আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“বাংলাদেশ ইসলামের বিজয়ের আশা জাগানিয়া ভূখণ্ড” ।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ২য় পর্ব
===================
“বাংলাদেশ ইসলামের বিজয়ের আশা জাগানিয়া ভূখণ্ড” ।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ২য় পর্ব
===================
এই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং দীনদার জনসাধারণের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব
এই অবস্থায় সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এই অঞ্চলের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং দীনদার জনসাধারণের। কোনো রকম অতিশয়তা ছাড়া আমি এ কথা বলতে পারি, উপরে যাদের কথা বলা হলো তারাই ওই শ্রেণি, যাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও আন্দোলনের সঙ্গে গোটা জাতির সাফল্য ও ব্যর্থতা লিখিত রয়েছে। যদি তারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন, ইখলাস একনিষ্ঠতা, সদিচ্ছা, দৃঢ়তা, অবিচলতা ও প্রত্যয়ের সঙ্গে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেন, অবস্থান গ্রহণ করেন, তাহলে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, হাজী শরীয়তুল্লাহ রহিমাহুল্লাহর এই ভূখণ্ড পুনরায় গোটা উম্মাহর জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। তারাই ওই শ্রেণি যাদের সদিচ্ছা, একনিষ্ঠতা ও ত্যাগের অনেক উদাহরণ পূর্বে গত হয়েছে। তারাই বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি জুলুম অত্যাচার সহ্য করছে। কিন্তু যদি এই দীনদার শ্রেণি নিজেদের দায়িত্বের উপলব্ধি, তা আঞ্জাম দেয়া এবং একাধিক বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাধান্য দেয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহ না করুন কোনো ভুল করে ফেলে, তাহলে শতভাগ নিশ্চয়তার সঙ্গে একথা বলা যায়, এই শ্রেণিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো শ্রেণি যত উচ্চতর যোগ্যতা সম্পন্ন, দক্ষ অভিজ্ঞ এবং জাতির সেবায় অধিক সদিচ্ছার অধিকারী হোক না কেন, যেহেতু তারা আল্লাহর পছন্দনীয় পথে নিজেদেরকে এবং সজাতিকে পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এজন্য তাদের পক্ষে কিছুতেই জনসাধারণকে উক্ত দুর্দশা, দুর্গতি ও অস্থিতিশীলতা থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব নয়।
দীনদার ভাই ও মুরুব্বিদের খেদমতে কিছু নিবেদন
অতএব খুবই জরুরি মনে করে আমরা নিজেদের দীনদার ভাই ও মুরুব্বিদের খেদমতে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে কিছু কল্যাণমূলক বিষয় নিবেদন করতে চাই
প্রথম বিষয়: আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক
এই জাতির প্রতিটি ব্যক্তি জুলুম থেকে মুক্তি পেতে চায়। সকলেই অস্থির হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে— কখন এই দুঃখ-দুর্দশা, অস্থিতিশীলতা পরিবর্তিত হয়ে সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, স্বচ্ছলতা ও স্থিতিশীলতা তাদের জাতীয় জীবনে এসে ধরা দেবে। এই অবস্থায় আমাদের কর্তব্য হলো, আমরা নিজেরাও জুলুম-অত্যাচার ও অসচ্ছলতার বাস্তব কারণ উপলব্ধি করব, সেগুলোর অবসান ঘটানোকে নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করব এবং সেই সঙ্গে গোটা জাতিকে সেগুলো সম্পর্কে বোঝাবো। আমরা তাদেরকে নিজেদের সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব পালনের আন্দোলনে দাঁড় করাবো। এই কাজ যদি আমরা করতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমাদের জন্য বরকতের দরজাগুলো খুলে যাবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছায় ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেছেন:
فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلَا يَضِلُّ وَلَا يَشْقَى وَمَنْ أَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنْكًا
অর্থ: “অতএব যে আমার প্রদর্শিত সৎপথের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না ও দুঃখ-কষ্ট পাবে না। আর যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ থাকবে, নিশ্চয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত। [সূরা তোহা, ২০: ১২৩-১২৪]
আল্লাহ তাআলার কিতাব আমাদেরকে জানাচ্ছে:
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
অর্থ: “নিশ্চয়ই শিরক অনেক বড় জুলুম।” [সূরা লোকমান, ৩১:১৩]
আল্লাহ পাক আরো বলেন:
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
অর্থ: “যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান মোতাবেক ফায়সালা না করবে তারা জালিম।” [ সূরা মায়েদা ০৫:৪৫]
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেছেন:
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ﴿٩٦﴾
অর্থ: “আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম, কিন্তু তারা (সত্যকে) মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করেছিল; কাজেই আমি তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে পাকড়াও করেছি।” [সূরা আরাফ, ০৭:৯৬]
এ কারণে....
কোনো প্রকার ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই অতি সুস্পষ্ট আকারে নির্দ্বিধায় নিঃসঙ্কোচে জাতির সামনে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরতে হবে যে, ফিতনা ফাসাদ, জুলুম-অত্যাচার, অন্যায়-অনাচার, স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র থেকে শুধু তখনই আমরা মুক্তি লাভ করব, যখন আমরা ব্যক্তি জীবন ও সমাজ জীবনে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করব এবং শাসনকার্যে ওই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করব, যার মাঝে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার হাকিমিয়া (পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা ও আইন) নিশ্চিত হবে; যেখানে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তের আইন বাস্তবায়িত হবে।
অতএব, আসুন আমরাও এটাকে আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতার পরিমাপক হিসেবে গড়ে তুলি, এটাকে মৌলিক অপরিবর্তনীয় নীতি ও চাবিকাঠিতে পরিণত করি। তারপর এই পথে বাধা সৃষ্টিকারী প্রতিটি শক্তির বিরুদ্ধে মোকাবেলার জন্য উক্ত নীতি অনুসরণে আমরা গোটা জাতিকে নিজেদের সঙ্গে দাঁড় করাতে চেষ্টা করব।
এদেশের জনসাধারণকে এই লক্ষ্য উদ্দেশ্যের ছায়াতলে আমাদের দাঁড় করাতে হবে যে, এখানে কুফরী, নাস্তিকতা, চরিত্রহীনতা, অনৈতিকতা ও নির্লজ্জতা বিস্তারকারীদের এবং সুদভিত্তিক অর্থনীতি পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। এই দৃষ্টিভঙ্গিতেও সজাতিকে নিজেদের সঙ্গে আন্দোলনে সংযুক্ত করতে হবে যে, বাংলা ভূখণ্ডে জায়নবাদী-হিন্দুত্ববাদীদের মিত্রশক্তির কোনো স্থান নেই। বরং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ভাব ও বিদ্বেষ জনসাধারণের অন্তরে তৈরি করা এবং তাদেরকে প্রতিহত করাকে আন্দোলনের ফোকাস তথা মূল লক্ষ্য হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করবো।
দ্বিতীয় বিষয়: যে লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে জাতি স্বাধীনতা পাবে!
উপরের পয়েন্টে যা কিছু উল্লেখ করা হলো সেগুলো আমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য এবং গন্তব্য বলে আমরা ধরে নিতে পারি। এখন তার জন্য দাওয়াত দেয়া, প্রচার-প্রচারণা চালানো, জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংঘবদ্ধ করা, উক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্দোলন ও কর্ম প্রচেষ্টাকে গতিশীল করা আমাদের কাজ। এই লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে জাতি স্বাধীনতা পাবে, এতদিনের শোষণ ও জুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ রচিত হবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন একটা সরকারের পতন ঘটেছে, সেনাবাহিনী চেষ্টা করে যাচ্ছে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে। ছাত্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মোতাবেক একটা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের সামনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই লক্ষ্য কি আমাদের অর্জন হতে পারে? যদি উত্তর না বাচক হয়, তাহলে এই লক্ষ্য অর্জনের পথ এখন কি হবে? কোন কর্মপন্থা অবলম্বন করে আমরা আশা রাখতে পারি যে, বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন কখনোই নিষ্ক্রিয় হতে বাধ্য হবে না?
Comment