হেদায়েতপ্রাপ্ত দল আর হেদায়েতবঞ্চিত দলের মাঝে সমীকরণ
আমার প্রিয় ভায়েরা! এগুলো কিছু মৌলিক কথা,যা বুঝা,তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা এবং মনে ও স্মৃতিতে তা গেঁথে রাখা জরুরী। হেদায়েতপ্রাপ্ত আন্দোলন আর হেদায়েত থেকে বিচ্যূত আন্দোলনের মাঝে এক বিরাট ব্যবধান থাকে। সেই ব্যবধানকে সর্বদা আমাদের সামনে রাখতে হবে।
.
যেসব আন্দোলন হেদায়েতের পথে চলে, নবীদের পথে এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর উপর পরিচালিত হয়। আর যেসব আন্দোলন এই পথ থেকে বিচ্যূত, এই দুই আন্দোলনের মাঝে থাকে বিরাট ব্যবধান। ব্যবধানটি হল, যখনই এসব আন্দোলন ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়, যদি সেই আন্দোলন হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়, আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহর আলোতে দীক্ষিত হয় এবং সেই ছাচে গঠিত হয় তবে সে আন্দোলন এ ব্যর্থতার কারণ নিজের অন্তরে, তার সদস্যরা নিজেদের অন্তরে, নিজেদের কাজ কারবার, নিজেদের আমল ও দাওয়াতের মাঝে এবং নিজের আমলের মাঝে তালাশ করে।
.
এই পদ্ধতির উপরই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র আন্দোলন ছিল। সাহাবায়ে কেরামের আন্দোলন ছিল। যার নেতৃত্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের তরবিয়ত আল্লাহ এভাবেই করেছেন। লক্ষ্য করুন, অহুদের যুদ্ধে যখন সাহাবায়ে কেরাম ক্ষতবিক্ষত হলেন এবং কষ্টে পড়ে গেলেন। তাঁরা রক্তাক্ত হলেন। এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও রক্তাক্ত হলেন। ঐ সময়ে সাহাবায়ে কেরাম বলাবলি করেছিলেন, এই বিপদ কোথা থেকে আসল? তো আল্লাহ তখন কী বলেছিলেন? সেখানে তাঁদের মনোযোগ এ বলে দুনিয়ার সরঞ্জামাদীর দিকে ফেরানো হয়নি যে, তোমাদের কাছে অস্ত্র ছিলনা। তোমাদের তরবারি কম ছিল। তোমাদের কাছে বর্শা কম ছিল। তোমাদের কাছে ঘোড়া কম ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা বললে এভাবে বলব, তোমাদের কাছে ক্লাশিনকোভ কম ছিল। তোমাদের কাছে বারুদ ছিলনা। তোমাদের লোকসংখ্যা কম ছিল। তোমাদের স্ট্রেটেজি ও প্লানিং সঠিক ছিলনা। এসবের দিকে মনোযোগ ঘোরানো হয়নি। বরং সেখানে আল্লাহর নবী উপস্থিত ছিলেন। সাহাবায়ে কেরামের মত পবিত্র আত্মাগণ ছিল। তাঁদের সম্পর্কে আল্লাহ কী বলেছেন? যে সময়ে সকলে রক্তাক্ত, ক্ষত বিক্ষত। ঐ সময়ে আয়াত অবতীর্ণ হল-
قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ
“হে নবী আপনি বলুন, এই যে তোমাদের বিপদ পৌছল, এটা তোমাদের নিজেদের কারণে।”
অতএব তোমরা নিজেদের দিকে মননিবেশ করে দেখ– তোমাদের আমলে কী ত্রুটি আছে। এরপর আল্লাহ বলছেন,
إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [٣:١٦٥]
“নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
মহান আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, সাহাবায়ে কেরামকে এবং পুরা উম্মাহকে সম্বোধন করছেন। আল্লাহ আমাদের সম্বোধন করে বলছেন-
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
“তোমরা হীনবল হয়ো না, তোমরা দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও।” [সুরা আলে ইমরান-১৩৯]
এরপর আল্লাহ বলছেন, যখন তাঁরা কষ্টে পড়েছিলেন এবং বিপদে পড়েছিলেন তখন তাঁরা কী বলেছিলেন? তাঁরা দুশমনের ব্যাপারে কিছু বলেননি, বলেননি যে দুশমন খুব শক্তিশালী, বাতিল অনেক শক্তিশালী। না, বরং তাঁরা তৎক্ষণাত নিজের দিকে মনোনিবেশ করেছে। আর বলেছিলেন, যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَ كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا أَن قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا ا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ [٣:١٤٧]
“তাঁদের কথা শুধু এটা ছিল যে, আমাদের পাপসমুহ এবং আমাদের কাজে বাড়াবাড়িগুলো ক্ষমা করে দিন। আমাদের পাগুলোকে দৃঢ় করে দিন। আর আমাদেরকে কাফের সম্প্রদায়ের উপর বিজয় দান করুন।” [সুরা আলে ইমরান-১৪৭]
তাঁরা নিজের দিকে মনোযোগী হয়ে নিজের গোনাহের ক্ষমা প্রাথণা করেছিলেন।
.
.
(উদ্ধৃত অংশটি শাইখ উস্তাদ উ@স]ম। ম]হ-মুদ হাফিজাহুল্লাহর "হেদায়েতপ্রাপ্ত দল আর হেদায়েতবঞ্চিত দলের মাঝে সমীকরণ" থেকে চয়ন করা হয়েছে।)
Comment