হেদায়েতপ্রাপ্ত দল আর হেদায়েতবঞ্চিত দলের মাঝে সমীকরণ
লক্ষ্য করুন, হযরত ওমর রা. বাহিনীর কমান্ডার সা’দ ইবনে আবি ওক্কাস রা.কে পত্র লিখছেন। সেখানে তিনি এ নির্দেশ দিচ্ছেন,
“فإني آمرك ومن معك بتقوى الله على كل حال”
আমি তোমাকে এবং যারা তোমার সঙ্গে আছে তাদেরকে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করার নির্দেশ দিচ্ছি।
এরপর তিনি বলছেন,
“وآمرك ومن معك أن تكونوا أشد احتراسا من المعاصي منكم من عدوكم”
আমি তোমাকে এবং তোমার সঙ্গীদের নির্দেশ দিচ্ছি, তোমরা শত্রুর ব্যাপারে যতটা সচেতন থাক তার চেয়েও সচেতন থাকবে গোনাহের ব্যাপারে।
.
কারণ বাহিনীর গোনাহ শত্রুর চেয়েও অধিক ভয়ংকর।’
.
শত্রু কী পরিমান শক্তিশালী? তাদের শক্তিশালী হতে দাও! তাদের কাছে যে পরিমান যুদ্ধাস্ত্র থাক, যে পরিমান ড্রোন, জেট বিমান ও বি-৫২ থাক। কোন সমস্যা নেই। শুধু গোনাহ করো না, আল্লাহর সাথে সম্পর্কে ঘাটতি আসতে দিও না। যদি আল্লাহর সাথে সম্পর্কে দুর্বলতা আসে এবং শরিয়তের উপর আমল না হয় তবে স্মরণ রাখুন, আপনাদের কাছে যত অস্ত্রই থাক না কেন, সেসব অস্ত্র কোন কাজে আসবে না।
.
আল্লাহ তাআলা এখানে আফগানিস্তানের ইতিহাসে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন। তালেবান ভায়েরা আমাদের সামনে আছে। এই ভাইদের কাছে কী ছিল? তাদের কাছে পিকা থাকতো, আর পিকা’র যে পাত থাকতো, সেটাও থাকতো অর্ধেক! তাঁদের কাছে মাইনও থাকত। কিন্তু সেগুলো কেমন? সুবহানাল্লাহ আমি এমন ভাইকে দেখেছি যিনি বিজয়ের পর বিজয়ের পর্বগুলোতে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু মটরসাইকেলে পেট্রোল দেওয়ার মত পয়সা তাঁর কাছে ছিল না। এক ভাই আমাকে আরেক জনের ব্যাপারে বলেন, সে অন্য এলাকায় যাবে সেখানে তাঁকে আরেক ব্যক্তি পেট্রোল কিনে দেবে। পেট্রোলের পয়সাটাও তাঁর কছে নাই। এই হল তাঁদের যুদ্ধের সামানাপত্র। কিন্তু এই সীমাহীন অভাবের মাঝেও আল্লাহর শোকর তাঁরা পুরা দুনিয়াকে নাকানি চুবানি খাওয়াইছে। একারণে আসল দুশমন হল গোনাহ, তাকে ভয় করতে হবে।
.
হযরত ওমর রা. এরপর বলেন, ‘মুসলিমরা তাঁদের দুশমনের গোনাহের কারণে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়।’ শত্রুর নাফরমানি যদি বেশী হয় তখন মুসলিমরা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। যদি এমনটা না হয় তবে তাদের মোকাবেলায় আমাদের শক্তি কুলাবে না। কারণ আমাদের লোক সংখ্যা তাদের লোক সংখ্যার সমান নয়, আমাদের উপকরণ তাদের উপকরণের সমান নয়। ‘যদি নাফরমানিতে আমরা উভয়ে বরাবর হই তবে শক্তিতে তারা আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে।’
.
ওমর রা. বলছেন, কখনও মনে করো না যে দুশমন আমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না, যদিও আমরা গোনাহ করি।
.
দেখুন, এ উম্মতের মধ্যে আল্লাহ যাদের দ্বারা কাজ নিয়েছেন, যাদের কারণে উম্মত মর্যাদাবান হয়েছে আল্লাহ ইসলামের নাম আলোকিত করেছেন তাঁরা নিজেদের আমলে অনেক যত্নবান ছিলেন।
সালাহুদ্দিন আইয়্যুবী রহ. সম্পর্কে বলা হয়। তিনি রাতে উঠতেন এবং নিজের সৈনিকদের দেখাশোনা করতেন। তিনি দেখতেন, কোথাও এমন কোন সৈনিক নেই তো, আগামী কাল হামলা হবে অথচ সে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। ইবাদত করছে না?! বলা হয়, তিনি এক তাঁবুর কাছে আসলেন। এবং দেখলেন সেখানে এক মুজাহিদ ঘুমিয়ে আছে, তিনি সাথে সাথে সব মুজাহিদকে সেখানে ডাকলেন। এবং বললেন, পরাজয় এখান থেকে আসবে। এই তাঁবু থেকে পরাজয় আসবে। কেন? কারণ সে আল্লাহর কাছে চাচ্ছে না। কারণ সে ঘুমিয়ে আছে। কারণ সে ইবাদত করছে না। অথচ সেটা নফল ও মুস্তাহাব ইবাদত। কিন্তু যারা আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা যদি তাঁদের নফল ও মুস্তাহাব আমল নষ্ট হয় তবে তাঁরা এতটা পেরেশান হয়ে যান, যেন তাঁরা গোনাহ করে ফেলেছেন। এ কারণেই আল্লাহ তাঁদের দ্বারা দীনের সাহায্য নিয়েছেন। তাঁদেরকে এত বড় মর্যাদা দান করেছেন।
.
আমার ভাইগণ! এ বাস্তবতাও তো আমদের সামনে আছে। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, বাতিলের কাছে যত শক্তিই থাক না কেন। তাদের কাছে যে পরিমান যুদ্ধাস্ত্রই থাক না কেন,তারা হল অন্ধকারের মত। তারা কি? তারা অন্ধকার। অন্ধকারের নিজস্ব কোন বাস্তবতা নেই। যখনই আলো জ্বালানো হবে অন্ধকার তখনই নিজে নিজে বিদায় নিবে। আলো না থাকাকে তো অন্ধার বলে। যেখানে আলো থাকে না, মানুষ বলে সেখানে আঁধার। আর যেখানেই আলো আসবে সেখান থেকেই আঁধার শেষ হয়ে যাবে। এটাই হচ্ছে হক ও বাতিলের উদাহরণ। যখন হক আসবে, এবং তা প্রকৃত অর্থে হক হবে। সে হকের দাওয়াত ও কর্মে এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কে শক্তি থাকবে তখন এটা হতেই পারে না যে বাতিল তার সামনে টিকে থাকবে। আজ পাকিস্তানে এবং যেখানেই বাতিল বিজয়ী আছে তার কারণ এটিই। প্রকৃত অর্থে হক নেই। যদি হক আসে, আমাদের আমল, অন্তর, আমাদের ভিতর বাহির, আমাদের দাওয়াত ও কর্মে যদি আল্লাহর উদ্দেশ্য মতে কাজ করতে পারি তবে স্মরণ রাখুন, অতিসত্তর বাতিল খতম হয়ে যাবে। এটা হতেই পারে না যে বাতিল তার সামনে টিকে থাকবে। বাতিল এমনিতেই খতম হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহ তো বলেছেন,
.
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِين
তোমরা দুঃখিত হয়ো না, তোমরা হীনবল হয়ো না তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও।
.
.
(উদ্ধৃত অংশটি শাইখ উস্তাদ উ@স]ম। ম]হ-মুদ হাফিজাহুল্লাহর "হেদায়েতপ্রাপ্ত দল আর হেদায়েতবঞ্চিত দলের মাঝে সমীকরণ" থেকে চয়ন করা হয়েছে।)
Comment