আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“এই তো গাযা…
ধৈর্যশীলদের মা, যার পড়শিরা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে
[যুদ্ধের চতুর্থ সপ্তাহ]”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– শেষ পর্ব
“এই তো গাযা…
ধৈর্যশীলদের মা, যার পড়শিরা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে
[যুদ্ধের চতুর্থ সপ্তাহ]”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– শেষ পর্ব
নবম মূল্যায়ন: আরব ও মুসলিম শাসকদের প্রসঙ্গে:
আরব ও মুসলিম শাসকদের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? তারা কী ঐতিহাসিক পর্যায়ে ছিল? (ইতিহাস জুড়ে মুসলিম শাসকদের যেই পরিচয় আমরা জেনে এসেছি; মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের প্রশ্নে জালেম ও স্বেচ্ছাচারী মুসলিম শাসকরাও ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় যে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন, আজকের যুগের মুসলিম শাসকদেরকে কী আমরা সেরকমটা দেখতে পাচ্ছি? ঐতিহাসিক সেই অবস্থান কি তারা ধরে রাখতে পেরেছে চলমান ইস্যুতে?) গাজার মুসলিমদের সমর্থন করার জন্য তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে? গাজার মুজাহিদীনের সমর্থন করার বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করা কঠিন। কারণ হতভাগা বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজীজ এবং তার বখে যাওয়া ছেলে জাযীরাতুল আরবে যখন থেকে আবির্ভূত হয়েছে, তখন থেকে তারা অন্যান্য আরব শাসকের মতো মুজাহিদীনের থেকে নিজেদের চেহারা ফিরিয়ে নিয়েছে।
এতোটুকুতেই ক্ষান্ত হয়নি! বরং তারা তাদের মনিব ইহুদীবাদী ও ক্রুসেডারদের সঙ্গে মিলে মুজাহিদীনকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দেয়ার সুরে তাল মিলিয়েছে। ফিলিস্তিন দখলকারী ইহুদীবাদী শত্রুর তোষামোদে তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। অবশেষে ২০২৩ সালে গাজার ঘটনায় তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছে।
হামলার ২১ দিন পর ২৮শে অক্টোবর শনিবার বিকেল পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো আওয়াজ শুনতে পাইনি। হ্যাঁ, তারা মাথা নিচু করে বকবক করছিল, কিন্তু তাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল। একটা কথাই যেন তারা বলতে চাচ্ছিল—“হে আমাদের মনিবেরা! সন্ত্রাসীদের হাত থেকে আমাদেরকে দ্রুত বাঁচাও। তারা তো জনগণের সামনে আমাদেরকে লজ্জিত, অপদস্থ করে ছাড়ছে।”
আরব ও মুসলিম শাসকরা একথা এখনো বুঝতে পারেনি যে, ১৫ই আগস্ট আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান বাহিনী যখন লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে, তখনই ইহুদী মিথের মায়া ভেঙ্গে গিয়েছে। তখনই ঘোষণা হয়ে গিয়েছে, পশ্চিমা বিশ্ব এবং তার মিত্রদের সময় শেষ। বিশ্ব এই দশকে নতুন সমীকরণের মুখোমুখি হবে, যা এই দশকের সামনে আসবে। মুসলিম শাসক হিসেবে এ দশকে কি কোনো সঠিক ভূমিকা পালন করার সুযোগ তোমাদের সামনে খোলা আছে? আমার সন্দেহ হয় এ বিষয়ে।
আমেরিকার পতনের আওয়াজ সকলে শুনতে পাচ্ছে। এই আওয়াজ শুনে মানুষের চোখ থেকে পর্দা সরে গিয়েছে। কিন্তু হে শাসকেরা! তোমরা এখনো তোমাদের হৃদয় থেকে পর্দা সরাওনি! কে জানে হয়তো তোমরা নিজেদের সিংহাসন টিকিয়ে রাখার জন্য এটাই কামনা করো যে, আমেরিকার পতন না ঘটুক! তোমাদের ব্যাপারেই যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
فَتَرَى الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَارِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰ أَن تُصِيبَنَا دَائِرَةٌ ۚ فَعَسَى اللَّهُ أَن يَأْتِيَ بِالْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِ فَيُصْبِحُوا عَلَىٰ مَا أَسَرُّوا فِي أَنفُسِهِمْ نَادِمِينَ ﴿٥٢﴾
অর্থঃ “বস্তুত যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে, তাদেরকে আপনি দেখবেন, দৌঁড়ে গিয়ে তাদেরই মধ্যে প্রবেশ করে। তারা বলেঃ আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোনো দুর্ঘটনায় পতিত হই।” [সূরা মায়েদা ০৫: ৫২]
তোমাদের ব্যাপারেই যেন আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আরো ইরশাদ করেছেন:
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ تَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِم مَّا هُم مِّنكُمْ وَلَا مِنْهُمْ وَيَحْلِفُونَ عَلَى الْكَذِبِ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ﴿١٤﴾
অর্থঃ “আপনি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করেননি, যারা আল্লাহর গযবে নিপতিত সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করে? তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয় এবং তাদেরও দলভুক্ত নয়। তারা জেনে শুনে মিথ্যা বিষয়ে শপথ করে।” [সূরা মুজাদালা ৫৮: ১৪]
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ (আরব ও মুসলিম দেশের সব শাসক) তাদের মন্দির ও গির্জার সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে । কেউ কেউ তাদের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জাযীরাতুল আরবের ভূমিতে মন্দির ও গির্জা নির্মাণ করে যাচ্ছে— যেমনটা করে যাচ্ছে উপসাগরীয় অঞ্চলের অধিকাংশ শাসক; যাদের শীর্ষে রয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের শয়তান ‘মুহাম্মদ বিন জায়েদ’।
তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মুসলিমদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করে যাচ্ছে এবং মুসলিমদের তথ্য কাফের মনিবদের কাছে সরবরাহ করছে, যেমন: আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈমানদারদেরকে গাজা থেকে নেগেভে স্থানান্তর করার পরামর্শ দিয়েছে (আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি)। তোমাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ রয়েছে; যারা মুসলিমদেরকে, মুসলিম সেনাবাহিনীকে সীমান্ত খুলে শত্রুদের উপর আঘাত হানার পথে বাঁধা দিয়েছে (জর্ডান, মিশর, সিরিয়া, লেবানন, রিয়াদ, তুরস্ক, এবং ইরাক প্রভৃতি অঞ্চলের শাসকগণ)...।
এভাবেই তোমরা একেকজন একেকভাবে উম্মাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছো। তোমরা সকলেই উম্মাহর বিরুদ্ধে শত্রুদের সাথে একই শিবিরে অবস্থান করছো। তাইতো গাজায় যে মুসলিমদের রক্ত ঝরানো হচ্ছে, তার জন্য তোমরাও দায়ী। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা মুসলিমদের হত্যাকারীদেরকে হুমকি দিয়ে ইরশাদ করেছেন:
وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا ﴿٩٣﴾
অর্থঃ “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।” [সূরা নিসা ০৪: ৯৩]
মিশরে ক্ষমতার মসনদ দখল করে রাখা ইহুদীবাদী শাসক (আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি):
আজকাল তারা (ক্ষমতাসীনরা) মিশরের বীরত্বপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করে; কারণ মিশর গাজার জনগণকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গাজার জনগণ কি আদৌ ইহুদীদের (গাজা ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যাওয়ার) দাবি মেনে নিয়েছে? যদি তারা তা করতো, তাহলে কেউ তাদের বাধা দিত না। ফিলিস্তিনিরা চাইলে ঠিকই সীমান্ত ক্রসিং অতিক্রম করে মিশরে ঢুকে যেতে পারতো, যেমনটা তারা আগে করেছিল। বাস্তুচ্যুতি এবং অন্যত্র শরণার্থী হয়ে থাকার ব্যাপারটা ঠেকানোর সিদ্ধান্ত যিনি নিয়েছিলেন, তিনি হলেন একজন সাধারণ মুসলিম নাগরিক, যার দাদা প্রথম বাস্তুচ্যুতির তিক্ততার স্বাদ পেয়েছিলেন। বাস্তুচ্যুতির পরে কেউ নিজের ভূমিতে আর ফিরে আসতে পারেনি।
সিসির বিষয়টা হলো, সে তার কর্মচারীদের মাধ্যমে ইহুদীদেরকে একটি বার্তা পাঠায় যে, গাজার মুজাহিদরা তাদের বিরুদ্ধে একটি বড় হামলার পরিকল্পনা করছে। সে (আল-সিসি) ইহুদীদেরকে পরামর্শ দেয়, গাজার জনগণকে নেগেভে বাস্তুচ্যুত করার। ইহুদীদেরকে সে দুইটা অপশন দিয়েছিল- হয় ফিলিস্তিনিদেরকে গাজায় ফেরত পাঠাবে অথবা মরুভূমিতে ধ্বংস হওয়ার জন্য ফেলে রাখবে।
সে (সিসি) ক্রসিং গেট বন্ধ রেখেছিল যতক্ষণ না ইহুদীরা তাকে ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ করানোর অনুমতি দেয়। অথচ তার দায়িত্ব ছিল বিশ্বের দশম শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে ফিলিস্তিন সীমান্তে একত্রিত করা। যদি তাতে অক্ষম থাকতো, তবে তার উচিত ছিল মুসলিম শাসকদেরকে সংগঠিত করা। তার কর্তব্য ছিল ইহুদী বিমানকে গাজায় বোমাবর্ষণ থেকে বিরত রাখা। কারণ এটি মিশরের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পৃক্ত। তাই নিজ সেনাবাহিনী নিয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য ছুটে যাওয়া ছিল তার দায়িত্ব। তা না করে সে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে যুদ্ধ বিরতির সিদ্ধান্ত ভিক্ষা করার জন্য লজ্জাজনক বিনয়ের সাথে অপেক্ষা করতে থাকে!
এই কি সেই ব্যক্তি নয় যে মিশরের কাছে আসা —সম্ভবত ক্ষমতার চেয়ার দখলের অভিলাষী— কাউকে হুমকি দিয়েছিল। এই লোক (সিসি) স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, মিশরীয় সেনাবাহিনীর লক্ষ্য কেবল তার দেশের সীমানা রক্ষা করা। তাই কেউ যেন এই লক্ষ্যের চেয়ে বেশি কিছু মিশরীয় সেনাবাহিনীর কাছে আশা না করে!
ছি, কি লজ্জা! এই সেনাবাহিনী ০৭ই অক্টোবর ইসলামের সিংহ ও বাজপাখিরা যে অপারেশন পরিচালনা করেছেন, তার ১০ ভাগের এক ভাগও করতে সক্ষম নয়। কারণ এদের নেতা হলো সিসি। নিম্নোক্ত কবিতার দুটি লাইন যেন এই সিসির কথাই বলছে:
أسد عليَّ وفي الحروب نعامة *** فتخاء تنفر من صفير الصافر
هلا برزتَ إلى غزالة في الوغى *** بل كان قلبك في جناحي طائر
“ هلا برزتَ إلى غزالة في الوغى *** بل كان قلبك في جناحي طائر
আমার সামনে তুমি সিংহ হয়ে থাকো, কিন্তু যুদ্ধে তুমি হয়ে যাও উটপাখি, তাই যুদ্ধের গর্জনে তুমি পালিয়ে যাও।
যুদ্ধের ময়দানে কেন তুমি তোমার প্রতিপক্ষ নারীর সামনে এলে না? আসলে তোমার হৃদয় তখন ছিল পাখির ডানায়।”
যুদ্ধের ময়দানে কেন তুমি তোমার প্রতিপক্ষ নারীর সামনে এলে না? আসলে তোমার হৃদয় তখন ছিল পাখির ডানায়।”
হে মিশরের স্বাধীনচেতা জনগণ!
যাদের হৃদয়ে আত্মমর্যাদাবোধ, আত্মসম্মান ও আভিজাত্যের কিছু অংশ হলেও বাকি রয়েছে, সেনাবাহিনীর এমন প্রত্যেককে আমি আহ্বান করছি! আপনাদের এই শোচনীয় অবস্থা নিয়ে কি আপনারা সন্তুষ্ট? আপনারা কি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হতে চান না? আপনারা কী ইহুদী গোষ্ঠী এবং তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পতাকা বহন করতে চান না?
আল্লাহর কসম! আপনাদের চেয়ে শক্তি-সামর্থ্যের বিচারে অনেক পিছিয়ে থাকা তুফানুল আকসার মুজাহিদীন; এই দখলদার ইহুদী গোষ্ঠী ও তাদের কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারেননি; এমনিভাবে দখলদারদের তাবেদার সিসি, তার নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থা এবং এদের সকলের অর্থহীন মুখরোচক কথাবার্তার উপর ভিত্তি করে বসেও থাকেননি। সুতরাং আগামী দিনে আমরা তাদের কাছ থেকে উম্মাহর জন্য উপকারী অনেক ভালো পদক্ষেপের প্রত্যাশা রাখি। অন্যথায় এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য তারা চিরকালের জন্য নিন্দিত হবে, যা তাদেরকে লজ্জিত করবে।
পূর্ব আরব উপদ্বীপের বেশ কয়েকটি অত্যন্ত ধনী শহরের শাসনের উত্তরাধিকারী, শয়তান ডাকনামের অধিকারী ইহুদীবাদী শাসক (মুহাম্মদ বিন জায়েদ):
তোমার বিমান লিবিয়া ও মালিতে পৌঁছে সেখানকার মুসলিমদের উপর বোমাবর্ষণ করে। কিন্তু সেই বিমানগুলো ঘরের কাছে ফিলিস্তিনে পৌঁছুতে পারে না! কী কারণে? হ্যাঁ আমরা জানি। ভারতে যখন আল্লাহর ঘর (মসজিদসমূহ) ভেঙে ফেলা হয়, তখন ভারতের বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক অবস্থান তুমি গ্রহণ করনি —যেমন হিন্দুদেরকে বিতাড়িত করে দেয়ার হুমকি অথবা হারামাইনের ভূমিতে হিন্দু ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো বন্ধ করে দেয়ার হুমকি। এগুলো কোনো কিছুই তোমার হতে প্রকাশ পায়নি। ভারতকে যেখানে তোমরা কিছু বলোনি, সেখানে নিজেদের রক্ষাকারী আমেরিকা এবং মনিব জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলবে? এটাতো কল্পনাও করা যায় না।
আমি সবসময় আমার ভাইদের বলেছি, গোলামীর একটা সীমা-পরিসীমা আছে। একজন গোলাম ও তাবেদার পুরোপুরিভাবে নতজানু হতে পারে না; বরং তার একটা সীমা রয়েছে। কিন্তু তোমার দাসত্ব ও নতজানু অবস্থার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। তোমার বিমান ইয়েমেন, লিবিয়া এবং মালিতে মুসলিমদের সাথে যা করেছে, তা ইহুদী বিমানগুলোর ফিলিস্তিন হামলার চেয়ে কম নয়। কত ফিলিস্তিনি তোমার ভূমিতে কাজ করে, যাদেরকে এখনো নাগরিকত্ব দাওনি! অথচ ৭০০০-এরও বেশি ইহুদীকে জাতীয়তা ও নাগরিকত্ব দিয়েছো।
তুমি ভ্যাটিকানের পোপের আতিথেয়তা করেছো, শ্রদ্ধার সাথে তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলে। এর কারণ কী? সেটা কী এজন্য যে, তুমি ইবনে আরাবি, ইবনুল ফরিদ, ও জালাল উদ্দিন-রুমীর ‘ওয়াহদাতুল উজুদ’ বা ‘সকল অস্তিত্বের একাত্মতা ও ভালোবাসার মতবাদে’ বিশ্বাসী? কিন্তু যখন তুমি মুসলিমদের দিকে তাকাও, তখন সকল অস্তিত্বকে ভালোবাসার এই মতবাদ তোমার থেকে কেন পৃথক হয়ে যায়? যাইহোক, তোমার বিশ্বাস ও মতবাদের জন্য তোমাকে অভিনন্দন!
لقد صار قلبي قابلاً كل صورة *** فمرعى لغزلان ودير لرهبان
وبيت لأوثان وكعبة طائف *** وألواح توراة ومصحف قرآن
أدين بدين الحب أنّى توجهت *** ركائبه فالحب ديني وإيماني
“আমার হৃদয় প্রতিটি চিত্র গ্রহণ ও ধারণ করে নিয়েছে,এই হৃদয় হরিণের জন্য একটি চারণভূমি এবং সন্ন্যাসীদের জন্য একটি আশ্রম
এ হৃদয় পৌত্তলিকদের উপাসনালয় আবার তাওয়াফকারীদের কাবা,এ হৃদয় তাওরাতের ফলক আবার আল কুরআনের মুসহাফ
আমি ভালোবাসার ধর্ম গ্রহণ করে ভালোবাসার বাহনে চড়েছি। কারণ এই ভালোবাসাই আমার দীন ও ঈমান।”
وبيت لأوثان وكعبة طائف *** وألواح توراة ومصحف قرآن
أدين بدين الحب أنّى توجهت *** ركائبه فالحب ديني وإيماني
“আমার হৃদয় প্রতিটি চিত্র গ্রহণ ও ধারণ করে নিয়েছে,এই হৃদয় হরিণের জন্য একটি চারণভূমি এবং সন্ন্যাসীদের জন্য একটি আশ্রম
এ হৃদয় পৌত্তলিকদের উপাসনালয় আবার তাওয়াফকারীদের কাবা,এ হৃদয় তাওরাতের ফলক আবার আল কুরআনের মুসহাফ
আমি ভালোবাসার ধর্ম গ্রহণ করে ভালোবাসার বাহনে চড়েছি। কারণ এই ভালোবাসাই আমার দীন ও ঈমান।”
রিয়াদ শাসনের উত্তরাধিকারী, ক্রাউন প্রিন্স, পতিতাবৃত্তি ও অশ্লীলতার প্রচারক (মুহাম্মদ বিন সালমান):
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় জাযীরাতুল আরবের ভূমি, নির্লজ্জ শাসকদের নেতৃত্বে ধর্ম, পবিত্রতা এবং প্রশংসনীয় ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ প্রত্যক্ষ করছে। যুবরাজ বিন সালমান আলেমদেরকে বন্দী করেছে এবং তাদের একদলকে হত্যা করেছে। বাকিদেরকে নীরব থাকতে বাধ্য করেছে। যারা এখন নীরব আছেন, তারা তার নামের প্রশংসা করে এবং তার ক্ষমাপ্রাপ্তির কথা ঘোষণা দেয়।
যুবরাজ বিন সালমান হারাম শরীফের কাছাকাছি পতিতাবৃত্তি, অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের সকল উপায় অবলম্বন সহজলভ্য করে দিয়েছে। সে জোরপূর্বক ধনীদের সম্পদে ভাগ বসায়। এমনিভাবে সে জোরপূর্বক সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিন লাদেন গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং এর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। জানা নেই, সে কি ইহুদীদের কাছে এই প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিয়েছে নাকি তাদেরকে বিনা মূল্যে মালিকানা হস্তান্তর করেছে!
আমেরিকান দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করার জন্য সে অপরাধী ট্রাম্পকে প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলার পুরস্কার হিসাবে দিয়েছিল। সে মুসলিমদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ দিয়ে গর্ব, অহংকার ও প্রদর্শনের জন্য ফুটবল প্লেয়ার ক্রয় করে। এভাবেই উম্মাহর যুবকদেরকে সে অর্থহীন ও অনর্থক বিষয়ের পেছনে ব্যস্ত করে রাখে। এ বিষয়গুলোই সময়ের দাবি ও যুগোপযোগী বিষয়, তথা ‘জিহাদ ও শাহাদাতের পথ’ থেকে উম্মাহর যুবকদের বিচ্যুত হবার কারণ হয়।
আমি মসজিদে হারামের সম্মানিত ইমামকে (আস-সুদাইস) জিজ্ঞাসা করতে চাই, রিয়াদ ও আমেরিকা কি এখনও গাজার যুদ্ধে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে? ... এই যাদের অবস্থা, তাদের কাছ থেকে কী গাজা বা অন্য কোনো ভূমিতে নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিমদের জন্য সাহায্য-সহযোগিতার কথা আশা করা যায়?
অক্টোবরের ০৭ তারিখের বরকতময় অভিযানটি আমাদের সামনে অনেক বার্তা রেখে দিয়েছে। এই বার্তা জাতির বীর বাহাদুর, লড়াকু সৈনিক, অতন্দ্র প্রহরী এবং উম্মাহর মুজাহিদ সন্তানদের কাছে গোপন নয়। এটি সত্যিই একটি অপ্রত্যাশিত আঘাত ছিল, যার প্রভাব অনেক গভীর। ইসলাম, মুসলিম, মুসলিমদের ভূমি ও সম্পদের উপর আগ্রাসনকারী বিভিন্ন প্রকল্পের উপর গভীর প্রভাব বিস্তারকারী আঘাত হেনেছিল এই অভিযান।
রাষ্ট্রযন্ত্র ও শাসকগোষ্ঠী নিজ ইচ্ছায় ক্রুসেডার জায়নবাদীদের অধীনে থাকার পথ বেছে নিয়েছে। খুব শীঘ্রই হাউস অফ সৌদ এবং ইহুদীদের মধ্যে অকপটে নির্লজ্জভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ঘোষণা হবার কথা ছিল। NEOM প্রকল্প বাস্তবায়নের মাঝে যে বিষয়টা লুকায়িত ছিল, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সে বিষয়টা খুব দ্রুতই সর্বোচ্চ মাত্রা ছুঁয়ে যাবার কথা ছিল। যদিও আমি নিশ্চিত যে, বিন সালমানের সাহস রয়েছে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টা ঘোষণা করার; সেটা সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে; সম্ভবত বর্তমান রিয়াদ মৌসুম[1] (Riyadh Season) শেষ হওয়ার পরেই।
সম্ভবত আমরা প্রিন্স বিন সালমানকে (আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন!) ভুল বুঝেছি। সম্ভবত সে রিয়াদ মৌসুম থেকে উপার্জন করা সমস্ত অর্থ গাজার অবকাঠামো পুনঃর্নির্মাণে ব্যয় করবে!
শাসক মহলের এই কিছু উদাহরণ আমাদের বোঝার জন্য যথেষ্ট। যাদের কথা আলোচনা হল, তারা ছাড়া বাকিরা সেই একই পথের অনুসারী। তবে মাহমুদ আব্বাসের কথা ভিন্ন। সে অন্য কোনো দিকে যায় না। ক্ষমতার মূল আসন থেকে সে অপসারিত। ফলে ইহুদীদের কখন কি আদেশ-নিষেধ আসে সেই অপেক্ষায় থাকে।
যদি কবিদের বাদশাহ খ্যাত ‘আহমেদ মাতার’ (Ahmed Matar)-এর কবিতা না হতো; গাজায় যা ঘটেছে ও ঘটছে, সেগুলো যদি না হতো, তবে কেউ মনে রাখতো না যে, (রামাল্লা) এলাকায় আব্বাস নামে একজন শাসক আছে। ‘আহমেদ মাতার’ কী তোমাকে নিয়েই তাঁর কবিতা রচনা করেছে? নাকি তিনি তোমার নামটাকে দুর্বল শাসকদের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছে?
সিসি এবং মিশরীয় সেনাবাহিনী সম্পর্কে আমি যা উল্লেখ করেছি, সকল মুসলিম দেশের শাসকের ব্যাপারে এই একই কথা প্রযোজ্য। আজকে কারও কাছে ইহুদী ও আমেরিকার স্বার্থ নষ্ট না করার কোনো অজুহাত নেই। কেবল ফিলিস্তিনেই নয়, গোটা বিশ্বে শত্রুদের স্বার্থ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। শত্রু দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন দেশে বসবাস করে সেই দেশগুলো পরিচালনা করেন। আমরা এমন একটি দেশের কথা শুনিনি, যে দেশ ইহুদী ও পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য বয়কট করেছে বা বন্ধ করেছে...!
উপরে যাদের কথা আলোচনা হল, তাদের মধ্যে এমন একজন শাসকের কথাও শুনিনি, যে গোঁফ তুলে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত কিংবা ইহুদীদেরকে তার দেশ থেকে বিতাড়িত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।
তারা কীভাবে এটা করতে পারে? তারা তো ইহুদীদের চেয়েও বেশি ইহুদীবাদী! তাদের আমেরিকান প্রভুরা তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। আমেরিকা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে, তারা - (তথা আরব শাসকরা) - ইহুদীদের চেয়েও বেশি হামাসের ধ্বংস চায়। হামাস ধ্বংস হয়ে গেলে তারা ইহুদীদের চেয়েও বেশি আনন্দিত হবে।
০১লা নভেম্বর ২০২৩ সালে আমি ভাবছি, আরব লীগ কী গাজার স্বার্থে একটি অধিবেশন করবে? ... নাকি এখনো এ বিষয়ে ইচ্ছুকদের কোরাম[2] পূর্ণ হয়নি?
***
[1] রিয়াদ সিজন হল- রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে একটি বার্ষিক বিনোদন এবং ক্রীড়া উৎসব, যা অক্টোবর মাস থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আল সুয়েদি পার্কে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা অংশগ্রহণ করে থাকে। সেখানে একসঙ্গে প্রায় চল্লিশ হাজার (৪০,০০০) এর বেশি দর্শনার্থীদের সংকুলান হয়। এর দ্বারা সৌদি আরব বিপুল অর্থ উপার্জন করে থাকে। [সম্পাদক]
[2] আইনানুগভাবে কোনো সভা বা মিটিং পরিচালনার জন্য যে ন্যূনতম সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতি বাঞ্চনীয় তাকে কোরাম বা গণপূর্তি সংখ্যা বলে। [সম্পাদক]
আরও পড়ুন
Comment