আল-কায়েদা: ইসলামপন্থীদের এক নিঃস্বার্থ বন্ধু
-মুনশি আব্দুর রহমান
-মুনশি আব্দুর রহমান

(১)
বাংলাদেশের ইসলামী অঙ্গনে হেফাজতে ইসলাম একটি স্বতন্ত্র ও খালেস ইসলামী দল হিসেবে পরিচিত, যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর মূলনীতির ওপর অবিচল থেকে সমাজে দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলো হেফাজতের লক্ষ্যে আহ্বান জানিয়ে এসেছে। কওমি মাদরাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি ২০১৩ সালে তাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ও ভয়াবহ অধ্যায়ের মুখোমুখি হয়, যেদিন তারা রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমবেত হয়ে কেবল একটি ন্যায্য ও ঈমানী দাবিই তুলেছিল—আল্লাহ ও রাসূল ﷺ-কে গালাগালি করা নাস্তিক ব্লগারদের বিচারের দাবি।
এই দাবি কোনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষপ্রসূত ছিল না। এটি ছিল ঈমানি হুঙ্কার, রাসূলের ﷺ ইজ্জতের রক্ষার্থে খালিস ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু দেশের ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকার, যাদের শাসনব্যবস্থা ইসলামবিরোধী আদর্শে গড়া এবং যারা ইসলামকে কেবল একটি নিছক সংস্কৃতি হিসেবে দেখতে চায়, তারা রাতের অন্ধকারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শত শত তালিবে ইলম ও নিরস্ত্র মুসল্লিদের ওপর নামিয়ে আনে ভয়াবহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। এই জঘন্য গণহত্যা শুধু একটি আন্দোলন দমন করাই ছিল না, বরং ছিল নবীপ্রেমের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।
তবে এখানেই শেষ নয়। যখন দেশের ভেতরকার ইসলামপন্থীরা রাষ্ট্রের দমন-পীড়নে নতজানু এবং নানা কৌশলে ব্যস্ত ছিল, তখন বিশ্বমুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৈশ্বিক প্রতিরোধ আন্দোলন—আল-কায়েদা—এই অন্যায়ের জবাব দিতে এগিয়ে আসে। তারা কেবল মুখে প্রতিবাদ করেনি, বরং কার্যকর প্রতিশোধ গ্রহণ করেছে। ব্লগার নামধারী শাতিমদের যারা প্রকাশ্যে আল্লাহ ও রাসূল ﷺ সম্পর্কে অশ্লীল ও কটূক্তিমূলক লেখা লিখেছিল, তাদের অনেককে আল-কায়েদা চিহ্নিত করে টার্গেট করে হত্যা করে।
এটা নিছক কোনো রাজনৈতিক প্রতিশোধ ছিল না, বরং শরিয়তের নির্ভরযোগ্য ফতওয়ার ভিত্তিতে কুফরি ও শাতিমদের উপর শরঈ হদ প্রয়োগের একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত। এক্ষেত্রে আল-কায়েদা দেখিয়েছে যে, নবী ﷺ-র ইজ্জত রক্ষার প্রশ্নে তারা কারও চাপ বা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের অপবাদকে ভয় পায় না। তারা প্রমাণ করেছে যে, উম্মাহর যেকোনো প্রান্তে কেউ নবী ﷺ-এর অবমাননা করলে তার জবাব দেয়া মুসলমানদের ঈমানি দায়িত্ব, এবং এই দায়িত্ব পালনে তারা অগ্রণী।
ফলে নিঃসন্দেহে বলা যায়—বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলন, বিশেষত হেফাজতে ইসলাম, যারা এক সময় নিজেদের রক্ত দিয়ে নবীপ্রেমের অঙ্গীকার রেখেছিল, তাদের জন্য, এবং এ দেশের সমস্ত মুসলিমের জন্য আল-কায়েদা এক নিঃস্বার্থ বন্ধু। একদিকে যখন রাষ্ট্র, মিডিয়া ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ইসলামপন্থীদের দমন করছে, অন্যদিকে আল-কায়েদা সেই ঈমানি সংগ্রামের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বন্ধু, প্রতিনিধি, সহযোগী ও মুখপাত্র হয়ে উঠেছে।
(২)
বাংলাদেশের প্রতিটি উল্লেখযোগ্য ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্দোলনের ইতিহাস যদি আমরা পৃষ্ঠা উল্টে উল্টে দেখি, একিউপন্থীদের ত্যাগ ও অংশগ্রহণ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হবে। হোক তা শাপলা চত্বরের ঘনঘোর রাতে, কিংবা ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবীতে রাস্তায় উত্তাল জনতার মাঝে—এই না দেখা গ্রুপটি কখনো নিঃশব্দে, কখনো আড়ালে থেকে আন্দোলনের ইন্ধন জুগিয়েছে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হলো, যখন আন্দোলনের ফল ঘরে ওঠে, তাদের নামটি বাদ দেয়া তো হয়ই, তাদের আবেদন ও অবদানকেও অস্বীকার করা হয়। কখনো উদ্দেশ্যমূলকভাবে, কখনো কৌশলগত রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে। এটি নিছক উপেক্ষা নয়—এ এক নিষ্ঠুর ইতিহাসচাপা দেয়া।
একিউ সমর্থকরা শুধু মাঠেই ছিল না, বরং একিউর কেন্দ্রীয় ও উপমহাদেশীয় নেতৃত্বও বিবৃতি-বার্তা দিয়ে এই সকল আন্দোলন-সংগ্রামে উৎসাহ ও নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। আসুন আমরা নিম্নে কিছু উদাহরণ দেখি-
১. ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের এপ্রিল মাসেই একিউ উপমহাদেশের তৎকালীন দাওয়াহ বিভাগের প্রধান উস্তাদ আহমদ ফারুক নবিপ্রেমিকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি "বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বার্তা- হাজ্বী শরীয়াতুল্লাহর জমীনে আল্লাহর শরীয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ …?" নামক বক্তব্যে বলেছিলেন-
"যে দেশে কোটি কোটি মানুষ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দুরুদ পাঠ করে, সেদেশেই লানতপ্রাপ্ত, ঘৃন্য ও নিকৃষ্ট প্রকৃতির এক ব্যক্তি গজিয়ে উঠে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে, হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ), উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এবং পুত-পবিত্র সাহাবায়ে কেরামগণকে (রাঃ) কল্পনাতীত জঘন্য ও নীচু ভাষায় আক্রমণ করেছে। এই লানতপ্রাপ্ত ব্লগার আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা করেছে যিনি আমাদের অন্তরের প্রশান্তি, যিনি আমাদের চোখের শীতলতা। সে তাঁকে অবমাননা করেছে, তার কুরুচিপূর্ণ লেখায় তাঁকে মূল চরিত্র হিসেবে তুলে ধরেছে এবং সকল প্রকার লজ্জা ও ভদ্রতা ভুলে গিয়ে তার নিজের পাশব বাসনা ফুটিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছে। তার উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক এবং ঐ যুবকদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক যারা এই লানতপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে হত্যা করে মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্ত করেছেন।" [১]
২. ৫ই মে'র রাতে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ডাকে আসা নবী-প্রেমিক তাওহিদি জনতার উপর যখন হাসিনা সরকার গণহত্যা চালিয়েছিল, তখন খোদ একিউর আমীর শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি তাঁর "বাংলাদেশঃ নিরবতার দেয়ালে চাপা পড়া গণহত্যা" নামক বক্তব্যে গর্জে উঠে বলেছিলেন-
"হে মুসলিম উম্মাহ!
বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনা এই কথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, পশ্চিমা মিডিয়া ও ইসলামী বিশ্বের মিডিয়াগুলো এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বক্রিয় ভূমিকা পালন করছে, এরা পশ্চিমা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ভারত ও ইসলামের অন্যান্য শত্রুগুলোর পাশাপাশি কাজ করছে। হাজার হাজার মানুষকে বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে হত্যা করা হয়েছে, কিন্তু কেউই তাদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যায় নি। বরং মিডিয়াগুলো এই ঘটনাটিকে এমনভাবে পাশ কাটিয়ে গেছে যেন কিছুই হয় নি। সরকারের পক্ষ থেকে একটা বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছিল: মৃতের সংখ্যা নাকি একশত এর কাছাকাছি। সুতরাং, এভাবেই বাংলাদেশে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং এখনোও হত্যা করা হচ্ছে, কিন্তু পশ্চিমারা নীরব দর্শক। আর ভারত তো এমনকি এই শোকাবহ ঘটনার ব্যাপারে তার আনন্দও প্রকাশ করেছে। আমেরিকা ও ভারত এই ঘটনার পরে বাংলাদেশী সরকারকে আরও বেশী সহযোগিতা করা শুরু করেছে।" [২]
৩. ওই সময় হাসিনা সরকার যখন জামাত নেতাদের একেরপর এক ফাঁসি ও দণ্ড দিতে থাকে, তখন উস্তাদ আহমদ ফারুক জামাত নেতাদের পক্ষে গর্জে উঠে বলেছিলেন-
"দেশের সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাটি মুছে ফেলা হয়েছে। ইসলামী শরীয়াত বাস্তবায়নের জন্য যেকোন কার্যক্রমকে সংবিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য দাবী তোলা হয়েছে। এমনকি যেসকল ধর্মীয় দল ‘গণতান্ত্রিক খেলায়’ অংশগ্রহণ করে, তাদেরকেও ছাড়া হয়নি। তাদের নেতৃবৃন্দকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড কিংবা মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এটা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এই ব্যাপারে চিন্তা করলেও গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায় এবং উচ্চারণ করতে গেলেও ভয়ে জিহবা আড়ষ্ট হয়ে আসে।" [৩]
৪. যখন হেফাজতসহ বাংলাদেশের তাবৎ ইসলামপন্থীরা শাতিম ও নাস্তিকদের আস্ফালন বন্ধে ব্যর্থ হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই শাতিমদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে তাদের গর্তে প্রবেশ করিয়েছিল এই একিউর বাংলাদেশী যোদ্ধারা। এটির স্বীকারোক্তি দিয়ে একিউ উপমহাদেশ শাখার তৎকালীন আমীর মাওলানা শানুল হক (আসিম উমর) রহঃ হুঙ্কার দিয়ে বলেছিলেন-
"সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতের মধ্যে এমন রসূলের আশেক সৃষ্টি করেছেন; যারা তাদের হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করছে। ফ্রান্স, ডেনমার্ক, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশে দ্বীনের উপহাসকারী ও রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কটূক্তিকারীদের এমন উচিত শিক্ষা দিচ্ছে, যা দেখে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতের হৃদয় শীতল হচ্ছে এবং মুনাফিকদের অন্তর দাউ দাউ করে জ্বলছে।
আল্লাহর সাহায্যে আল-কায়েদা উপমহাদেশের ভাইয়েরা বেশ কিছু দ্বীনের উপহাসকারী এবং রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কটূক্তিকারীদেরকে জাহান্নামে পাঠিয়ে দিয়েছে। করাচীতে ডা. শাকিল ওজ এবং আনিকা নাজ (ব্লগার) আর বাংলাদেশে আহমেদ রাজীব হায়দার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যিন্দিক প্রফেসর এবং সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট ব্লগার আমেরিকান অধিবাসী হিন্দু অভিজিৎ রায়কে আল-কায়েদা উপমহাদেরশের মুজাহিদ ভাইয়েরা মাংস কাটার চাপাতি দিয়েই হত্যা করেছে।" [৪]
৫. হেফাজতের শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও জামাত-শিবিরের উপর সাতক্ষীরায় হওয়া গণহত্যার ব্যাপারে একিউ উপমহাদেশ শাখার বর্তমান আমীর উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেন-
"২০১৩ সালে ঢাকার ভেতরে এক দীনি সমাবেশে রাতে অভিযান এবং শুধু এক রাতেই নীরবে এক হাজারেরও বেশি মুসলমানকে শহীদ করা; এরপর ভারতের সীমান্তে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার ভেতরে স্বয়ং ভারতের সামরিক বাহিনীর পূর্ণ অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সাথে মিলে পঞ্চাশের বেশি মুসলমানকে হত্যা এবং তাঁদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস … হায়! ঘটনা যদি এখানেই শেষ হতো, কিন্তু না.. এখানে শেষ হয়নি। আজ একদিকে আহলে ঈমানদের ফাঁসি, হত্যার পর হত্যা এবং বন্দী করার ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে এবং অন্যদিকে দীনের শত্রু মুলহিদ ও রাসূল (ﷺ) এর অবমাননাকারীদের মতো নিকৃষ্ট সৃষ্টিরা পুরোপুরি আশ্রয় প্রশ্রয় পাচ্ছে। অনেক লম্বা সময় থেকে বাংলাদেশের মুসলমানদের উপর এক যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতার চেহারায় মুশরিক হিন্দুদের নেতৃত্বে ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।" [৫]
এই পুরো আলোচনা থেকে এটি সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে যে, একিউ বাংলাদেশের ইসলাম ও মুসলিমদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু আফসোস, আজ তাদের অবদানকে নির্লজ্জভাবে অস্বীকার করে তাদেরকেই হত্যার বৈধতা তৈরি করছে খোদ ইসলামপন্থী কিছু গোষ্ঠী।
(৩)
আলহামদুলিল্লাহ, বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে অন্তত ছয়জন ব্লগার ও লেখক নামধারী শাতিমকে হত্যা করা হয়েছে। তারা আল্লাহ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উম্মাহাতুল মুমিনিন এবং ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে কটূক্তি করেই যাচ্ছিল। এই অপারেশনগুলোর বেশিরভাগ আল কায়েদা করেছে। অর্থাৎ শাতিমদের উপযুক্ত বিচার আল কায়েদা করে দেখিয়েছে এবং মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত করেছে।
শাতিম হত্যাকাণ্ডের তালিকা
এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো শাতিমদের কে কখন, কোথায়, এবং কীভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছে—শুধু হত্যার কৌশল ও হামলার বিবরণ বিশ্লেষণ করছি।
১. আহমেদ রাজীব হায়দার (থাবা বাবা)
তারিখ: ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩
স্থান: মিরপুর, ঢাকার নিজ বাসার কাছাকাছি
কীভাবে হত্যা করা হয়:
কয়েকজন সাহসী তরুণ তার পিছু নিয়ে তার বাসার সামনেই অতর্কিতে রাস্তায় চাপাতি দিয়ে মাথা ও গলার পাশ কুপিয়ে ফেলে। ঘটনাস্থলেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়।
২. এ কে এম শফিউল ইসলাম
তারিখ: ১৫ নভেম্বর, ২০১৪
স্থান: রাজশাহী শহরের উপকন্ঠে নিজের বাড়ী থেকে অল্প দূরে
কীভাবে হত্যা করা হয়:
কয়েকজন সাহসী তরুণ তার পিছু নিয়ে বাড়ী থেকে অল্প দূরে তার মোটর সাইকেলের গতিরোধ করে চাপাতি দিয়ে হামলা চালায়। মস্তিস্কের আঘাতজনিত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। [৬]
৩. অভিজিৎ রায়
তারিখ: ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
স্থান: টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা
কীভাবে হত্যা করা হয়:
বইমেলা থেকে ফেরার পথে তার শাতিম বউসহ হাঁটছিল। দুঃসাহসী যুবকদের একটি দল পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে বারবার মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করে। সড়কের মাঝখানে ফেলে রাখেন। দ্রুত মৃত্যু ঘটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে। [৭]
৪. ওয়াশিকুর রহমান বাবু
তারিখ: ৩০ মার্চ, ২০১৫
স্থান: বেগুনবাড়ি, তেজগাঁও
কীভাবে হত্যা করা হয়:
সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় তিনজন দুঃসাহসী মুসলিম যুবক চাপাতি দিয়ে গলায় ও ঘাড়ে ধারালো কুপ মারেন। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ঘাতকরা পেছন থেকে আবারও আঘাত করে নিশ্চিত করে যে সে বেঁচে নেই। [৮]
৫. অনন্ত বিজয় দাশ
তারিখ: ১২ মে, ২০১৫
স্থান: সিলেট শহরের সুবিদবাজার এলাকা
কীভাবে হত্যা করা হয়:
সকালে ব্যাংকে যাওয়ার সময় চারজন সাহসী বীর তার পথরোধ করে। চাপাতি দিয়ে সামনের মাথায় ও গলায় ধারালো আঘাত করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময়ও একাধিকবার শরীরে আঘাত করে যাচ্ছিল। [৯]
৬. নীলয় নীল
তারিখ: ৭ আগস্ট, ২০১৫
স্থান: গোড়ান, ঢাকার নিজ বাসা
কীভাবে হত্যা করা হয়:
নিজের বাসায় একা থাকার সুযোগে ঘাতকরা "ভাড়াটিয়া" পরিচয়ে ভেতরে ঢুকে। এরপর রুমে নিয়ে গিয়ে প্রথমে চোখ বেঁধে ফেলে, তারপর ঘরে চাপাতি দিয়ে গলা, মাথা ও বুক কেটে ফেলে। বাসার ভেতরেই মৃত্যু ঘটে। [১০]
৭. দীপন (ফয়সাল আরেফিন দীপন)
তারিখ: ৩১ অক্টোবর, ২০১৫
স্থান: শাহবাগ, আজিজ সুপার মার্কেট
কীভাবে হত্যা করা হয়:
দুপুরে নিজের প্রকাশনা অফিসে বসে থাকার সময়, চারজন দুঃসাহসী যুবক ঘরে ঢুকে প্রথমে পেছন থেকে চেয়ারে বসা অবস্থায় চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। তার পর বারবার ঘাড়ে ও পিঠে কুপিয়ে হত্যা করে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। [১১]
৮. নাজিমুদ্দিন সামাদ
তারিখ: ৬ শে এপ্রিল, ২০১৬
স্থান: রাজধানী ঢাকার পুরোনো অংশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাঁটাপথ সূত্রাপুরের হৃষিকেশ দাস রোডে
কীভাবে হত্যা করা হয়:
চার-পাঁচজন দুঃসাহসী যুবক রাস্তাতেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। [১২]
৯ ও ১০. জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়
তারিখ: ২৫শে এপ্রিল, ২০১৬
স্থান: ঢাকার কলাবাগান এলাকায় লেক সার্কাস রোডে জুলহাজ মান্নানের বাসায়
কীভাবে হত্যা করা হয়:
বেশ কয়েকজন দুঃসাহসী যুবক বাসায় ঢুকে তাকে এবং তার সমকামী বন্ধু মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করেন। [১৩]
হামলার শিকার কিন্তু বেঁচে গেছে:
১. রাফিদা আহমেদ বন্যা
কীভাবে আহত করা হয়:
এই শাতিম নারী তার স্বামী অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে হামলার শিকার হয়। মাথা ও কাঁধে চাপাতির কোপ খায়। একটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২. আহমেদুর রশীদ টুটুল, তারেক রহিম, রণদীপম বসু
কীভাবে আহত করা হয়:
শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে ঢুকে কয়েকজন দুঃসাহসী যুবক এই তিনজনকে চাপাতি ও গুলি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। রক্তে ভেসে যায় ঘর।
৩. আসিফ মহিউদ্দিন
কীভাবে আহত করা হয়:
অফিস থেকে ফেরার সময় তিনজন দুঃসাহসী যুবক পেছন থেকে ছুরি দিয়ে ঘাড় ও পিঠে আঘাত করে। রাস্তায় পড়ে থাকলে পথচারীরা উদ্ধার করে।
৪. সানিউর রহমান
কীভাবে আহত করা হয়:
বাসার কাছেই পেছন থেকে হামলাকারী দুঃসাহসীরা মাথা ও হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক কোপ দেয়।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হল- সবগুলো হামলাতেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় নিবেদিত তরুণরা অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে যারা অপারেশন পরিচালনা করেছেন তারা সফলভাবে হামলা করে সরে পড়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুশমনদের পক্ষ নেওয়া সেক্যুলার বাহিনি এই তরুণদেরকে শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে, এই ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা বিনা প্রমাণে দ্বীনদার সাধারণ কিছু মানুষকে র্যান্ডমলি গ্রেফতার করে এসব ভুয়া মামলার আসামী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করেছে। কাউকে কাউকে হয়তো নির্যাতন করে মিথ্যা জবানবন্দী আদায় করেছে। [১৪]
আমাদের সবার জিম্মাদারী হল- শাতিম হত্যার অভিযোগে যাদেরকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছে, তাদের সবার মুক্তির দাবীতে আওয়াজ তোলা। যারা শাতিমদের হত্যা করেছেন এবং যারা হত্যা না করেও এই অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন তারা কেউই অপরাধী নন, বরং সবাই আমাদের বীর। তাদের সবার মুক্ত, সুস্থ ও নিরাপদ জীবনের জন্য কাজ করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
শেষ কথা
হেফাজতে ইসলাম ও আল-কায়েদা—দু’টি ভিন্ন প্রেক্ষাপটের সংগঠন হলেও একটিই বন্ধনে আবদ্ধ, সেটি হল নবীপ্রেম ও উম্মাহর রক্ষার আকাঙ্ক্ষা। একদল জান কোরবানি দিয়েছিল মাঠে নেমে, আরেকদল সেই কোরবানির ঋণ শোধ করেছিল প্রতিশোধ নিয়ে। এটাই হল বিশ্বমুসলিম ভ্রাতৃত্বের বাস্তব রূপ, যেখানে মাযহাব, অঞ্চল বা কৌশলের ভিন্নতা থাকলেও ঈমান ও ইজ্জতের প্রশ্নে সবাই একত্রিত হয়ে যায়।
*****
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লিংক-
[১] বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বার্তা- হাজ্বী শরীয়াতুল্লাহর জমীনে আল্লাহর শরীয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ …?- উস্তাদ আহমেদ ফারুক- https://archive.ph/sBO4g
[২] বাংলাদেশঃ নিরবতার দেয়ালে চাপা পড়া গণহত্যা – শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি- https://archive.ph/KaOZk
[৩] বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বার্তা- হাজ্বী শরীয়াতুল্লাহর জমীনে আল্লাহর শরীয়াতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ …?- উস্তাদ আহমেদ ফারুক- https://archive.ph/sBO4g
[৪] বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে অভিজিৎ রায় ও অন্যান্য কটূক্তিকারীদের গুপ্তহত্যা প্রসঙ্গে - এ ধুলা কখনই মিটবে না – মাওলানা আসেম উমার- https://archive.ph/7ZMYy
[৫] উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ’র বিশেষ সাক্ষাৎকার (প্রথম পর্ব)আমরা কি চাই? উপমহাদেশ ভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন – প্রকৃত বাস্তবতা!- https://archive.ph/vnx5N
[৬] রাজশাহীতে সমাজ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট ও ক্লাসে বোরখা নিষিদ্ধকারী যিন্দিক এ কে এম শফিউল ইসলামকে হত্যার দায় স্বীকারের বার্তা- https://archive.ph/cAzvV
[৭] মুক্তমনাদের গুরু অভিশপ্ত অভিজিৎ রায়কে হত্যার দায় স্বীকারের বার্তা- https://archive.ph/Xuzx2
[৮] এ ধুলা কখনই মিটবে না – মাওলানা আসেম উমর (হাফিজাহুল্লাহ) [বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে শাতিমে রাসুল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা উপমহাদেশের বিবৃতি] - https://archive.ph/bj8ij
[৯] আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটূক্তিকারী, মুক্তমনা ব্লগের এডমিন অনন্ত বিজয় দাসকে হত্যার দায় স্বীকারের বার্তা- https://archive.ph/LSOCM
[১০] আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) কটুক্তিকারী “নিলয় নীল” হত্যাকান্ডের দায়ভার গ্রহণ- https://archive.ph/Ra4xG
[১১] claim the assaults on Ahmedur Rashid Tutul & Foysal Arefin Dipon- https://archive.ph/pD5iU
[১২] নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যাকান্ডের পর প্রদত্ত বিবৃতি- https://archive.ph/BcEPP
[১৩] সমকামিতার প্রচারক ‘জুলহাজ মান্নান’ ও ‘সামির মাহবুব তনয়’ হত্যাকান্ডের দায়ভার গ্রহণ- https://archive.ph/crKar
[১৪] বাংলাদেশে আল্লাহ্, রাসূল ( সা: ) ও দ্বীন নিয়ে কটুক্তিকারীদের হত্যা: বিচারের নামে নিরপরাধ মুসলিমদের মৃত্যুদণ্ডের রায় আল কায়েদা উপমহাদেশ শাখার বিবৃতি- https://archive.ph/J5R7T
Comment