Announcement

Collapse
No announcement yet.

লোন উলফ হামলার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক: একটি বিশ্লেষণ || মুনশি আব্দুর রহমান

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • লোন উলফ হামলার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক: একটি বিশ্লেষণ || মুনশি আব্দুর রহমান

    লোন উলফ হামলার কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক: একটি বিশ্লেষণ
    -মুনশি আব্দুর রহমান


    সম্প্রতি ফেসবুকে ভাই Ysus Zulkarnain আল-কায়েদা বিষয়ক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। তার একটি বক্তব্যের সারকথা ছিল: “লোন উলফ অ্যাটাকের আসলে কী ফায়দা হয়েছে?” এই প্রবন্ধে আমরা তাঁর উত্থাপিত দ্বিতীয় আপত্তিটির আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো। সময় ও সুযোগ হলে ইনশা আল্লাহ অন্যান্য আপত্তিগুলো নিয়েও পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ-

    দ্বিতীয় আপত্তি:
    ভাই বলেছেন- “আবার এটাও সত্যি যে ২০০৬ সালের পরে একিউ এর কিছু নির্দেশনা ছিল যে লোন উলফ এটাক করার। লন্ডনসহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক জায়গায় তারা এই ধরনের অ্যাটাক করেছে... আমি জানিনা এই এটা কে ফায়দা কি হয়েছে কিন্তু ব্যাপার হয়েছে যে আল্লাহর দুশমনরা সবাই এক হয়ে একিউ কে নির্মূল করতে নেমেছে... ”

    উত্তর:

    কৌশলগত প্রেক্ষাপট
    লোন উলফ কৌশলের উৎপত্তি বোঝার জন্য ২০০১–২০১০ সালের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফিরে তাকাতে হয়। ৯/১১ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্ররা আল-কায়েদার বিরুদ্ধে বহুমুখী আক্রমণ শুরু করে। প্রশিক্ষণ শিবির, নেতৃত্ব, যোগাযোগব্যবস্থা—সবই একে একে টার্গেট হয়। এই পরিস্থিতিতে সংগঠনের জন্য বড় ধরনের সমন্বিত অভিযান চালানো হয়ে পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়সাধ্য। ফলে বিকল্প কৌশল হিসেবে আত্মপ্রণোদিত, বিচ্ছিন্ন হামলার ধারণা গুরুত্ব পায়—যা পরবর্তীতে পরিচিত হয় "লোন উলফ" হামলা নামে। [১]

    ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন কৌশল
    এখানে লক্ষণীয়, আল-কায়েদা কখনও একক কোনো কৌশলের উপর নির্ভর করেনি। আফগানিস্তানে তারা গেরিলা ও সামরিক যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, ইয়েমেনে আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, আবার সাব-সাহারান আফ্রিকায় শরিয়াহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করেছে। সুতরাং, লোন উলফ হামলা ছিল পরিস্থিতিভিত্তিক একটি বিকল্প পথ, কোনো চূড়ান্ত কৌশল নয়।


    পশ্চিমা অর্থনীতি ও সমাজে লোন উলফ হামলার প্রভাবঃ
    আল-কায়েদার দ্বারা অনুপ্রাণিত "লোন উলফ অ্যাটাক" (Lone Wolf Attacks)—অর্থাৎ এমন হামলা যেখানে একজন ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে, সংগঠনের সরাসরি নির্দেশ ছাড়া, আল-কায়েদার মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে হামলা চালায়—এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে বেশ কয়েকটি ক্ষতি হয়েছে। নিচে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হলো:

    ১. অত্যধিক নিরাপত্তা ব্যয়ের চাপ
    লোন উলফ অ্যাটাকের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে জাতীয় নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের উপর। আমেরিকা ও ইউরোপের বহু দেশে সরকারগুলোকে—
    বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, শপিংমল, স্টেডিয়াম, স্কুল—সবখানে নিরাপত্তা জোরদার করতে হয়েছে। Surveillance (CCTV, facial recognition, AI tracking) প্রযুক্তিতে হাজার হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে। “Prevent” ও “Counter-Extremism” প্রোগ্রামের নামে অভিবাসী কমিউনিটির ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যার জন্য প্রশাসনিক খরচ বেড়েছে।
    উদাহরণ:৯/১১-এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Homeland Security বাজেট ২০০১ সালে ছিল $১৬ বিলিয়ন, যা ২০২০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়ায় $৭৪ বিলিয়নে। লোন উলফ অ্যাটাকগুলোর হুমকিতে এই খরচ আরও তীব্র হয়েছে।

    ২. পর্যটন ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব
    লোন উলফ অ্যাটাকের কারণে ইউরোপ ও আমেরিকায় পর্যটক কমে গেছে হামলার সময় ও তার পরবর্তী বছরগুলোতে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোকে নিরাপত্তা ঝুঁকি মাথায় রেখে উচ্চ প্রিমিয়াম নির্ধারণ করতে হয়েছে।
    উদাহরণ: ২০১৬ সালের ফ্রান্সের নিস (Nice) শহরে হামলার পর, ফ্রান্সে পর্যটন কমে যায় প্রায় ২০%। দেশটির ট্যুরিজম খাত এক বছরে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিটেন ও জার্মানির বেশ কিছু শহরে হামলার ফলে হোটেল বুকিং, ট্যুরিজম ও খুচরা বাজারে বিক্রি হ্রাস পেয়েছে। [২]

    ৩. স্টক মার্কেট ও বিমা কোম্পানির ঝুঁকি বৃদ্ধি
    যখনই কোনও লোন উলফ অ্যাটাক হয়, বিশেষ করে যদি তা বড় শহরে হয়, তখন, সেই দেশের স্টক মার্কেট স্বল্পমেয়াদে পড়ে যায় (প্যানিক সেলিং), বিমা কোম্পানিগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, High-risk sector যেমন এয়ারলাইন, হসপিটালিটি, ট্যুরিজম ইত্যাদি কোম্পানির শেয়ারে পতন হয়।
    উদাহরণ:২০১৭ সালে লন্ডনের ব্রিজ হামলার পর, FTSE 100 সূচকে প্রায় ১.৩% পতন হয়। এমনকি ইউরোপীয় পর্যটন কোম্পানির শেয়ারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    আমেরিকার অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আল কায়েদা ইয়েমেনের শাইখ কাসিম আর রিমি রহঃ প্রায় পাঁচ বছর পূর্বেই বলেছিলেন-

    "একই অবস্থা আজ আমেরিকার। কথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেভাবে আমেরিকা জড়িয়েছে, তাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের যে ক্ষতি হয়েছিল, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লোকসান তাদের গুনতে হচ্ছে। দুই সময়ে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কখনই এক নয়। এতে করে অভ্যন্তরীণভাবে আমেরিকা এখন চাপে পড়েছে।

    স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকা একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। যেকোনো কিছুই তার দৃষ্টিতে ব্যবসায়িক পণ্যের মত। এমনকি যদি তাদের নির্বাচনের কথা বলি সেটাও কি দিয়ে হয়? অর্থের মাধ্যমেই।

    বর্তমানে চীনের কাছে আমেরিকা প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার ঋণী। বিশাল পরিমান ঋণ। এক ট্রিলিয়নে এক হাজার বিলিয়ন। আর এক বিলিয়ন সমান এক হাজার মিলিয়ন। এক মিলিয়নে হলো দশলাখ। এবার বুঝেন – এটাকে বলে ট্রিলিয়ন। তো এক ট্রিলিয়নে কত? হিসাব বিজ্ঞানীরা বলেন- একটি ফুটবল খেলার মাঠের সমান। অর্থাৎ আমরা যদি শুধু দশ হাজার নোট দিয়ে একটি ফুটবল খেলার মাঠ সাজিয়ে দেই, সেই মাঠটি ফুল/সম্পূর্ণ ভরে যাবে। এটা হলো এক ট্রিলিয়ন। ভালো কথা, বলছিলাম, আমেরিকার ঘাড়ে যেই ঋণের বোঝা, যা তাদের সরকারই স্বীকার করেছে, তার পরিমাণ- বিশ ট্রিলিয়নের চাইতেও বেশি।" [৩]


    উপসংহার
    লোন উলফ হামলা সংখ্যায় সীমিত হলেও এর সাইকোলজিক্যাল, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অভিঘাত দীর্ঘস্থায়ী ও গভীর। পশ্চিমা সমাজে নিরাপত্তাহীনতা, সন্দেহ ও অতিরিক্ত খরচের যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তা মূলত একটি “কম ব্যয়ে, অধিক ব্যাঘাত” (Minimal cost, maximal disruption) কৌশল—যা আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের একটি রূপ।

    এখন প্রশ্ন উঠতে পারে—এই কৌশল সফল কি না? উত্তর নির্ভর করে আপনি কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। যদি কৌশলগত ব্যাঘাত, অর্থনৈতিক ক্ষয় ও মনস্তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি তৈরি করার দিক থেকে দেখেন, তাহলে লোন উলফ হামলা নিঃসন্দেহে লক্ষ্যপূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
    সুতরাং পশ্চিমা বিশ্বে লোন উলফ যে আল কায়েদার একটি সফল গেরিলা কৌশল, তা সচেতন মানুষ মাত্রই স্বীকার করবেন।

    মনে রাখবেন, আফগানিস্তান আমাদের সবার প্রিয় ইসলামী ইমারত। কিন্তু ফ্রান্সে বা ডেনমার্কে রাসুল অবমাননার একটা ঘটনা ঘটলে ইমারতের কাছে হাজার হাজার মুজাহিদ থাকা সত্ত্বেও এটার প্রতিশোধ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। লোন উলফ স্টাইলে হামলা করাই তখন হবে মুমিনদের প্রতিশোধের একমাত্র উপায়।

    সর্বশেষ একটা কথা বলতে চাই। লোন উলফ স্টাইলে এ্যাটাকের কার্যকারিতা ও উপকারিতা প্রমাণের জন্য এটাই যথেষ্ট, যে যখন শার্লি এবদো পত্রিকা কিংবা এ ধরনের জায়গায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবমাননা করা হয়, যখন সারা পৃথিবীতে দেড়শ কোটির বেশি মুসলিমদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়, অক্ষম আক্রোশে সবার মাঝে তীব্র আফসোস ও হাহাকার ঘনীভূত হয়, তখন শত কোটি মুসলমানের হৃদয়কে প্রশান্ত করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হক আদায় করেন মাত্র দুই একজন মুসলিম মুজাহিদ ভাই; শাতিমের উপর লোন উলফ স্টাইলে হামলা চালানোর মাধ্যমে। মনে রাখবেন, আফগানিস্তান আমাদের সবার প্রিয় ইসলামী ইমারত। কিন্তু ফ্রান্সে বা ডেনমার্কে রাসুল অবমাননার একটা ঘটনা ঘটলে ইমারতের কাছে হাজার হাজার মুজাহিদ থাকা সত্ত্বেও এটার প্রতিশোধ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। লোন উলফ স্টাইলে হামলা করাই তখন হবে মুমিনদের প্রতিশোধের একমাত্র উপায়।
    *****

    সংশ্লিষ্ট লিংকসমূহ-
    [১] লোন উলফ অপারেশনের বিধান, নীতিমালা এবং কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে পড়ুন-
    - “একাকী জিহাদের বিধিবিধান!”– শায়খুল মুজাহিদ হামুদ আত তামিমি রহঃ- https://archive.ph/qwdWM
    - লোন উলফ মুজাহিদ ও ক্ষুদ্র জিহাদী ইউনিটের প্রতিরক্ষা কৌশল – শাইখ আবু উবাইদা আব্দুল্লাহ আল আদাম- https://archive.ph/sriHr
    - বাংলায় প্রকাশিত 'লোন উলফ ম্যাগাজিন' - লোন উলফ ম্যাগাজিন| Lone Wolf Magazine ┇রজব ১৪৪০ | মার্চ ২০১৯ - https://archive.ph/41L66
    - এবং Letter To The Insider-ভিতরের ভাইয়ের প্রতি খোলা চিঠি || Lone Wolf Magazine-Issue 2- https://archive.ph/rmSdE
    [২] ইন্সপায়ার গাইড – নিস অপারেশন, ফ্রান্স - https://archive.ph/FjuQj
    [৩] “জিহাদের সাধারণ দিকনির্দেশনা” -এর উপর ব্যাখ্যামূলক আলোচনা (পর্ব-১) – শাইখ কাসিম আর-রীমি রহিমাহুল্লাহ- https://archive.ph/L89z5
    “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
    -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

  • #2
    হাবিল কাবিল থেকে শুরু, মানবজাতি কেয়ামত পর্যন্ত একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ে যাবে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে এই ফিতরাতের উপরেই সৃষ্টি করেছেন। এখানে বান্দার কাছে আল্লাহর চাওয়া- বান্দা এই লড়াইটা তার মালিকের জন্য লড়বে, এটুকুই।
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহ খইর... মাশা আল্লাহ ভাই।
      মুহতারাম ভাই, ইয়াসুল জুলকারনাইন ভাই সহ আরও কিছু ভাই এমন বিভিন্ন রকমের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এগুলোর এমন কিছু দালিলিক উত্তর প্রয়োজন ছিল।​
      Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.

      Comment


      • #4
        মনে রাখবেন, আফগানিস্তান আমাদের সবার প্রিয় ইসলামী ইমারত। কিন্তু ফ্রান্সে বা ডেনমার্কে রাসুল অবমাননার একটা ঘটনা ঘটলে ইমারতের কাছে হাজার হাজার মুজাহিদ থাকা সত্ত্বেও এটার প্রতিশোধ নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবেনা। লোন উলফ স্টাইলে হামলা করাই তখন হবে মুমিনদের প্রতিশোধের একমাত্র উপায়।
        আল্লাহ আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। সকল বিভ্রান্তি থেকে হেফাযত করুন। আমীন
        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

        Comment


        • #5
          আমি যে কথাটি বলতে যাচ্ছি, সেটি বলার পূর্বে একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিতে চাই—ব্যক্তিটি যাকে নিয়ে বলছি, তিনি কোনো সুসংগঠিত কাঠামোর "লোন উলফ" অংশ ছিলেন না, বরং একজন একক ব্যক্তি যিনি বিশাল পরিবর্তনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন।

          অনেকেই নিশ্চয়ই রাফিদ আহমেদ আল-জানাবির নাম শুনেছেন—একজন ইরাকি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ৯/১১ এর পরে তাকে আটক করে গুয়ানতানামোতে নেওয়া হয় এবং বর্বর নির্যাতনের মুখে ফেলা হয়। সেই নির্যাতনের প্রেক্ষিতে তিনি একটি ‘স্বীকারোক্তি’ দেন, যেখানে তিনি দাবি করেন—সাদ্দাম হোসেনের সরকার মোবাইল বায়োলজিক্যাল অস্ত্রের ল্যাব নির্মাণ করছে এবং এর সঙ্গে আল-কায়েদার সংযোগ রয়েছে।

          এই তথাকথিত স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে আমেরিকা ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আফগানিস্তান থেকে মনোযোগ সরিয়ে আমেরিকা ইরাকে আক্রমণ করে, যার ফলাফল ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে চরম অস্থিরতা। আমেরিকা সেই যুদ্ধে এমনভাবে আটকে যায়, যেন এক অনিবার্য চোরাবালিতে পা দিয়ে ফেলেছে।

          এই ঘটনাটির প্রসঙ্গ তোলার উদ্দেশ্য একটি—অনেকেই মনে করেন যে ‘লোন উলফ’ ধরণের প্রচেষ্টা কখনো বাস্তব কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা চাইলে একজন একক ব্যক্তিকেও এমনভাবে ব্যবহার করতে পারেন, যার মাধ্যমে শত্রুদের শক্তি ভেঙে পড়ে। আল্লাহর কুদরত সীমাহীন, এবং তাঁর পরিকল্পনার গভীরতা আমাদের চিন্তার গণ্ডির বহু ঊর্ধ্বে।


          আমরা অনেক সময় ধারণা করি, যে কোনো জিহাদ বা প্রতিরোধ আন্দোলন রাতারাতি গড়ে ওঠে—মানুষ ঘুম থেকে উঠে দলে দলে যুদ্ধে নেমে পড়বে। বাস্তবতা তা নয়। দুনিয়ার বাস্তবতা, কৌশল ও ইতিহাস বলে, বড় কোনো যুদ্ধ বা বিপ্লব গঠিত হয় দীর্ঘ প্রস্তুতি, ছোট ছোট আঘাত, এবং ধারাবাহিক কৌশলগত পদক্ষেপের মাধ্যমে।

          উদাহরণস্বরূপ, শাইখ ওসামা বিন লাদেন (রাহিমাহুল্লাহ) বহু আগ থেকেই আমেরিকাকে যুদ্ধে টেনে আনার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু তা একদিনে হয়নি। তাকে একের পর এক হামলা করতে হয়েছে—ইউএসএস Cole এ হামলা, আফ্রিকার মার্কিন দূতাবাসে বিস্ফোরণ, নানা জায়গায় সামরিক আক্রমণ—এসবই ছিল একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। এগুলোর অধিকাংশই ছিল ছোট ছোট অপারেশন, অনেকটা ‘লোন উলফ’ হামলার মতো। কিন্তু সেগুলোর মাধ্যমে আমেরিকাকে এমনভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়েছিল, যাতে তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে বাধ্য হয়।

          সুতরাং আমাদের অনুধাবন করা উচিত যে, ইতিহাস কেবল সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ বা রাষ্ট্রপ্রধানদের উচ্চবাচ্যেই গঠিত হয় না। অনেক সময় একজন বন্দি, একজন ইঞ্জিনিয়ার কিংবা একটি দৃঢ়চেতা উচ্চারণই ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এসবই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নির্ধারিত পরিকল্পনার অংশ—যার রহস্য তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না।

          এজন্য যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার আদর্শে বিশ্বাসী, তাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন ধৈর্য, প্রস্তুতি ও সুস্পষ্ট কৌশল অবলম্বন। আমাদের বোঝা উচিত, কৌশলগত পার্থক্য থাকতেই পারে, কারণ দ্বীনের ময়দানে কাজের ধরন এক নয়। কারও কৌশল হয়তো আমার পথের সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না, কিন্তু তাতে তার নীতিগত বিশুদ্ধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না—যদি তা শরিয়তের সীমারেখা লঙ্ঘন না করে।

          এই জায়গায় আমাদের প্রয়োজন সুন্নাহসম্মত উদারতা। আমার পথ যদি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ অনুসরণ করে হয়, এবং অন্য ভাইয়ের পথও যদি একইভাবে সুন্নাহর আলোকে নির্মিত হয়, তাহলে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা জরুরি। অহেতুক একে অপরকে বাতিল বা 'দালাল' আখ্যা দিলে আমরা শত্রুর হাতকে শক্তিশালী করি, আর নিজেদের ভিত দুর্বল করে ফেলি।

          আল্লাহর দীনের জন্য কাজ করার মানসিকতা যদি আমাদের সবার মধ্যে থাকে, তাহলে ভিন্ন পথের কৌশলকে বিনাশ নয়—বরং সহনশীল দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করাই হবে রাসূলের উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের প্রজ্ঞার পরিচয়।
          فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

          Comment

          Working...
          X