আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“এই তো গাযা…
গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয় বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (১)”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
“এই তো গাযা…
গাজা সংঘাত সীমান্ত নির্ধারণী সংঘাত নয় বরং অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই (১)”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ১ম পর্ব
بسم الله الرحمن الرحيم
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
জায়নবাদ বর্তমানে মানবজাতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় হুমকি। তাতার গোষ্ঠী, নাৎসি বাহিনী এবং হিন্দুত্ববাদের চেয়েও মানবতার জন্য বিরাট বিপদ। সম্ভবত এই ইহুদীবাদ এক বাক্যে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ভয়ানক আপদ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে যেই ফিতরত ও স্বভাব প্রবণতার উপর সৃষ্টি করেছেন, জায়নবাদ পৃথিবীর বুকে বহু আদম সন্তানের সেই বৈশিষ্ট্যকে বিনষ্ট করে দিয়েছে। আধ্যাত্মিক দৈহিক ও চিন্তাগত ভারসাম্য বিকৃত করে দিয়েছে। বহু মানুষের মনুষ্যত্ব পরিবর্তন করে তাদেরকে শয়তান ও অর্থ সম্পদের দাসে পরিণত করেছে। জায়নবাদ মানব সভ্যতার জন্য উপহার হিসেবে দিয়েছে পৌত্তলিক ক্রুসেডারদেরকে, যারা এই ক্রুসেডের জন্য ইউরোপ আমেরিকা আফ্রিকা ভারতবর্ষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং এমনই আরো বিভিন্ন ভূখণ্ডের জাতিগোষ্ঠীকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছে। ইহুদীবাদ যেখানেই অনুপ্রবেশ করেছে সেই দেশগুলোকেই তাদের ব্যাঙ্কের বিনিয়োগের স্বার্থে অন্ধ আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রবৃত্তির লালসা চরিতার্থ করার পতিতালয়ে পরিণত করেছে। এই জায়নবাদ সর্বদাই সমর্থন করে এসেছে চারিত্রিক বিকৃতি, নারীবাদ এবং আল্লাহ ও আল্লাহ তাআলার শাশ্বত দীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য মন্দ ধারণার প্রচার-প্রসারকে। তারা যেখানেই গিয়েছে সেখানেই যেন ক্ষমতা কর্তৃত্ব এবং সম্পদের ক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, অজ্ঞতার বিস্তার ঘটাতে পারে, মিথ্যার বাণিজ্য করতে পারে এবং মানুষকে লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীন এক প্রাণীতে পরিণত করতে পারে, সেজন্য তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বিগত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকা ও ইহুদীরা মানবজাতির এত বিরাট অংশকে হত্যা করেছে এবং এত শহর নগর ধ্বংস করেছে, যা অকল্পনীয়।
এক ব্যক্তি খুব সুন্দর লিখেছেন: “মার্কিন রাখালের পেছনে ইহুদী কুকুর।”[1] এর বিপরীত দিকটাও সঠিক। কাদের স্বার্থে আমেরিকা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে বোকা বানিয়েছে? কাদের জন্য তাদের প্রচণ্ড প্রোপাগান্ডা মেশিনে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করেছে? আজ অবধি, গাজায় যা কিছু ঘটেছে, তারা এখনও সবকিছুকে ভালো বলে মনে করছে। তারা বুঝতে পারছে না, ইহুদীবাদীরা গাজায় সংঘটিত সবকিছুর প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট এজন্যই যে, তাদের রাব্বীদের হাতে অহংকার ও ষড়যন্ত্র করে প্রণীত তাওরাতের মূল পাঠ্যগুলোর সঙ্গে এই হত্যাযজ্ঞ মিলে যাচ্ছে। তারা খুবই উচ্চ অবস্থানে নিজেদেরকে ধরে একটি স্পষ্ট চশমা দিয়ে বিশ্বকে দেখে। তারা মনিব এবং দাস ছাড়া পৃথিবীতে আর কিছুই দেখে না। মনিব হচ্ছে ইহুদীবাদীরা এবং তাদের যেটাই ভালো মনে হবে সেটাই করার পূর্ণ অধিকারে তারা বিশ্বাসী। আর দাস গোষ্ঠী নতুন কেউ নয়; বরাবরই তারা দাস থেকে যাবে।
অবশিষ্ট বিশ্ববাসী যাদের শীর্ষে রয়েছে হিন্দু বৌদ্ধসহ অন্যান্য পৌত্তলিক গোষ্ঠী, আপনারা ভালোভাবে জেনে রাখুন, ইহুদীরা যদি মুসলিমদেরকে নিঃশেষ করে দিতে থাকে, বৈশ্বিক রাজনৈতিক কোনো সমাধানে যাওয়ার পথ থেকে যদি মুসলিমদেরকে এভাবেই দূরে সরিয়ে রাখে, তাহলে আগামী দিনের অন্ধকার রাতে গণহত্যা কার্যক্রমের দ্বিতীয় পর্যায় যখন শুরু হবে, তখন আপনারাই তাদের টার্গেট হবেন। বিশ্বের অন্যান্য জনগোষ্ঠী এবং ইহুদীদের মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক যেই প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, তা সামরিক সংঘাতের দিকেই এগোচ্ছে। এই সংঘাতে সাফল্যের পরিমাণ অনুসারে প্রত্যেক পক্ষের জন্য নিজেদের সামরিক শক্তির শ্রেষ্ঠত্বের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে কার বাজার কতটা। খুব শীঘ্রই আমরা বহুমেরুর দুর্বল এক বিশ্ব দেখতে পাবো। অচিরেই আমরা এমন বিপর্যয় দেখতে পাবো যা প্রযুক্তি যুগের অবসান ঘটাবে। কারো জানা নেই কি হতে যাচ্ছে। উপসাগরীয় আরবের যে রাজ পরিবারগুলি ক্ষমতা ও সম্পদের একচেটিয়া অধিকারী, যারা আরব জনগণ ও মুসলিম উম্মাহ্ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, এই শাসক পরিবারগুলি আমিরাতের ইহুদীবাদী শাসক বিন জায়েদের নেতৃত্বে ইহুদীবাদের গর্তের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। তারা এমন ব্যক্তিদের পরিণতি থেকে খুব বেশি দূরে নয়, যারা নিজেদের ঈমান-আকীদা চেতনা-মূল্যবোধ, দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
এরপর ইহুদীচক্র এবং তাদের তল্পিবাহক (আমেরিকা এবং পশ্চিমা) গোষ্ঠীর ব্যাপারে কথা হলো, মানব শুদ্ধি অভিযানে তাদের পালা সবার শেষে আসবে। কারণ ইহুদীরা তাদের পবিত্র গ্রন্থগুলোর নির্দেশনা অনুসারে তারা ব্যতীত অন্য কারো অস্তিত্বে কিছুতেই বিশ্বাসী নয়। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো সীমা-পরিসীমা তারা দেখে না। পৃথিবী, ভূগর্ভ এবং পৃথিবীর বুকে যা কিছু রয়েছে, তারা সমস্ত কিছুর উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করতে চায়। অবশিষ্ট মানব সম্প্রদায় তাদের দৃষ্টিতে গৃহপালিত অথবা হিংস্র জীবজন্তুর অন্তর্ভুক্ত। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এটাই তো পরিচয়। অতএব আজ মানব গোষ্ঠীর সামনে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, যার কোনো সীমা পরিসীমা নেই।
কিন্তু.. এ কথা মনে রাখতে হবে, তারা অভিশপ্ত জাতি। তারা ব্যর্থ। তাই সবকিছু তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ঘটা অনেক দূরের ব্যাপার। নবীদের ভূমি— যার শীর্ষস্থানে রয়েছে গাজা, এখানেও এমন এক লড়াই চলছে যা অস্তিত্ব রক্ষার; পৃথিবীর বুকে এ লড়াইয়ের না আছে কোনো সীমা, আর না এটি সীমান্ত নির্ধারণী কোনো যুদ্ধ। যুদ্ধরত দুই পক্ষ এবং তাদের লক্ষ্যগুলির মধ্যে ব্যবধান বিশাল। এই যুদ্ধ মুসলিমদের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীকে এই বার্তা ও নির্দেশনা প্রদান করছে যে, দুনিয়া মুসলিমদের জন্য এমন এক বাহন, যার ওপর আরোহণ করে তারা পথ চলে, এই দুনিয়াকে তারা ব্যবহার করে; নিজেদের জাগতিক স্বার্থের জন্য তারা বেঁচে থাকে না। কারণ মুসলিমদের একমাত্র লক্ষ্য ও চালিকাশক্তি হলো আল্লাহর দীন। অপরদিকে ইহুদী গোষ্ঠী এবং ইহুদীবাদী বাহিনীর দিক থেকে এটা পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর বিরুদ্ধে অহংকার গণহত্যা ও স্বার্থ রক্ষার যুদ্ধ। কারণ তাদের চালিকাশক্তি ও লক্ষ হলো মানব প্রবৃত্তির অসৎ উদ্দেশ্য ও লালসা চরিতার্থ করা। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
ٱسۡتِكۡبَارٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَمَكۡرَ ٱلسَّيِّيِٕۚ وَلَا يَحِيقُ ٱلۡمَكۡرُ ٱلسَّيِّئُ إِلَّا بِأَهۡلِهِۦۚ فَهَلۡ يَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ ٱلۡأَوَّلِينَۚ فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَبۡدِيلٗاۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَحۡوِيلًا
অর্থ: “জমিনে ঔদ্ধত্য প্রকাশ এবং কূট ষড়যন্ত্রের কারণে। আর কূট ষড়যন্ত্র তার উদ্যোক্তাদেরকেই পরিবেষ্টন করবে। তবে কি এরা প্রতীক্ষা করছে পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রযুক্ত পদ্ধতির? কিন্তু আপনি আল্লাহর পদ্ধতিতে কখনো কোনো পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর পদ্ধতির কোনো ব্যতিক্রমও লক্ষ করবেন না।” [সূরা ফাতির ৩৫:৪৩]
জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
لاَ تَزَالُ عِصَابَةٌ مِنْ أُمَّتِي يُقَاتِلُونَ عَلَى أَمْرِ اللَّهِ قَاهِرِينَ لِعَدُوِّهِمْ لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَالَفَهُمْ حَتَّى تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ وَهُمْ عَلَى ذَلِكَ
অর্থ: “আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে লড়ে যাবে। তারা তাদের শত্রুদের মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রতাপশালী হবে। যারা বিরোধিতা করবে, তারা তাদের কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না। এভাবে চলতে চলতে তাদের নিকট কিয়ামত এসে যাবে আর তাঁরা এর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” [ইমাম মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]
উক্ত হাদীসের মধ্যে ইসাবা অর্থ হলো উম্মাহর সন্তানদের জামাত ও সংঘবদ্ধ দল। আমরা মুসলিমরা বিজয়ের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ নই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَيَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡأَشۡهَٰدُ
অর্থ: “নিশ্চয় আমি আমাদের রাসূলগণকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে, আর যেদিন সাক্ষীগণ দাঁড়াবে।” [সূরা গাফির ৪০: ৫১]
শহীদদের কাফেলা আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি সততা, একনিষ্ঠতা, আস্থা ও বিশ্বাসের দলীল। বিভ্রান্ত দিশেহারা এবং দ্বিধান্বিত ব্যক্তিদের জন্য এটা হলো আলোর মিনার। কারণ এটাই সাফল্যের এমন পথ, যেথায় ক্ষতির নেই কোনো আশঙ্কা।
হে ইহুদীরা! অচিরেই সকলে দেখতে পাবে, তোমাদের রক্তের নেই কোনো মূল্য। যেদিন পাথর ও বৃক্ষ তোমাদের অবসানের ঘোষণা দেবে এবং তোমাদের অপবিত্রতা থেকে পৃথিবীকে পবিত্র করার সুসংবাদ দেবে, ঐদিন পর্যন্ত তোমরা ইহুদীদের জীবনের কোনো মূল্য থাকবে না।... আমরা তোমরা সকলেই এটা বিশ্বাস করি।
অপরাধ ও অপরাধী। এই দুটো শব্দ ব্যবহার করলেই বোঝা যায় না অপরাধীর প্রকৃতি কি এবং তার অপরাধের পরিমাণ কতটুকু? তাই প্রত্যেক অপরাধীকে ওই অপরাধের নামের দিকে সম্বন্ধিত করা উচিত, যেন উক্ত অপরাধের পেছনে তার আইডিওলজি ও আদর্শের বাস্তবতা প্রকাশিত হয়ে যায়। তাই অপরাধনামা এবং অপরাধীদের শুধু নাম ব্যবহার করলেই সমকালীন ব্যক্তিদের সামনে তাদের চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় না। তাতার নেতা চেঙ্গিস খান, নাৎসি প্রধান হিটলার, সমাজতন্ত্রের স্টালিন, হিন্দুত্ববাদী মোদি এবং সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপ— প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট আদর্শ রয়েছে, যার জন্য সে কাজ করে। এই সকল আদর্শ ও প্রবণতার মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট হলো পশ্চিমা ইহুদী জায়নবাদ। ইতিহাস জুড়ে সর্বনিকৃষ্ট রক্ত পিপাসু হচ্ছে ইহুদী গোষ্ঠী এবং তাদের উত্তরসূরি (মেনাখেম বেগিন - Menachem Begin, মোশে দায়ান- Moshe Dayan, এরিয়েল শ্যারন- Ariel Sharon, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু- Benjamin Netanyahu, জো বাইডেন- Joe Biden — এরা হলো বানর ও শূকরের জাত।)
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ইহুদী ও জায়নবাদীর মাঝে পার্থক্য করা কি সম্ভব? সাধারণভাবে বিচার করলে দেখা যায়, ইহুদীদের এমন কিছু সম্প্রদায় আছে, যারা ফিলিস্তিনে হিজরত করে আসেনি এবং জায়নবাদ কবুল করেনি? এ থেকে কি বোঝা যায়, তারা মুসলিমদেরকে কিংবা অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীকে ভালোবাসে? এক কথায় উত্তর: কখনোই নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
۞ لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ ٱلنَّاسِ عَدَٰوَةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلۡيَهُودَ وَٱلَّذِينَ أَشۡرَكُواْۖ وَلَتَجِدَنَّ أَقۡرَبَهُم مَّوَدَّةٗ لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱلَّذِينَ قَالُوٓاْ إِنَّا نَصَٰرَىٰۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّ مِنۡهُمۡ قِسِّيسِينَ وَرُهۡبَانٗا وَأَنَّهُمۡ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ
অর্থ: “অবশ্যই মুমিনদের মধ্যে শত্রুতায় মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকদেরকেই আপনি সবচেয়ে উগ্র দেখবেন। আর যারা বলে, ‘আমরা নাসারা’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই আপনি মুমিনদের কাছাকাছি বন্ধুত্বে দেখবেন, তা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসারবিরাগী রয়েছে। আর এজন্যেও যে, তারা অহংকার করে না।” [সূরা মায়েদা ০৫:৮২]
অধিকৃত ফিলিস্তিনে বসবাসকারী ইহুদী মাত্রই সক্রিয় জায়নবাদী, চাই সে তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়াশীল ও উগ্রবাদীদের যতই বিরোধিতা করুক না কেন কিংবা তাদের কাজের পাল্টা জবাব থেকে বাঁচার জন্য কিছু ফেস্টুন ও হ্যান্ড ব্যানার বিশ্ববাসীর সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে তারা যতই আগ্রহী হোক না কেন? অধিকৃত ভূমিতে শুধু তাদের অবস্থান করাটাই এ কথা বোঝায়, তারা সব কিছুর প্রতি সম্মত, সবকিছু তারা মেনে নিয়েছে এবং সরকারকে সমর্থন করে যাচ্ছে। অপজিশন পার্টি[2] রাজনৈতিক ব্যবস্থারই একটা অংশ, যা কোনো দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য ধরে রাখে। শুধু তাই নয়, কিছুটা অগ্রসর হয়ে আমি এ কথা বলতে চাই, ফিলিস্তিনের ইহুদী মাত্রই সিরিয়াল কিলার। কেউ যদি চায় তার নামের সঙ্গে এই শব্দযুক্ত না হোক তাহলে সে যেন ফিলিস্তিন থেকে চলে যায়। কারণ যারা ফিলিস্তিন দখল করে সেখানে বসবাস করছে, তারা স্বেচ্ছায় এ কাজটা করেছে। এ কারণেই তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের পথ বেছে নিয়েছে। হে আগ্রাসনকারীরা! নিঃসন্দেহে গাজায় ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আজ তোমরা যা কিছু করছো, সেটাই তোমাদের ধ্বংস নিশ্চিত করে দিচ্ছে। তোমরা আজ গাজায় যা কিছু করছো, ঠিক সেরকমটাই আল্লাহর ইচ্ছায় দুনিয়া আখিরাতে তোমাদের সঙ্গে করা হবে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর শপথ! ইনশাআল্লাহ! তোমরা অবরুদ্ধ হবে, ক্ষুধায় পিপাসায় কাতর হবে, তোমরা বিতাড়িত হবে, তোমাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَقُلۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِۦ لِبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ٱسۡكُنُواْ ٱلۡأَرۡضَ فَإِذَا جَآءَ وَعۡدُ ٱلۡأٓخِرَةِ جِئۡنَا بِكُمۡ لَفِيفٗا
“আর আমি এরপর বনি ইসরাঈলকে বললাম, ‘এখন জমিনে বসবাস কর এবং যখন আখিরাতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে তখন তোমাদের সবাইকে আমি একত্র করে উপস্থিত করব।” [সূরাতুল ইসরা ১৭:১০৪]
إِنۡ أَحۡسَنتُمۡ أَحۡسَنتُمۡ لِأَنفُسِكُمۡۖ وَإِنۡ أَسَأۡتُمۡ فَلَهَاۚ فَإِذَا جَآءَ وَعۡدُ ٱلۡأٓخِرَةِ لِيَسُـُٔواْ وُجُوهَكُمۡ وَلِيَدۡخُلُواْ ٱلۡمَسۡجِدَ كَمَا دَخَلُوهُ أَوَّلَ مَرَّةٖ وَلِيُتَبِّرُواْ مَا عَلَوۡاْ تَتۡبِيرًا
“তোমরা সৎকাজ করলে সৎকাজ নিজেদের জন্য করবে এবং মন্দকাজ করলে তাও করবে নিজেদের জন্য। তারপর পরবর্তী নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে আমি আমার বান্দাদের পাঠালাম তোমাদের মুখমণ্ডল কালিমাচ্ছন্ন করার জন্য, প্রথমবার তারা যেভাবে মসজিদে প্রবেশ করেছিল আবার সেভাবেই তাতে প্রবেশ করার জন্য এবং তারা যা অধিকার করেছিল তা সম্পুর্ণভাবে ধ্বংস করার জন্য।” [সূরাতুল ইসরা ১৭:০৭]
আর গাজার ভাইদের ব্যাপারে আল্লাহ পাকের এই বাণী উল্লেখ করতে হয়:
قُلۡ هَلۡ تَرَبَّصُونَ بِنَآ إِلَّآ إِحۡدَى ٱلۡحُسۡنَيَيۡنِۖ وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ أَن يُصِيبَكُمُ ٱللَّهُ بِعَذَابٖ مِّنۡ عِندِهِۦٓ أَوۡ بِأَيۡدِينَاۖ فَتَرَبَّصُوٓاْ إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ
“বলুন, তোমরা আমাদের দুটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করছ এবং আমরা প্রতীক্ষা করছি যে, আল্লাহ্ তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন সরাসরি নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।” [সূরাতুত তাওবা ০৯:৫২]
ইহুদীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না। কারণ সময়টা এখন একে অপরকে শেষ করার। তাদের জন্য ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতির এখন কোনো সুযোগ নেই। দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময়ের প্রচেষ্টা তাদের সামনে গণহত্যার সুযোগ আরও উন্মুক্ত করে দেবে। তাদের ঐতিহাসিক জীবনবৃত্তান্ত তাদের আগামী দিনের পরিণতির কথা জানান দিচ্ছে। আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম নদীর উভয় তীরে লালিত পালিত হয়েছেন। আল্লাহর চোখের সামনে তিনি বেড়ে উঠেছেন। তাঁর হাতে অনেক নিদর্শন ও অলৌকিক বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি স্বজাতিকে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। আপন লাঠির মাধ্যমে সমুদ্রকে বিদীর্ণ করেছেন। এত কিছু সত্ত্বেও বাছুর পূজারিরা তাঁর নাফরমানি করেছে। তাঁর অবাধ্য হয়েছে। তীহ প্রান্তরে মৃত্যুবরণ করা ছাড়া তারা নিজেদের নষ্ট চরিত্র থেকে বের হতে পারেনি। তারাই হলো বনি ইসরাঈল, যাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। তিনি তাদের উপর গজব নাযিল করেছেন। তাদের অন্তরকে কঠোর বানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَبِمَا نَقۡضِهِم مِّيثَٰقَهُمۡ لَعَنَّٰهُمۡ وَجَعَلۡنَا قُلُوبَهُمۡ قَٰسِيَةٗۖ يُحَرِّفُونَ ٱلۡكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِۦ وَنَسُواْ حَظّٗا مِّمَّا ذُكِّرُواْ بِهِۦۚ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىٰ خَآئِنَةٖ مِّنۡهُمۡ إِلَّا قَلِيلٗا مِّنۡهُمۡۖ فَٱعۡفُ عَنۡهُمۡ وَٱصۡفَحۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ
“অতঃপর তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য আমি তাদেরকে লানত করেছি ও তাদের হৃদয় কঠিন করেছি; তারা শব্দগুলোকে আপন স্থান থেকে বিকৃত করে এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তার একাংশ তারা ভুলে গেছে। আর আপনি সবসময় তাদের অল্প সংখ্যক ছাড়া সকলকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখতে পাবেন, কাজেই তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মুহসিনদেরকে ভালোবাসেন।” [সূরা আল মায়েদা ০৫:১৩]
অন্যত্র আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন:
(ধারাবাহিকভাবে সূরা মায়েদার কয়েকটি আয়াত অর্থসহ নিম্নরূপ
يَسۡئلُكَ أَهۡلُ ٱلۡكِتَٰبِ أَن تُنَزِّلَ عَلَيۡهِمۡ كِتَٰبٗا مِّنَ ٱلسَّمَآءِۚ فَقَدۡ سَأَلُواْ مُوسَىٰٓ أَكۡبَرَ مِن ذَٰلِكَ فَقَالُوٓاْ أَرِنَا ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ بِظُلۡمِهِمۡۚ ثُمَّ ٱتَّخَذُواْ ٱلۡعِجۡلَ مِنۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡبَيِّنَٰتُ فَعَفَوۡنَا عَن ذَٰلِكَۚ وَءَاتَيۡنَا مُوسَىٰ سُلۡطَٰنٗا مُّبِينٗا
“কিতাবীগণ আপনার কাছে তাদের জন্য আসমান হতে একটি কিতাব নাযিল করতে বলে; তারা মুসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবি করেছিল। তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও।’ ফলে তাদের সীমালংঘনের কারণে তাদেরকে বজ্র পাকড়াও করেছিল; তারপর স্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আসার পরও তারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল; অতঃপর আমি তা ক্ষমা করেছিলাম এবং আমি মুসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছিলাম।”
وَرَفَعۡنَا فَوۡقَهُمُ ٱلطُّورَ بِمِيثَٰقِهِمۡ وَقُلۡنَا لَهُمُ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡبَابَ سُجَّدٗا وَقُلۡنَا لَهُمۡ لَا تَعۡدُواْ فِي ٱلسَّبۡتِ وَأَخَذۡنَا مِنۡهُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا
“আর তাদের অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য তূর পর্বতকে আমি তাদের উপর উত্তোলন করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘নত শিরে দরজা দিয়ে প্রবেশ কর’ [১] আর আমি তাদেরকে আরও বলেছিলাম, ‘শনিবারে সীমালংঘন করো না’ এবং আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।”
فَبِمَا نَقۡضِهِم مِّيثَٰقَهُمۡ وَكُفۡرِهِم بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَقَتۡلِهِمُ ٱلۡأَنۢبِيَآءَ بِغَيۡرِ حَقّٖ وَقَوۡلِهِمۡ قُلُوبُنَا غُلۡفُۢۚ بَلۡ طَبَعَ ٱللَّهُ عَلَيۡهَا بِكُفۡرِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُونَ إِلَّا قَلِيلٗا
“অতঃপর (তারা অভিসম্পাত পেয়েছিল) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করার জন্য, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত’ তাদের এ উক্তির জন্য। বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তার উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। সুতরাং কেবল অল্প সংখ্যক লোকই ঈমান আনবে।”
وَبِكُفۡرِهِمۡ وَقَوۡلِهِمۡ عَلَىٰ مَرۡيَمَ بُهۡتَٰنًا عَظِيمٗا
“আর তাদের কুফরীর জন্য এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপবাদের জন্য।”
وَقَوۡلِهِمۡ إِنَّا قَتَلۡنَا ٱلۡمَسِيحَ عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكّٖ مِّنۡهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا
“আর ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারঈয়াম তনয় ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। অথচ তারা তাঁকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তাঁর সদৃশ করা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোনো জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাঁকে হত্যা করেনি।”
بَل رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا
“বরং আল্লাহ তাঁকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”
وَإِن مِّنۡ أَهۡلِ ٱلۡكِتَٰبِ إِلَّا لَيُؤۡمِنَنَّ بِهِۦ قَبۡلَ مَوۡتِهِۦۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكُونُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا
“কিতাবীদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে তাঁর উপর ঈমান আনবেই। আর কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন।”
فَبِظُلۡمٖ مِّنَ ٱلَّذِينَ هَادُواْ حَرَّمۡنَا عَلَيۡهِمۡ طَيِّبَٰتٍ أُحِلَّتۡ لَهُمۡ وَبِصَدِّهِمۡ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ كَثِيرٗا
“সুতরাং ভালো ভালো যা ইহুদীদের জন্য হালাল ছিল আমি তা তাদের জন্য হারাম করেছিলাম তাদের জুলুমের জন্য এবং আল্লাহর পথ থেকে অনেককে বাঁধা দেয়ার জন্য।”
وَأَخۡذِهِمُ ٱلرِّبَوٰاْ وَقَدۡ نُهُواْ عَنۡهُ وَأَكۡلِهِمۡ أَمۡوَٰلَ ٱلنَّاسِ بِٱلۡبَٰطِلِۚ وَأَعۡتَدۡنَا لِلۡكَٰفِرِينَ مِنۡهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا
“আর তাদের সুদ গ্রহণের কারণে, অথচ তা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল; এবং অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ গ্রাস করার কারণে। আর আমি তাদের মধ্য হতে কাফেরদের জন্য কষ্টদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করেছি।” (সূরা আন নিসা ০৪:১৫৩-১৬১)
আসন্ন অবস্থার ভয়াবহতার মাত্রা যে বুঝতে পারে না, তার উচিত নিজের পিঠকে জায়নিস্টদের চাবুক গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করা।
আগামী দিনের রাতের ব্যাপারে আমরা এ কথা জোর দিয়ে বলতে চাই, ইহুদীবাদী এবং পৌত্তলিক যারাই মুসলমানদের ধ্বংস কিংবা দুর্বল করার জন্য এবং বিশ্বের নেতৃত্ব ও পরিচালনায় মুসলিমদের ভূমিকা পালন থেকে বিরত রাখার জন্য বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, তার কারণে মানবতা দুটি জিনিস হারাবে: জীবন এবং বিবেক।
***
[1] দ্য ইন্টারসেপ্ট ওয়েবসাইটের (The Intercept) একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বেসামরিক নাগরিকদের হামলা করা এবং তাদের হত্যাকে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত করাটা জবাবদিহিতার ভয় কিংবা পরিণামের আশঙ্কা ছাড়াই জায়নবাদী সংঘের জন্য একই পথ অনুসরণ করার অনুপ্রেরণা এবং উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে এবং করে যাচ্ছে? ওই নিবন্ধের উদ্ধৃতাংশ: জাপানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬৭টি শহর আক্রমণ করে, ১৮০ বর্গমাইল পুড়িয়ে দেয়, ৬০,০০০ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করে, ৮.৫ মিলিয়ন মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে, হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলে এক মুহূর্তে প্রায় ২১০,০০০ মানুষকে হত্যা করে। কোরিয়ায় এয়ার ফোর্স জেনারেল কার্টিস লেমে দম্ভ করে বলেছিল যে, আমেরিকা এক মিলিয়নেরও বেশি কোরিয়ানকে হত্যা করেছে এবং কয়েক মিলিয়নকে তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করেছে। ভিয়েতনামে আমেরিকা ৩০ বিলিয়ন পাউন্ড শেল ফেলেছে, যার ফলে ২১ মিলিয়ন ক্রেটার (গর্ত) হয়েছে। কম্বোডিয়ায় আমেরিকা প্রায় ১৫০,০০০ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এবং লাওসে ২ মিলিয়ন টনেরও বেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বোমা হামলা করেছে- তাহলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কত ছিল? সাতটি মুসলিম অঞ্চলে (আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, পাকিস্তান, সোমালিয়া, সিরিয়া এবং ইয়েমেন) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৪৮,০০০ জন পর্যন্ত মুসলমানকে হত্যা করেছে (প্রকৃত সংখ্যা থেকে এটি অনেক কম)। Airwars (এয়ারওয়ারস) নামক যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি বিমান হামলা পর্যবেক্ষণ গ্রুপের ২০২১ সালের বিশ্লেষণ অনুসারে উপর্যুক্ত পরিসংখ্যান এসেছে।
লিঙ্ক
[https://theintercept.com/2023/11/12/amer/ica-wars-bombing-killing-civilians]
[2] ‘বিরোধী দল’ শব্দটি সে অর্থ বোঝায় না, যা আমি বোঝাতে চাই। কারণ দুটি পন্থার একটি অপরটির বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া কখনোই সহাবস্থান সম্ভব নয়। বিশ্বের পার্লামেন্টগুলোতে যা ঘটছে তা হলো অভিন্ন পন্থা ও পদ্ধতির ভেতর থেকে বিভিন্নভাবে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তাদের পন্থা ও ফর্মুলা ভ্রান্ত হওয়ার কারণে প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রত্যেকে নিজের স্বার্থ এবং নিজের সমর্থকদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা করে, কিন্তু প্রকৃত বিরোধিতার অর্থ: সামগ্রিক ও ব্যাপক পরিবর্তন। সংসদে বসে সামগ্রিক ও আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সংসদের নিয়ম-কানুনের অধীন হওয়াও বৈধ নয়। কারণ তারা শুধু নিজেদের পন্থা চাপিয়ে দেয়ার জন্যই অপজিশন পার্টির কথা বলে।
Comment