بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيم
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহঃ স্থানীয় ভাবে (Locally) নাকি বৈশ্বিক ভাবে (Globally) ?
জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহঃ স্থানীয় ভাবে (Locally) নাকি বৈশ্বিক ভাবে (Globally) ?
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তা' আলার জন্য যিনি তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে আমাদেরকে জিহাদের পথে শামিল করেছেন। সালাত ও সালাম প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর প্রতি যিনি আমাদেরকে সেই জিহাদ শিক্ষা দিয়েছেন।
বেশি দিন আগের কথা নয়, নব্বইয়ের দশক পর্যন্তও উপমহাদেশে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নিয়ে আওয়াজ তোলার মানুষ ছিল হাতে গোনা, আজ একে ঘিরে ঘুমন্ত সে উম্মাহ'র মাঝে যে অভাবনীয় আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে তা সত্যিই অন্তর প্রশান্ত করে, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। যদিও জিহাদ বিদ্বেষী উলামায়ে-স্যুগণ নানা ধরনের শুবহাত তৈরি করে রেখেছেন, তারপরও উম্মাহ'র যুবক ভাইয়েরা দ্বীন এর জন্য তাদের ফিতরাতের ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি। একবিংশ শতাব্দীর দুনিয়ায় আসবাবী জংগলে বসেও চৌদ্দশত বছরের পূরনো ন্যায় প্রতিষ্ঠার পথ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কে তারা ঠিকই চিনে নিয়েছেন ! ওয়া লিল্লাহিল হামদ। এখন সময়ের দাবিটি হলঃ কিভাবে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কে সঠিক উপায়ে আঞ্জাম দেওয়া যাবে, এর স্ট্রাটেজি বা কৌশল কি হবে না হবে ইত্যাকার বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপক আঙ্গিকে গবেষণা করা।
আমরা এই রিসালহটিতে স্থানীয় ভাবে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বনাম বৈশ্বিক ভাবে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ নিয়ে খানিকটা আলোকপাত করতে চেষ্টা করেছি, আল্লাহ তাওফিক দাতা। একটি লিস্ট করতে চেষ্টা করেছি কি কি কারণে বৈশ্বিক আঙ্গিকে জিহাদ স্থানীয় জিহাদের উপর প্রাধান্য পেতে পারে, উম্মাহ'র জন্য কোনটি বেশি উপকারী, শরীয়াহ এবং দুনিয়াবি যুক্তি-বুদ্ধি উভয়ের বিচারে কোনটি সুন্নাহ'র বেশি কাছে হয়। নিশ্চয়ই সঠিক জ্ঞানের মালিক মহান আল্লাহ তা'আলা।
আলহামদুলিল্লাহ, বাংলা ভাষাভাষী অধিকাংশ মুজাহিদীণ বা জিহাদ সমর্থক ভাইগণ বৈশ্বিক জিহাদের জরুরাত বা গুরুত্বকে অনুধাবন করেন তবে সবাই সমানভাবে হয়ত নয় - অনেকের শুবহাত রয়েছে। তাই এর বুঝগুলো সহজ করে তুলে ধরা দরকার যাতে সেগুলো কেটে যায়, কারণ অনেক সময় দেখা যায় গ্লোবাল বা বৈশ্বিক পরিকল্পনার আওতায় কাজ করলে কোন কোন এলাকায় সামনা-সামনি যুদ্ধ থাকে না। এতে অনেক ভাইয়ের মনে কষ্ট থাকে - কেন আমরা কাজ করছি না - কেন আমরা ক্বিতাল করছি না, এই ভাবে বসে থেকে লজিস্টিক বা এ্যাডমিন (প্রশাসনিক) কাজে ব্যস্ত থেকে কি ফায়দা, কেনইবা এখনি দেশে শরিয়াহ কায়েমের চেষ্টা করব না, কেন যা পারি তাই দিয়ে তাগুতের বিরুদ্ধে চেষ্টা করে দেখব না? কিছু ভাই যারা গ্লোবাল জিহাদের তুলনায় লোকাল জিহাদের ধারনাকে অগ্রাধিকার দেন তাদের একটা চিন্তা হল - এক জায়গায় আমরা দাঁড়াতে পারলে তো বাকি উম্মাহ সেই জায়গাকে কেন্দ্র করে আগাত পারবে - তো সেই জায়গাটা 'বাংলাদেশ' নয় কেন ? কেন আমাদেরকে বৈশ্বিক ভাবে যুক্ত থাকতে হবে বা ভিন-দেশের শাইখদের সাথে পরামর্শ করে এখানে কাজকর্ম করতে হবে, যারা এখানে কখনো আসেননি বা দেখেননি, এখানকার হাল হাকিকাত জানেন না সেভাবে ? ইত্যাদি ইত্যাদি... এবং এই প্রশ্ন গুলোর জন্ম হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তো আসলে, ক্বিতাল এর উন্মাদনা ও অসম শক্তির এই দীর্ঘ যুদ্ধে টিকে থাকার মাঝে ভারসাম্যের জায়গা গুলো সাফ না থাকলে বা মাঝে মাঝে মাথায় না খেলালে একসময় হতাশা এসে পড়তেই পারে। তাই সেই ব্যাসিক/বুনিয়াদি পুরাতন কথাগুলোই আবারো নতুন মোড়কে নতুন - পুরাতন সকলের খেদমতে পেশ করতে চেষ্টা করা হল, চেষ্টা করা হল চিন্তার সূত্রগুলোকে সংক্ষেপে একত্রিত করতে, ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
প্রথমতঃ ইসলামের প্রায় সকল কিছুতে এক উম্মাহ হিসাবে ভাবানাই তো সুন্নাহ, আর জিহাদের ক্ষেত্রে তো বটেইঃ
মুসলিম উম্মাহ এক দেহের মত। ধর্মীয়, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামরিক সকল ক্ষেত্রেই এক উম্মাহ হিসাবে মুসলমানদের একতাবদ্ধ থাকা চাই, আর মুজাহিদগণের চিন্তা-চেতনা, কৌশল ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় তো এর প্রতিফলন আরও বেশি থাকা চাই - এটা শরীয়াহর চাওয়া। কেউ একে উপেক্ষা করে যার যার পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করলে রাহমাহ ও বারাকাহ থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভাবনা প্রবল। হ্যাঁ এমন হতেই পারে যে ফিলিস্তিনের জিহাদ তাদের জাতীয়তা রক্ষা নাকি ইসলাম রক্ষার নিমিত্তে তা স্পষ্ট নয় অনেক অঞ্চলে, কিংবা সিরিয়া, ইয়েমেনে যুদ্ধরত মুসলিম দল গুলো বহু বিভক্ত হয়ে পড়েছে, কিন্তু তাই বলে এক উম্মাহ'র কনসেপ্ট থেকে বের হয়ে এসে আমাদের দেশে, শুধু আমাদের সীমানায়, আমাদের তাগুত সরকারের সাথে লড়াইয়ের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী না আগানোই উচিত - এতে করে একাধারে নিপীড়িত সেই মাজলুম ভাই বোনদের প্রতি যথাযথ আন্তরিকতা প্রদর্শন যেমন ব্যাহত হয়, কৌশলগত দিক দিয়েও দুর্বলতা প্রকাশ পায়। আমাদেরকে ডিভাইড এন্ড রুল করতে ওদের আরও বেশি সুবিধা হয়।
অপর দিকে এক উম্মাহ হিসাবে থাকলেই আমরা আমাদের স্বল্প সক্ষমতা ও সম্পদের সর্বোত্তম ব্যাবহার নিশ্চিত করতে পারব - ইনশাআল্লাহু তা'আলাঃ
দেখুন, সারা বিশ্বে কুফফার দের তুলনায় মুজাহিদিনদের হাতে কোন আসবাবি শক্তিই নেই বলা চলে, যা রয়েছে - নূন্যতম, সুতরাং আমাদের কাজগুলো অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে করা চাই, কেউ এটা না মানলে তিনি আসলে হয়ত বাস্তবতা আমলে নিচ্ছেন না। সমান্য নিচের উইকি লিঙ্ক দুটোতে চোখ বুলালেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, কি পরিমাণ অসম শক্তির এই যুদ্ধ।
https://en.wikipedia.org/wiki/Al-Qaeda এই লিঙ্ক মোতাবেক সারা বিশ্বে আল-কায়েদার মোট মুজাহিদ বা সদস্য সংখ্যা ৩১,৪০০ থেকে ৫৭,৬০০ বা ধরলাম ৬০, ০০০। অথচ,
https://en.wikipedia.org/wiki/NATO এখানে দেখুন ৩০ টি উন্নত রাষ্ট্রের জোটভুক্ত বাহিনী মিলে অবস্থান নিয়েছে আলকায়েদার বিপরীত শিবিরে যাদের সম্মিলিত সামরিক খরচ সারা বিশ্বে সামরিক খরচের ৭০ ভাগ! এগুলোর বাইরে ভারত, চায়না ইত্যাদি'র মত আরও ছোট বড় মুরতাদ সরকারগুলোর বাহিনীগুলো তো বাদই রইল।
এখন এই বিশাল শক্তির বিরুদ্ধে আপনাকে লড়াই করতে হলে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলিমদের প্রতি দরদী ছোট বড় সকলকে সাথে না নিলে আসলে আগানো কি সম্ভব মনে করনে, আল্লাহু আলাম? জোটের বিপরীতে জোট গঠনের কৌশলও শরিয়তে গুরত্ব পেয়েছে, রাসুল (সাঃ) এর সীরাহতেও আমরা তা দেখি এবং সাধারণ যুদ্ধের নিয়ম-নীতির দিক থেকে চিন্তা করলেও, শত্রু যদি আপনার বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয় এবং জোট গঠন করে, পাল্টা জবাবে আপনারও উচিত শক্তি বৃদ্ধিকল্পে সমমনা দল সমূহের সাথে জোট গঠন করা ( নিজেদের আকিদা মানহাজ কে সমুন্নত রেখে) । ।
সম্মিলিত ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রচেষ্টা দরকার। শুধু সমান সমান আসবাব দিয়েই হয়ত মুরতাদদের মোকাবিলা করা দরকার হবে না, জায়গামত ও কৌশলগত একটি ছোট্ট আক্রমণই ওদের বড় বড় ব্যাটালিয়ান বা ব্রিগেড বা ডিভিশনকে এঙ্গেজ রাখতে পারে আল্লাহ'র ইচ্ছায়। আর মনে রাখুন, যুদ্ধে রক্তের বদলে রক্ত, মাথার বদলে মাথা তো চাই - পাশাপাশি শত্রু পক্ষকে অর্থনৈতিক দিক থেকেও পঙ্গু করা বা তাকে ভুল পথে ব্যাস্ত রেখে হয়রান করার মধ্য দিয়েও উদ্দেশ্য হাসিল সম্ভব, বি ইযনিল্লাহ। আর সেটা তখনি সম্ভব হবে যখন আপনি সারা পৃথিবীতে শত্রুকে একটি পাথর হলেও ছুড়ে মারবেন বা একটি গ্রেনেড থাকলেও ছুড়ে মারবেন এবং ঘোষণা দিবেন, এটা আমার খোরাসানে বা শামে বা ফিলিস্তিনের ভাইদের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ। তখন দেখবেন সে চারদিক থেকে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। তার হাতীর মত বড় বড় সৈন্য দলের নিরাপত্তা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে - এবং আস্তে ধীরে সে নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে , বি ইযনিল্লাহ।
এখান থেকেই ভাবনা চলে আসে, তাহলে আমাদের যুদ্ধের কৌশলটি তাহলে কি? 'সম্মুখ সমর', নাকি 'গেরিলা যুদ্ধ', নাকি 'যার যা আছে তাই নিয়ে ইচ্ছা মত কিছু করা’?
জ্বি, গেরিলা কায়াদাকেই আমাদের বেছে নিতে হচ্ছে ইনশাআল্লাহু তা'আলা। কারণ কুফফারদের আসবাবী শক্তি অনেক বেশি এটা বলাই বাহুল্য - দ্বিমত করার উপায় নেই। আর বেশি শক্তির শত্রুকে হারাতে হলে একমাত্র পথ গেরিলা ওয়ারফেয়ার - যুগে যুগে এমনই দেখা গেছে, এটা সামরিক বিজ্ঞান যারা জানেন তাদের নিকট ব্যাখ্যা করা দরকার নেই।
অপরদিকে 'সম্মুখ সমর বা কনভেনশনাল ওয়ারফেয়ারেও আমরা যেতে যে পারব না এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের সে সামর্থ নেই। বাহিনী বাহিনীতে যুদ্ধ হলে সম্মুখ সমর বা নুন্যতম একটি এলাকা দখলে রেখে রেগুলার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া - এটিও সব জায়গায় সম্ভব নয়।
কুফফাররা চায়না কোথাওই ইসলাম দাড়িয়ে যাক, তাই যেখানেই আপনি দাঁড়াতে চান সেখানেই তারা হাজির হবে। আগে হয়ত একটা যুগ ছিল, কোন পাহাড়ে গিয়ে একটা গ্রামের মধ্যে বা কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে শরীয়াহ কায়েম করে ফেললে দুনিয়ার তেমন কেউ জানত না, অথবা সেটা বাকিদের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলত না। তখন কুফফাররা কিছুটা মেনেও নিত, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ইসলামকে তারা রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় বা মতাদর্শগত প্রায় সকল দিক দিয়েই থ্রেট হিসাবে দেখে। যার ফলে যেখানেই কেউ শরীয়াহ কায়েম করুক না কেন কুফফাররা আগ বাড়িয়ে সেখানে নাক গলাচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে এবং হবে - এটাই তাদের ফরেন পলিসি / স্ট্রাটেজি। যার ফলে আপনার আমার লোকাল ( স্থানীয়) যুদ্ধ আর আদতে স্থানীয় থাকে না।
দুনিয়ার কোন এক জায়গায় পাথর ছুড়লেও পুরো কুফফার দুনিয়ায় খবর হয়ে যায়। কুফফাররা সজাগ হয়ে যায়। অতএব আসলে স্থানীয় জিহাদের কোন সুযোগ কোথাও নেই সেভাবে, আপনি যাই করুন না কেন সেটার একটা গ্লোবাল / বৈশ্বিক নিউজ (খবর) হয় এবং কুফফাররা একে ঐ একই লেবেল এঁটে প্রচার করে - ' সন্ত্রাসী কর্ম '। অতএব আপনি স্থানীয় ভাবে যুদ্ধ করে, স্থানীয় সরকার ফেলে দিয়ে সেখানে যে নিজেদের শরীয়া প্রতিষ্ঠা করে লম্বা সময় টিকে থাকতে পারছেন এমনটা দেখা যাচ্ছে না - বাস্তবতা তাই বলছে। যে কারণে এক কথায় বলাই যায় যে, স্থানীয় জিহাদের ধারনা এখন আর কাজ করছে না।
এখন যেহেতু গ্লোবাল বা রিজিওনাল ( বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক) কুফফার শক্তি শরিঈয়াহ প্রতিষ্ঠার বিপরীতে নিজেদেরকে জড়াচ্ছে তাহলে আমাদেরকেও ভাবতে হবে আমরা কখন তাদের বিরুদ্ধে গ্লোবালি / বৈশ্বিক আংগিকে অবতীর্ন হব? ‘ কখন ‘ ?
অপশন ক - যুগ সমান একটা লম্বা সময় ধরে স্থানীয় তাগুত / কুফফার শক্তির সাথে যুদ্ধ করার পর ? অর্থাৎ যখন আমাদের স্থানীয় ভাবে পায়ের নিচে কিছুটা মাটি হবে, শরীয়াহ ঘোষণা দেওয়া হবে কিংবা ইসলামিক স্টেট ঘোষণা দেওয়া হবে তখন?
নাকি,
অপশন খ - এখনি? উম্মাহ'র বৈশ্বিক শত্রুকে এখনি কেন বৈশ্বিক ভাবে মোকাবিলার পরিকল্পনায় নেব না?
এটা নিয়ে কিছুটা চিন্তা করলে দেখা যাবে, যদি 'ক' নিয়ে আগানো হয়, কুফফার শত্রু পক্ষ অতদিন অপেক্ষা করবে না। আমরা স্থানীয়ভাবে লড়তে লড়তেই দেখা যাবে ওরা এসে যুক্ত হয়েছে , বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে স্থানীয় তাগুত বাহিনীকে। যেমন ধরুন বাংলাদেশে যদি আল কায়দা সম্মুখ সমর শুরু করে, ভারত কিন্তু বসে বসে পুরো ৫ বা ১০ বছর ধরে শুধু পর্যবেক্ষন করে যাবে না বা একটা দৃশ্যমান ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা করা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবে সে আশায় গুড়েবালি। এর অনেক আগেই তারা বিভিন্ন ছুতায় বিভিন্ন আবরণে এসে জুড়ে বসতে চেষ্টা করবেই করবে। তারা এটাকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক একটি থ্রেট হিসাবে দেখবে। এছাড়া ইউ এন , ন্যাটো বা ইউ এস দূর থেকে ভারতকে উসকে দেবে - এক ধরনের সুপেরিওরিটি কমপ্লেক্স ধরিয়ে দিয়ে বলবে তুমি ওখানে আঞ্চলিক সুপার পাওয়ার, তোমার পেটের মধ্যে বসে কিছু জঙ্গি সন্ত্রাসী শরীয়া কায়েম করে ফেলছে তুমি কি কর? অতএব, দাদারা আসলে প্রথমদিন থেকেই ইনভল্ভ (যুক্ত) হবে। বাধা দিতে থাকবে।
অতএব আমার যে বৈশ্বিক বা আঞ্চলিক শত্রু আমার সাথে প্রথমদিন থেকেই লড়াইয়ে লিপ্ত হতে চায় বা প্রস্তুত থাকে, আমরা কেন আমাদের পরিকল্পনায় তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যুগ অবধি অপেক্ষা করব? অর্থাৎ, আগে লোকাল যুদ্ধ করি, পরে ওরা আসলে দেখা যাবে এমন ভাবে ভাবব?
অপশন 'খ’ কে বেছে নেওয়াই আমাদের বুদ্ধিমানের কাজ হবে ইনশাআল্লাহু তা'আলা। এখন থেকেই আমাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আগানো লাভজনক হবে, বি ইযনিল্লাহ।
' যুদ্ধক্ষেত্রকে শত্রুর মাটিতে নেওয়ার চেষ্টা কর' একটি বহুল প্রচলিত সামরিক নীতি / স্ট্রাটেজি। আমেরিকা তাই করে আসছে। সে তার মাটি নিরাপদ রাখে, বোমা ফেলা বা গোলাগুলি যা করার অন্যের মাটিতে এসে করে। তো আল্লাহ'র ইচ্ছায় শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ এরই প্রতিশোধ নিতে আমেরিকার মাটিতেই আঘাত হেনেছিলেন, যুদ্ধ ক্ষেত্রকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন, এই সামরিক নীতি অনুযায়ীও যদি চিন্তা করি, তবুও দেখুন- আক্রমণই যেহেতু সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা - আর তাই আমরা শুরু থেকেই আমাদের বৈশ্বিক / বা আঞ্চলিক শত্রু (ভারত কে) আমাদের আক্রমনের নিশানায় রাখাই অবধারিত নয় কি বাংলাদেশ কে (লোকাল টার্গেট কে) নিশানায় নেওয়ার বদলে? বি ইযনিল্লাহ। হিন্দকে নাস্তানাবুদ করতে পারলে বাংলাদেশ আপনাআপনি আমাদের হাতের মুঠোয় ইনশাআল্লাহু তা' আলা।
এখন তাহলে বৈশ্বিক গেরিলা ওয়ারফেয়ার এর সুরতটি কি?
সেই ষাটের দশকের আরব ইসরাইল ওয়ার থেকে শুরু করে মিশর বা ফিলিস্তিনের জিহাদী আন্দোলন পরিক্রমণ করে আশির দশক থেকে নববই এর দশক পর্যন্ত বিস্তৃত আফগান যুদ্ধ ও ততপরবর্তি জিহাদী ময়দান কে যারা আজ অবধি কামড়ে পরে আছেন, সেই বিদগ্ধ শাইখদের সমর্থিত যুদ্ধকৌশল আজ বৈশ্বিক জিহাদের কৌশল হিসাবে প্রতিভাত - সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ। এতে মুসলিম ভূমি গুলো দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ ১। অগ্রগণ্য, ২। সাহায্যকারী । সংক্ষেপে বলা যায়, সম্মুখ গেরিলা ওয়ারফেয়ার হবে অগ্রগণ্য ভূমি গুলোতে আর বাকি ভূমি গুলো থেকে হবে রসদ ও যোদ্ধা সাপ্লাই এবং প্রয়োজনীয় মাত্রার ক্রমঃশক্তিক্ষয় মূলক অপারেশন। বাংলাদেশে আমরা সাহায্যকারী ভূমির কাজটি আপাততঃ করতে পারি ইনশাআল্লাহ, যতদিন না স্ট্রাটেজিতে পরিবর্তন আসে। বি ইযনিল্লাহ। একটা পর্যায়ে অগ্রগণ্য ভূমিগুলো দাড়িয়ে গেলে তাদেকে ঘিরে বাকি সাহায্যকারী ভূমিগুলোর দিকে বিজয় প্রসারিত হবে বি ইযনিল্লাহ ।
আর দেখুন, অভিজ্ঞ ও কালের অগ্নি পরীক্ষায় টিকে থাকাদের স্ট্রাটেজিই (তথা বৈশ্বিক কৌশলই ) কি আমাদের অনুসরণ করা উচিত নয় ? জিহাদের কলা-কৌশল তো তাদের টাই অনুসরণ করা চাই যারা যুদ্ধের ময়দানে পুড়তে পুড়তে খাটি সোনা হয়েছেন, হিরকতুল্য জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন এবং যুদ্ধের কাঠিন্যের মাঝে সশরীরে থেকে মুজাহিদ উলামা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। আর নৈরাজ্য ব্যাবস্থাপনা (ম্যানেজমেন্ট অফ স্যাভেজারি) বই , গ্লোবাল ইসলামিক রেজিস্টেন্স কল, সাধারণ দিকনির্দেশনা ২০১৩ কিংবা উপমহাদেশে জিহাদের আচরণবিধি ২০১৭ ইত্যাদি - এগুলো সেই অমূল্য যুদ্ধজ্ঞানেরই বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ ইতিমধ্যে কার্যকরি বৈশ্বিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েই আছে, এখন আমাদের শুধু উচিত সেগুলো পড়া, বোঝা ও সে অনুযায়ী আমল করা। এটা ঠিক যে স্থানীয় ভাবে কিছু এ্যাডজাস্টমেন্ট / বা কাস্টমাইজেশন করা দরকার হতেই পারে, করার অনুমতিও রয়েছে, কেবল খেয়াল রাখতে হবে প্রতিটি ছোট বড় আউটপুট যেন মুল সামগ্রিক জিহাদকে শক্তি দেয় সেভাবে পরামর্শ করে কার্যক্রম গুলো করা, আল্লাহ তাওফিক দাতা।
এখন আসা যাক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে। গেরিলা যুদ্ধ সফলভাবে পরিচালনার জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন তার অধিকাংশই এখন বাংলাদেশে অনুপস্থিত। শাইখ আবু মুসআব ও শাইখ আবু বাকর নাজি -এর যথাক্রমে দাওয়াতুল মুকাওয়াম ( গ্লোবাল ইসলামিক রেজিস্টেন্স কল), ইদারাতুত তাওয়াহহুশ (নৈরাজ্য ব্যাবস্থাপনা - ম্যানেজমেন্ট অফ স্যাভেজারি) বইতে এবং শাইখ ইউসুফ ইউয়াইরি কিংবা শাইখ হিকমাতুল্লাহ লোদি রাহিমাহুল্লাহ দের লেখা 'গেরিলা ওয়ারফেয়ার' সংক্রান্ত বইগুলোতে এই উপাদান সমূহ সম্পর্কে আমার যা জানতে পারি সেখান থেকে সংক্ষেপে বাংলাদেশের ৪টি মৌলিক দুর্বলতার কথা উল্লেখ করতে পারি - যেসবের কারনে বাংলাদেশ অগ্রগন্য ভূমি হিসেবে এই মূহুর্তে বিবেচিত হতে পারছে না, যেমনঃ
১। প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চল না হওয়া
২। অস্ত্রের সরবরাহ না থাকা
৩। নিরাপদ আশ্রয়স্থলের অনুপস্থিতি
৪। মানুষের মাঝে যুদ্ধংদেহী মনোভাব তথা marshal spirit এর অনুপস্থিতি
তাহলে প্রশ্ন এসে যায়, এই ভূমিকে এবং এর রিসোর্সকে আমরা কিভাবে জিহাদের জন্য বেস্ট ইউটিলাইজ করতে পারি? যেখানে জিহাদ আমাদের জন্য ফরযে আইন হয়ে আছে! আর হিজরত ও যখন দরকার হচ্ছে না (শাইখগণ যেতে উৎসাহ দিচ্ছেন না)?
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এখানে
১। সাহায্যকারী ভূমির ভূমিকা পালন করতে পারি ইনশাআল্লাহু তা'আলা এবং আনে- ওয়ালা মালহামার জন্য নিজেদের নিয়ত কে সাফ করে নিয়ে প্রস্ততি চালিয়ে যেতে পারি ইনশাআল্লাহ। অর্থাৎ -
ক। দাওয়াহ এর মাধ্যমে ( মিডিয়া শামিল) উম্মাহ কে জাগ্রত করব যা বাংলাদেশ সহ হিন্দের মাটিতে প্রসারিত হবে ইনশাআল্লাহু তা'আলা
খ। প্রত্যেক সামর্থবান ব্যাক্তি আসকারী ( যুদ্ধ সংক্রান্ত) ট্রেনিং নিয়ে রাখব যেন আদেশ বা সুযোগ হইবা মাত্রই ঝাপাইয়া পড়া যায়,
গ। দাওয়া বান্ধব ও সামর্থের সাথে সমঞ্জস্য রেখে তাগুতের উপর ক্রমঃশক্তি ক্ষয়ের অপারেশন করব এবং
ঘ। অগ্রগণ্য রাষ্ট্রে জনবল ও সাহায্য পাঠাব বি ইযনিল্লাহ।
ঙ। রিসার্চ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করতে পারব,
চ। হ্যাকিং এর জগতে একটি বিরাট অবদান রাখতে পারব চাইলে ইনশাআল্লাহ... ইত্যাদি ।
২। আঞ্চলিক সাপের মাথা হিন্দকে নিশানায় নিয়ে হিন্দে হারানো মুসলিম শাসন ফিরিয়ে আনব ইনশাআল্লাহুত'আলা।
আমার দেশ, আমার সীমানা, আমেরিকা ফার্স্ট ইত্যাদি ধরনের জাতীয়তাবাদি ধারনা আসলে কুফফারদের সেলফ সেন্টারড - স্বার্থপর, মাথামোটা ও নাপাক চিন্তার ফসল। এতে করে কেবল পারস্পরিক হানাহানি এবং এক রাষ্ট্র আর এক রাষ্ট্রকে কিভাবে টেক্কা দিবে তার চাণক্য বোল-চাল প্রমোট করা হয়। বাকি হ্যাঁ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজে বা কমান্ড এ্যান্ড কন্ট্রোলে হয়ত কিছু সুবিধা হলেও হতে পারে কিন্তু এক রাষ্ট্রের সাথে আর এক রাষ্ট্রের যে চরম ধন বৈষম্য তৈরি হয় এবং তা কিকরে পৃথিবীকে শ্রেনীবিভাজিত অবাসযোগ্য গ্রহে পরিণত কওরে তা আজ স্বতঃতই দৃশ্যমান। এই বিভাজনে সকল মানুষের সমঅধিকার, সার্বজনীন মানবতা অধরাই রয়ে যায়। জাতিসঙ্ঘ দাঁড় করিয়ে একটা কিছু বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে কিন্তু তা তো স্রেফ সিন্ডিকেশন ছাড়া আর কিছু হয়নি। কোন দেশ অন্যায় করলে আছে কি তার স্বতন্ত্র কোন শক্তি ঠেকানোর - সে শুধু পেরেছে ওয়াহিদু আলা মিল্লাতু কুফর হিসাবে ইসলাম কে পদদলিত করতে। পারছে কি মিয়ানমারের মত অমুসলিম একটি দেশেরই কোন হাঙ্গামার সুরাহা করতে?
আর তাই, এই রিসালাহ'র মূল প্রতিপাদ্য অনুযায়ী, এক উম্মাহ এক শরীর হিসাবে কাজের ধারনা কে যদি আপনি সুন্নাহ হিসাবে মানেন, তাহলে উম্মাহ'র মানবসম্পদ (manpower) এবং অর্থ (Money) যেখানে সবচেয়ে বেশি জরুরী সেখানে আঞ্জাম দেওয়াই তো এর হাক্ব আদায়ের সর্বোত্তম সুরত - তা মানবেন। নিজেরা শুধু নিজেদের এলাকা বা দেশের গণ্ডিতে চিন্তা ও শক্তি সামর্থ্য আবদ্ধ রাখার বদলে একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার আওতায় প্রাইওরিটি ব্যাসিসে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করাই এই ধরনাকে উচ্চে তুলে ধরার দাবি। সঠিক জ্ঞান মাহান আল্লাহ'র নিকট।
সম্মুখ সমর ও গেরিলা যুদ্ধের বাইরে আর একটি বিষয় - কেউ জিজ্ঞেস করতে পারেনঃ 'যার যা আছে তাই নিয়ে ইচ্ছা মত কিছু করা’কেন বারণ করছেন? লোণ উলফ এর যে দুটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে সেখানে কি এটাই বলা হয়েছে না? উত্তরঃ না ভাই। খেয়াল করে দেখবেন লোণ উলফ প্রথম ইস্যুতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে - এই ধরনের এট্যাক হবে বৈশ্বিক জিহাদি ছাতার নিচে, টার্গেট গুলোও সেভাবে বলে দেওয়া। যেগুলোতে আঘাত হানলে সাপের মাথা আমেরিকা বা তার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদেরকে কোন না কোন ভাবে দূর্বল করা যাবে। নিয়ত তো থাকছেই মানসিক ভাবে আপনি যেমন যুক্ত থাকছেন বৈশ্বিক দলের সাথে - তেমনি কৌশলগত দিক থেকেও - যদিওবা তা প্রাতিষ্ঠানিক বা দৃশ্যমান না হয়।
আরও কেউ বলতে পারেনঃ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ'র ইচ্ছায় সাম্প্রতিক করোনার মত একটি আসমানি নুসরাহর কারণে কুফফাররা কি বিভিন্ন ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে না ? বিশেষ করে আগ বাড়িয়ে আর কোথাও সৈন্য মোতায়েনে সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে না কি, আর এই সুযোগে স্থানীয় জিহাদ করা কিছুটা সহজ হয়ে উঠেছে বলে কি মনে হয়না ?
নাহ, তাও আসলে মনে হয়না । একটু ভেবে দেখুন, আঞ্চলিক শক্তি হিসাবে ভারত কি বাংলাদেশে কাল থেকে শরীয়া কায়েম হতে দিবে বলে মনে করেন?
সাহায্যকারী অঞ্চলে ( অর্থাৎ সাপোর্টিং ল্যান্ডে) লোকাল জিহাদ এর এক/দুইটি উদাহরণ ও তাদের ব্যার্থতা থেকেও এর চিত্রটি ফুটে ওঠে। এমন দুটি দেশ যেমনঃ মিশর ও আলজেরিয়ার ইতিহাস নেট থেকে দেখা যেতে পারে, এখানে আলোচনা করলে রিসালাহ'র কলেবর বেশ বড় হয়ে যাবে।
পরিশেষে এটুকু বলা যায় যে, উম্মাহ'র মাঝে বিভক্তি আর নয়, আস্তে ধীরে আমরা একত্রে কাজ করব ইনশাআল্লাহ। একদল আর এক দলের পরিপূরক হিসাবে কাজ করব - আল্লাহ তাওফিক দাতা। যদি বা আপনি ভিন্ন কোন তানজীমেও থেকে থাকেন, ভিন্ন কোন কমান্ড কন্ট্রোল এর আওতায়ও থাকেন কোন সমস্যা নেই বাকি কম সে কম একই স্ট্রাটেজি তো ফলো করতেই পারি সবাই। আপনিও আমেরিকা এবং হিন্দকে টার্গেট করুন আমিও করি। কেউবা আরবান গেরিলা যুদ্ধকে বেছে নিন এবং ঘুষ খোর পুলিশকে টার্গেট করে জনগণের অন্তরে প্রশান্তি আনুন আর কেউ বা শাতিম বা সমকামীদের বা স্লিপ ওভার প্রমোট কারিদের শায়েস্তা করে মুসলিম সমাজের সাধারণ মূল্যবোধ গুলো ধরে রেখে উম্মাহ'র প্রহরী হিসাবে জাগরূক থাকুক, পাশাপাশি দাওয়াহ দিক এবং সাপোর্টিং এর আঙ্গিকে অসম যুদ্ধের মঞ্চটি নিজের পক্ষে সাজাক ( asymmetric theater of war in own favor ) বাকি লক্ষ্য একটিই - সমস্ত শক্তির লব্ধি যেন সেই একটি দিকেই প্রবাহিত হয় - ফিতনার অবসান, নির্যাতিত জীবন থেকে উম্মাহ'র মুক্তি তথা স্বপ্নের খিলাফাহ আলা মিনহাজুন নুবুয়াহ।
Comment