Announcement

Collapse
No announcement yet.

কিছু পদ্ধতি এমন যা দাওয়াতের জন্য ক্ষতিকর | | পর্ব - ৩

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কিছু পদ্ধতি এমন যা দাওয়াতের জন্য ক্ষতিকর | | পর্ব - ৩

    কিছু পদ্ধতি এমন যা দাওয়াতের জন্য ক্ষতিকর
    পর্ব - ৩



    কুরআনে কারীমে নবীগণের দাওয়াত ও তাবলীগ এবং কাফেরদের সাথে মুনাযারার আলোচনা অনেক আছে। কোথাও দেখা যায় না যে, ইসলামের বিরোধিতাকারীদের জবাবে কোন নবী কখনও কোন শক্ত ভাষা ব্যবহার করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো এবিষয়েও খেয়াল রাখতেন যে, মাদউর অপমানও যেন না হয়। তাই কাউকে যদি তিনি কোন ভুল বা অন্যায় কাজে লিপ্ত দেখতেন, তখন তাকে কিছু না বলে সাধারণ মজলিসে বলতেন – “লোকদের কি হলো যে, তারা এমন এমন করে?”। এই সাধারণ সম্বোধনে যাকে শোনানোর উদ্দেশ্য সেও শুনতো এবং নিজের সংশোধনের ফিকিরে লেগে যেত।
    .
    দাওয়াতের উদ্দেশ্য শুধু অন্যের সমালোচনা করা নয়, বরং অন্যকে নিজের কাছে ডেকে আনা। এজন্য পবিত্র কুরআনে নবীগণের দাওয়াতের অধিকাংশই يا قوم ‘ইয়া কওমি’ (হে আমার সম্প্রদায়!) শিরোনামে এসেছে। নবীগণ ‘হে আমার সম্প্রদায়’ এই শব্দের দ্বারা প্রথমেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের কথা উল্লেখ করেছেন। এরপর তাদের সংশোধনের আলোচনা করেছেন যে, – ‘আমরা তো ভ্রাতৃত্বের দিক থেকে একই জাতের মানুষ, আমাদের মাঝে তো কোন দূরত্ব নেই’ একথা বলেই তাদের সংশোধনের কাজ শুরু করতেন।
    .
    রসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম সম্রাটের নামে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তাতে তাকে ‘আযীমুর রোম’ তথা রোমের সম্মানিত বাদশা উপাধীতে সম্বোধন করেছেন। এখানে তাকে “রোমের সম্মানিত বাদশা” বলে সম্মান করেছেন। আর এই ‘আযীমুর রোম’ শব্দটি আল্লাহর রাসুল রোম সম্রাটের জন্য ব্যবহার করে তার সম্মানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তার এই সম্মানের স্বীকৃতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোমের অধিবাসীদের জন্য দিয়েছেন, নিজের জন্য নয়। তারপর কোরআনের নিম্মোক্ত আয়াতাংশটি শিরোনাম হিসেবে উল্লেখ করে দাওয়াত দিয়েছেন।

    يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ

    অর্থ: “হে আহলে-কিতাব! একটি বিষয়ের দিকে আস যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবো না। [সুরা ইমরান ৩:৬৪]
    .
    এখানে প্রথমে পরস্পরের একমত হওয়ার একটি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর খ্রিস্টানদের ভুলগুলো আলোচনা করা হয়েছে।
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের সীরাহ নিয়ে যদি ফিকির করা হয়, তাহলে তালীম ও দাওয়াতের এধরণের অনেক আদব ও উসুল পাওয়া যায়। বর্তমানে তো দাওয়াত ও ইসলাহ এবং আমর বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের কোন খেয়ালই নেই। আর যারা দাওয়াতের কাজে লিপ্ত আছে, তারা শুধু বাহাস-মুনাযারা, তর্ক-বিতর্ক, প্রতিপক্ষকে অভিযোগ করা, কথায় আটকানো এবং তাকে অপমান করাকেই দাওয়াত বানিয়ে নিয়েছে। যা সুন্নতের খেলাফ হওয়ার কারণে কখনই প্রভাব বিস্তারকারী ও উপকারী হয় না। তারা মনে করে আমরা ইসলামের অনেক খেদমত করে ফেলেছি। বাস্তবে তারা মানুষকে দূরে সরানোর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    .
    উক্ত আয়াতের তাফসীর থেকে জানা যায় যে, ইসলামের আসল উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া। আর এই দাওয়াতের মূলনীতি দুইটি, হেকমত এবং মাওয়ায়েযে হাসানা। তর্ক যদি করতে বাধ্য হয় তাহলে সেখানে ‘আহসান’ তথা উত্তম পন্থায় করার শর্তসহ জায়েয বলেছেন। কিন্তু এটি দাওয়াতের কোন স্বতন্ত্র বিভাগ নয়, বরং এটি দাওয়াতের নেতিবাচক দিকেরই একটি প্রচেষ্টা; দাওয়াত ‘আহসান’ (সর্বোত্তম) হওয়ার জন্য জরুরি হলো বিষয়টি বক্তার জন্য ক্ষতিকর না হওয়া। অর্থাৎ দাওয়াতের মধ্যে বদ-আখলাক তথা হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, পদমর্যাদার লোভ ইত্যাদির মিশ্রণ থাকতে পারবে না, যা বাতেনি কবিরা গুনাহ। দাওয়াত কোমলতার সাথে কল্যাণকামিতা ও সহমর্মিতার আগ্রহ নিয়ে হওয়া উচিৎ। সেই সাথে শ্রোতার অবস্থা অনুযায়ী স্পষ্ট দলিলের মাধ্যমে হওয়া উচিৎ। শ্রোতাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা থেকে পরিপূর্ণ বেঁচে থাকতে হবে।
    .
    ইমাম গাজালি রহিমাহুল্লাহ বলেন: “যেমনিভাবে মদ পান করা সমস্ত খারাবীর মূল -নিজের আত্মিক খারাবী এবং বহু শারীরিক খারাবীর জন্ম দেয়, তেমনিভাবে তর্ক বিতর্কের মধ্যে যদি উদ্দেশ্য থাকে অপর পক্ষের ওপর বিজয়ী হওয়া, নিজের ইলমকে অন্যের সামনে প্রকাশ করা, তাহলে এটাও অন্তরের সমস্ত খারাবীর মূল। কারণ এর দ্বারা অন্তরে অনেক রোগ সৃষ্টি হয়। হিংসা, বিদ্বেষ, অহঙ্কার, গিবত, অন্যের দোষ তালাশ করা, অন্যের দুঃখে খুশি হওয়া, অন্যের সুখে কষ্ট পাওয়া, সত্য গ্রহণে অহঙ্কার পোষণ ইত্যাদি গোনাহের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত লোকেরা অপর পক্ষের কথায় চিন্তা-ফিকির বাদ দিয়ে পাল্টা উত্তর দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত হয় এবং তা করতে গিয়ে কুরআন হাদীসের যত তাবীলই করা লাগুক না কেন, তা-ই করে বসে। এটা তো এমন ধ্বংসাত্মক বিষয় যাতে মর্যাদাবান আলেমরাও লিপ্ত হয়ে পড়ে, এরপর বিষয়টি যখন তাদের অনুসারীদের পর্যন্ত পৌঁছে তখন তা ঝগড়া-ফাসাদ ও মারামারির রূপ ধারণ করে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাযিউন।
    .
    .
    টীকা –
    .
    [৩] সুরা ইমরান ৩:৬৪
    .
    দাওয়াতের পদ্ধতি ও জি@হা/দি মানহাজের হেফাযত
    উস্তাদ উ@স]ম। ম]হ-মুদ হাফিজাহুল্লাহ​

  • #2
    আল্লাহ তাআলা দাওয়াতের জন্য ক্ষতিকর সকল পদ্ধতি পরিত্যাগ করার তাওফিক আমাদের দান করুন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment

    Working...
    X