ভারতের waqf amendment bill পাস,নতুন কৌশলে পুরাতন লক্ষ্য হাসিলের পায়তারা
বিশ্লেষকদের মতে এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট। caa আইনের অধীনে আসামসহ অন্যান্য রাজ্যের মুসলিমদেরকে আইডেন্টিফিকেশনের নামে দলিল-প্রমাণের মারপেচে ফেলে বাস্তুচ্যুত ও নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করে নিজ দেশেই শরণার্থী বানিয়ে ফেলার ঘটনা প্রত্যক্ষ দিবালোকে সংগঠিত হয়েছে। waqf amendment bill এর থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয় বলে মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকগণ ধারণা করছেন যে, হাজার হাজার মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, কবরস্থান ও অন্যান্য মুসলিম কমিউনিটির সম্পত্তিগুলোর মালিকানা প্রশ্নবিদ্ধ করে পর্যাপ্ত দলিল-প্রমাণের অভাবকে পুঁজি করে কেন্দ্রীয় সরকার কতৃক বাজেয়াপ্ত করার এক আইনী বৈধতার নাম এই waqf amendment bill । সোজা বাংলায় বললে, মসজিদ-মাদ্রাসার মতো ইসলামের দূর্গগুলোকে ধ্বংস করার মাস্টারপ্ল্যান!!!
ইসলামের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। তবে এর কৌশল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বদলাতে পারে। যেমন: পূর্বে সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলিমদেরকে নিশ্চিহ্ন করা হতো, এখন নতুন নতুন প্রোপাগান্ডা-আইনের মারপেচে ফেলে মুসলিমদের নিশ্চিহ্ন করার নতুন পায়তারা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা যদি শুধু কৌশলের দিকে ফোকাস করি তবে caa, waqf amendment bill এগুলো আমাদের কাছে নতুন এবং ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হবে। আমাদেরকে ফোকাস করতে হবে তাদের উদ্দেশ্যের দিকে। আর এর জন্য আমাদেরকে ইসলাম পরবর্তী ইতিহাস এবং এর প্যাটার্ন বুঝতে হবে। বুখারা, সমরকন্দ, আন্দালুস, চেচনিয়া, বসনিয়ার মতো আক্রমণের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে হউক অথবা ভারতের মতো আইনের মারপেচে ফেলে একের পর এক মসজিদ-মাদ্রাসা শহীদ করেই হউক, ইসলামের দুশমনদের মূল উদ্দেশ্য স্পষ্ট; আর তা হচ্ছে ইসলামের ভিত্তি-প্রস্তর উপড়ে ফেলা। মসজিদ-মাদ্রাসার মতো ইসলামের দূর্গগুলোকে ধ্বংস করা rss এর দীর্ঘদিনের আকাঙ্খা এবং এটি তাদের হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। তারা অন্তত ৫ দশক যাবত এর ঘোষণা দিয়ে আসছে। তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা ভুল হতে পারে কিন্তু তাদের ঘোষণা ভুল নয়। এ সম্পর্কে আমরা বেখবর, তাই আমাদের কাছে এই কৌশলগুলো নতুন বলে মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন আসতে পারে যে, আমাদের করণীয় কি?
এর উত্তর ইতিহাসেই রয়েছে। লম্বা আলোচনায় না গেলাম, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
وَ لَوۡ لَا دَفۡعُ اللّٰہِ النَّاسَ بَعۡضَہُمۡ بِبَعۡضٍ لَّہُدِّمَتۡ صَوَامِعُ وَ بِیَعٌ وَّ صَلَوٰتٌ وَّ مَسٰجِدُ یُذۡکَرُ فِیۡہَا اسۡمُ اللّٰہِ کَثِیۡرًا ؕ وَ لَیَنۡصُرَنَّ اللّٰہُ مَنۡ یَّنۡصُرُہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَقَوِیٌّ عَزِیۡزٌ
অর্থ: “আল্লাহ যদি একদলকে দিয়ে অন্যদলকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা না রাখতেন তবে পৃথিবীর সব ইবাদাতখানা, এমনকি মসজিদসমূহ যেখানে বেশি বেশি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, সেগুলোও ধ্বংস হয়ে যেত। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।” (সুরা হাজ্জঃ ৪০)
এই আয়াতেই রয়েছে সমাধান। সমাধান আছে সীরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তাবুক অভিযানের ঘটনাপ্রবাহে। একবিংশ শতাব্দির এই লড়াই মুসলিমদের অস্তিত্বের লড়াই। আর প্রতিরক্ষা ছাড়া মিটিং-মিছিল, আইন-কানুন দিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায় না। চিল্লাইয়া মার্কেট পাওয়া যায় না, মার্কেট দখল করতে হয়।
সোজা বাংলায় বললে, আমরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ছেড়ে দিয়েছি তাই আমরা আজ সাগরের ভাসমান ফেনা। হকের মি'য়ার আমরা পরিবর্তন করে ফেলেছি। ইজতিহাদ আর হিকমতের নামে ব্যক্তিগত পরিকল্পনা আর কৌশলের ছলে আমরা নববী মানহাজ থেকে কত দূরে সরে গেলাম তা বুঝার তাওফিকও আমাদের হচ্ছে না। আল্লামা ইকবাল সঠিক বলেছেন:
“বেচকার তালওয়ারে হামনে খারিদলিয়ে মুসাল্লে, ইজ্জাতে লুটতি রাহি অর হাম কারতে রাহে দুয়ায়ে।”
“তল-ওয়ার বিক্রি করে আমরা জায়নামাজ কিনে নিয়েছি, ইজ্জত ভূলন্ঠিত হচ্ছে আর আমরা দুয়াই করে চলেছি।”
Comment