||পর্ব ২ ||
"বাংলাদেশে জঙ্গি ন্যারেটিভ পুনর্গঠনের চেষ্টা: আমাদের করণীয় কী?"
"বাংলাদেশে জঙ্গি ন্যারেটিভ পুনর্গঠনের চেষ্টা: আমাদের করণীয় কী?"
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।”
(সূরা আর-রাদ, আয়াত ১১)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনাদর্শ গভীরভাবে অনুধাবন করলে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয় এক অনন্য কৌশলগত প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা। তিনি ছিলেন পরম ধৈর্যের প্রতীক এবং সুদূরদর্শী নেতৃত্বের শ্রেষ্ঠতম উদাহরণ। ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি কখনো আবেগপ্রবণ হয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেননি; বরং প্রতিটি সময়, স্থান, পরিস্থিতি ও মানুষের মানসিক অবস্থা সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে অত্যন্ত দূরদর্শী কৌশল অবলম্বন করেছেন।
বর্তমান যুগে যখন আমরা নানা সামাজিক ও নৈতিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি, তখন আমাদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় করণীয় হলো—রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবন অধ্যয়ন করা এবং তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ করে সমাধানের পথ খোঁজা। কেননা, তাঁর জীবনেই নিহিত আছে চিরন্তন শান্তি, ন্যায় ও কল্যাণের দিকনির্দেশনা।
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
যদি আমরা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক—দাওয়াহ, সামরিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডল—গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি,বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে অসাধারণ কিছু কৌশলগত দিকনির্দেশনার সঙ্গে পরিচিত হবো।
তবে এমন বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা আমার মতো সাধারণ ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে সঠিক ও সুস্পষ্ট ধারণা পেতে আমাদের উচিত যোগ্য আলেমদের কিতাবাদি অধ্যয়ন করা এবং তাঁদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করা। ইনশাআল্লাহ, এর মাধ্যমে আমরা নবীজী (সা.) এর জীবনের বহুমাত্রিক প্রজ্ঞা ও কৌশল থেকে শিক্ষা নিতে সক্ষম হবো।
আমাদের আজকের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো—বাংলাদেশে পুনরায় পুনর্গঠিত হতে চাওয়া জঙ্গি ন্যারেটিভ এবং এর প্রতিরোধে সম্ভাব্য করণীয়। পূর্ববর্তী পর্বে আমরা পর্যালোচনা করেছি যে, দেশে জঙ্গি ন্যারেটিভের পুনর্নির্মাণ একটি চলমান প্রক্রিয়া, যার প্রমাণ মিলছে নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অনলাইন পরিসরে ঘটে চলা ঘটনাবলির মধ্যে।
এই প্রেক্ষাপটে, আজকের আলোচনায় আমি মূলত এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় কিছু প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধমূলক কৌশল সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে যে ভাবনাগুলো লালন করছি, তা সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে, ইনশাআল্লাহ, আমি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পবিত্র সিরাত থেকে প্রাপ্ত কৌশলগত দিকনির্দেশনাকে পথনির্দেশক হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করব। উদ্দেশ্য একটাই—এ নিয়ে একটি সচেতন ও সমন্বিত ভাবনার সূচনা ঘটানো, যেন জঙ্গিবাদবিরোধী ন্যারেটিভ আরও দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে।
"প্রতিরোধ"
খন্দকের যুদ্ধ। যখন মদিনা চারদিক থেকে শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত, আর সরাসরি প্রতিরোধ সম্ভব নয়, তখন রাসুল (সা.) পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসি (রা.) এর পরামর্শে মদিনার সীমান্তে পরিখা খননের সিদ্ধান্ত নেন। এটি ছিল আরব সমাজে সম্পূর্ণ নতুন ধারণা (কৌশল)—কিন্তু কার্যকর। সালমান ফারসি (রা.) এর পরামর্শে নবীজি (সা.) এর গৃহীত এই কৌশল আমাদের শেখায়—সামর্থ্যের সীমা কখনোই সম্ভাবনার সীমা নয়, যদি তার পেছনে থাকে বুদ্ধিমত্তা ও ঈমানদীপ্ত নেতৃত্ব।
জঙ্গি ন্যারেটিভের মোকাবেলায় আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা উচিত—নিজস্ব সামর্থ্যের পরিসরে থেকে যতটা সম্ভব শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তবে কেবল বিদ্যমান সক্ষমতাই নয়, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন হওয়া উচিত—যে জিনিসগুলো এখনো আমাদের নাগালের বাইরে, সেগুলোকেও ধীরে ধীরে আমাদের দখলে আনার চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন কৌশল, ধৈর্য ও সুদূরদর্শী পরিকল্পনা। ঠিক যেমন নদীর পানি প্রথমে ছোট ধারা হয়ে প্রবাহিত হয়, তারপর একসময় তা বৃহৎ স্রোতে রূপ নেয়—তেমনি আমাদের প্রতিরোধকেও ধাপে ধাপে শক্তিশালী করতে হবে।
জঙ্গি ন্যারেটিভের প্রতিরোধে প্রাথমিক ও মৌলিক করণীয় হলো—একটি বিকল্প বয়ান নির্মাণ করা। এমন একটি বয়ান, যা বিভ্রান্তির কুয়াশা ছেঁটে সত্যের আলোকে স্পষ্ট করে তোলে; যা মুসলিম পরিচয় নিয়ে তৈরি করা হীনমন্যতা ভেঙে, আত্মমর্যাদা ও গর্ববোধ জাগ্রত করে।
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের কাজকে দুই ধাপের লক্ষ্যভিত্তিক কাঠামোয় বিন্যস্ত করা যেতে পারে—একটি স্বল্পমেয়াদি, অপরটি দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য হবে—সেকুলার ঘরানার পক্ষ থেকে জঙ্গি ন্যারেটিভ বাস্তবায়নের যে প্রচেষ্টা চলছে, তাকে তাতক্ষণিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো এবং কার্যত বাধাগ্রস্ত করা। আর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হবে—একটি শক্তিশালী, ঈমানভিত্তিক-তাওহীদভিত্তিক বিকল্প বয়ান গড়ে তোলা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একটি সুসংহত কাউন্টার ন্যারেটিভ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে।
"স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য ও কাজ"
"কাজ ১"
"কাজ ১"
হাসিনার পতনের পর পর্দা সরে যেতে থাকে বহুদিনের গোপন এক অধ্যায়ের। একে একে প্রকাশ পেতে শুরু করে—জঙ্গি দমনের নামে এই ভূখণ্ডের সাধারণ মুসলিমদের ওপর চালানো নির্যাতনের নির্মম বর্ণনা। যাদের অপরাধ ছিল না, ছিল শুধু পরিচয় (মুসলিম)। দৃশ্যমান হতে থাকে গুমের নিষ্ঠুর বাস্তবতা, উন্মোচিত হয় রক্ত, কান্না আর আতঙ্কের ছাপ ঘষেমেজে চকচকে করে তোলা আয়নাঘরের কিছু দৃশ্য।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে একে একে প্রকাশ পেতে থাকে গুমের শিকার মানুষের নিখোঁজ জীবনের কষ্ট ও আতঙ্কভরা ইতিহাসের ছেঁড়া ছেঁড়া অধ্যায়—যা এতদিন ছিল অদৃশ্য ও অবর্ণিত। এই প্রসঙ্গে ‘আমার দেশ’ পত্রিকা গুম সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশে সবচেয়ে দৃঢ় ও ধারাবাহিক ভূমিকা রেখেছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গঠিত হয় গুম বিষয়ক একটি তদন্ত কমিশন, যার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—সরকারি বা সংশ্লিষ্ট সংস্থার মদদে বা সম্মতিতে সংঘটিত বলপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্ত করা, নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করা, দায়ীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং গুম প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের প্রস্তাবসহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এই কমিশনের সদস্যদের একজন হলেন নাবিলা ইদ্রিস (শিক্ষিকা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গুমের শিকার ব্যক্তিদের দেওয়া জবানবন্দির আলোকে তাঁদের গুমকালীন সময়ে ঘটে যাওয়া নির্যাতনের বাস্তবচিত্র সম্পর্কে প্রায়ই লেখেন।
এই দুইটি সূত্র—পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট—পরস্পরকে পরিপূরক করে। এদের সমন্বয়ের মাধ্যমে আমাদের সামনে একটি মূল্যবান সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ইতোমধ্যেই আমাদের আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে; এখন প্রয়োজন এসব তথ্যকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে যথাযথভাবে কাজে লাগানো। মনে রাখতে হবে, সময় দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে—সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলতে না পারলে পরবর্তীতে সেই সঠিক কথা মূল্যহীন হয়ে যায়।
"এই তথ্য গুলোকে আমরা কীভাবে ব্যাবহার করতে পারি?"
আমাদের এই ভূখণ্ডের মানুষ বিভিন্ন কারণেই বেশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে, যার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অসচ্ছলতা। দৈনন্দিন জীবনের আর্থিক চাপ তাদের এতটাই ব্যস্ত রাখে যে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়ার সময় বা আগ্রহ—দুটোরই ঘাটতি দেখা যায়। অবশ্য এটিই একমাত্র কারণ নয়, তবে এটি নিঃসন্দেহে প্রধান কারণগুলোর একটি।
এই বাস্তবতায় দেশের বহু ঘটনাপ্রবাহ তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, বিশেষত সেনসিটিভ বা স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোর বিষয়ে তারা আরও বেশি অজ্ঞ। গুম ইস্যুটি এমনই একটি বিষয়—যা স্পর্শকাতরতার দিক থেকে অন্যতম। বাংলাদেশের গণমাধ্যম মূলত সেকুলার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হওয়ায়, এই ইস্যুতে সাধারণ মানুষের জানাশোনা অত্যন্ত সীমিত, অনেক সময় যা জানে—তাও অপূর্ণ বা বিকৃত।
এই প্রেক্ষাপটে, গুম সংক্রান্ত ইতোমধ্যে প্রকাশিত রিপোর্ট ও প্রতিবেদনসমূহ আমাদের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার হতে পারে। যদি আমরা সঠিকভাবে এসব তথ্যের বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে একটি শক্তিশালী কাউন্টার ন্যারেটিভ গড়ে তোলা সম্ভব—যা বর্তমানে পুনর্গঠিত হতে চাওয়া জঙ্গি ও দমনমূলক ন্যারেটিভের বিপরীতে বিকল্প বয়ান তৈরিতে সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ।
"তথ্য গুলোকে কীভাবে ব্যাবহার করা উচিত হবে?"
খুব সরলভাবে বলতে গেলে, আমাদের করণীয় হলো—গুমের শিকার ব্যক্তিদের এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেওয়া, সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে তথ্যভিত্তিকভাবে উপস্থাপন করে একটি শক্তিশালী ও অর্থবহ ডকুমেন্টারি তৈরি করা, এবং তা যথাসম্ভব বিস্তৃতভাবে প্রচার করা।
এ পর্যায়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন—“এইটুকু কাজ করে আপনি কীভাবে আশা করেন যে একটি শক্তিশালী কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি হয়ে যাবে? এত সহজ হলে তো হয়েই যেত! আপনি কি পাগল নাকি?”
প্রিয় ভাই, এই প্রশ্নটা যথার্থ। বাস্তবতা হলো—শুধু এতটুকু করলেই কাউন্টার ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা হবে, এমনটা ভাবা সরলতর বোকামির নামান্তর। আমরা যদি বিষয়টিকে একেবারে সরল রেখেই কাজ করি, তাহলে এর প্রভাবও হবে ততটাই সীমিত ও সাময়িক।
তাই আমাদের করণীয় হলো—এই সরল কাজটিকেই কৌশল ও চিন্তাগত জটিলতায় পরিণত করা। নৈতিক বয়ান, প্রেক্ষাপট, দর্শন ও ইতিহাসের আলোকে এই কাজের পরতে পরতে অর্থ ও আবেদন যোগ করতে হবে, যাতে এটি হয়ে ওঠে শুধু একটি তথ্যচিত্র নয়—বরং একটি জাগ্রত রাজনৈতিক ও নৈতিক বক্তব্য, যা মানুষের হৃদয়ে প্রশ্ন জাগায় এবং বিবেককে আলোড়িত করে।
চলুন, এই সরল কাজটিকে জটিল করে তোলার সেই চেষ্টায় আমরা একসাথে এগিয়ে যাই।
"জটিলীকরণ"
ডকুমেন্টারির কাঠামো:
শুধু তথ্য উপস্থাপন করলেই হবে না; বরং তথ্যগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে, যেন তা থেকে একটি স্পষ্ট, অর্থবহ বার্তা নির্মিত হয়—যা দর্শকের চিন্তা ও অনুভূতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। উপস্থাপন এমন হওয়া উচিত, যাতে দর্শকের মনে লুকিয়ে থাকা সংশয়ের দেওয়াল ভেঙে পড়ে, এবং তারা যে বিকৃত সত্যকে এতদিন চিরন্তন সত্য হিসেবে ধরে রেখেছিল, সেই বিশ্বাসে ধাক্কা লাগে, তৈরি হয় নতুন করে ভাবার অবকাশ।
ডকুমেন্টারিতে কিছু নির্দিষ্ট বিষয়কে ক্রমান্বয়ে তুলে ধরতে হবে—একটি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী কাঠামোর ভিত্তিতে। খুব সহজভাবে যদি বলি, তাহলে কাঠামোটি হবে কিছু স্পষ্ট ও ধারাবাহিক পর্বের সমন্বয়ে গঠিত।
১. কারিগরদের চেনা
প্রথমেই দর্শকদের চোখে চোখ রেখে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে জঙ্গি ন্যারেটিভের প্রকৃত কারিগর কারা—এই বয়ান বানানো হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের ল্যাবরেটরিতে, বিশেষ করে ক্রুসেডার আমেরিকার সদর দপ্তরে।
২. ধ্বংসযজ্ঞ সমূহের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
জঙ্গি ন্যারেটিভের উপর ভর করে কিভাবে তারা গোটা মুসলিম দুনিয়াকে আগুনে পুড়িয়েছে (ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া—ইত্যাদি) সে সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা।
৩. দাসদের ব্যবহার
পশ্চিমা দুনিয়া কেবল নিজের হাতে নয়, বরং তাদের আদর্শিক দাস ও অনুগত সরকারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কীভাবে মুসলিমদের দমনের প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে—তা তুলে ধরা।
৪. এই ভূখণ্ডের দাসদের মুখোশ খোলা
এবার ক্যামেরা ঘোরাতে হবে নিজেদের দিকে—এই বাংলার ভেতরকার দালালদের দিকে। দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে হবে—কে কার হয়ে কাজ করে, কারা এদেশে আমেরিকার আদর্শিক ফিল্ড অফিসার হয়ে বসে আছে। কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও মতাদর্শ (সেকুলারিজম, লিবারেলিজম) এই ভূমিতে আমেরিকার দাসত্বে কাজ করেছে, তাদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করা।
৫. নির্যাতনের চিত্র
এবার কথা বলাতে হবে সেই মানুষগুলোকে, যাদের ওপর দাসদের বাহিনী নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিল।
ক) পুরুষদের গুম ও নির্যাতনের সাক্ষাৎকার।
খ) গুম হওয়া নারীদের সাক্ষাৎকার।
গ) নারীদের সাথে গুম হওয়া শিশুদের বক্তব্য।
ঘ) সেই সকল পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার—যাদের প্রিয়জন গুমের শিকার হয়েছে অতঃপর তাদের হত্যা করা হয়েছে কিংবা ফিরে এলেও ভিন্ন রূপে ফিরেছে।
৬. সিস্টেমের মুখোশ উন্মোচন
এই দমনযন্ত্রের ভিত্তি কী ছিলো?—গণতন্ত্র, মানবরচিত আইন ও আইনরক্ষাকারী বাহিনী। এগুলো কীভাবে নির্যাতনের বৈধতা তৈরি করে দিয়েছে, তা তুলে ধরা।
৭. দাস পাল্টেছে, দাসত্ব রয়ে গেছে
শাসকের মুখ বদলাবে, ব্যাজের রং বদলাবে, কিন্তু জুলুমের মঞ্চ ঠিক আগের মতোই সাজানো থাকবে। যে কাঠামো (গণতন্ত্র, মানবরচিত আইন) এই নিপীড়নকে সম্ভব করেছে—তা অক্ষতই থেকে গেছে আর এই ব্যবস্থা অক্ষত থাকলে, আগামীর সকালে আবারও গুমের গাড়ি আসবে।
৮. ঘৃণার জন্ম দেওয়া
ডকুমেন্টারিতে ঘটনাপ্রবাহ এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে—যাতে যারা এই বর্বরতায় অংশ নিয়েছে, তাদের নাম শুনলেই দর্শকের চোখ জ্বলে ওঠে, প্রতিশোধের স্পৃহা জেগে ওঠে। ডকুমেন্টারির প্রতিটি অংশ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে—যাতে দর্শকের হৃদয়ে সরকারি বাহিনী ও তাদের মদদদাতাদের প্রতি ঘৃণা ও প্রশ্ন তৈরি হয়।
৯. ভবিষ্যতের জুলুমকারীদের প্রতি বার্তা
ভবিষ্যত তাগুত সরকারকে সম্বোধন করে কিছু বলা—সাবধান করা, সতর্ক করা, অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া।
১০. মুক্তির পথ
সবশেষে, দর্শকদের সামনে একটি বিকল্প পথ উন্মোচন করতে হবে—একটি পথ যা কেবল প্রতিরোধ নয়, বরং মুক্তির দিশা দেয়; স্পষ্ট বলতে হবে—ইসলাম, শরিয়াহ, খিলাফাহ এবং নববী কৌশলে পরিচালিত দাওয়াহ ও জিহাদই একমাত্র মুক্তির পথ।
খুব সরলভাবে একটি কাঠামো উপস্থাপন করলাম। মূল কথা হলো—তথ্যগুলোকে নিজেদের স্বার্থে সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে। যদিও ডকুমেন্টারি নির্মাণের অভিজ্ঞতা আমাদের আগেও রয়েছে, আমরা অতীতে অনেক বিষয়ে একাধিক ডকুমেন্টারি তৈরী করেছি, তাই প্রশ্ন হতে পারে—এই ডকুমেন্টারির বর্ণনা আর পূর্বে নির্মিত ডকুমেন্টারিগুলোর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য কী?
এখানে দাড়িয়ে বিচার করলে মৌলিক ভাবে স্পষ্ট কোনো পার্থক্য হয়তো দেখা যাবে না। তবে পার্থক্যটি প্রকাশ পাবে প্রচারের কৌশলের ভিন্নতায়—এখানেই এই উদ্যোগের বিশেষত্ব।
"প্রচার"
ডকুমেন্টারি নির্মাণের পর মূল চ্যালেঞ্জ হলো—সেটিকে কীভাবে কার্যকরভাবে প্রচার করা যায়। অনেকেই প্রাথমিকভাবে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের কথা ভাবেন এবং সেগুলোতে ব্যাপকভাবে শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তবে যেহেতু এই পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে সহজ ও প্রত্যাশিত, তাই এর প্রভাবও সীমিত হবে।
তাই প্রচার এবং মিডিয়া ব্যবহারে আমাদের হতে হবে অত্যন্ত বিচক্ষণ ও কৌশলী। সঠিক মাধ্যম ও সময় নির্বাচনই পারে ডকুমেন্টারির প্রভাব বহুগুণে বাড়াতে। অন্যথায়, ডকুমেন্টারির গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি কার্যকর প্রভাব তৈরি করতে ব্যর্থ হতে পারে।
"প্রচার মাধ্যম"
আমরা কয়েকটি ধাপে আমাদের বার্তাটি প্রচার করতে পারি—অথবা বলা ভালো, আমাদের উচিত বার্তাটিকে এমনভাবে ধাপে ধাপে ছড়িয়ে দেওয়া, যেন তৃণমূল থেকে শুরু করে এলিট সমাজ পর্যন্ত সবাই সরাসরি এই বার্তার সঙ্গে পরিচিত হতে পারে।
প্রচারের ক্ষেত্রে আমাদের মূল লক্ষ্য (টার্গেটেড অডিয়েন্স) হওয়া উচিত মধ্যবিত্ত মুসলিম জনতা এবং তরুণ প্রজন্ম—কারণ তারাই বার্তাটিকে ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার শক্তি ও সম্ভাবনা রাখে।
নিরব ও গোপন দাওয়াহর অধ্যায় শেষ করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নির্দেশে রাসূল (সা.) যখন প্রকাশ্যে দাওয়াহ শুরু করেন, তখন সেখান থেকে আমরা দাওয়াতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত দিকনির্দেশনা পাই। প্রথমত, সভা-সম্মেলনের আয়োজন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যোগাযোগ মাধ্যম বা মিডিয়ার কৌশলগত ব্যবহার—যেমন রাসুল সা. আরবের তৎকালীন মিডিয়া সাফা পাহাড়কে প্রকাশ্যে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য ব্যাবহার করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, সময় ও সুযোগকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগানো—যেমন, হজ মৌসুমে মুশরিকদের বৃহৎ জমায়েতকে ইসলামের দাওয়াহের স্বার্থে ব্যবহার করা। এই দিকনির্দেশনাগুলো আজকের দাওয়াতি কর্মকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।
এখন মে মাস চলছে। আর মাত্র কয়েক মাস পরই আগস্ট—হাসিনার পতনের এক বছর পূর্তি। সেই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্মৃতিচারণ, সমাবেশ ও সম্মেলনের আয়োজন হবে। সাধারণ জনতা ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটি আবেগঘন পরিবেশ ও উদ্দীপনার সঞ্চার হবে, তৈরি হবে বিশেষ এক রাজনৈতিক ও মানসিক আমেজ।
এই আবেগ ও জনমতকে উপলব্ধি করে আমাদের করণীয় হবে—তাদের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া অনুভূতিকে যথাসম্ভব সুপরিকল্পিত ও কৌশলীভাবে আমাদের লক্ষ্যের পক্ষে ব্যবহার করা। জনসাধারণের এই আবেগ-উৎসারিত মুহূর্তগুলো আমাদের জন্য হবে কার্যকর প্রচার ও জনসংযোগের গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
সমাবেশের আয়োজন:
প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সমাবেশের আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে বড় পর্দা বা প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। এসব সমাবেশে যেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকের জমায়েত হয় এবং আমাদের টার্গেটেড অডিয়েন্স যেন এতে অংশ নেয়—সেটি নিশ্চিত করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এজন্য সমাবেশগুলোর আগেই পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালাতে হবে। যেমন, আমরা যেভাবে কোনো মাহফিলের জন্য পোস্টারিং করি, তেমনি এই সমাবেশগুলোর জন্যও পোস্টার, লিফলেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালানো যেতে পারে। এছাড়াও, মসজিদের মিম্বর থেকে সাধারণ মুসল্লীদের উদ্দেশে সমাবেশের সময় ও স্থান জানিয়ে অংশগ্রহণের দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। এভাবে পূর্বপ্রস্তুতি ও প্রচারের মাধ্যমে সমাবেশগুলোকে প্রাণবন্ত, অর্থবহ এবং বার্তাবাহী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সমাবেশের আয়োজন করতে হবে দেশের প্রতিটা জেলায়, প্রতিটা উপজেলায় একই দিনে, একই সময়ে৷ প্রচারণার ক্ষেত্রে সাহায্য নিতে হবে দেশের সেলিব্রেটি আলেম ও দায়ীদের।
প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, বড় কলেজ এবং স্বনামধন্য স্কুলে—ফর্মাল হোক বা ইনফর্মাল উপায়ে—এই ডকুমেন্টারিটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও প্রশাসনকেও এতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, যাতে বার্তাটি গভীরভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। এছাড়াও, প্রতিটি মাদ্রাসায় অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজন করে শুধুমাত্র ছাত্রদের নয়, তাদের অভিভাবকদের কাছেও বার্তাটি পৌঁছে দিতে হবে।
বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি মুসলিমরা—যাদের ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ বলে সম্বোধন করা হয়—তাদেরও এই প্রচারণার অংশীদার করা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মাঝে জমায়েতের উদ্যোগ নেওয়া এবং যথাযথ মাধ্যমে আমাদের বার্তাটি তাদের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে একাধিক স্তরে প্রভাব তৈরি হবে এবং দাওয়াহ কার্যক্রম আরও ব্যাপকতা পাবে।
অতঃপর অনলাইনে বিভিন্ন মিডিয়া প্লাটফর্মে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে সেই বার্তা এবং সংরক্ষণ করতে হবে সেই বার্তাকে।
"স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য ও কাজ"
"কাজ ২"
এই ভূখণ্ডের মুসলিমদের ওপর সময় সময় চালানো নিপীড়ন-নির্যাতনের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করতে হবে বইয়ের পাতায়—বিশেষ করে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন সেকুলার শাসনব্যবস্থার অধীনে মুসলিমদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মম ও বর্বর ঘটনাগুলো। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হবে—জঙ্গি ন্যারেটিভের ছায়ায় কীভাবে এদেশের সাধারণ মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং কী নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তাদের দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
তবে এসব বইয়ে কেবল ইতিহাস বর্ণনা করলেই চলবে না। এতে থাকতে হবে একটি সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী কাঠামো—যেখানে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের করণীয় কী হতে পারে, সেই সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিও উপস্থাপিত থাকবে।
পরবর্তীতে, এই বইগুলো সমাজের শিক্ষিত শ্রেণি ও তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা ইতিহাস যেমন জানে, তেমনি সামনে কীভাবে এগোতে হবে তাও উপলব্ধি করতে পারে।
স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য ও করণীয় সম্পর্কে আপাতত আমার ব্যক্তিগত ভাবনা এসব বিষয়েই কেন্দ্রীভূত। আমার বিশ্বাস, যদি আমরা এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারি, তাহলে পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা তথাকথিত জঙ্গি ন্যারেটিভকে একটি শক্তিশালী ধাক্কা দেওয়া সম্ভব হবে। একইসঙ্গে, তাওহীদের শুদ্ধ দাওয়াতের পথও আরও বিস্তৃত ও সুসংগঠিত হবে, ইনশাআল্লাহ। যাই হোক, এবার চলুন—একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলি।
এই যে ভাবনাগুলো—এগুলো বাস্তবায়িত হলে আমাদের উদ্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন হবে কী হবেনা, সে আলোচনায় এখন যাচ্ছি না। আমি আলোচনার দৃষ্টি সরাতে চাই—অন্যতর, কিন্তু মৌলিক এক প্রশ্নের দিকে: এমন বৃহৎ পরিসরের কাজ বাস্তবায়নের বাস্তব সক্ষমতা কি আমাদের আছে?
এর সরল ও সৎ উত্তর হলো—না, আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। কারণ, আমরা জামাআহ বদ্ধ নেই। আশা করি এই বাস্তবতা থেকে এখন আমরা উপলব্ধি করতে পারছি—আমাদের প্রাথমিক ও জরুরি করণীয় কী হওয়া উচিত।
তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস—হেফাজতে ইসলাম এমন বৃহৎ পরিসরের কাজ বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাখে। সংগঠনটির তরুণ নেতৃত্ব ও বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত—দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসা যে বৈরী ঝড় আমাদের সামনে, তার মোকাবিলা কীভাবে করা হবে? নীরবতা কখন কৌশল হতে পারে, আর কখন তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে রূপ নেয়, সেই বোধ অর্জন করাও এখন সময়ের দাবি।
উল্লেখ্য, আমি কাউকে আমার ভাবনা অনুযায়ী কাজ করতে বলছি না। এ বিষয়ে ভাবনা গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার উদ্দেশ্য একটাই—এ নিয়ে একটি সচেতন ও সমন্বিত ভাবনার সূচনা ঘটানো, যেন জঙ্গিবাদবিরোধী ন্যারেটিভ আরও দৃঢ় ভিত্তি লাভ করে এবং তাওহীদের দাওয়াত দেওয়ার পথ প্রসারিত হয়।
আজ এতটুকুই।
আসসালামু আলাইকুম।
Comment