বিগত যামানাগুলোর ন্যায় হালযামানায়-ও ইসলাম দু’ দিক থেকে আক্রমণের স্বীকার—সামরিক ও মনস্তাত্তিক।
সামরিক আক্রমণের লক্ষ্য হলো ইসলামকে ময়দানের লড়াইয়ে পরাজিত করা, ইসলামী খিলাফাহ ব্যবস্থা বা ইসলামীক ষ্টেইট যাতে প্রতিষ্ঠা হতে না পারে, এই উদ্দেশ্যে মুজাহিদীনদেরকে কাউন্টার দেয়া। বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের সামরিক জাগরণকে রুখে দেয়া। রাজনৈতিক ভাবে ইসলামকে পরাজিত করা। অপরদিকে মনস্তাত্তিক যুদ্ধের লক্ষ্য হলো-এক কথায় বললে মুসলিমদেরকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলা। তাদের আকীদা-বিশ্বাস,মানহাজ,তাহজীব-তামাদ্দুন ইত্যাদী বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করা, এগুলোকে বিকৃত করে মুসলিম ও সাধারণ জনগণের কাছে উপস্থিত করা। ইসলামের ব্যাপারে একটি ন্যাগেটিভ ধারণা তৈরী করা। এমন এক ইসলাম তৈরী করা যা, কাফের বিশ্বের জন্য কোন হুমকির কারণ হবেনা। ফলাফল, মুসলিমরা রাজনৈতিকভাবে যেমন আর পেরে উঠবেনা, তাদের কোন রাষ্ট্র থাকবেনা, তেমন-ই তারা আদর্শিক ময়দানেও আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা।
উপরুক্ত দুই মহান(!) কাজের প্রথম কাজটি আঞ্জাম দিচ্ছে ক্রুসেড,যায়নিষ্ট ও মূর্তিপুজক বিভিন্ন সামরিক বাহিনী গুলো। আর দ্বিতীয় কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে, মুসলিম নামধারী কতেক মুনাফিক, তাগুতের উচ্ছিষ্ট ভোগী উলামায়ে সু, মডারেট ও মর্ডানিষ্ট কিছু দায়ী ও আলেম(!) আল্লাহ এদের থেকে দীনে ইসলাম ও মুসলিমদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
এই দু’ দলের মাঝে সবচেয়ে খতরনাক হলো দ্বিতীয় দলের ইতর প্রাণীগুলো। কারণ তারা উম্মাহকে ভিতর থেকে ‘ফোকলা’ করে দেয়। ইসলামের লেভেল লাগিয়ে তারা ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্থ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু, দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, অভিশপ্ত এই অংশটার ব্যপারে উম্মাহ অনেকটা নিশ্চুপ। উম্মাহ ঘুমন্ত তাদের ব্যপারে। এদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এক—ইসলামকে মনস্তাত্তিক ভাবে পরাজিত করা।এদের সবার কাজও মোটামুটি একই।
তবে এখানে মডারেট আর মর্ডানিষ্ট—এ দু’ দলের মাঝে একটু পার্থক্য আছে। খুব সামান্য পার্থক্য। মর্ডানিষ্টরা হলো প্রকাশ্যে ইসলামের অপব্যাখ্যা করে, তারা সালাফদের অনুসরণের নামে ইসলামের নতুন নতুন ব্যখ্যা উম্মাহর সামনে পরিবেশন করে। কিন্তু, তারা ইসলামের বিভিন্ন বিধানকে বা হাদীসকে অস্বীকার করেনা প্রকাশ্যে। আর মডারেটরা মর্ডানিষ্টদের মত-ই। তবে একটু ভিন্নতা হলো তারা কাজটা করে চুপিসারে।
উভয় দল-ই কোরআন সুন্নাহর নতুন ব্যাখ্যা(re-interpretation) দরকার ও সংশোধন(rivisionest) করতে হবে—এই দাবীর দাবীদার। অর্থাৎ নুসূস বা কোরআন সুন্নাহর ক্ষেত্রে তারা মহান সালাফ আস-সালেহীনের ব্যাখ্যা থেকে সরে এসে নিজেরা ব্যাখ্যা প্রদান করে। চৌদ্দশত বছরের পুরনো ব্যাখ্যা এই আধুনিক যুগে অচল, বা অমুক বিধানটি শুধু রাসূলের যুগের জন্য খাস ছিল- এই ধরণের নানা ভ্রান্তিমূলক কথা তারা বলে বেড়ায় এবং বিশ্বাস করে।
এরা সালাফদের থেকে বহু দূরে। সালাফদের চোখে ইসলামকে না দেখে তারা নিজেদের শাহওয়াত আর বিজ্ঞান নামক ‘অপবিজ্ঞানের’ চোখে ইসলামকে দেখতে ভালোবাসে। এদের নুসূসের ব্যাখ্যা আর সালাফদের ব্যাখ্যার মাঝে পাওয়া যায় যোজন যোজন ফারাক। সালাফদের ছহীহ ব্যাখ্যা আর তার সমর্থনে হাদীসে নববী গুলো এদের মনে উত্থিত হওয়া কুযক্তি আর শাহওয়াত চরিতার্থ করার পথের কাঁটা। তাই, তারা সালাফদেরকে দেখতে পারেনা, অনেক সময় এই সালাফ বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরিয়েও যায়। যেমন এক মোডারেট ’নোমান আলী খান,যাকে ন্যাক নাম চিনেন অনেকে’ বলেছে যে, ইমাম আত-ত্ববারী রহিঃ নাকি মুফাসসিরই ছিলেননা,তিনি ছিলেন ইতিহাসবিদ!!!! এই লিঙ্কটা দেখুন> https://m.youtube.com/watch?v=BYBRo_7QvwI
তাদের কাছে জিহাদ,হুদুদ,ক্বিসাস , জিজিয়া, সঙ্গীত, ফ্রি-মিক্সিং, হাদীস বা কোরআনের কোন আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা, গণতন্ত্রনামক কুফুরী তন্ত্রের বৈধতা প্রদান করা ইত্যাদী যে সব বিষয়ে কুফফার গোষ্টীর চুলকানি রয়েছে এ সমস্ত বিষয়ে তারা নিজস্ব মনগড়া ব্যাখ্যা পেশ করে-যার মাধ্যমে কুফফাররা খুশী হয়। এরা চায় ইসলামকে গৃহপালিত ধর্মে রুপান্তর করতে। এরা ইসলামের প্রতিটি বিধানের ক্ষেত্রে কুফরবান্ধব মতাদর্শ প্রচার করতে চায়। এরা চায় কুফফার সমর্থিত ইসলাম।
তাই, কুফফারদের উচ্ছিষ্ট ভোগী ও হীনম্মন্যতায় ভোগা এই লোকগুলোকে কাউন্টার করতে হলে, তাদের রথযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চাইলে, ময়দানী লড়াইয়ের পাশাপাশি আমাদেরকে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও আদর্শিক এই অঙ্গন গুলোতেও লড়তে হবে। এদের খপ্পড় থেকে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে বাঁচাতে হবে। উম্মাহকে সতর্ক করতে হবে।
আল্লাহ ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহকে সকল ধরণের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন, আমাদেরকে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে আমৃত্যু কবুল করুন, আমীন।
Comment