তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন- পঞ্চম পরিচ্ছেদ:দাগিস্তান: উপায় শেষ হওয়ার পর সাহায্য- প্রথম বিষয়: ককেশাসের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ভাবনা- দ্বিতীয় ভাগ: রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াইয়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
(পূর্ব প্রকাশের পর)৩- সেভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া ও মুসলিম ককেশাশের মাঝে লড়াই
ক. চেচনিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা:
১৯৯০ এর ২৫ ডিসেম্বর চেচেন জনগণের দেশীয় পরিষদ তার সকল সদস্যদের সম্মতিতে চেচনিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ১৯৯১ এর ২৭ অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে জাওহার দুদায়েভকে চেচনিয়া আশকিরীয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত করা হয় এবং চেচনিয়াকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা হয়েছিল সেভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়ে রাশিয়ান জোট প্রতিষ্ঠার পূর্বে ১৯৯১ এর ডিসেম্বরে। রাশিয়া এ সকল নির্বাচন ও তার ভিত্তিতে আশকিরীয়া প্রজাতন্ত্রের স্বায়ত্ব শাসন প্রত্যাখ্যান করে।
ফলে মস্কো জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে। তবে চেচেনগণ রাশিয়ান বাহিনীকে ঘিরে ফেলতে সক্ষম হন এবং একটিও গুলি ছোঁড়া ব্যতিত পিছু হটতে বাধ্য করেন। চেচেনরা চেচনিয়ায় বিদ্যমান রাশিয়ান বিমান ও অস্রসমূহের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং অন্যান্য প্রজাতন্ত্রের আদর্শ অনুসরণ করত: চেচেন প্রজাতন্ত্রেরও স্বায়ত্ব শাসনের ঘোষণা দেন। মস্কো চেচনিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে সংলাপ করার চেষ্টা করে। কিন্তু চেচেন প্রেসিডেন্ট এ সকল সংলাপ প্রত্যাখ্যান করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়া তার দেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি না দেয়।
খ. ডিসেম্বর ১৯৯৪ থেকে আগষ্ট ১৯৯৬ পর্যন্ত চেচনিয়া-রাশিয়ার প্রথম যুদ্ধ:
১৯৯৪ সালে চেচনিয়া রাশিয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। জাওহার দুদায়েভ ইঙ্গুশ, দাগিস্তান ও তাতার জনগণের সমন্বয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরিস্কারভাবে ঘোষণা দেন। ফলে রাশিয়া ১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর চেচনিয়া দখল করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া জারযুনি দখল করার পূর্বে তা সমূলে ধ্বংস করে দেয়। হাজার হাজার লোককে যুদ্ধের মধ্যে হত্যা করে। কিন্তু চেচেনরা আত্মসমর্পণ করলেন না। বরং উভয় পক্ষের মাঝে যুদ্ধ অব্যাহত রইল। ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে জাওহার দুদায়েভকে হত্যা করা হয়।
১৯৯৬ সালের মে মাসে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ইয়ালতাসিন ও চেচনিয়ার দায়িত্বশীল নেতা সেলিম খান ইয়ান্দারবি অগ্নি ছোঁড়া বন্ধের ব্যাপারে একমত হন। কিন্তু উভয় পক্ষের মাঝে যুদ্ধ চলতে থাকে।
জুন মাসের মধ্যেই ৪ হাজার লোক নিহত হয়, যাদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক ছিলেন ওই দেশেরই নাগরিক। প্রায় ৩ লক্ষ চেচেনকে রাশিয়ার অন্যান্য স্থানে সরিয়ে ফেলা হয়।
রাশিয়ান সরকার চেচেনদেরকে রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনতার প্র্রস্তাব দেয়, কিন্তু পৃথক হওয়া মেনে নেয় না। ফলে মুজাহিদগণ রাশিয়া থেকে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ থামাতে রাজি হন না।
১৯৯৬ এর আগষ্টে জারযুনি পুনরূদ্ধারে একটি বিরাট আক্রমণ সফল হয়। রাশিয়ান বাহিনীকে লাঞ্ছনাকর পরাজয়ের সম্মুখীন করে। তারপর ওই মাসেই জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক আলেকজান্ডার লিবিড ও আসলান মাসখাডেভের মাঝে কয়েক দফা আলোচনা হয়। তাতে শান্তির ব্যাপারে ঐক্যমত্যে পৌঁছা সম্ভব হয়। উভয় পক্ষ চেচনিয়ার পরিস্থিতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ২০০১ সাল পর্যন্ত স্থগিত করতে সম্মত হয়।
১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই রাশিয়ান সকল বাহিনীগুলো চেচনিয়া ত্যাগ করে।
গ. চেচনিয়া-রাশিয়া দ্বিতীয় যুদ্ধ (১৯৯৯-...)
১৯৯৯ এর সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, চেচনিয়ায় দ্বিতীয়বার রাশিয়ান আগ্রাসন শুরু হয়। এ আগ্রাসনের পূর্বে দাগিস্তান, রাশিয়া ও চেচনিয়ার মাঝে সীমান্ত অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল।
এ অস্থিরতার কারণ ছিল, দাগিস্তানের মুসলিমগণ- বিশেষ করে কারামাখী ও শাবানমাখী এলাকার মুসলিমগণ নিজেদের অঞ্চলে ইসলামী শরীয়ার শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ফলে রাশিয়ান শক্তি এই প্রচেষ্টাকে শক্তির মাধ্যমে দমন করার চেষ্টা করে। তাই ওই অঞ্চলের মুসলিমগণ তাদের চেচনিয়ার মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য কামনা করেন।
এ উত্তেজনার সময়েই কয়েকটি প্রচণ্ড বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। যার দর্শক হয় রাশিয়ার ৩ টি শহর, তন্মধ্যে আছে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোও। এটা ঘটে ১৯৯৬ এর আগষ্ট ও সেপ্টেম্বরে।
মুজাহিদগণ এর দায়ভার অস্বীকার করেন। কিন্তু রাশিয়ান সরকার তাদের উপরই এর দায়ভার চাপায় এবং এটাকেই তার দ্বিতীয়বার আক্রমণের অজুহাত বানায়।
এ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে শায়খ সেলিম খান ইয়ানদারবি বলেন:
“তাহলে মস্কো ও ভলোনোস্কতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য দায়ী কারা? এ ঘটনাকেই তো অযৌক্তিকভাবে সর্বশেষ রাশিয়ান আক্রমণের জন্য বৈধতা দানকারী হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বরাবরের মত সময়ই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছে। অবশ্যই রাশিয়ান বিশেষ বাহিনীই এর জন্য দায়ী। সেসকল লোকদের আদেশেই হয়েছিল, যারা রাশিয়ান ক্ষমতার উচ্চপদগুলোতে বসে আছে।
তবে আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকে আপনাদেরকে অকপটে বলি যে: আজ চেচনিয়াবাসীর নৈতিক ও আইনসঙ্গত অধিকার আছে... শুধু রাশিয়ান ভবনগুলোতে বোমা বিস্ফোরণই নয়, বরং তাদের অধিকার আছে রাশিয়া ও তার জনগণকে ভূপৃষ্ঠ থেকে মুছে দেওয়ার।
যখন আমরা চেচনিয়ার বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে চলে আসা রাশিয়ান সরকারের গোষ্ঠীগত উচ্ছেদ অভিযানকে সামনে নিয়ে আসি, তখন এ অধিকারের বিষয়টি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার হয়ে যায়। ”
নিজ দাগিস্তানী ভাইদের সাহায্যে চেচেনদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে তিনি বলেন:
“আমরা দাগিস্তান সমস্যা ও তাতে চেচনিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টিতে ফিরে আসি। দাগিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র। এটাও ইমাম শামিল রহ. এর নেতৃত্বাধীন একটি অংশ। রাশিয়া এটা দখল করেছে। একারণে আল্লাহর নামে ও ন্যায়বিচার পুনরূদ্ধারের নিমিত্তে আগ্রাসিদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করা আমাদের সরাসরি দায়িত্ব।
দাগিস্তানি জনগণ ভালো করেই জানেন যে, তাদের উপর কেউ আক্রমণ করেনি। যেহেতু জিহাদী কর্মকাণ্ডের টার্গেট হল শুধু রাশিয়ান যোদ্ধারা, যারা দাগিস্তানে ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ভান করে এমন সব অপরাধযজ্ঞে লিপ্ত হচ্ছে, যার ব্যাপারে চুপ থাকা বা সমর্থন করা আদৌ সম্ভব নয়।
আরো সামনে বেড়ে বলব: দাগিস্তান ও চেচনিয়া সহ পুরো ককেশাশ অঞ্চলটি ইসলামী খেলাফতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ হিসাবে আজকের জিহাদ চলছে দেশকে নাস্তিকদের থেকে মুক্ত করার জন্য। এটা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আমাদের প্রত্যেককেই রাব্বুল আলামিনের জন্য নিজ দায়িত্ব আদায় করতে হবে।”
এ যুদ্ধের ঘটনাবলী এখনো চলমান। সেখানে রাশিয়া চেচনিয়ার মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধযজ্ঞে লিপ্ত হচ্ছে।
Comment