মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী দা.বা. –এর বক্তব্য প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা
চাটগামী হুজুর দা.বা. –এর বক্তব্যটি নিয়ে বিভিন্ন কথা বার্তা চলছে। কেউ কেউ একে জিহাদ ও মুজাহিদিনের বিপরীতে দাঁড় করানোরও চেষ্টা করছেন। তাই কিছু কথা আরজ করতে চাচ্ছি। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
হুজুর হিন্দ ও কাশ্মীরে জিহাদের কথা বলছেন
ইকদামী-দিফায়ী উভয় প্রকার জিহাদ হুজুর ফরয বলেছেন। কাশ্মীর, আফগান ও হিন্দুস্তানের জিহাদকেও হুজুর সমর্থন করেছেন। তবে আফসোস জাহির করেছেন যে, আফগান জিহাদ নেযামমতো হওয়ায় সফল হয়েছে, কিন্তু কাশ্মীর ও হিন্দুস্তানের অন্যান্য জিহাদ নেযামমতো হচ্ছে না বিধায় সফল হচ্ছে না। হুজুরের বক্তব্য লক্ষ করুন-
“দিফায়ী জিহাদ ও ইকদামী জিহাদ। ইসলামে উভয়টার বিধান রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম উভয় প্রকার জিহাদে শরীক হয়েছেন।” –মুঈনুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩১
“হিন্দুস্তানে বিচ্ছিন্নভাবে জিহাদ হচ্ছে। কিন্তু সেখানে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত। প্রত্যেক দলের পৃথক পৃথক আমীর রয়েছে। প্রত্যেক দল তার আমীরের নির্দেশনায় চলে। প্রত্যেক দল যার যার চিন্তা ও মর্জি অনুযায়ী কাজ করছে। এটা সহীহ নেযাম নয়। তাই সেখানে কামিয়াবী আসছে না। একই কারণে কাশ্মীরের জিহাদেও কামিয়াবী আসছে না। আফগানিস্তানের মুজাহিদরা সফল হয়েছে। কারণ তারা এক আমীরের নেতৃত্বে জিহাদ করেছে। তাদের কাছে তরবিয়তপ্রাপ্ত জনশক্তি রয়েছে। যুদ্ধের সরঞ্জাম রয়েছে। সম্পদ রয়েছে।” –মুঈনুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩২
অতএব, যারা হুজুরের বক্তব্যটি প্রচার করবেন, তারা যেন আমানতদারীর সাথে এ বিষয়টি লক্ষ রেখে প্রচার করেন।
হুজুর বাংলাদেশে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে বলছেন
এ দেশের ব্যাপারে হুজুর বলেন,
“আমাদের এখানে জায়গা (state) প্রস্তুত নেই। কোনো এলাকাকে জিহাদের জন্য নির্ধারণ করলে দ্বিতীয় দিন সেটা হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তরবিয়তপ্রাপ্ত সদস্য নেই। আমরা নিজেরা প্রস্তুত করিনি। আমাদের আকাবিরের যামানায় আলেম-উলামার সংখ্যা ছিলো কম। কিন্তু তাদের মুরীদ ও অনুসারী থাকতো বেশুমার। আর আমাদের যামানায় পুরোপুরি এর বিপরীত। পীর-মাশায়েখ অনেক। কিন্তু নিবেদিত প্রাণ তাবেদার কম।” -মুঈনুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩২
বুঝা গেল, এদেশে জিহাদ হোক হুজুর চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের উদাসীনতায় হুজুর দুঃখবোধ করছেন যে, আমরা জিহাদের ক্ষেত্র প্রস্তুত করিনি। লোকজনকে বুঝিয়ে এবং তরবিয়ত দিয়ে জিহাদের জন্য ফিদা ও উপযোগী করিনি। এটা আমাদের গাফলতি। এজন্য সামনে বলেছেন,
“আপনা জায়গায় গিয়ে ولينذروا قومهم এর উপর আমল করুন। আপনার নিজ এলাকায় গিয়ে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করুন। দশ-বিশজন লোক তৈরি করুন। দুই হাজার তালিবুল ইলম ফারেগ হয়ে প্রত্যেকে দশজন করে লোক তৈরি করলে কত হাজার হবে?! এভাবে কাজ করুন এবং লোক তৈরি করুন ….।” -মুঈনুল ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩৮
হুজুর এদেশে জিহাদের জন্য লোক তৈরি করতে বলছেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আড়ালে বড় একটা লক্ষ্য থাকবে, জিহাদের জন্য লোক তৈরি করা। যারা হুজুরের বক্তব্যটি প্রচার করবেন, আমানতদারীর সাথে এ কথাটিও যেন প্রচার করেন।
হুজুরের কামনাই মুজাহিদদের মানহাজ
আপনি যদি আলকায়েদার মানহাজ জেনে থাকেন, তাহলে আশাকরি আপনার কাছে স্পষ্ট যে, হুজুর যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশসহ গোটা হিন্দুস্তানে জিহাদের কাজে এগিয়ে যেতে বলছেন, ঠিক সে মানহাজেই আলকায়েদা এগুচ্ছে। এদেশে আলকায়েদা অনেকদিন যাবত কাজ করছে। তাদের এতদিনের কাজের মূল ফোকাস, মুসলিম জনসাধারণের মাঝে জিহাদসহ দিনের সহীহ ইলম পুনর্জীবিত করা। দ্বীন ও জিহাদের সহীহ বুঝ পয়দা করা। এজন্য মুনাসিবমতো অল্প দু’চারটা সামরিক অভিযান ব্যতীত আলকায়েদার সামরিক কোনো অভিযান এ দেশে নেই। এতে অনেক ভাই যদিও নারাজ যে, শুধু দাওয়াত আর দাওয়াত! দাওয়াত কত দিন চলবে? কাজ হবে কোন দিন?? –কিন্তু মুজাহিদিনে কেরাম সবরের সাথে সে দাওয়াতের কাজই করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব হচ্ছে আস্কারি ই’দাদ করে যাচ্ছেন। ঠিক এ মানহাজটির কথাই হুজুর বলেছেন।
পক্ষান্তরে যারা জিহাদের কোনো কাজই করেন না কিন্তু নাম দিয়ে বসেন মুজাহিদ, কিংবা এমনি এমনি বসে বসে অনর্থক লাফালাফি করেন, হুজুর তাদের বিরোধীতা করেছেন। বলছেন, এসব ছেড়ে যেন কাজের কাজে হাত দেয়া হয়। জনবল তৈরি করা হয়। জিহাদের অন্যান্য প্রস্তুতি যেন নেয়া হয়; ঠিক যে কাজটি মুজাহিদিন করে যাচ্ছেন।
অতএব, হুজুরের বক্তব্যকে যারা জিহাদ ও মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চান, দয়া করে আমানতদারীর সাথে যেন সঠিকভাবে প্রচার করেন। নিজের বুঝ মতো বা নিজের মতলব হাসিলের মতো করে যেন প্রচার না করেন।
হাঁ, মাসআলাগত কিছু বিষয় আছে, যেগুলোতে হুজুরের সাথে দ্বিমত হতে পারে। তদ্রূপ বর্তমান আলকায়েদার কাজের সঠিক মানহাজ ও রূপরেখাও হয়তো হুজুরের সামনে নেই। থাকলে হয়তো কথাগুলো আরও একটু ভিন্নরূপে বলতেন। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
Comment