আল-ফিরদাউস মিডিয়াপরিবেশিত
“রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষার আন্দোলন: কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা” ।।
মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাসসান হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে ||
===================
“রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মান রক্ষার আন্দোলন: কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা” ।।
মাওলানা মুহাম্মাদ মুসান্না হাসসান হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে ||
===================
بسم الله الرحمن الرحيم
এই কয়দিন তেহরিক-ই-লাব্বাইকের নির্দেশে আবারও রাজপথে নেমেছে পাকিস্তানের রাসুলপ্রেমীরা। এবার পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে - এই রাসুল প্রেমিকদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করার নির্দেশ এসেছে। এ কারণে কয়েক জন শহীদও হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি ও সহিংসতায় আহত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। মহান আল্লাহ তাঁর দরবারে এই লোকদের ত্যাগ কবুল করুন। মুসলিমদের আরও সাহস ও দৃঢ়তা দান করুন, যেন তারা নবীজি ﷺএর সম্মান রক্ষার জন্য অটল থাকতে পারে।
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী, ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং তেহরিক-ই-লাব্বাইকের প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশেষ করে তেহরিক-ই-লাব্বাইকের নেতৃত্ব ও কর্মীদের সামনে এবং সাধারণভাবে পাকিস্তানি জনগণের সামনে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
প্রথমত: নবী ﷺ এর রিসালাতের সম্মান রক্ষা করা আমাদের সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমানে, বৈশ্বিক কুফরি শক্তি ‘ইসলামের সম্মানজনক নিদর্শন’ অবমাননাকে তাদের একটি সাধারণ কাজে পরিণত করেছে। তারা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে কুরআনের অবমাননা, নবীর অবমাননা এবং ইসলামের অবমাননার দিকে উৎসাহিত করা হয়। অতঃপর কোনও দুর্ভাগা যখন এ ধরনের কাজ করে, তখন তারা এটাকে সামাজিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করে।
প্রতিক্রিয়াস্বরূপ যখন এর বিরোধিতা করা হয়, তখন সে ব্যক্তিকে সরকারিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কোনও কোনও দেশে সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের জঘন্য কাজ সংঘটিত হয়েছে।
তাই আজ ইসলাম ও কুফরের মধ্যকার সংঘাতে, ক্রুসেডার ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মহানবী ﷺ এর সম্মানের প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষাই হচ্ছে মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং প্রধান ঘোষণা। আর এই ঘোষণায় সাড়া দিয়ে জেগে উঠা এসময়ের প্রত্যেক মুসলমানের উপর আরোপিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। এটি কোনও অঞ্চল, জাতি বা মতাদর্শ দ্বারা আবদ্ধ নয়। বরং ঈমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যু’র পক্ষে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে মতাদর্শ বা সাংগঠনিক বিতর্কে জড়ানো - কাপুরুষতার সামিল।
দ্বিতীয়ত: পাকিস্তান রাষ্ট্রের বর্তমান ব্যবস্থা:
বর্তমান রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব, আমলাতন্ত্রসহ সকলেই পশ্চিমা শক্তির প্রচারিত ‘দর্শন’ দ্বারা প্রভাবিত। এদের বেশিরভাগ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ মতাদর্শ লালন করে। ফলে এই আশা করা যায় না যে, তারা নবীর সম্মান রক্ষার জন্য কিছু করবে। বরং তারা প্রতিবার এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়, যা পশ্চিমাদের পছন্দ হয়। তারা এমনভাবে আইন প্রণয়ন করে, যেন কোন ভাবেই কুফরি বিশ্বের আইনের বিরোধিতা না হয়।
এর মানে হলো, পাকিস্তানের বর্তমান ব্যবস্থা, সরকার ও এস্টাবলিশমেন্ট পশ্চিমা শক্তির ‘বেয়াদবিমূলক কর্মকাণ্ডের’ বিরোধিতা তো করেই না, উপরন্তু যারা সরকার ও এস্টাবলিশমেন্টের বিরোধিতা করে - তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এখন পর্যন্ত এমনটাই হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এমনটাই হবে বলে - প্রত্যেক মুসলিমের আশা করা উচিত।
তাই সরকার ও এস্টাবলিশমেন্ট সম্পর্কে এই বিষয়টি সকলের স্পষ্ট থাকা উচিত যে, তারা মহানবী ﷺ এর রিসালাতের সম্মানের প্রতিরক্ষায় বাধা সৃষ্টি করে অপরাধী হয়ে আছে। তারা বন্ধু নয়, তারা আমাদের শত্রু।
তৃতীয়ত: উপরোক্ত দুটি তথ্যের ভিত্তিতে ‘পাকিস্তানের মুসলিম জনগণ’কে মহানবী ﷺ এর সম্মানের প্রতিরক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ করাকে - প্রত্যেক জামাতের লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটা শুধু তেহরিক-ই-লাব্বাইকের কাজ নয়, বরং সব দল ও ধর্মপ্রাণ মানুষেরই (এ বিষয়ে) একসঙ্গে কাজ করা উচিত এবং একে অপরের সহযোগিতা করা উচিত।
চতুর্থত: নবীর সম্মান রক্ষায় পাকিস্তানের মুসলিমদের কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
এই বিষয়ে আমরা বিশেষভাবে তেহরিক-ই-লাব্বাইকের ‘নেতৃবৃন্দকে’ সম্বোধন করছি। নিজেদের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যা উপযুক্ত মনে হচ্ছে তাই তাদের জন্য উপস্থাপন করছি। এতে তেহরিক-ই-লাব্বাইকের আন্দোলনের বিশ্লেষণ এবং সংশোধনের পরামর্শও রয়েছে। যেহেতু এই শ্লোগান এবং এই কাজটি সকল মুসলমানের সম্মিলিত কাজ, তাই এ কাজে আমাদের সকলের একে অপরকে সহযোগিতা করা উচিত। একে অপরের সাথে পরামর্শের পথ আরও প্রশস্ত করা উচিত।
তেহরিক-ই-লাব্বাইকের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব হল - তারা রাসুল ﷺ এর সম্মান রক্ষার আন্দোলনকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। এতে মুসলিমদের সংঘবদ্ধ করেছেন এবং তাদেরকে মাঠে নিয়ে এসেছেন। এটি সত্যিই একটি মহান অর্জন। আর আমরা তাদের এই কাজের সর্বোত্তম প্রতিদানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
রাসুলের সম্মান রক্ষার্থে ‘পাকিস্তান সরকার’ ও ‘প্রতিষ্ঠান’গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে একটি অসম্পূর্ণতা আমাদের চোখে পড়ছে যে - এই শেষ সময়ে, যথেষ্ট ত্যাগ স্বীকারের পরে যখন আলোচনার টেবিলে বসা হচ্ছে, তখন তেহরিক-ই-লাব্বাইক কিছু না পেয়ে ফিরে আসছে। সরকার তার অবস্থানে অটল রয়েছে। আর এভাবেই তেহরিক-ই-লাব্বাইক মহানবী ﷺ এর সম্মানের সুরক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে।
এটি তেহরিক-ই-লাব্বাইকের আন্দোলন সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। অনেক জায়গা থেকে অভিযোগ উঠেছে যে, আন্দোলনটি প্রকৃতপক্ষে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এবং যখন সেখান থেকে ইঙ্গিত পায়, তখন সরকারের উপর অভিযোগ উঠানোর জন্য তারা বের হয়ে আসে। অর্থাৎ সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার জন্য এদেরকে ব্যবহার করে।
আমরা এই আন্দোলনকে এভাবে দেখি না এবং এই ভাবনার গ্রহণযোগ্যতাকেও পছন্দ করি না। আমরা জানি যে, যারা আন্দোলনে বের হচ্ছেন তারা মহানবী ﷺ এর প্রতি একনিষ্ঠ ভালোবাসা থেকেই বের হচ্ছেন। তারা আন্তরিক ভাবেই রাসুলের সম্মান রক্ষা করতে চান। কিন্তু আমরা তেহরিক-ই-লাব্বাইকের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে - যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে এবং আলোচনা সঠিক ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হতে থাকে, তাহলে এমন এক সময় আসবে যখন এই জনসাধারণই আপনাদের কলার চেপে ধরবে।‘আল্লাহ না করুক’ এই স্লোগান ভবিষ্যতে অকার্যকর হয়ে পড়বে এবং এর পক্ষে নূন্যতম শরীর নিয়ে দাঁড়ানোর জন্যও কেউ থাকবে না।
তাই তেহরিক-ই-লাব্বাইকের নেতাদের এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত। যে পদক্ষেপগুলিকে আমরা উপযুক্ত বলে মনে করি এখানে সেগুলো পেশ করলাম:
(ক) এই ‘শ্লোগান’কে কেন্দ্র করে উদ্ভূত আন্দোলনকে দাওয়াতের ধাঁচে বিন্যস্ত করতে হবে। এই শ্লোগান ও এই বিষয়কে প্রতিটি মসজিদ ও প্রতিটি মাদ্রাসায় দাওয়াতের বিষয় বানাতে হবে। এ জন্য পাড়া-মহল্লা ও এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে হবে। বিভিন্ন মতাদর্শের আলেম ও দাঈদের সঙ্গে বৈঠক করতে হবে এবং এ বিষয়টিকে তাদের দাওয়াতের ভিত্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে আহ্বান করতে হবে।
একদিকে এই বিষয়টিকে দ্বীনি অঙ্গনে আলোচনার বিষয়ে পরিণত করতে হবে, অন্যদিকে মানুষের মধ্যে চেতনা জাগরণ ও সচেতনতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি শ্রেণী, প্রতিটি সম্প্রদায় এবং প্রতিটি দলকে তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র রাজনীতিকে কোরবান করতে হবে। অন্যথায় ‘আল্লাহ না করুক’ আমরা নিজেরাই মহানবী ﷺ এর সম্মানের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সূক্ষ্ম বিষয়ের দায়িত্বের প্রতি খেয়ানতকারী হয়ে না যাই (নাউযুবিল্লাহ)।
(খ) মহানবী ﷺ এর সম্মান অবমাননাকারী পশ্চিমা ও পশ্চিমা শক্তির ‘কুখ্যাতি’ ও ‘কদর্যতা’ সম্পর্কে মুসলিমদেরকে বুঝাতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও শত্রুতা ছড়িয়ে দিতে হবে। এটি স্বয়ং রাসুলের সম্মান রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পশ্চিমা শক্তির সাথে মুসলিমদের আচরণের বিধান কি হবে তা বুঝাতে হবে এবং এই দেশগুলিকে বয়কটের আহ্বান ব্যাপক করতে হবে।
1. যেসব মুসলিম এসব দেশে শিক্ষা বা ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য যেতে চায় তাদেরকে এসব দেশ ভ্রমণে নিষেধ করতে হবে। আমরা চিকিৎসা বা অন্য কোন প্রয়োজনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত রাখার কথা বলছি না, কারণ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে শরীয়তের নীতি ভিন্ন। আমরা স্বেচ্ছায় এবং শরীয়াহ সম্মত বাধ্যতা ছাড়াই সফর করা থেকে বিরত থাকতে বলছি। এটা বন্ধ করার দাওয়াতকে ব্যাপক করতে হবে।
2. সেসব দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে বয়কটের জন্য একটি আন্দোলন হওয়া উচিত। সাধারণ মুসলিমদের এসকল দেশের পণ্য ক্রয় এড়াতে শেখানো হবে। সাধারণ পাকিস্তানিরা যদি এই দেশগুলি থেকে আমদানিকৃত পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করে দেয়, তবে এই দেশগুলির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে যে - এটি মহানবী ﷺ এর সম্মানের সুরক্ষার একটি রূপ।
3. এই দেশগুলো সহ আরও যত দেশ মুসলিমদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে চলমান জিহাদে সমর্থন জানানোর দাওয়াতকে ব্যাপক করতে হবে। মুসলিমদের বুঝাতে হবে - এই জিহাদই রাসুলের শানে অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি। একইভাবে বিশেষ দাওয়াত দিতে হবে যে, যারা পশ্চিমা দেশগুলোতে গিয়ে রাসুলের এই অবমাননাকারীকে নিজ হাতে হত্যা করতে পারে, সে যেন এ কাজ করে মহানবী ﷺ এর সত্যিকারের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়।
(গ) পাকিস্তানে আন্দোলন এমনভাবে চালাতে হবে যাতে সরকার ও এস্টাবলিশমেন্টের উপর আলাদা চাপ থাকে। যে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে, পদক্ষেপটি সফল করা যাবে কিনা - সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ, প্রথমত নিজের লক্ষ্য এবং চাহিদার কথা মাথায় রাখতে হবে এবং তারপর সেই লক্ষ্য নিয়ে এমনভাবে মাঠে নামতে হবে যেন এই সম্ভাবনাই বেশি থাকে যে, আপনি সরকার এবং সংস্থার কাছ থেকে আপনার দাবি আদায় করতে সক্ষম হবেন। আর এর জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
এতে করে একদিকে কর্মীদের মধ্যে এই অনুভূতি থাকবে যে, মহানবী ﷺ এর সম্মানের সুরক্ষায় তারা সফল হচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা কমার পরিবর্তে বৃদ্ধি পাবে। উদাহরণস্বরূপ একটি লক্ষ্য এমন হবে যে, নিজের দেশে রাসুলের অবমাননাকারীদের ব্যাপারে আইন সংশোধন করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। একটি লক্ষ্য হবে, অবমাননার অপরাধে জড়িত দেশগুলির সাথে সরকারী পর্যায়ে অর্থনৈতিক বয়কট করা। তৃতীয় লক্ষ্য হবে, এই দেশগুলির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা। এধরনের আরও অন্যান্য লক্ষ্য পরিকল্পনায় রেখে সরকারকে চাপে রাখা যায়।
এটি লক্ষ্য নির্ধারণ মূলত নেতৃবৃন্দের কাজ, এবং এর সমস্ত দায়িত্ব নেতাদের উপরই বর্তাবে। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন রেজুলেশন উপস্থাপন করার দরকার নাই, বরং এটি নেতৃবৃন্দের বুঝ-বুদ্ধি এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়া অনুযায়ী হবে। আল্লাহ মুসলিম নেতাদের সঠিক বুঝ দান করুন, আমিন।
(ঘ) এই পুরো আন্দোলনের সময় ভণ্ড ও শয়তান প্রকৃতির লোকেরা যাতে নেতৃবৃন্দের কাছে যেতে না পারে সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এই সময়ে এই যালিম রাষ্ট্রগুলি এতটাই অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে যে, তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যে কোনও আন্দোলনকে অপহরণ করে, তাদের সুবিধার্থে পরিচালনা করতে পারে। এর দ্বারা তারা কেবল আন্দোলনকেই ব্যর্থ করে না, বরং জনগণ ভবিষ্যতে এই ধরনের আন্দোলনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে যায়, এমনকি ভীতও হয়। আর এভাবেই ভালো ও কল্যাণের উদ্দেশ্য নষ্ট হয়ে যায়।
এ জন্য প্রতিটি ধর্মীয় আন্দোলনের নেতৃত্বকে সজাগ থাকতে হবে, যেন তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও উপদেষ্টাদের মধ্যে এমন কেউ না আসে - যারা মুনাফিক বা যে আপনার উদ্দেশ্যের সাথে আন্তরিক নয় বরং আপনার শত্রুদের দালাল। রাসুলের সম্মান রক্ষার এই পুরো আন্দোলনে এটা অপরিহার্য যে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের কোনও লোক যেন এতে আসতে না করে। সরকার ও এস্টাবলিশমেন্টের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে এমন কোন ব্যক্তি যেন নেতৃবৃন্দের কাছে যেতে না পারে।
(ঙ) এই পুরো আন্দোলনটি এমনভাবে চালাতে হবে, যাতে এটি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে পরিচালিত প্রতিটি ধর্মীয় আন্দোলনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। অতঃপর এ মেহনতের মাধ্যমে দ্বীনদার লোকেরা স্বদেশে সম্মানিত হবেন এবং কাফের ও মুশরিকরা লাঞ্ছিত হবে। ইসলামী শরীয়াহর উপর আমল করা সহজ হবে, আর অনৈসলামী বিধান ও অন্যান্য মতবাদ বন্ধ হবে। এপথে পাকিস্তান যে উদ্দেশ্যে অস্তিত্ব লাভ করেছে অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর প্রকৃত গন্তব্য অর্জন সম্ভব হবে।
এগুলি এমন কিছু বিষয় এবং উপদেশ যা আমরা আমাদের দ্বীনি দায়িত্ব বিবেচনা করে আমাদের ভাইদের সামনে পেশ করেছি। কারণ নবী ﷺ বলেছেন:
عَنْ تَمِيْمِ الدَّارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ الدِّيْنُ النَّصِيحَةُ ثَلَاثًا. قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ.
তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ
নবী করীম ﷺ বলেন, ‘দ্বীন হচ্ছে উপদেশ’। অর্থাৎ যথাযথভাবে কল্যাণ কামনা করা। কথাটি নবী করীম ﷺ তিনবার বললেন। আমরা বললাম, ‘কার জন্য’? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলিম নেতাদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানের জন্য (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬)।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেক মুসলিমকে তাঁর প্রিয় রাসুল ﷺএর সম্মানের জন্য কুরবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে আমাদের দাবী, দাওয়াত ও দোয়ায় সত্য করুন, আমীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم. والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته.
.
Comment