পহেলগাঁও অ্যাটাক: ভারতে আল কায়েদার সামরিক কৌশল সম্পর্কে কিছু কথা
মুনশি আব্দুর রহমান
মুনশি আব্দুর রহমান

[১]
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, কাশ্মীরের পহেলগাঁও উপত্যকার বৈসরান ভ্যালিতে নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সদস্য সহ পর্যটকদের একটি দলের উপর একদল সশস্ত্র যোদ্ধা আক্রমণ করে বসে। মুহূর্তের মধ্যে গুলিতে মারা যায় অন্তত ২৫ জন বিধর্মী পর্যটক, এবং একজন মুসলিম। আহত হন আরও ২০ জনেরও বেশি। আসুন আমরা এই হামলা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানবো এবং আল কায়েদা এই ধরণের হামলা করতে পারে কিনা, সে সম্পর্কে কিছু বিশ্লেষণ যুক্ত করবো ইনশা আল্লাহ-
হামলার নেপথ্যের শক্তি: কারা ছিল এই হামলার পেছনে?
ভারত সরকারের তদন্তে জানা গেছে, হামলাটি লস্করে তাইয়েবা ও তাদের সহযোগী সংগঠন 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' (TRF)-এর পাঁচজন সদস্য মিলে সংঘটিত করে। এদের মধ্যে দু'জন পাকিস্তানি নাগরিক বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। তাদের মূল টার্গেট ছিল অমুসলিম পর্যটকরা। হামলার সময় মুসলিম ও অমুসলিম চিহ্নিত করতে পর্যটকদের নাম ও ধর্ম পরীক্ষা করা হয়েছিল। মুসলিম চিহ্নিতদের ছেড়ে দিয়ে বাকিদের হত্যা করা হয়।
হামলার উদ্দেশ্য: ‘ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ’ প্রতিরোধ?
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি বিবৃতি থেকে জানা যায়, 'দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট' (TRF) এই হামলার দায় স্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাদের দাবি, কাশ্মীরে অমুসলিম বসতি স্থাপন ও জনসংখ্যার কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। তারা এটাকে "ডেমোগ্রাফিক রেজিস্ট্যান্স" বা "জনসংখ্যাগত প্রতিরোধ" হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। [১]
কাশ্মীরে ২০১৯ সালের পর থেকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ — বিশেষত ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর — মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পরিবর্তনের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই এই হামলার পেছনে "বসতি প্রতিরোধ" নামক এক নতুন ধরনের প্রচারণার জন্ম হয়েছে।
আসলেই কি টিআরএফ দায় স্বীকার করেছে?
যদিও টিআরএফ এর প্লাটফর্ম থেকেই এই হামলার দায় স্বীকার করে বার্তা হয়েছিল। তবে সম্প্রতি টিআরএফ এই হামলার দায় অস্বীকার করে বার্তা (রেফারেন্স: TRF-89-7A-03-43) দিয়েছে। ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ইং তে মুখপাত্র আহমদ খালিদ উক্ত বার্তায় বলেন-
"দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF) স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে, পহেলগাঁও ঘটনার সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমাদের নামে এই হামলার দায় চাপানোর চেষ্টা সম্পূর্ণ মিথ্যা, অবাঞ্ছিত এবং কাশ্মীরি প্রতিরোধ আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার একটি সাজানো প্রচারণার অংশ।
পহেলগাঁও হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ও অনুমোদনহীন বার্তা প্রকাশিত হয়েছিল। অভ্যন্তরীণ তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটি একটি সমন্বিত সাইবার হামলার ফলাফল — যা ভারতীয় রাষ্ট্রের ডিজিটাল যুদ্ধনীতির একটি পরিচিত কৌশল। আমরা এই সাইবার অনুপ্রবেশের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাচ্ছি এবং প্রাথমিকভাবে ভারতীয় সাইবার গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এটি প্রথমবার নয়; অতীতেও ভারত নিজেদের স্বার্থে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।" [২]
এদিকে কাশ্মীরের আরেকটি সশস্ত্র সংগঠন 'পিপলস অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট ফ্রন্ট'ও এই হামলার ব্যাপারে নিন্দা জানিয়েছে। মুখপাত্র তানভীর আহমদ রাথর এক বার্তায় বলেন-
"যারা আমাদের চেনে, তারা জানে—আমরা ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রস্তুত অংশগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু বানাই। এমনকি যখন রাজৌরিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী তিনজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল, তখনও আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাইনি, কারণ এ ধরনের নিকৃষ্ট হামলা আমাদের নীতিবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
আমরা জানি, ফ্যাসিস্ট বিজেপি/আরএসএস কখনোই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি হবে না, কারণ তদন্ত হলে তাদের মুখোশ খুলে যাবে এবং তারা অপমানিত হবে। তবুও আমরা জম্মুর আমাদের ভাইদের বলছি—আপনারা অবশ্যই রাস্তায় নেমে এ ফ্যাসিস্ট প্রশাসনকে নিরপেক্ষ তদন্তে বাধ্য করুন।" [৩]
সুতরাং টিআরএফ এর দায় অস্বীকার ও ভারতীয় গোয়েন্দাদের দিকে আঙ্গুল তোলার ফলে এই হামলা খোদ ভারত সরকারকে বিতর্কিত ও বেকায়দায় ফেলবে বলে আমি মনে করছি।
ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া: নিন্দা, প্রতিশোধের হুমকি
এদিকে হামলার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনাকে "কাপুরুষোচিত ও নিন্দনীয়" আখ্যা দিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সীমান্তে বাড়ানো হয় সেনা মোতায়েন, সিন্ধু নদীর পানি চুক্তির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
কেন অনেকে এটাকে 'ফলস ফ্ল্যাগ' বলে সন্দেহ করছে?
ভারতের ভেতরেই বড় একটি অংশ — বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল, কিছু বিশ্লেষক এবং মানবাধিকার কর্মী — এই হামলাকে 'ইনসাইড জব' বা 'ফলস ফ্ল্যাগ' অপারেশন বলে সন্দেহ করছেন। তাদের যুক্তি হলো:
- হামলার ধরন এবং টার্গেট নির্বাচন (বিশেষ করে অমুসলিম পর্যটকদের বেছে নেয়া) অত্যন্ত নাটকীয় ও জনমত গঠনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত বলে মনে হয়।
- পহেলগাঁও কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও জঙ্গিরা কিভাবে এতো সহজে হামলা চালাল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
- ঘটনার ঠিক পরপরই পাকিস্তানবিরোধী প্রচারণা এবং কাশ্মীরে নতুন করে সামরিকীকরণ জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
- অতীতে (যেমন: পুলওয়ামা হামলা) বহুবার দেখা গেছে যে নির্বাচনের আগে এমন নাটকীয় হামলা ঘটেছে যার পেছনে সরকারি অবহেলার, সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
- এই ঘটনার প্রেক্ষিতে নতুন করে ভারতের সাধারণ মুসলিমদের উপর হিন্দুত্ববাদীদের জুলুম-নিপীড়নের পক্ষে সাধারণ হিন্দুদের সমর্থন আদায় উদ্দেশ্য হতে পারে।
এই সন্দেহের প্রেক্ষিতে বলা হচ্ছে, পহেলগাঁও হামলা আদতে কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবেও কাজ করতে পারে।
মুসলিম জনগণের অবস্থা: আতঙ্ক আর নিপীড়নের মাঝে জীবনযাপন
হামলার পর কাশ্মীরসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাধারণ মুসলিমদের ওপর চাপ আরও বেড়ে গেছে।
- অনেক জায়গায় মুসলিমদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে।
- নিরাপত্তা বাহিনীর টার্গেটেড ধরপাকড় শুরু হয়েছে।
- মুসলিম যুবকদের অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ ও আটকানোর ঘটনা বেড়েছে।
- সামাজিক মাধ্যমে মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাশ্মীর ও ভারতের অনেক সেক্যুলার এবং সাধারণ মুসলিম এই হামলার নিন্দা জানিয়ে আহতদের পাশে দাঁড়ালেও, মূলধারার মিডিয়া সেটিকে উপেক্ষা করে মুসলিম সম্প্রদায়কে আবারও 'সন্ত্রাসের প্রতীক' হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
[২]
সামাজিক মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে, অনেক আল কায়েদা সমর্থক এই হামলার পক্ষে কথা বলছেন। মুসলিম জনমত গঠন করছেন। এই হামলার বৈধতার পক্ষে কাশ্মির ও ভারত জুড়ে মুসলিমদের উপর হিন্দুত্ববাদীদের হামলা-আক্রমণের বিষয়টি তুল ধরছেন। ফলে অনেকের কাছেই এই ধরণের হামলার ব্যাপারে আল কায়েদার অবস্থান জানার আগ্রহ রয়েছে। তাই এ সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোকপাত করার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।
আল কায়েদার ইতিহাস ও কলাকৌশল সম্পর্কে আমি যতদুর জানি, সেই আলোকে বলতে পারি যে, আল-কায়েদা ইন দ্য সাবকন্টিনেন্ট (AQS) এর কৌশল ও নীতিমালা অনুসারে ২০২৫ সালের পহেলগাঁও হামলার মতো ঘটনায় তাদের প্রত্যক্ষ জড়িত থাকার সম্ভাবনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আল-কায়েদার বর্তমান কৌশল
যদিও আল কায়েদার ইতিহাসে অমুসলিম নাগরিকদের উপর হামলা এবং তাদেরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনা রয়েছে। এবং এই ধরণের অপারেশন শরীয়তের উসুলের আলোকে বৈধ। তবে আল-কায়েদা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, সামরিক স্থাপনা এবং শত্রু সরকারের সম্পদকে অগ্রগণ্য লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে, বেসামরিক নাগরিকদের নয়।
AQS ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। তবে, তাদের হামলার লক্ষ্য সাধারণত নিরাপত্তা বাহিনী, সামরিক স্থাপনা এবং নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে সীমাবদ্ধ ছিল। তারা বরাবরই সাধারণ হিন্দুদের উপর আক্রমণ থেকে বিরত থেকেছে। অন্যদেরকেও ভারতের কোথায় টার্গেট করতে হবে, সেটি জানিয়ে দিয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপটে
পহেলগাঁও হামলায় অমুসলিম পর্যটকদের নির্দিষ্টভাবে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে, যা আল-কায়েদার বর্তমান কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাদের বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী, বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা পরিত্যাজ্য। সুতরাং পহেলগাঁও হামলার ধরন এবং লক্ষ্যবস্তু বিবেচনায়, এটি আল-কায়েদার বর্তমান কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
[৩]
ভারতে আল-কায়েদার সম্ভাব্য টার্গেটসমূহ
তবে আমাদের জানা দরকার ভারতের টার্গেট নিয়ে আল কায়েদার কি কৌশল রয়েছে। আসুন শুরুতেই শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরির একটি নির্দেশনা দেখি। শাইখ তার "কাশ্মীরকে ভুলে যেও না!" বার্তায় বলেন-
"আমি মনে করি যে, কাশ্মিরে মুজাহিদীন-এ পর্যায়ে ভারতীয় সেনা ও সরকারের উপর অবিচলিত বোমা হামলার জন্য এককভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিত, যাতে করে ভারতীয়দের হত্যা করা যায়, ভারতীয় অর্থনীতিতে ধ্বস নামানো যায়, ভারতকে তার জনশক্তি ও সরঞ্জামগুলোতে স্থায়ী ক্ষতি ভোগ করানো যায়। আর এর উপরে মুজাহিদিনকে ধৈর্য ধরে চলতে হবে। সাথে সাথে তাদের ইসলামি বিশ্বের মুসলিম ভাইদের সাথে যোগাযোগের শক্তিশালী চ্যানেল স্থাপন করতে হবে।" [৪]
আল-কায়েদা উপমহাদেশ তাদের 'আচরণবিধি'তে বলেছে-
তৃতীয় ভাগঃ ভারত, বাংলাদেশ এবং আরাকানে (বার্মায়) লক্ষ্যবস্তু
ভারতে এবং বাংলাদেশে, আমেরিকান ও ইসরায়েলী টার্গেটের পরে আমাদের অগ্রগণ্য টার্গেট হল ভারতীয় সরকার। এর কারণঃ
ভারতীয় সরকার কাশ্মীর ও ভারতে মুসলমানদের উপর অত্যাচার, তাঁদের বসতবাড়ি ধ্বংস, তাঁদের শ্রেণী বৈষম্যের মাধ্যমে দুর্বল করা এবং তাঁদেরকে জোরপূর্বক হিন্দু বানানোর কৌশল শুরু করেছে। কাশ্মীর এবং ভারতে মুসলমানদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন এর সুস্পষ্ট প্রমাণ।
• ধর্মহীনতা এবং ইসলামের প্রতি অন্ধ-শত্রুতা এবং দ্বীনের শত্রুতার পৃষ্ঠপোষকতা, ভারতের স্বরাষ্ট এবং পররাষ্ট্র নীতির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের এই কৌশলের প্রভাব পরিষ্কারভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
• ভারত পুরো ভূখণ্ডে (কাশ্মীর, ভারত, বাংলাদেশ এবং বার্মায়) ইসলামী ও জিহাদী জাগরণের বিরুদ্ধে আমেরিকা, রাশিয়া এবং ইসরায়েলের বিশ্বস্ত মিত্র।
ভারত বাংলাদেশে ধর্মহীন সরকার এবং ধর্মহীন আন্দোলনগুলোর সবচেয়ে বড় রক্ষক এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অবমাননাকারীদের ও মুলহিদদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়।
• ভারত বাংলাদেশের মুসলমানদের পানি কব্জা করে তাদের চাষাবাদকে ধ্বংস করা এবং বাংলার মুসলমানদের কারখানা এবং ব্যবসাকে দখল করার মত অপরাধ করে যাচ্ছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ভারত সব সময় এটাই চায় যে, বাংলার মুসলমানেরা তার দাস হয়ে থাকুক।
• ভারতের রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা ইসলামী ভারতবর্ষ প্রতিষ্ঠার পথে মূল প্রতিবন্ধক। ভারতবর্ষে এক হাজার বছর ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ছিল এবং এখনো এটি প্রতিষ্ঠা করা আমাদের উপর শরীয়ী ফরয।
কাজেই ভারত ও বাংলাদেশে আমাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তু নিম্নরূপঃ
ভারতের ঐসব রাষ্ট্রীয় সংস্থা যেগুলো ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর থেকে মুসলিম নিধনের কৌশলকে অব্যাহত রেখেছে, বিশেষভাবে ভারতের পুলিশ, সশস্ত্রবাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নেতৃত্ব।
কট্টর হিন্দুপন্থী সংস্থাগুলোর ঐসব নেতারা যারা মসজিদ গুড়িয়ে দেওয়া, মুসলিমানদের হত্যা করা, তাঁদের সম্পদ ধ্বংস করা এবং মুসলমানদেরকে জোরপূর্বক হিন্দু বানানোয় জড়িত।
iii. ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর ঐসব অফিসারেরা যাদের হাত আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের রক্তে রঙিন।
iv. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবমাননাকারী। [৫]
[৪]
ভারতের ক্ষেত্রে আল-কায়েদার ভবিষ্যৎ কৌশল
সুতরাং আমরা বুঝতে পারলাম যে, আল-কায়েদা উপমহাদেশ (AQS) বর্তমানে যে নীতিমালা অনুসরণ করছে, তার আলোকে ভারতে তাদের ভবিষ্যৎ কৌশল হবে ধৈর্যশীল, দাওয়াতি, সচেতন ও দায়িত্বশীল।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি তার 'কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনঃ একই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি' বার্তায় বলেন-
"আমাদের লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। আমাদের অধ্যবসায়ী ও ধৈর্যশীল হতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন –
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ
“অর্থঃ আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জিহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।”
(সুরা আল-ইমরান ৩:১৪৬)" [৬]
আল কায়েদা ভারতের মুসলিম জনগণের ভেতর জিহাদী আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চায়, কিন্তু সরাসরি বড় ধরনের হামলা করে রাষ্ট্রীয় প্রতিশোধ বা মুসলিম নিধনের উসিলা তৈরি করতে চায় না। বিশেষ করে, তারা কেবলমাত্র সামরিক, গোয়েন্দা বা পুলিশি টার্গেটের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত আঘাত হানতে চায়। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে হামলা তাদের বর্তমান কৌশলের সম্পূর্ণ বিপরীত।
এ ছাড়া, ভারতীয় মুসলিমদের ওপর চলা নির্যাতন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচার চালানো, মুসলিমদের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা জাগানো এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে তাদের মূল লক্ষ্য। তারা চাইবে ভারতের মুসলিমরা নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা করুক, ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে সচেতন হোক এবং নির্যাতনের মুখে মাথা নত না করে ধীরে ধীরে প্রতিরোধের মানসিকতায় গড়ে উঠুক।
আল কায়েদা উপমহাদেশের প্রথম আমীর শহীদ মাওলানা আসেম উমর রহঃ "কুফরি স্লোগানের স্বীকৃতি নয়!" নামক বার্তায় বলেন-
"আপনাদের কুরআন আপনাদেরকে তাদের চক্রান্ত থেকে সতর্ক করছে “يُرْضُونَكُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ” অর্থাৎ এরা আপনাদের শুধু নিজেদের কথা দিয়ে খুশি করে … ভাল ভাল বক্তৃতা দিয়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার দাওয়াত দিয়ে আইন ও সংবিধানের মাধ্যমে ধোঁকা দিয়ে … এই দাঙ্গা-হাঙ্গামাগুলোকে রাষ্ট্রীয় হামলা বলার পরিবর্তে কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলোর ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দেয় … অথবা সরকারী মৌলভীদের মিষ্টি মিষ্টি কথার মাধ্যমে … বাস্তবে এরা সব একই … ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যা কিছু হয়, এতে রাষ্ট্র এবং এর প্রতিষ্ঠানগুলো সমানভাবে অংশগ্রহণ করে।" [৭]
আল কায়েদা উপমহাদেশের বর্তমান আমীর উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ "কাশ্মীর… সিংহদের জেগে উঠার সময় এখনই!" নামক বার্তায় বলেন-
"শান্তির ভাষা তো কেবল তার সাথেই বলা যেতে পারে, যে নিজে শান্তিবাদী হবে, আঘাতকারী হবে না। এমনিভাবে যে নিজে ভাষার শক্তি এবং বুঝ ও বুঝানোর মাধ্যম ব্যবহার করে। কিন্তু শক্তিই যার ভাষা হবে, যে জুলুম, দাপট আর অস্ত্রের শক্তিতে অন্যকে কোণঠাসা করে রাখে, ইতিহাস সাক্ষী, এমন জালেমের সামনে শান্তিবাদী থাকা মানে স্বয়ং নিজের হাতেই নিজের অধিকার ধ্বংস করা। প্রাকৃতিক নিয়ম হচ্ছে, লোহাকে লোহাই কাটে। জুলুম–অত্যাচার, দাম্ভিকতা এবং অবাধ্যতাকে যদি কোন বস্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তবে তা সত্যের তরবারি। যদি শুধু আলোচনার ভিক্ষা, নিন্দার স্মারকলিপি আর ঐক্যবদ্ধ বিক্ষোভ দিয়েই ছিনতাইকৃত অধিকার আদায় করা যেত, তবে কাশ্মীর থেকে ফিলিস্তিন পর্যন্ত মুসলমানদের চোখের পানি মুছে যেত।" [৮]
সুতরাং পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই হামলা কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সংঘটিত হয়েছে। তবে, আল-কায়েদা ইন দ্য সাবকন্টিনেন্ট (AQS) এর বর্তমান কৌশল অনুযায়ী, বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা পরিত্যাজ্য। আল-কায়েদা এখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী, সামরিক স্থাপনা এবং শত্রু সরকারের সম্পদকে অগ্রগণ্য লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করে, বেসামরিক নাগরিকদের নয়।
*****
সংশ্লিষ্ট লিংকসমূহ-
[১] https://x.com/Masoodch06/status/1915095860586922189
[২] https://x.com/Ezkaferno1373/status/1915882509113463207
[৩] https://x.com/TracTerrorism/status/1800117390774239298
[৪] https://gazwah.net/?p=24117
[৫] https://gazwah.net/?p=10727
[৬] https://gazwah.net/?p=39727
[৭] https://gazwah.net/?p=5688
[৮] https://gazwah.net/?p=26320
Comment