ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!
পর্ব - ২
আমার প্রিয় ভাইয়েরা!.
তুফানের মোকাবেলা তো তখনই হতে পারে, যখন চোখ কান খোলা রাখা হবে এবং বিপদের ভয়াবহতার বাস্তবতা মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু বিপদের সামনে দাঁড়িয়ে তুফানকে আসতে দেখেও যদি অস্বীকার করা হয়, তবে এমন পরিস্থিতিতে আত্মপ্রবঞ্চনাই সবচেয়ে বড় দুশমন হিসেবে দেখা দিবে। দুঃখের ব্যাপার হল, হিন্দুস্তানে মুসলিমদের পা মরণ ফাঁদে ফেঁসে যাওয়া দেখেও কিছু কিছু মহল তা অস্বীকার করে নিশ্চিন্ত মনে বসে আছে। তারা মুসলিমদের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল করছে যে, দেশের এসব ঘটনা প্রবাহ আমাদেরকে যে দিকে নিয়ে যাবে; কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ছাড়াই আমাদেরকে সে দিকে চলে যাওয়া উচিত। এ মহলটি আবার আশংকাও প্রকাশ করে। অথচ এ ধরণের আশংকা প্রকাশ করার কী অধিকার আছে তাদের? সামনের বিপদ নিয়ে চিন্তা করলে বা কথা বললে, এটাকে তারা অদূরদর্শিতা বলে। তুফানের আগ মুহুর্তে তার পূর্বপ্রস্তুতিকে কাজের বাধা মনে করে। ছেলে ভোলানো কথা বলে তা উড়িয়ে দেয়। এরা বলে, শত সহস্র বছর ধরে আমরা হিন্দু মুসলিম এক সাথে বাস করে আসছি। এখানে মুসলমানদের কোন ভয় নেই... এসব বলে তারা এটা ভুলে থাকতে চায়। আসল কথা হলো: যদিও আমরা এক সাথ বাস করে এসেছি, কিন্তু কখনো দুর্বল হয়ে থাকিনি। হিন্দুদের দয়া-দক্ষিণা পেয়ে, তাদের কোন ধরণের উদারতা বা নামসর্বস্ব অসাম্প্রদায়িকতার তাঁবুতেও থাকিনি। আমরা মূলত: এখানে বিজয়ী বেশে এসেছি, বিজয়ী থেকে ঈমানী শক্তি ও কর্তৃত্ব এবং বাহুবলের সাথেই থেকেছি। আমাদের ঈমানি বোধ আর প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনই ছিল যে, যার কারণে আমরা নিজেরাও যেমন সম্মান মর্যাদার সাথে ছিলাম, তেমন অন্যদেরকেও ইনসাফ ও নিরাপত্তার মাঝে রেখেছিলাম। কিন্তু ইংরেজদের অবৈধ দখলদারী এবং ভারত বিভক্তি অবধি আমরা আর সেই অবস্থায় নেই। রাজা প্রজায় পরিণত হয়েছে। শক্তিশালী দুর্বলে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। বর্তমানে কি আমাদের এতটুকু শক্তিও আছে, যার মাধ্যমে আমরা কোন জালেমের হাতকে ফিরিয়ে রাখতে পারি? নিশ্চয় না। আমরা তো আজ এতটুকু শক্তি থেকেও বঞ্চিত। এতদসত্ত্বেও বলা হচ্ছে, আমরা সংখ্যালঘু নই, আমরা দ্বিতীয় সংখ্যাগুরু জাতি। আমাদের কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না...!
.
প্রিয় ভাইয়েরা!
.
এই দুনিয়াতে শুধু অধিকার নিয়ে থাকা এবং অধিকার চেয়ে কি কোন ব্যক্তি অধিকার লাভ করতে পারে? এমন হলে কী অবস্থাটাই না হত। অতঃপর মিয়ানমার, পূর্বতুর্কিস্তান এবং ঝিনঝিয়া প্রদেশ থেকে নিয়ে ফিলিস্তিন ও সিরিয়া পর্যন্ত মুসলিমদের কখনো নিজের মাতৃভূমি ছাড়তে হত না। কাশ্মীরী মুসলিমদের কখনো এভাবে বের করে দেওয়া হত না এবং এমন নির্দয়ভাবে তাদের রক্ত ঝরানো হত না। আহমদাবাদ আর মুজাফফরনগর জুড়ে মুসলিম নিধন দাঙ্গা হত না। বাবরী মসজিদ আজও স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকত। তার মিনার থেকে সুমধুর আযানের ধ্বনি ভেসে আসত। ভারতবর্ষে অবশ্যই মুসলিমদের অধিকার আছে। কিন্তু সে অধিকার কি হাত পেতে ভিক্ষা চেয়ে পাওয়া যাবে? পাষাণ হৃদয়ের শত্রুকে কি তোষামোদ করে গলানো যাবে? হিংস্র হায়েনার সামনে কি দয়া-মায়ার আবেদন করে প্রাণ রক্ষা করা যাবে? অধিকার আদায়ের জন্য নিজের ভেতর অধিকার চেনার শক্তি সৃষ্টি করতে হবে। জুলুম ঠেকাতে বুক টান করে জালিমের সামনে দাঁড়াতে হবে। ঘরে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে জীবন লাভ করা যাবে না। বরং মৃত্যুই জীবনের হেফাযত করতে পারে।
.
প্রিয় ভাইয়েরা!
.
আমাদের মনে রাখতে হবে, মুসলিম ও হিন্দু এবং ইসলাম ও শিরক; একটি আরেকটির সম্পূর্ণ বিপরীত বস্তু। ইসলাম হচ্ছে মানুষের রবের পক্ষ থেকে দেওয়া এক মহান আলোকবর্তিকা। পক্ষান্তরে শিরক অন্ধকার এবং নিরেট অজ্ঞতা। এটা আত্মহননের চূড়ান্ত আত্মপ্রবঞ্চনা হবে, যদি আমরা হাতের উপর হাত রেখে ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই’ জাতীয় নির্জলা মিথ্যা আর ‘ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা’ নামক প্রতারণাকে বিশ্বাস করি। আমাদের এ বাস্তবতা মানতেই হবে, মুশরিক হিন্দু কখনো মুসলমানদের কল্যাণকামী হতে পারে না। আল্লাহর কিতাবই বলে দিচ্ছে, ইহুদীদের পরে মুসলমানদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শত্রু হচ্ছে মালাউন মুশরিকরা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا …﴿المائدة: ٨٢﴾
“আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরিকদেরকে পাবেন।” (সূরা মায়িদা: ৮২)
.
স্বয়ং আল্লাহর কিতাব মুসলিমদের বুঝ দিচ্ছে, এই মুশরিকদের মিষ্টি কথায় কখনো ভুলে যেওয়া না... ‘বগলের নিচের দোধারী ছুরি মুখে রাম রাম’ হচ্ছে এই নরাধমদের পুরনো খাছলত। আল্লাহর কিতাব আমাদের বলে দিচ্ছে, যদি মুসলমান নিরস্ত্র থাকে, আত্মরক্ষার অস্ত্র নিজের কাছে না রাখে, তবে মুশরিকদের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন দুশমন পাওয়া যাবে না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-
كَيْفَ وَإِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ لَا يَرْقُبُوا فِيكُمْ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ وَتَأْبَىٰ قُلُوبُهُمْ وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ ﴿التوبة: ٨﴾
“কিরূপে? তারা তোমাদের উপর জয়ী হলে তোমাদের আত্নীয়তার ও অঙ্গীকারের কোন মর্যাদা দেবে না। তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট করে, কিন্তু তাদের অন্তরসমূহ তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।”(সূরা তাওবা: ৮)
.
অর্থাৎ كَيْفَ وَإِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُم “কিভাবে মুশরিকরা সন্ধির উপর অটল থাকতে পারে? যদি তারা তোমাদের উপর ক্ষমতা পেয়ে বসে, তাহলে لَا يَرْقُبُوا فِيكُمْ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً “তারা তোমাদের ব্যাপারে না আত্মীয়তার বা প্রতিবেশী হওয়ার কোন তোয়াক্কা করবে, না নিজেদের করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে? يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ “তারা শুধু মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে।’ (অর্থাৎ এটা তাদের মুখের জমা খরচ। যখন তারা অপারগ হয় বা তাদের কোন প্রয়োজন পড়ে, তখন বলে ভারতবর্ষে কোন ধর্মীয় বিভেদ নেই। সব ধর্মের লোকেরা এখানে সমানভাবে বাস করবে। يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ ‘তারা মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে’ অথচ বস্তবতা হচ্ছে) وَتَأْبَىٰ قُلُوبُهُمْ ‘তাদের অন্তর তা প্রত্যাখান করে’। তাদের অন্তরে তা না থাকার দরুন-ই অস্বীকার করে। وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ ‘আর তাদের অধিকাংশরাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।’ তারা যখন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পায়, মুসলমনরা যখন নিরস্ত্র আর দুর্বল হয়, তখন পুনরায় তারা কোন প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা, চুক্তি বা আইনের তোয়াক্কা করে না।
.
চলবে...
Comment