড়িয়ে রেখেছিল, যেন তার গৃহকর্তাদেরকে দেখিয়ে দেয়.. আরবিতে দীর্ঘ সময় বেঁধে রাখার কারণে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়.. ইসমাঈলের আঙ্গুলে বারবার বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়.. মেয়েটি যখন তার ভাইয়ের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, তখন আদিগোহ তাকে বলল: শুভেচ্ছা, দু’টি লাশ দেখ, তোমার মা.. সমর তাকে গালি দিয়ে বলল: হে নষ্টা মেয়ে.. অনেকবার ইসমাঈল তার বোনের মুখের উপর ঘোমটা টানছিল। একবার যখন তারা হামাদাকে বাঁধল, সে সময় তার সাথে ৪৫ জন, একে অপরের উপর পড়ছিল। যখন তারা টয়লেটে প্রবেশ করল, তখন তাদের পুরুষদের হারিয়ে ফেলল। তখন তারা পুরুষদের চিৎকারের আওয়ায শুনছিল.. ইসমাঈলকে তার সামনে উলঙ্গ অবস্থায় ঝুলন্ত দেখতে পেল।
.....................
শায়খ জুওয়াইদের কারণে যে সকল বেদুইনদেরকে নির্যাতন করা হয়েছিল, তাদের মাঝে তিনদিনের সন্তান প্রসবা এক জননীও ছিলেন.. তারা তাকে পিটানোর ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তখন তাকে প্রহরার সাথে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
.........................
সেখানে আমার এক নারী সহকর্মী ছিলেন, যিনি বাজারে ছিলেন। তারা তাকে বলল: ওড়না খুল.. তিনি অস্বীকার করলেন। তারা তার কাঁধে বুলেট দিয়ে আঘাত করল.. তারা পূত-পবিত্রা নারীদের নিকাব সরাতে থাকে। তাদেরকে শ্যালেট দিয়ে পিটায়। আমি নিজ চোখে এগুলো দেখেছি। যখন তাদের এগুলো ঘটে, তখন আমার কাজ ছিল বাজারের নিকটে এবং মহিলা সেক্টরের পাশে।
..................
সেখানে একজন যুবক ছিল। তারা তাকে তল্লাশি করে তার পকেট থেকে একটি কুরআন বের করল। তাকে জিজ্ঞেস করল: এটা কি? তিনি বললেন: আমাদের রবের বাণী। তারা তাকে গালি দিতে লাগল। তিনি বললেন: এগুলো করবেন না, রমযানে এগুলো হারাম। তখন তারা পিটাতে থাকে।
.................................
ট্রান্সফারের গাড়িতে আমার সাথে আমার চাচাত ভাই ছিল.. সেখানে একজন ওয়ান্টেড লোক ছিল, যখন তাকে খুঁজে পেল না, তখন তার পরিবর্তে তার পিতাকে ধরে নিয়ে গেল। এছাড়াও তার দুই বোনকে ও তার স্ত্রীকে আল আরিশে নিজ পরিবারের নিকট থেকে ধরে নিয়ে গেল.. সে আত্মসমর্পণ করার পর নারীদেরকে ছেড়ে দিল.. ২০০ জন নারী ছিল..আমার একদিন পূর্বে তাদেরকে মুক্তি দিল.. আমার দেহ ও দৃষ্টি ক্লান্ত ছিল। তারা আমাকে রাস্তায় কাঁদা মাটিতে ফেলে গেল.. আমরা ছিলাম বিক্ষিপ্ত.. প্রায় ৪০ দিন, নারীরা এই প্রথম রাস্তায় ছিল..প্রায় ১ সপ্তাহ থেকে ১০ দিন সেখানে বসে রইল, অতঃপর তাদেরকে মসজিদে স্থানান্তর করল.. তাদের অধিকাংশের সাথেই দুধের শিশু থেকে শুরু করে ৬ বছর বয়সের শিশু ছিল।
.....................
শুনেছি, নারীদেরকে বিদ্যুতে শক দিয়েছে।
......................
প্রতিদিন বাড়িতে হানা দিত এবং নারী ও পুরুষদেরকে নিয়ে যেত।
......................
আজ অবধি এগুলো তাদের নিকট আছে.. ‘এফএসএইচ’ আত্মসমর্পণ করেন। কারণ তারা তার মা ও ছোট বোনদেরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তার মাকে বিদ্যুতে শক দেওয়া হয়েছে।
..................
গোত্রের মুরুব্বিরা লোকদেরকে ভয় দেখাতে লাগল এবং তাদেরকে চাপ দিতে লাগল, যেন পুরো পরিবারকে নির্যাতনে ফেলার পরিবর্তে তাদের সন্তানদেরকে তুলে দেন। তাদের মধ্যে একজন তার দুই সন্তানকে নিজ হাতে সপে দেন।
....................
আমরা দ্বিতীয় বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর উক্ত পরিবার আইনজীবিদের সাথে যোগাযোগ করে একথা জানায় যে, নিরাপত্তা বাহিনী ভ্যান গাড়ি নিয়ে এসেছিল। তারা বাকি থাকা একমাত্র ভাইকে দাবি করল। পিতা বিদ্রোহ করেছেন এবং তিনি তার পরিবর্তে নিজেকে সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু তারা তবুও যুবককে নিয়ে যেতে লাগল। আর যুবকও তাদের সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, যাতে তার পরিবর্তে তার মা ও ঘরের নারীদেরকে নিয়ে না যায়।
.........................
আমরা দেখা করে আসার পর তারা ওই ভাইকে ডেকে পাঠাল, পাশার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমরা যার কাছে গিয়েছিলাম.. চলে যাওয়ার আগে আমরা সেই স্থানীয় লোকটির সাথে সাক্ষাৎ করলাম, যাকে পাশার সাথে সাক্ষাৎ করার কারণে নিরাপত্তা পরিষদে ডেকে নিয়েছিল। আর এর আগে তার পরিবারকেও দেখতে গিয়েছিলাম!! আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে পালাতে পারে কি না? সে বলল: আমি পালাতে পারব না.. আমি বাড়িতেই আমার মা ও বোনদের সাথে থাকব.. আমি এখানেই থাকতে চাই.. তারা আমাকে এখনো খোঁজেনি.. আমি আর কী চাইব.. এবার আমি বুঝেছি, কী হবে.. আমি ও আমার পরিবার মৃত্যুর আগে কিছুতেই বাড়ি ছাড়ব না.. নারীদেরকে কার কাছে ছেড়ে যাব.. তাহলে তো তারা আমার পরিবর্তে তাদেরকে নিয়ে যাবে.. আমার এর কোন প্রয়োজন নেই.. মানুষ একে অপরকে ভয় করছে.. কোন প্রয়োজন নেই।
.............
পুলিশের লোকেরা পরিবারের লোকদেরকে ভয় হুমকি দিচ্ছে, তারা যেন ছুটির পরে কী হয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করে..আল্লাহর শপথ, অবশ্যই আমরা তা জালিয়ে দিব.. দেশকে অবশ্যই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”
Comment