Announcement

Collapse
No announcement yet.

হিজবুত তাহরীর এবং খিলাফাহ : দাবী এবং বাস্তবতা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • হিজবুত তাহরীর এবং খিলাফাহ : দাবী এবং বাস্তবতা

    প্রত্যেকটা ইসলামী দল চায় অন্তত তারা যে ভূখন্ডে বসবাস করে, তা আল্লাহর বিধান দিয়ে শাসিত হোক। এই চাওয়া বাদ দিয়ে দিলে কোন দল আর ইসলামিক দল থাকতে পারে না। একটিভ কিনা সেটা বলছি না, জাস্ট চাওয়া - মনের আঁকুতির কথা বলছি। একে তো এটা আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব - সাথে সাথে আল্লাহর বিধান মুসলিমদের জীবন সহজ করে দেয়, সমাজে অবিচারের এবং জাহিলিয়াতের ধারাকে অনেকাংশেই কমিয়ে আনে।

    এখন নির্দিষ্ট একটা ভূখন্ডে প্রতিষ্ঠিত শরীয়াহ রাষ্ট্রের নাম কি হবে? তা কি খিলাফত হতে পারে?

    বর্তমান যামানায় যত সচেতন মুসলিম আছে, বেশীরভাগের মত হল - খিলাফাহ হচ্ছে উম্মাতের সামগ্রিক বিষয়। তাই খলিফা নিয়োগ দিতে হলে, উম্মতের আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের বা'য়াত লাগবে। অর্থাৎ যেই বা'য়াতের পর তাঁকে খলিফা হিসেবে নাকচ করা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে। এবং তাঁর অধীনে থাকা মুসলিমদের ভূ-খন্ডগুলো একত্রে খিলাফাহ হিসেবে বিবেচিত হবে। হয়ত সেগুলো স্বায়ত্তশাসিত পদ্ধতিতে শাসিত হবে। অথবা খলিফা নিজেই এ্যাক্টিভলি শাসন করবেন।

    এটা একটা তাত্ত্বিক চিত্র, যে ব্যাপারে সবাই একমত হলেও, এর বাস্তবায়ন খুবই কঠিন। কিন্তু এমনটা হতে পারলে - এর বিরোধিতা করার কোন অজুহাত আর কারো থাকবে না।

    দ্বিতীয় আরেকটা অপেক্ষাকৃত দুর্বল মত হল যে, কোন ভূখন্ডে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত হলে, সেটা হোক জোর করে কিংবা সেই ভূখন্ডের আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের মাধ্যমে, তাহলে সেই আমীরকে খলিফা ঘোষণা করা হবে - এবং সেই ইমারাহকে খিলাফাহ বলার যোগ্য হয়ে যাবে। দাঈশ (আইএস) এবং হিজবুত তাহরীর সহ আরো কিছু মাইনোরিটি গ্রুপ এরকমটা মনে করে থাকে। তাদের দলীল হচ্ছে, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর খিলাফত তো শুরুতে গ্লোবাল ছিল না। জাজিরাতুল আরব হয়ে তারপর সেটা বিস্তৃতি লাভ করেছে। দাঈশ এবং হিজবুত তাহরীরের মতে, কোন একটা ভূখন্ডে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত হবার পর, সেটাই খিলাফাহ ব্যানার ধারণ করে একে বিস্তৃত করা শুরু করবে, জরুরী না সেটা মধ্যপ্রাচ্যেই হতে হবে। উপমহাদেশ, ইন্দোনেশিয়া কিংবা মরক্কো থেকেও হতে পারে। এটা তাদের তাত্ত্বিক স্ট্যান্স।

    এই ব্যাপারে শাইখ আনওয়ার আল-আওলাকী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি নিজের ভাষায় বলছি, আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর সময় তার খিলাফতের অধীনেরই সমগ্র মুসলিমরা ছিল। তখন সেটা পুরো উম্মাহকে ধারণ করছে। উম্মাহ'র পুরো বিষয়টা তখন একসাথেই ছিল। তখন ছিল শুধু নতুন ভূমি বিজয় করা। অথচ এখন আমাদের এখন নতুন ভূমি বিজয় করার আগে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ভূমিগুলো পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব রয়ে গেছে। কোন একটা নির্দিষ্ট ভূখন্ডের কাছে পুরো বিষয়টা নেই। কোন একটা নির্দিষ্ট ভূখন্ডের আমীর যদি উম্মতের প্রভাবশালীদের পরামর্শ ব্যতীত খিলাফাহ দাবী করে, বাকি ভূখন্ডগুলো থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হবে। তাই খলিফা নিয়োগের সময় যথেষ্ঠ পরিমানের সাপোর্ট লাগবে, যা বিদ্রোহের প্রসঙ্গকে নাকচ করে দিবে। নতুবা এমন খিলাফতের ফায়দাটা কি, যা উম্মাহর মধ্যে ঐক্য না করে, আরো ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরী করে? এটা হচ্ছে প্র্যাগমেটিসম।

    এর বিপরীতে দাঈশ এবং হিজবুত তাহরীরের মত হল, আমরা খিলাফতের জন্য নুসুসকে প্রাধান্য দিবো। ইল্লতের বদলে লিটারেল কপিপেস্ট করবো। আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) যদি এক ভূমি থেকে খিলাফত এক্সপান্ড করতে পারেন, যাকাত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে রিদ্দার যুদ্ধ করতে পারেন, তাহলে এটাই শরঈ প্রক্রিয়া। তাদের আরো দলীল হচ্ছে, ইমাম মাহদির খিলাফত এক জায়গা থেকেই শুরু হবে। ইতিহাস থেকে দলীল হচ্ছে, স্পেনে উমাইয়ারা একসময় নিজেদের আলাদা খিলাফত দাবী করেছিল। এর জবাব হচ্ছে, তখন বাগদাদে আব্বাসীরা দূর্বল হয়ে যাবার পর, শিয়াদের উবাইদিরা মিশরে ফাতিমি খিলাফত দাবী করে। তখন উমাইয়ারা স্পেনে দ্বিতীয় উমাইয়া খিলাফত দাবী করে। তিনটা রাষ্ট্র, তিনটাই একে অপরের বিরুদ্ধে নিজেদের আমীরকে মুসলিমদের ন্যায্য খলিফা দাবী করছিল। ঠিক এখন থেকে এক হাজার বছর আগে। এটা দলীল না, কিন্তু ইতিহাসে এমনটা হয়েছে।

    সাহাবাদের সময়ও একবার এমন হয়েছিল। ইয়াজিদের মৃত্যুর পরই আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হিজাজে খিলাফতের ঘোষণা দেন এবং বা'য়াত নেয়া শুরু করেন। ওইদিকে শামে মারওয়ান খিলাফতের বা'য়াত নেয়া শুরু করে। অর্থাৎ তখন মুসলিমদের দুইটা রাষ্ট্র, দুইটাই খিলাফতের দাবীদার। এর আগে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর সময় দুইটা রাষ্ট্র হয়েছিল, কিন্তু আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে বা'য়াত না দিলেও, মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) নিজেকে ডিরেক্ট খলিফা দাবী করেন নি। তাই তাকে অনেকে আমীরে মুয়াবিয়া বলেন। কারণ খলিফা তো আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-ই ছিলেন। আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর পর খলিফা হন হাসান (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি নিজের খিলাফতকে মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে দিয়ে, তাকে খলিফা বানিয়ে, দুইটা রাষ্ট্রকে আবারো একটা রাষ্ট্রে পরিণত করেন।

    কিন্তু জালিম ইয়াজিদের সময় কারবালার এবং মক্কা-মদীনায় আক্রমণের মত ন্যাক্কার জনক ঘটনার পর আবারো মুসলিমরা বিভক্ত হয়ে যায়। এরপর প্রথম উমাইয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) হিজাজে আরেকটা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ৭ বছরের মত শাসন করেন। ওইদিকে মারওয়ানের পর তার ছেলে আব্দুল মালিক উমাইয়াদের নিয়োগকৃত খলিফা হয়। তার এক কমান্ডার-ই ছিল হাজ্জাজ বিন ইউসুফ। এই জালিম মক্কায় আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে শহীদ করে, মক্কা দখল করে পুনরায় আনডিসপিউটেড উমাইয়া খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ৯০ বছর শাসনের পর, দামাস্কাসে তাদের পতন ঘটিয়ে আব্বাসীরা বাগদাদের নতুন খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে।

    অর্থাৎ দাঈশ কিংবা হিজবুত তাহরীর যদি কখনো কোন ভূখন্ডে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করে টিকে যায়, তাহলে তারা নিজেদের আমীরকে খলিফা দাবী করতেই পারে। কিন্তু উম্মাহ তাদের খিলাফাহ হিসেবে মেনে না নিলে আসলে তাদের করার কিছুই থাকবে না। তারা জোর করতে পারে, কিন্তু জোর করে বিজয়ী হতে হবে। সেগুলো ইতিহাসে খিলাফাহ নাম পেতেও পারে, কিন্তু সেগুলো খিলাফাহ আ'লা মিনহাজুন নাবুয়াহ হবে না।

    উপরে যে ইতিহাস বর্ণনা করলাম উমাইয়া কিংবা আব্বাসীদের, সেগুলোকে কিন্তু খিলাফাহ মিনহাজুন নাবুয়াহ বলা হচ্ছে না। তখন খিলাফাহ বিষয়টা ছিল মূলত এক গোষ্ঠির বদলে আরেক গোষ্ঠির ক্ষমতা। কারণ শরীয়াহ অলরেডি প্রতিষ্ঠিত। আদালত ব্যবস্থা কুরআন-সুন্নাহ দিয়েই পরিচালিত হত। কিন্তু প্রশাসনের দখল নিয়ে তারা নিজেরা যুদ্ধ করতো।

    কিন্তু বর্তমানের অবস্থাটা তা না। বিচার ব্যবস্থা থেকে কুরআন-সুন্নাহ দিয়ে বিচারের ধারাটাই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে উম্মাহর মধ্যে। খলিফা নিয়োগ তো শরীয়াহ কায়েমের একটা অংশ, এর আগে তো শরীয়াহ রাষ্ট্রের সেটআপটা লাগবে।

    তবে হিজবুত তাহরীর অনেককে খিলাফাহ ঘোষণা করতে বলেছে। যেমন তালিবানদের বলেছে, জাওলানীকেও বলেছে। শোনা যায় যে, গাদ্দাফী এবং সাদ্দামকেও বলেছিল। এমনকি অবাক করা ব্যাপার হল যে খোমেনিকেও বলেছিল। সৌদীকে এ্যাপ্রোচ করেছিল কিনা আমার জানা নেই। তাদের আগে ইখওয়ানের প্রতিষ্ঠাতা উস্তাদ হাসান আল-বান্নাও মিশরের তৎকালীন রাজা ফুয়াদ এবং ফারুককে খিলাফাহ ঘোষণা দিতে বলেছিলেন। ইখওয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়ই উসমানী খিলাফাহ পতনের পর পুনরায় খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু ইখওয়ান এবং হিজবুত তাহরীর কারো প্রস্তাবেই মধ্যপ্রাচ্যের কোন শাসক রাজী হয় নি।

    হিজবুত তাহরীরের প্রতিষ্ঠাতা ত্বক্বী আদ-দ্বীন আন-নাবাহানী নিজেও ইখওয়ানেরই ছিলেন। যখন ইখওয়ান শাসকদের নাসীহাতের এ্যাপ্রোচ গ্রহণ করছিল, এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল, তখন তিনি এই আইডিয়াটা আনেন যে, সেনাবাহিনীর ইসলামপন্থী লোকেরা যেন এসব শাসক উৎখাত করে নিজেরাই খিলাফাহ ঘোষণা দেয়, তাই তাদের কাছে নুসরাহ তথা সাহায্য খুঁজতে হবে - কারণ নবীজী ﷺ মক্কায় নির্যাতনের পর মক্কার বাহিরের গোত্রগুলোর কাছে নুসরাহ তথা সাহায্য চেয়েছিলেন। মদীনার আউস এবং খাজরাজ গোত্র সেই নুসরাহ দিতে রাজি হয়েছিল। এরপর ইখওয়ান নিজেরাও যখন ক্ষমতাসীন হবার জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলা শুরু করে, হিজবুত তাহরীর এই প্রকৃয়াকে রিজেক্ট করে, সেনা অভ্যুত্থানকেই একমাত্র পথ বলে প্রচার শুরু করে। উল্লেখ্য যে বর্তমানে হিজবুত তাহরীরের লোকেরা একমাত্র সেনাবাহিনীকেই আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ মনে করে।

    আমাদের মতে সেনা বাহিনীগুলোও অবশ্যই আহলুশ শাওকা। কিন্তু তারাই একমাত্র আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ না। আমাদের আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদের ইল্লতটা বুঝতে হবে - এমন সব গোষ্ঠি, যাদের বা'য়াতের পর শাসক আনডিসপিউটেড হয়ে যায়।

    একে তো সেনাবাহিনী একলাই আহলুশ শাওকা না। আবার তাদের মধ্যে ইসলামিস্টরা থাকলেও, তারাও ডমিনেন্ট ফোর্স না। যেটা তাদের আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ হবার ক্রাইটেরিয়াকেই নসাৎ করে দেয়। আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদকে যে খুব পরহেজগার গোষ্ঠি হতে হবে, তা না। এখন হিজবুত তাহরীর দাওয়াত এবং সচেতনতা তৈরী মাধ্যমে আর্মিতে ইসলামিস্টদের ডমিনেশন তৈরী করে ফেলতে পারলে, সেটা অবশ্যই এপ্রিশিয়েবল। এমনকি জনগণের মাঝে খিলাফাহ নিয়ে সচেতনতা তৈরী করার বাহবা তারা পাবে। যদিও পরিস্থিতি এবং জাহালতের কারণে অনেক কিছু কাউন্টার প্রোডাক্টিভ বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

    হিজবুত তাহরীর কিন্তু দাঈশকে বা'য়াত দেয় নি। যদিও উভয়ই নির্দিষ্ঠ ভূখন্ডের ইমারাহই খিলাফাহ হবার জন্য যথেষ্ঠ বলে মত প্রকাশ করে। এর একটা কারণ হল, দাঈশ নিজেদের আমীরকে খলিফা বানিয়েছে। দাঈশ জুলুম করেছে প্রতিপক্ষের ইসলামপন্থীদের সাথে, জনগণের সাথে। এবং দাঈশ যে সালাফী স্পেকটার্ম ফলো করে, হিজবুত তাহরীর সেটার বিরুদ্ধে। হিজবুত তাহরীর কিন্তু সালাফী সংগঠন না। তারা শিয়াদের ম্যাস তাকফির করে না। এমনকি গণতান্ত্রিক শাসকদেরও সেভাবে তাওয়াগিত বলে না। কারণ আক্বীদা নিয়ে তাদের তেমন কোন ফ্রেমওয়ার্ক নেই। তাদের দলে মুতাজিলা এবং মুর্জিয়া প্রভাবিত আক্বীদার লোকজনও আছে।

    আল-কায়েদা তালিবানদের সাথে তাদের মতপার্থক্য হল, আফগানের ইমারাহকে কেন খিলাফাহ ঘোষণা করা হচ্ছে না, এই নিয়ে। আগেই বলেছি যে, আল-কায়েদা ইকো সিস্টেমের লোকেরা অনেকগুলো ইমারাহ বানানোর পক্ষে, কিন্তু সেগুলোকে নিয়ে পরামর্শ ব্যতীত খিলাফাহ ঘোষণা দেয়ার পক্ষে না, তবে তারা খিলাফতের দায়িত্ব পালনের পক্ষে, যতক্ষণ না উম্মাহ স্বতস্ফূর্তভাবে এগুলোকে নিয়ে খিলাফাহ তৈরী করতে এবং একজন খলিফা নিয়োগের দাবী তোলে। এবং উম্মাহর ইসলামপন্থীরা যখন আহলুশ শাওকা হয়ে যাবে, তখন তারা একজনকে নিজেদের ওভারঅল খলিফা ঘোষণা করলে, কারো আর তাকে চ্যালেঞ্জ করার মত কিছু থাকবে না। কিন্তু কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ছাড়া নিজেদের আমীরকে খলিফাহ ঘোষণা করলেই কি? তিনি কি খিলাফতের মাকসাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন? আমীরুল মু'মিনীন হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা হাফিজাহুল্লাহ কি পারবেন কাশ্মীর দখলের ঘোষণা দিতে, পাকিস্তান বাঁধা দিলে তাদেরকেও প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিতে এই বলে যে, তারা বাধ্য আনুগত্য করতে?

    হিজবুত তাহরীরের কথা অনুযায়ী তালিবানরা খিলাফাহ ঘোষণা করলে, পাকিস্তানকে শরঈভাবে খলিফার আনুগত্য করা ওয়াজিব বলতে হবে। কিন্তু বর্তমান ওয়ার্ল্ড অর্ডারের কারণে তালিবানরা এরকম বলতে পারছে না। তারা আল-কায়েদা কিংবা তেহরিককে দিয়ে আন্ডার গ্রাউন্ডে বলায়। কিন্তু ডিপ্লোমেটিক টেবিলে কিন্তু এই কথা সরাসরি বলতে পারবে না। কারণ এখনও আমরিকা নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাবস্থা টিকে আছে, মুসলিমদের মধ্যে তাদের দালালেরা গিজগিজ করছে। তারা খুব সহজেই সাধারণ মুসলিমদের মতকে ম্যানুপুলেট করে জাতিরাষ্ট্র ভিত্তিক ধারণা দোহাই দিয়ে তালিবানদের উপর আগ্রাসন চালানো জাস্টিফাই করে ফেলবে। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে আরো সময় লাগবে, কিন্তু পাল্টাবে ইনশাআল্লাহ!

    হিজবুত তাহরীরের সাথে আল-কায়েদা-তালিবানদের মতপার্থক্যের আরেক জায়গা হল, নন-স্টেট এ্যাক্টর (রাষ্ট্র ক্ষমতাহীন ভাসমান দল) হিসেবে গেরিলা যুদ্ধ করে ক্ষমতা দখল করা নিয়ে। আল-কায়েদা, তালিবান, হামাস সহ প্রায় সকল জিহাদি দল এই পদ্ধতিকে জায়িজ মনে করে। এই কাজ করতে গিয়ে কোন হারাম কাজ করলে, সেই কাজটা হারাম, কিন্তু এইভাবে যুদ্ধ করার ন্যায্যতা তারা স্বীকার করে।

    কিন্তু হিজবুত তাহরীর সহ বর্তমানের মূলধারার আলেম হিসেবে পরিচিত যারা সেটা হোক সালাফী কিংবা মাজহাবী বেশীরভাগ লোকেরা এই পদ্ধতিকে নাজায়িজ বলেন। ইহুদী-নাসারা কিংবা মুশরিকদের চাল মনে করেন। হিজবুত তাহরীরও এনাদের সাথে একমত। গণতান্ত্রিক ধারার ইসলামপন্থীরাও এই বিষয়ে একমত যে, যারা সশস্ত্র পন্থার কথা বলে, তারা শত্রুদের দালাল, অথবা তাদের সৃষ্টি। আমি জাস্ট তাদের ন্যারেটিভটার কথা বললাম। এমনকি তারা নিজেদের অন্যান্য রাজনৈতিক এবং সামাজিক, মাসলাকগত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শত্রুর দালাল, কিংবা শত্রুদের তৈরী হবার ন্যারেটিভ প্রচার করে থাকে।

    হিজবুত তাহরীরের অবস্থান এখানে অদ্ভুত। তাদেরকে অনেকে কাফিরদের দালাল বলে জিহাদীদের সাথে মিলিয়ে। আবার যারা এরকম বলে, হিজবুত তাহরীর নিজেরাও তাদের সাথে একমত যে, জিহাদীরা আসলেই কাফিরদের দালাল, কিন্তু তারা ব্যতীত। । তারা কোনো সালাফী জিহাদী সংগঠন না, তারা প্যান ইসলামিস্ট খিলাফাহ পন্থী দাবীদার। এবং তারা জিহাদীদের অন্যায় রক্তপাতের বিরুদ্ধে অন্যান্যদের মতই সরব।

    আরেকটা অদ্ভুত অবস্থান হল, আর্মি যখন টেকওভার করে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করবে, তারা তো বাধ্য হবে তখন কাফির মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করতে, তখন সেটা তাদের মতে জায়িজ কারণ কাজটা স্টেট হিসেবে করা হচ্ছে। কিন্তু কোনভাবে ক্যু যদি ব্যর্থ হয়, তখন ওই আর্মিদের কি হবে? তারা কি আন্ডার গ্রাউন্ডে গিয়ে গেরিলা যুদ্ধ করতে পারবে? অন্তত নিজেদের প্রতিরক্ষা করতে পারবে? এই বিষয়ে তারা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারে না।

    আমাদের পারসেপশন হল যে, ক্যু করে হোক অথবা পার্লামেন্টে গিয়ে - যেভাবেই হোক, ইসলামিস্টরা ক্ষমতায় চলে গেলে, আমরিকা সেখানে প্রতিবিপ্লব করার চেষ্টা করবে, এবং সেই প্রতিবিপ্লব সফল হবার সম্ভাবনাও বেশী - কারণ আমাদের সামাজিক শক্তিটাও নেই। তখন ওই ইসলামিস্টদের বাধ্য হতে হবে আন্ডার গ্রাউন্ডে যেতে, অথবা ইরাকে দাঈশের মত সম্মুখ সমরে জড়িয়ে শেষ হয়ে যেতে হবে অথবা মিশরে ইখওয়ানের মত যুদ্ধ না করেই গণহত্যার শিকার হতে হবে। হিজবুত তাহরীর যদি কোন ভূখন্ডে এরকম ক্ষমতা পায়, তারা কিভাবে এই পরিস্থিতিটা সামাল দিবে?

    এইক্ষেত্রে আল-কায়েদার আইডিয়া হল, আমরিকান হেজমনির পতনের আগ পর্যন্ত আসলে সেই অর্থে শরীয়াহ কায়েম করে টিকে থাকা খুব মুশকিল হবে। সামাজিক ক্ষমতা থাকলে হয়ত আফগানের মত ইমারাহ তৈরী করা সম্ভব হবে। নতুবা সিরিয়ার মত অনেক আপোষ করে, আশংকা নিয়ে কোন রকম যদি অন্তত বিচার ব্যবস্থায় শরীয়াহ আনা যায়। কারণ আমরিকা তার ইকোনমিক এবং মিলিটারি পাওয়ার ইউস করে হস্তক্ষেপ করবেই। তার হাতগুলো ভাঙা ব্যাতীত আপনি টিকে থাকতে পারবেন না। হয়ত আমরা নিজেরাই স্ব-উদ্যোগী হয়ে সাপের মাথাটা ধ্বংস করার মেকানিসম তৈরী করবো। অথবা আমাদের অপেক্ষা করতে হবে প্রকৃতিগত কারণে কখন নিজ থেকেই আমরিকার নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যের পতন হয়, এবং অন্য কোন সাপ সেই শূণ্য স্থান দখলের আগেই আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলতে পারি।​

    ~~~ সংগৃহীত এবং পরিমার্জিত ~~~
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে
Working...
X