Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলা: গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসন ও ইসলামপন্থার ভূমিকা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথচলা: গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসন ও ইসলামপন্থার ভূমিকা

    গত কিছুদিন আগে আমি ফোরামে একটা পোস্ট করেছিলাম, সেখানে বলার চেষ্টা করেছিলাম কেন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণ করা উচিত।

    সেই পোস্টের মন্তব্যে এক ভাই আশাব্যাক্ত করছিলেন যেন আমি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের ফলাফল সম্পর্কে লিখি। এছাড়াও সোস্যাল মিডিয়াতে এই বিষয়কে কেন্দ্র করে অনেকের বাড়াবাড়ি ও অনেকের ছাড়াছাড়ি দেখে আমার মনে হলো এই বিষয়ে আমার চিন্তাটা আপনাদের সাথে শেয়ার করি, তাই এই লেখা।

    .
    .
    .

    ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ গণতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে এবং একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা শুরু করে।

    স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম রাজনৈতিক নেতৃত্ব আসে মূলত আওয়ামী লীগ থেকে—১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন ও গৃহীত হওয়ার পর, ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় অর্জন করে দেশের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। তবে গণতন্ত্রের এই যাত্রা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করে—এই পরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক বহুত্ববাদ বিলুপ্ত হয়, নাগরিক স্বাধীনতা সীমিত করা হয় এবং অধিকাংশ সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়—যাকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রথম বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হয়।

    ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নাটকীয় মোড় আসে। এরপর প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের অধীনে থাকে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়, এবং এই সময়টিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং পরে জেনারেল এইচ. এম. এরশাদ রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব গ্রহণ করে।

    তবে দীর্ঘকালীন দমন-পীড়নের ফলে জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ জন্ম নেয়। এই অসন্তোষ এক সময় গণআন্দোলনের রূপ নেয়। ১৯৯০ সালে শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনের চাপে প্রেসিডেন্ট এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হন এবং এরপরে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

    ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণআন্দোলন শুধু জেনারেল এরশাদের পতন ঘটায়নি, বরং আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এটি একটি অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছিল (দেওয়া হয়েছিলো)। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রায় দুই দশক ধরে চলে আসা বিভিন্ন ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। এর মধ্যে ছিল স্বল্পমেয়াদি একদলীয় শাসন, দীর্ঘ সামরিক শাসন এবং বেসামরিক মুখোশে পরিচালিত সামরিক শাসন।

    ১৯৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বা রাষ্ট্রীয় কাঠামো বদলের পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে উঠেছিল—তা বলা ঠিক না—তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের পর বাংলাদেশে যে পদ্ধতিগত কর্তৃত্ববাদ চালু হয়েছিল—চাই সেটা লোকরঞ্জনবাদী (পপুলিস্ট) হোক বা সামরিক—সেই ধারার বিরুদ্ধে জনগণের মনে যে তীব্র অসন্তোষ ছিল, তা এই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল।

    গণতন্ত্রের বিশ্বব্যাপী বিকাশকে বোঝাতে ১৯৯১ সালে বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্যামুয়েল হান্টিংটন তাঁর আলোচিত গবেষণায় একটি তত্ত্ব তুলে ধরে, যার নাম ‘গণতন্ত্রের তিন ঢেউ’ (Three Waves of Democracy)। সেখানে তিনি দেখান, ইতিহাসে তিনটি বড় সময়পর্বে গণতন্ত্র অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, আবার প্রতিটি সময়ের পরে একটি "ভাটার টান" বা গণতন্ত্র থেকে পশ্চাদপসরণের ধারা দেখা দিয়েছিল।

    প্রথম ঢেউ শুরু হয় ১৮২৬ সালে এবং চলে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত। দ্বিতীয় ঢেউ আসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর, এবং শেষ হয় ১৯৬২ সালে। তৃতীয় ঢেউ শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, যা নব্বইয়ের দশকে এসে আরও বিস্তৃত হয়, বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং পূর্ব ইউরোপে একদলীয় শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে।

    এই সময়টিতে অনেক গবেষক গণতন্ত্র নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠে—১৯৭৪ সালে গণতন্ত্রের তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর ব্যাপক হারে গণতন্ত্রের বিস্তার ঘটতে থাকে এবং ১৯৯২ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই কোনো না কোনোভাবে গণতন্ত্রের অনুশীলন শুরু হয়। কিন্তু হান্টিংটন তখনই সতর্ক করেন—গণতন্ত্রের এই জোয়ার দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। তাঁর শঙ্কা ছিল, অতীতের মতো এবারও গণতন্ত্রের বিস্তারের পরে আবার এক ধরণের ভাটা আসতে পারে।

    এই সতর্কতা আরও জোরালোভাবে প্রকাশ করেন দুই বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গুয়েলারমো ও'ডানেল এবং ফিলিপ স্মিটার। তাঁরা ১৯৮৬ সালেই বলেন, অনেক দেশে সামরিক বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পরেও সত্যিকারের গণতন্ত্র গড়ে ওঠার বদলে সৃষ্টি হতে পারে কিছু ‘আধা-গণতান্ত্রিক’ বা সীমিত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। তাদের আশঙ্কা ছিল, নির্বাচন থাকলেও রাজনৈতিক স্বাধীনতা থাকবে সংকুচিত, আর শাসন হবে নিয়ন্ত্রণমূলক ও একনায়কতামূলক বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

    ২০০০ এর দশকে এসে দেখা যায়, তাদের এই পূর্বাভাস মিথ্যা হয়নি। বহু নতুন গণতান্ত্রিক দেশ নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন করলেও সেখানে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। ফলে, এই দেশগুলো আবার পুরোপুরি স্বৈরাচারে না ফিরলেও একটি ভিন্নধর্মী শাসনব্যবস্থার বিকাশ ঘটায়, যেখানে ‘গণতন্ত্রের ছায়া’ আছে, কিন্তু গণতন্ত্রের প্রকৃত আত্মা অনুপস্থিত।

    এই রকম শাসনব্যবস্থাগুলোর প্রকৃতি বোঝাতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করতে শুরু করে, যেমন:

    ১) আধা গণতন্ত্র (Semi-democracy)
    ২) প্রায়-গণতন্ত্র (Virtual democracy)
    ৩) নির্বাচনী গণতন্ত্র (Electoral democracy)
    ৪) ছদ্ম গণতন্ত্র (Pseudo-democracy)
    ৫) অনুদার গণতন্ত্র (Illiberal democracy)
    ৬) আধা কর্তৃত্ববাদ (Semi-authoritarianism)
    ৭) নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদ (Electoral authoritarianism)

    বিশিষ্ট গবেষক ল্যারি ডায়মন্ড এই ধরনের মিলেমিশে থাকা শাসনব্যবস্থাগুলোকে ‘হাইব্রিড রেজিম’ (Hybrid Regime) 'দোআঁশলা শাসনব্যবস্থা' বলে অভিহিত করেন। এখানে গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের কিছু উপাদান একসঙ্গে থাকে—যা রাষ্ট্রের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অনির্ধারিত রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করে।

    গোড়ার দিকে যেসব শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের বৈশিষ্ট্য মিশ্রভাবে দেখা যেত, সেগুলোর সঙ্গে 'আধা', 'প্রায়', 'ছদ্ম' ইত্যাদি বিশেষণ যুক্ত করে অনেকে মনে করতেন এগুলো হয় গণতন্ত্রে উত্তরণের পূর্ববর্তী ধাপ, নয়তো কর্তৃত্ববাদের পতনের পরবর্তী ধাপ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই মত থেকে সরে আসেন। পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেন, এসব শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদের কোনো পরিবর্তনশীল রূপ নয়; বরং এগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্বলিত এক ধরনের স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা।

    ২০০২ সালে ল্যারি ডায়মন্ড জোর দিয়ে বলেন, 'হাইব্রিড রেজিম' বা 'দোআঁশলা শাসনব্যবস্থা'কে গণতন্ত্র বা কর্তৃত্ববাদের মধ্যবর্তী রূপ হিসেবে দেখা ভুল। তাঁর মতে, উত্তরণপর্ব মানে হচ্ছে একটি শাসনব্যবস্থা থেকে অন্য ব্যবস্থায় রূপান্তরের চলমান প্রক্রিয়া। কিন্তু হাইব্রিড রেজিম কোনো ‘পথে থাকা’ অবস্থা নয়—এটি নিজেই একটি স্থায়ী ধাঁচের শাসনব্যবস্থা।

    এই ধরনের শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে একদিকে নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন দেখা যায় (দেখানো হয়), আবার অন্যদিকে রয়েছে গণতন্ত্রবিরোধী নিয়ন্ত্রণমূলক নীতি, যেমন তথাকথিত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, বিচার বিভাগের অস্বাধীনতা বা প্রশাসনিক কর্তৃত্বের অতিরিক্ত ব্যবহার। ফলে, হাইব্রিড রেজিমে গণতন্ত্রের কিছু উপাদান থাকলেও তা পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র নয়; আবার এটি সরাসরি কর্তৃত্ববাদও নয়। বরং এটি উভয় শাসনব্যবস্থার উপাদান নিয়ে গঠিত একটি মিলিত, দোআঁশলা রূপ।

    বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের পর যে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে আমরা "ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসি" বা নির্বাচনী গণতন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করতে পারি। এই ধরনের ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হলো, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন, বহু দলের উপস্থিতি। তবে, বাংলাদেশের নির্বাচনী গণতন্ত্রের এই ব্যবস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও, বাংলাদেশের সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এমন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিলো যা এককেন্দ্রীক ক্ষমতার সুযোগ সৃষ্টি করে। এর ফলে, পুরো শাসনব্যবস্থাটি প্রধানমন্ত্রীর শাসন ব্যবস্থায় পরিণত হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষমতার হস্তান্তরের যে অস্পষ্টতা ১৯৭২ সালের সংবিধানে ছিল, তা পরবর্তী সংস্করণেও বহাল থেকে যায়। এই অস্পষ্টতা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।

    এভাবে চলতে চলতে ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশ আবারও পুরোপুরোভাবে হাইব্রিড রেজিমে পরিণত হয়/হতে থাকে এবং বাংলাদেশে এই হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার স্থায়িত্ব হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত।

    এখন একটা মজার বিষয় লক্ষ করুন -

    যেসব শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের বৈশিষ্ট্য মিশ্রভাবে দেখা যেত—প্রথম দিকে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা সেই সকল শাসনব্যবস্থাকে 'আধা', 'প্রায়', 'ছদ্ম' ইত্যাদি বিশেষণ যুক্ত করে সম্বোধন করতেন কিন্তু পরবর্তীতে তারা এইসব শাসনব্যবস্থাকে হাইব্রিড রেজিম বলে সম্বোধন করতে শুরু করলেন। তাই এটা বলা ভুল হবে না যে—বাংলাদেশ সৃষ্টির পরবর্তী ২০ বছর (১৯৯১ সাল পর্যন্ত) বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা মূলত হাইব্রিড রেজিম’ই ছিলো এবং তার পরে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ইলেকটোরাল ডেমোক্রেসি—অতঃপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত পুনরায় হাইব্রিড রেজিম—আর ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অভ্যুত্থানে সেই হাইব্রিড রেজিম ভেঙ্গে যায়। আর এখন বাংলাদেশের রাজনীতির যে পরিস্থিতি তা ১৯৯০ পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার সাথে মিলে যাই। উভয় আন্দোলনই হাইব্রিড রেজিমকে ভেঙ্গে দেয়, এরশাদ পতনের আন্দোলনের ভিত্তি যেমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছিলো না তেমনই হাসিনা বিরোধী আন্দোলনও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ছিলো না-কিন্তু উভয় আন্দলনের/অভ্যুত্থানের পর’ই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হয়েছে/হচ্ছে।

    কিন্তু ১৯৯০ ও ২০২৪ পরবর্তী ঘটনার মধ্যে একটা বড় অমিল আছে? কী বলুন তো? সেটা হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের প্রভাব। আরও একটা অমিল আছে—১৯৯০ পরবর্তী সময়ে আমেরিকার ক্ষমতা-প্রভাব ও ২০২৪ পরবর্তী সময়ে আমেরিকার ক্ষমতা-প্রভাবের মাত্রার ভিন্নতা।

    সাধারণভাবে, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে একজন শক্তিশালী নেতা থাকে। কিন্তু এই ধরনের শাসন শুধু ব্যক্তি-নির্ভর হয় না; বরং পুরো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে গঠন করা হয় যাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না ঘটে এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ সীমিত থাকে। ফলে এই ধরনের শাসনের পতন ঘটলেও, গণতন্ত্র সহজে প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং নতুন করে গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়ে পড়ে কঠিন ও দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ।

    বিশ্বের অনেক দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখতে পাই, কর্তৃত্ববাদের পতন মানেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না। তবে কর্তৃত্ববাদের পতন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভবনা সৃষ্টি করে বা বলতে পারেন অদৃশ্য বল প্রয়োগ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি করা হয়—আর এটাই সত্য। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালের আন্দোলন সেই সম্ভাবনার একটি সূচনা করেছিল (গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভবনা সৃষ্টি করা হয়েছিলো) এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনের পরও সেই সম্ভবনা সৃষ্টি করা হয়েছে (অদৃশ্য চাপ/বল প্রয়োগের মাধ্যমে)।

    আচ্ছা—১৯৯০ পরবর্তী সময়েও তো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সম্ভবনা সৃষ্টি করা হয়েছিলো, কিন্তু গণতন্ত্র কী প্রতিষ্ঠা হয়েছে—না, হয়নি। তাহলে এটা কীভাবে আশা রাখা সম্ভব যে ২০২৪ পরবর্তী সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে সম্ভবনা তৈরি করা হচ্ছে, তা সফল হবে? আর আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ১৯৯০ এর দশকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক উপস্থিতি তুলনামূলক দুর্বল ছিল; আজ তা অনেক বেশি সুসংগঠিত ও সক্রিয়। ১৯৯০ এর দশক এবং তার আগে ও পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীদের সেরকম শক্তিশালী কোনো অবস্থান দৃশ্যত হয়না, কিন্তু বর্তমানে ইসলামপন্থীরা এদেশে রাজনীতির এজেন্ডা নির্ধারণের মতো ক্ষমতা রাখে।

    এখন উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ইসলামপন্থীরা গনতন্ত্রের বিরোধী আবার হাইব্রিড রেজিমেরও বিরোধী। ইতিহাস থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার আলোকে যদি দেখা যায় তাহলে বর্তমান বাংলাদেশের সম্ভাব্য পরিনতি দুইটা—হয় বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে হাটবে অথবা হাইব্রিড রেজিম—কিন্তু আমরা ইসলামপন্থিরা কী এই দুইটা অপশন থেকে কোনো একটা বেছে নিতে রাজি আছি? না, আমরা এই দুইটার একটা অপশনও মেনে নিতে রাজি না। আমরা শরীয়াহ চায় (চাই), আমরা খিলাফাহ চায় (চাই)
    , আমরা ইসলাম চায় (চাই)। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে—বাংলাদেশে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা করার মতো শক্তি আমাদের হাতে নেই, এটা বাস্তবতা। তাহলে করণীয় কী? করণীয় খুব সহজ—শক্তি অর্জন করতে হবে।

    বাংলাদেশের যে দুইটা পরিণতির কথা বললাম, তার প্রথমটা হচ্ছে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে হাটবে—তো এই গণতন্ত্রের পথ আবার দুইভাগে বিভক্ত হয়েছে বা বলতে পারেন আমাদের উচিত এটাকে দুইভাগে ভাগ করে দেওয়া -

    ১) লিবারেল ডেমোক্রেসি
    ২) অর্গানিক ডেমোক্রেসি

    খুব সরলীকৃত ভাবে বললে—পশ্চিমাদের চেয়েও বেশি পশ্চিমা হয়ে উঠতে সাহায্যকারী শাসনব্যবস্থায় হলো লিবারেল ডেমোক্রেসি। আর অর্গানিক ডেমোক্রেসির ক্ষেত্রে সমাজের ঐক্য, শৃঙ্খলা ও গোষ্ঠীগত দায়িত্ব ব্যক্তিস্বাধীনতার তুলনায় বেশি গুরুত্ব পায়, দেশের জনগণ কী চায় সেটাই মুখ্য হয়ে ওঠে। পশ্চিমাদের অনুসরণের ঝোঁকের মাত্রা লিবারেল ডেমোক্রেসির তুলনায় অর্গানিক ডেমোক্রেসিতে কম।

    ভারতের প্রশাসন এবং জনগণের যে এত মুসলিম বিদ্বেষিতা এটা আসলে অর্গানিক ডেমোক্রেসির ফসল। অর্গানিক ডেমোক্রেসির মূল ভাষ্য হল একটা দেশের বিদ্যমান সভ্যতা এবং সংস্কৃতিই ঠিক করে দিবে যে একটা রাষ্ট্র কোন গন্তব্যের দিকে হাটবে। এখানে সরকার ঠিক করে না যে কারা শত্রু—জনগণ যাকে ভয় পায় বা অপছন্দ করে, সরকার তার বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়।

    বাংলাদেশের ইসলামিক গণতান্ত্রিক দলগুলো অতীতে অর্গানিক ডেমোক্রেসির চর্চা করত, দেশের জনতার স্বার্থই মুখ্য ছিলো তাদের কাছে কিন্তু বর্তামানে (বর্তমানে) তাদের প্রায় সকলেই লিবারেল ডেমোক্রেসিকে আঁকড়ে ধরেছে। আমি বাংলাদেশের ইসলামি গণতান্ত্রিক দল ও তাদের সমর্থকদের বলতে চাই—আপনারা গণতন্ত্র বর্জন করুন, আপনারা গণতন্ত্র বর্জন করুন
    , আপনারা গণতন্ত্র বর্জন করুন—আর যদি গণতন্ত্র বর্জন করতে না পারেন, তাহলে অন্তত অর্গানিক ডেমোক্রসির চর্চা করুন, লিবারেল ডেমোক্রেসির পথে হাঁটবেন না।

    আর বাংলাদেশে সম্ভাব্য পরিণতির দ্বিতীয়টা হচ্ছে পুনরায় হাইব্রিড রেজিমে পরিণত হওয়া—পুনরায় যদি বাংলাদেশ হাইব্রিড রেজিমে পরিণত হয় তাহলে এই ভূখন্ডের মানুষ আবারও দীর্ঘকালীন দমন-পীড়নের সম্মুখীন হবে। কিন্তু আমার মনে হয় হাইব্রিড রেজিম ইসলামপন্থাকে শক্তিশালী করবে লিবারেল বা অর্গানিক ডেমোক্রেসির তুলনায়।

    সে যাই হোক, এ বিষয়ে আলোচনা আপাতত এখানেই থাক। এখন আসি শক্তি অর্জনের ব্যাপারে। শক্তি কীভাবে অর্জন হবে? কোন কোন বৈশিষ্ট্য গুলোকে শক্তি হিসেবে সাব্যস্ত করা হবে? কীভাবে বুঝব আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছি?—এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ আলেম ও ময়দানের জিহাদের সাথে যুক্ত ব্যাক্তিবর্গই ভালো বলতে পারবে, তাই এক্ষেত্রে উচিত হবে—তাদের কিতাবাদী অধ্যয়ন করা, তাদের আলোচনা শোনা, তাদের সহবতে থাকা।

    তবে ব্যাসিক একটা বিষয়—যেটা সম্পর্কে সকলের পরিষ্কার ধারণা থাকা চাই—আর জিহাদের সাথে যুক্ত ব্যাক্তিবর্গও এবিষয়ে অনেক আলোচনা করেছে, সেটাই আপনাদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি:

    খুব সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি—জিহাদ কী? জিহাদ কেন? জিহাদ কখন?—কিয়ামত পর্যন্ত আগত প্রতিটা যুগেই এসকল প্রশ্নের উত্তর একই থাকবে, এগুলোর কোনো পরিবর্তন আসবে না, কিন্তু জিহাদ কীভাবে?—এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের পরিবর্তনের সাপেক্ষে আলাদা হবে এবং আলাদা হওয়া যৌক্তিক। কারণ জিহাদ কীভাবে?—এই প্রশ্নের ভিতর বেশ কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে বা বলতে পারেন বেশ কিছু বিষয়ের উপর এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভরশীল (রণকৌশল, স্ট্রাটেজি, ট্যাকটিকস—ইত্যাদি)। আর সময়ের পরিক্রমায় যুদ্ধের নিয়ম-কৌশলে যে পরিবর্তন এসেছে তার ফলস্রুতিতে রণকৌশল, স্ট্রাটেজি, ট্যাকটিকস ইত্যাদিতে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক।

    বর্তমান সময়ে মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ মুসলিম ভুখন্ড (ভূখণ্ড) সমূহকে দুইভাগে ভাগ করেছেন, কম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই শ্রেণীবিভাগ তারা করেছেন মৌলিক একটা প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে—সেই মৌলিক প্রশ্নটি হলো "কোনো একটা ভূখন্ড (ভূখণ্ড)
    যুদ্ধের জন্য কতটা উপযোগী?" —কোনো একটা ভূখণ্ডে যদি যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান থাকে তাহলে সেই ভূখণ্ডকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণিতে দেওয়া হয়, আর যদি যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না থাকে তাহলে সেই ভূখণ্ডকে কম গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণিতে দেওয়া হয় এবং এরপরে প্রথমে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড সমূহে কর্তৃত্ব অর্জনের চেষ্টা করা হয়।

    এখন কিছু ভূখণ্ডে আপাতদৃষ্টিতে কম চেষ্টা চালনোর কারণে কেউ যদি বলে—তারা জিহাদ করছে না! এটা কী যৌক্তিক হবে? না, হবে না। কেন হবে না? কারণ, তারা চাইলেও ঐ সকল কম গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডে বেশি কাজ করতে পারবে না (বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে)। তাই এমনটা দাবি করা ঠিক হবে না যে "তারা জিহাদ করছে না"

    বাংলাদেশ ভূখণ্ডটাও সেই কম গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণিতে পড়ে, বাংলাদেশ যুদ্ধের উপযোগী হওয়ার সকল বৈশিষ্ট্য ধারন করে না, এখানে প্রায় সবই সমতল ভূমি, অস্ত্রের সহজলভ্যতা নেই, গোত্রভিত্তিক সমাজ নেই, একাধিক দেশের সাথে বর্ডার নেই, চারিদিক থেকে ঘেরা, একদিকে সমু্দ্র ইত্যাদি। তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড সমূহের ক্ষেত্রে যেই ফর্মুলা খাটে কম গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডের ক্ষেত্রে সেই ফর্মুলা খাটবে না এটাই স্বাভাবিক। আফগানিস্তানে যেভাবে শরীয়াহ কায়েম হয়েছে বাংলাদেশেও হুবহু সেইভাবে হবে এমনটা ভাবা—বাস্তবতার আলোকে সঠিক না।

    আর বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ড সমূহে নিয়ন্ত্রণ চলে আসলে ইনশাআল্লাহ খুব সহজে কম গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যাবে।

    উদাহরণস্বরূপ-

    আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় সাইকেল চালিয়েছি, অনেকে এখনো চালাই—তো সাইকেল চালাতে গেলে অনেক সময় চেইন পড়ে যেত। যারা বাচ্চা, ছোটা মানুষ তাদের কাছে সাইকেলের চেইন তোলা কিন্তু খুব কঠিন কাজ, কিন্তু যারা অভিজ্ঞ সাইকেল চালক তাদের কাছে সাইকেলের চেইন তোলা কোনো বিষয়ই না।

    অভিজ্ঞ সাইকেল চালকরা কীভাবে চেইন তোলে?—তারা সাইকেলের চেইন রিংয়ের উপরের কয়েকটা দাতে চেইনের কিছু অংশ লাগায় তারপর প্যাডেল সামনের/নিচের দিকে মুড়া/ধাক্কা দেয় অথবা চেইন রিংয়ের নিচের কয়েকটা দাতে চেইনের কিছু অংশ লাগিয়ে প্যাডেল পিছনের/উপরের দিকে মুড়া/ধাক্কা দেয়—ব্যাস, চেইন উঠে যায়। এই যে একটা চৌকস কৌশল গ্রহণের কারণে খুব সহজে সাইকেলের চেইন তোলা হয়ে গেলো। একটু কষ্ট করে চেইনের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ চেইন রিংয়ে লাগানোর কারণে চেইনের বাকি অংশ খুব সহজে চেইন রিংয়ে উঠে গেলো।

    ইনশাআল্লাহ খিলাফাহ কায়েমের ক্ষেত্রে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল সমূহ নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে বাকি অংশে খুব সহজে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু এমনটা ভাবা ভুল হবে যে আমরা শুধু বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ডে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাবো আর কম গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ড সমূহে কোনো কাজই করবো না—তাহলে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ড সমূহে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সত্বেও তখন কম গুরুত্বপূর্ণ ভূখন্ড সমূহে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ঝামেলার সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য উভয় ধরনের ভূখন্ডেই কাজ করতে হবে তবে কাজের মাত্রা ও ভূখন্ডভেদে কাজের ধরণে পার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।

    সে হিসেবে বাংলাদেশের সমাজ ও ইতিহাসের আলোকে এখন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো এই ভূখন্ডে চলমান মেরুকরণকে আরো তীব্রতর করা। একদিকে ইসলাম অপরদিকে কুফর—সমাজে এই বিভাজনকে আরও গাঢ় করে তোলা। আর আরেকটা কাজ হলো ইসলামপন্থীদের কন্ঠকে "এলিট সোসাইটি থেকে তৃণমূল" সর্বত্র পৌছিয়ে দেওয়া। পাশাপাশি বাংলাদেশে ইসলামের যেই নবজাগরণ ঘটছে তার ফলস্রুতিতে সাধারণ মানুষ ব্যাপকহারে ইসলামকে আকড়ে ধরছে—খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন পুনরায় নিষ্ক্রিয় না হয়ে যায়, এক্ষেত্রে অবশ্যই সেই সাধারণ শ্রেণির আবেগকে সম্মান করতে হবে, শরীয়ার সীমার ভিতর থেকে তাদের আবেগের বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করতে হবে এবং এসবের পাশাপাশি তাদের ইলমি ভাবে উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যেন সামনের দিনগুলোতে তাদের ধারণ করা আবেগগুলো পরিপক্ক হয়, যৌক্তিক হয়। আর মনে রাখতে হবে যদি এই নতুন করে জেগে ওঠা মুসলিম গোষ্ঠীর নেতৃত্ব ইসলামপন্থীরা না নেয় তাহলে তারা অন্য কাউকে তাদের নেতা/প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিবে—যেটা অবশ্যই বাংলার এই ভূখন্ডে দ্বীন কায়েমের পথে পিছিয়ে পড়ারই নামান্তর।

    ২০২৪ পরবর্তী সময়ে সেই নতুন করে জেগে ওঠা মুসলিম জনতার আকাঙ্খার শীর্ষে ছিলো আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি, এর সাথে জড়িত ছিলো তাদের অনেক আবেগ—এক্ষেত্রে তাদের এই আবেগ যৌক্তিক, তাদের আবেগকে সম্মান করা উচিত এবং এই দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের পাশে দাড়ানোই সঠিক সিদ্ধান্ত।

    এখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি, ঠিক আছে—মানবরচিত আইনের অনেক ফাঁকফোকর আছে, সেই ফাঁকফোকর দিয়ে ভবিষ্যতে আওয়ামী ফিরে আসারও সম্ভবনা আছে—কিন্তু এমনটা ভাবা কী যৌক্তিক যে, "মানবরচিত বিধান ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবে!"—আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি অর্থাৎ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হয়নি—এটাতো হওয়ারই ছিলো কারণ মানবরচিত বিধান কখনোই ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।

    আর আরেকভাবে দেখলে এটাতো আমাদের জন্যই সুবিধার হয়েছে—সেই নতুন জেগে ওঠা মুসলিম জনতা নিজের চোখে দেখল মানবরচিত বিধান ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যার্থ—এর ফলে সেই চলমান মেরুকরণ তো আরও তীব্র হবে—তাই নয় কী?

    আরেকটা বিষয় খেয়াল করবেন—জাতীয় ইস্যুতে ইসলামপন্থীদের এরকম শক্তিশালী অংশগ্রহণের কারণে ভবিষ্যতে যেকোনো রাজনৈতিক দল তাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক এজেন্ডা নির্ধারণের ক্ষেত্রে—হিসাবের খাতায় অবশ্যই ইসলামপন্থীদের রাখবে। তাই যারা লিবারেল ডেমোক্রেসির পথে হাটবে তারা স্বস্তির সাথে হাটতে পারবে না, ভয়ে-আতঙ্কে থাকবে সবসময়।

    আবার আন্দোলনের এই ধাক্কার ফলে আওয়ামী লীগ অল্প হলেও পিছু হটতে বাধ্য হলো ফলে হাইব্রিড রেজিম ফিরে আসার সম্ভবনা অল্প হলেও কমল। বলতে পারেন বিএনপি কী হাইব্রিড রেজিম গঠন করতে পারবে না? হ্যা সম্ভবনা আছে তবে কম কারণ বিএনপির আদর্শ দুর্বল আদর্শ। আর আওয়ামী লীগকে ভারত যেভাবে ব্যাবহার করেছে সেভাবে বিএনপিকে ভারত ব্যাবহার করতে পারবে কিনা বা বিএনপি ভারতের দ্বারা আওয়ামী লীগের মতো ব্যাবহৃত হবে কিনা—সেটা বলা কঠিন।

    এখন বাদ থাকে অর্গানিক ডেমোক্রেসির পথ—বাংলাদেশ যদি অর্গানিক ডেমোক্রেসির পথে হাটে, তাহলে আমার মতে ইসলামপন্থীদের লাভ হবে, তারা ভালোমতো তাদের কাজ দ্রুততার সাথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট করি—আমি বলছি না অর্গানিক ডেমোক্রেসি অনেক ভালো, বরং আমি বলতে চাচ্ছি লিবারেল, অর্গানিক ও হাইব্রিড রেজিম—এই তিন শাসন ব্যবস্থায় ইসলামপন্থীদের দমন করার চেষ্টা করবে কিন্তু অর্গানিক ব্যাবস্থায় সেই দমনের মাত্রাটা তুলনামূলক কম হবে।

    ইনশাআল্লাহ, আমরা জিহাদ করবো, এই ভূখন্ডে শরীয়াহ কায়েম করবো—তবে এখন প্রস্তুতির সময়, অস্ত্রে ধার দেওয়ার সময়, সঠিক সময়ে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়ার জন্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শত্রুর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে, আর এই অপেক্ষমান থাকা অবস্থায় যতটা পারা যায় শত্রুকে দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাই সামগ্রিকভাবে চিন্তা করলে, এই আন্দোলনের ফলে আমি মনে করি বাংলার মুসলিমদের অল্প হলেও উপকার হয়েছে।
    Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.

  • #2
    মাশাআল্লাহ ভাই, গোঁড়াশুদ্ধ (গোড়াশুদ্ধ) টেনে এনেছেন
    আল্লাহ তাআলা আপনার ইলম ও হায়াতে বারাকাহ দান করুন, আমীন
    এমন লিখা অব্যাহত লিখে যাওয়ার পূর্ণ তাওফিক আল্লাহ আপনাকে দান করুন, আমীন
    Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment


    • #3
      বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক শক্তির প্রভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারা বর্তমানে দেশটির রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব তৈরি করছে, যা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। আজকের বাংলাদেশে ইসলামী শক্তিগুলো জনগণের মধ্যে বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে এবং তাদের প্রতি সমর্থনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

      তবে, ইসলামী শক্তিরা কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে না যদি তারা তিনটি মূল উপাদান ঠিকভাবে অনুসরণ না করে।

      প্রথমত, তাদের আদর্শিক স্বচ্ছতা থাকতে হবে, যাতে জনগণ তাদের উদ্দেশ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে।

      দ্বিতীয়ত, জনগণের বাস্তবভিত্তিক সমর্থন অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ যে কোন রাজনৈতিক শক্তির জন্য জনগণের সমর্থনই চূড়ান্ত প্রমাণ।

      এবং তৃতীয়ত, একটি দৃঢ় সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে তাদের আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর হতে পারে। এই তিনটি মৌলিক দিককে ঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না করলে, ইসলামী শক্তিরা বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে পারবে না।​
      فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

      Comment

      Working...
      X