Announcement

Collapse
No announcement yet.

“ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৯

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” সিরিজ-৩৯

    তৃতীয় অধ্যায়: ময়দানে প্রত্যাবর্তন- পঞ্চম পরিচ্ছেদ:দাগিস্তান: উপায় শেষ হওয়ার পর সাহায্য- প্রথম বিষয়: ককেশাসের পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ভাবনা।

    তৃতীয় ভাগ:

    ডিসেম্বর ১৯৯৪ থেকে আগষ্ট ১৯৯৬ পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত প্রথম যুদ্ধ যে সামরিক তাৎপর্যগুলো প্রকাশ করেছে:


    “জিহাদ ব্যতিত রাশিয়া ও চেচেন জনগণের মাঝে লড়াইয়ের সমীকরণ করা সম্ভব নয়, যা যুদ্ধের আকার ধারণ করবে। কারণ রাশিয়াই আমাদের সাথে আচরণবিধি হিসাবে যুদ্ধকে বেছে নিয়েছে।১ ”


    এই ভাগে সে সকল শিক্ষা ও তাৎপর্যগুলো নিয়ে আলোচনা করব, যা ডিসেম্বর ১৯৯৪ থেকে আগষ্ট ১৯৯৬ এর মাঝে রাশিয়া-চেচনিয়ার প্রথম যুদ্ধে রাশিয়া ও চেচেন জনগণের মাঝে সংঘটিত স্বশস্র লড়াইসমূহ প্রকাশ করেছে। এ সম্পর্কিত আলোচনাটি নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করব:

    ১- প্রথম যুদ্ধে রাশিয়ানদের উপর চেচেনদের বিজয়ের মূল্য ও বাস্তবতা।
    ২- আগ্রাসী সরকারি শক্তির বিপরীতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঈমানদার দলগুলো।
    ৩- যে শহরগুলো লড়াইয়ে ক্লান্ত হয় না।

    ১- প্রথম যুদ্ধে রাশিয়ানদের উপর চেচেনদের বিজয়ের মূল্য ও বাস্তবতা

    প্রথম যুদ্ধে রাশিয়ানদের উপর চেচেনদের বিজয় যেকোন মাপকাঠিতেই চিত্তাকর্ষক ছিল। এ সম্পর্কেই আনাতুল লেভিন বলেন:

    “চেচেনদের ভূমি-যুদ্ধের প্রকৃতি এবং প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বের দিক থেকে গৌণ। কিন্তু যেকোন সামরিক ও শাস্ত্রীয় ব্যক্তিদের নিকটই এ দু’টি বিষয় উপকারি মনে হবে (বা এমনটাই হওয়া উচিত)।

    যদি রাশিয়ান দুর্বলতার বিষয়টি এড়িয়েও যাই, তথাপি এ ধরণের বিশাল বাধার বিপক্ষে চেচেনদের জয়কে সামরিক ইতিহাসে একটি গৌরবময় মুহূর্ত হিসাবে গণ্য করা যায়। তার পরতে পরতে আছে বিভিন্ন বিষয়ে উপকারি শিক্ষা- যেমন: সামরিক নৃবিজ্ঞান, জাতীয় সংহতি, বিমানশক্তির সীমিত ব্যবহার এবং আধুনিক যুদ্ধের প্রকৃতি। এমনকি মৌলিক যুদ্ধের প্রকৃতি সম্বন্ধেও অনেক শিক্ষা রয়েছে।

    রাশিয়ার বিরুদ্ধে চেচনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদি শক্তিগুলোর বিজয়কে বিগত শতাব্দির সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সর্ববৃহৎ লড়াইসমূহের অন্যতম একটি লড়াই হিসাবে গণ্য করা হয়।

    অচিরেই এটিই নিয়ন্ত্রণ করবে এখন রাশিয়ার ভিতরে কী ঘটবে এবং এটাও নির্ধারিত হয়ে যাবে যে, এটি কি তার ঐতিহাসিক প্রভাবগুলোর দিক থেকে ‘ডিয়েন বিয়েন ফু’এর মত, নাকি আলজেরিয়ার ‘জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট’এর মত?

    নিরেট সামরিক কৃতিত্বের মাপকাঠিতেও চেচেনগণ বাস্তবিক অর্থে ভিয়েতনাম কংগ্রেসের সমকক্ষতা লাভ করেছেন এবং কর্ণেল আসলান মাসখাদেভ বিরল প্রতিভাধর ও যোগ্যতাবান ব্যক্তি হিসাবে তাদের ব্রিগেড গিয়র এর পাশে নাম উল্লেখ করার অধিকার অর্জন করেছেন।

    আমি এ সকল প্রশ্নগুলো একটি একটি করে খুঁজেছি। কারণ রাজধানী ওয়াশিংটনে কাটানো সময়গুলোতে আমাকে এ বিষয়টি ভীষণ হতবিহ্বল করে দিয়েছে যে, আজ আমেরিকায় এমন সামরিক বিশ্লেষক ও বুদ্ধিজীবির সংখ্যা খুবই কম, যাদের যুদ্ধের ব্যাপারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। এমনকি যারা সৈনিক ছিলেন বা সৈন্যদের পরিচালনা করেছেন তাদের মধ্যেও কম। আর তাই স্বভাবতই এর থেকেও কম ঐ সকল লোকের সংখ্য, যারা লাগাতার ভারি আকাশ-বোম্বিংএর মাঝে নিজেদেরকে সঁপে দিতে পারে। বিশেষত: বেশিরভাই সেই উপাদানগুলোর গভীরতা উপলব্ধি করতে সমর্থ্য হয় না, যা একেকজন সৈন্যকে যুদ্ধে বা পলায়নে উৎসাহিত করে। এছাড়া মন-মানসিকতার সাধারণ প্রকৃতিও বুঝে না। এর ফলে তাদের বিশ্লেষণগুলো একেকবার একেক রকম হয়, যা পশ্চিমা রাজনীতির জন্য ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসে।

    ইউরোপীয়ান আধুনিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এ বিজয়ের দৃষ্টান্ত খুঁজে পেতে (-যেহেতু জানা গেছে যে, এটি একটি অনিয়মিত ও প্রাথমিক স্তরের বাহিনী) আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে আদওয়ায় ইথিওপিয়ানদের হাতে ইতালিয়ানদের পরাজয়ের ঘটনার দিকে, আনওয়ালে পশ্চিমা মুসলিমদের হাতে স্পেনিশদের পরাজয়ের ঘটনার দিকে অথবা এমনকি বৃটিশ ও আমেরিকানদের উপর লাল হিন্দুদের বিজয়ের ঘটনার দিকে।

    একদিক থেকে এ (বিজয়ের)র সাথে অনেক বড় সম্পর্ক আছে রাশিয়ার। কারণ বর্তমান রাশিয়ান সেনাবাহিনী গত এক শতাব্দি ধরে ইতালিয়ান ও স্পেনিশ সেনাবাহিনী থেকে শ্রেষ্ঠ ছিল না, কারণ বৈশ্বিক সামরিক সিস্টেম কার্যক্ষেত্রে পুরোপুরি উল্টে গেছে। অপরদিকে চেচেন বিজয় অনেক সামরিক প্রতিভা এবং চেচেন ঐতিহ্যের উন্নত যুদ্ধ-প্রাণ প্রত্যক্ষ করেছে, বিংশ শতাব্দির বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও ঘটনাবলী যাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।

    চেচেন বিজয়ের গৌরবময় অবস্থা বুঝার জন্য চেচেন জনগণের সংখ্যা স্বল্পতা এবং তাদের ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্নতাবাদি স্বশস্র বাহিনীর দিকে তাকানোই যথেষ্ট।
    শুধুমাত্র যুদ্ধের শুরুর দিকে জারযুনে রাশিয়ান আক্রমণ এবং ১৯৯৬ এর আগষ্টে চেচনিয়ার পাল্টা আক্রমণ-(যখন জারযুনী ও অন্যান্য এলাকায় চেচেন সৈন্যসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল)এর ঘটনাদ্বয় ছাড়া অধিকাংশ পরিসংখ্যানগুলোতে চেচনিয়ার স্বাধীনতাকামীদের সৈন্য সংখ্যা কখনোই ৩০ হাজার প্রত্যক্ষ যোদ্ধার চেয়ে বেশি ছিল না। এর বিপরীতে রাশিয়ান বাহিনীর পক্ষে এ সংখ্যার প্রায় ৫ গুণ বেশি সৈন্য ছিল। যদিও চেচনিয়ায় যারা কোন না কোন সময় যুদ্ধ করেছে- এমন যোদ্ধার সংখ্যা স্বভাবতই এ সংখ্যা থেকে অনেক বেশি হবে।

    কিন্তু অধিকাংশ যুদ্ধগুলোতেই রাশিয়া এত পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করেছিল, যা চীন-হিন্দুস্তানে ফরাসি ও মার্কিনীরা যে পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করেছিল এবং আল-জেরিয়ায় ফরাসিরা যে পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করেছিল অথবা উদাহরণ স্বরূপ- আফগানিস্তানে স্বয়ং সেভিয়েত ইউনিয়ন যে পরিমাণ সৈন্য সমাবেশ করেছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

    আমি এর সাথে আরো যোগ করে বলব, ইঙ্গুশিয়া বাদে প্রায় ৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের চেচনিয়া এ সকল দেশগুলোর আয়তনের তুলনায়ও ছোট্ট একটি অংশ। অর্থাৎ মনে হয় যেন ওই অঞ্চলে ভিয়েতনাম যুদ্ধ উপস্থিত হয়েছে আর আমেরিকা অনবরত মার খেয়ে যাচ্ছে।”


    আনাতুল লেভিন আরো যোগ করেন:

    “নি:সন্দেহে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ এর চেচেন যুদ্ধটি বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইয়ের শেষ সিরিজ ছিল, যার মধ্যে বিগত দুই প্রজন্ম হিন্দুস্তান থেকে শুরু করে চীন, আলজেরিয়া, পর্তুগীজ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান পর্যন্ত পরিপূর্ণ একটি সিরিজ প্রত্যক্ষ করেছে।

    কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে চেচেনবাসী ও তাদের নেতৃবৃন্দের সফলতা এই তুলনামূলক ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি বিস্ময় সৃষ্টি করে। এমনকি কখনো এটাকে অস্বাভাবিক এবং কখনো আধুনিক ইতিহাসে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত মনে করা হয়। সে দিকটি হল, চেচনিয়া কোনও একটি রাষ্ট্রের কার্যকরী সহযোগীতা ব্যতিত, এমনকি কোনও ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সামরিক সংগঠনেরও কোন প্রকার সাহায্য ব্যতিত, শুধুমাত্র নিজ সমাজ ও ধর্মীয় লোকদের সামর্থ্যরে ভিত্তিতে সফলতা লাভ করেছেন। যদিওবা সেভিয়েতদের অস্র ও সামরিক প্রশিক্ষণ তাদের কাজে দিয়েছে।”


    যদিও আনাতুল লেভিন চেচেনদের বিজয়ের প্রকৃত কারণের উপর হাত রাখেনি, কিন্তু শহীদ সেলিম খান ইয়ানদারবি রহিমাহুল্লাহ এই কারণটিও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

    “যুদ্ধের প্রথম দিকে দুই শক্তির মাঝে তুলনা করার কোন পথ ছিল না। যেখানে রাশিয়া চেচেনদের উপর আক্রমণের জন্য সর্বপ্রকার অত্যাধুনিক অস্রে সজ্জিত ৫ লাখ সৈন্য ব্যবহার করেছে। যাদের সহায়তায় ছিল অসংখ্য যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, কামান ও সর্বপ্রকার ক্ষেপণাস্র। এতকিছু সত্ত্বেও এবং রাশিয়ার সামনে অপরিমিত পর্যাপ্ত উৎস থাকা সত্ত্বেও তারা হালকা অস্রধারী কয়েক হাজার চেচেন মুজাহিদের যুদ্ধক্ষমতা ভেঙ্গে দিতে পারেনি। যাদের অধিকাংশ অস্রগুলোই রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ থেকে অর্জিত হয়েছে। চেচেন মুজাহিদগণের অস্রগুলো ছিল হালকা, কিন্তু তাদের আল্লাহর প্রতি ঈমান ছিল সীমাহীন। এর আলোকেই আমরা এই অত্যাচারি শত্রুর বিরুদ্ধে চেচেনদের যুদ্ধ এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতার রহস্যটি ব্যাখ্যা করতে পারি।

    আমরা মনে করতে পারি, এ যুদ্ধে আমাদের পাশে আল্লাহ ছিলেন, যে যুদ্ধের জন্য শত্রুপক্ষ তাদের সহনক্ষমতার উর্ধ্বে বিশাল বাহিনী ব্যবহার করেছে এবং ইসলামের প্রতি প্রচণ্ড বিদ্বেষ ও ঘৃণা নিয়ে যুদ্ধে নেমেছে।”


    তিনি আরো বলেন:

    “১৯৯৬ সালে চেচনিয়া যে বিজয় অর্জন করেছে এবং এই অবোধগম্য ব্যবধানের মাঝেও এ দিনগুলোতে তারা যে দু:সাহসিক লড়াই করেছে, তা অবশ্যই আমাদের চোখের সামনে সুস্পষ্টভাবে একথার ইঙ্গিত ও দলিল বহন করে যে: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সরলপথ থেকে বিচ্যুত না হওয়ার শক্তি প্রতিটি জিনিসকেই সম্ভব করতে পারে এবং আমাদের শত্রুরা শক্তিতে যত উন্নত স্তরেই পৌঁছে যাক না কেন, তাদের প্রতিরোধ করতে পারে। কারণ মুসলিমগণ ইসলামের প্রাণে সজ্জিত হলে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও শক্তির উপর ভরসা করলে এটা তাদেরকে এমন বানিয়ে দেয় যে, তারা কাউকে পরোয়া করে না। মুসলিম জাতিকে তাদের পূর্বের গৌরবময় ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনাও সম্ভবপর বিষয়, যদি আমরা আল্লাহ আমাদের উপর যা ফরজ করেছেন তা গ্রহণ করে নেই এবং যেগুলো পালন করা আমাদের সাধ্যের ভিতরে, তা পালন করি। প্রকৃত প্রশ্ন হল: আমরা কি মুসলিম হিসাবে চেচেনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে এবং আল্লাহর নামে লড়াইয়ের কাতারে অন্তর্ভূক্ত হতে প্রস্তুত আছি কি না?”


    ***

    [১] শায়খ সেলিম খান ইয়ানদারবি

  • #2
    আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সরলপথ থেকে বিচ্যুত না হওয়ার শক্তি প্রতিটি জিনিসকেই সম্ভব করতে পারে এবং আমাদের শত্রুরা শক্তিতে যত উন্নত স্তরেই পৌঁছে যাক না কেন, তাদের প্রতিরোধ করতে পারে।
    ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে কেবল আপনার উপর-ই বিশ্বাস ও ভরসা রাখার এবং সরলপথে ও জিহাদ-ক্বিতালের পথে অটল-অবিচল থাকার তাওফীক দিন।
    আমাদেরকে আপনার ও আমাদের শক্রদের প্রতিরোধ করার এবং তাদেরকে পরাজিত করার তাওফীক দিন। আমাদেরকে জিহাদের কাতারে কবুল করে নিন।
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      ইনশা-আল্লাহ,,যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন আমীন।
      اللهم انی اسلک الهدی والتفی والعفافی والغناء

      Comment

      Working...
      X