ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!
পর্ব - ৪
পর্ব - ৪
প্রিয় ভাইয়েরা!
.
আজ আমাদের যে করুণ অবস্থা, তা নিজেদের দায়িত্ব পালন না করার ফল। যে দ্বীন বিজয়ী হওয়ার জন্য এসেছিল, সে দ্বীন আজ উপমহাদেশে পরাজিত। যারা অন্যকে মুক্তি দিতে এসেছিল, আজ তারাই অন্যের গোলাম হয়ে হুকুম তামিল করছে। যদি এ দ্বীন বিজয়ী থাকত, তবে আল্লাহর শরীয়াই এখানে শাসক হত। উপমহাদেশের এই পুরা জমিনে যদি কোথাও ইসলামের দূর্গ থাকত, তাহলে শুধু ভারত কেন; পুরা উপমহাদেশে মুসলমানদের এ দুরবস্থা হত না। মুসলমান কেন, কোন বিধর্মীকেও জু/লু/মের শিকার হতে হত না। এ ভূমিতে শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হত, আর আসমান রহমতের বারি বর্ষণ করত। ইসলামের সকল কল্যাণ ভরপুরভাবে লাভ করা যেত এবং এখানকার সকল ইনসাফ-প্রিয় মানুষ ইসলামের আঙ্গিনায় নিজের মুক্তি পেয়ে ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিত। কিন্তু আফসোস! এ দায়িত্ব পালন করা হয়নি। সাতচল্লিশে ভারত ভাগ হয়েছে, ইসলামের নামে একটি রাষ্ট্রও গঠন হয়েছে। কিন্তু ইসলামকে সেখানেই সবচেয়ে বেশী ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আজ ইসলাম ও ইসলাম প্রিয় লোকদের উপর জঘন্য জু/লু/ম চালানো হচ্ছে। সেখানের শাসক ও সেনাবাহিনী ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রতিটি যুদ্ধের প্রথম সারির সৈনিক। এরপর যারা এখানে কুফর ও নাস্তিকতার সামনে নতজানু হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়েছিল, আফসোস! তারাই আজ গ/ণ/ত/ন্ত্রের বলির কাষ্ঠে নিজেদের ইসলামকেই বলি দিয়েছে। ফল এই দাঁড়িয়েছে যে, পাকিস্তানে ক্ষমতাসীনদের মতলব ইসলামের সেবা নয়, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের ফায়দা হাসিল করা। এভাবেই ইসলামের বিজয় আর মাজলুমকে সাহায্য করার স্বপ্ন দোরগোড়ায় থেকে গেছে। শহীদ শাইখ আহসান আজীজ রহ. যে পঙক্তিগুলো ভারতের মুসলিম ভাইদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন। সে পঙক্তিগুলো আজ পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা কত স্পষ্টভাবেই না বর্ণনা করছে-
.
আমাদের থেকে পৃথক হলে যারা
সেই তোমরাই ‘সংখ্যালঘু’ থেকে গেলে!
এতটাই একাকি হয়ে গেলে যে,
সর্বস্ব হারিয়ে গেল!
আর আমরা!!!
যারা গতকাল এখানে এসেছিল
বুকে স্বপ্ন নিয়ে!
কুফর আর নাস্তিকতার স্রোতে
তারা কত আগে... ভেসে গেল!
কোন আয় উন্নতি ছাড়াই,
যেখান থেকে চলা শুরু করেছিলাম
আজও থেকে গেলাম সেখানে!
.
ভারত বিভক্তির পর আমরা যেখান থেকে চলা শুরু করেছিলাম, আজও সেখানে পড়ে আছি। সেখানে পড়ে না থাকলে, আজ পুরো ভারতবর্ষের ভাগ্য অন্যরকম হত। অপরদিকে ভারতেও দ্বীনের বিজয় ও দাওয়াতের আন্দোলন ভিন্নধর্মী হত। আফসোস হয়, সামনে এক কদমও বাড়তে পারিনি। অথচ এখানে এমন আন্দোলন ছিল, যা এখানকার মুসলিমদের হেফাযত করতে পারত। এখানে এমন আন্দোলন ছিল, যা শুধু নিজের নয় বরং অন্যের ভাগ্যেও প্রসন্নতা আনতে পারত। হ্যাঁ, মানি, এখানে সমস্যা কম ছিল না। যারা এ অবস্থায়ও দ্বীনের যতটুকু খেদমত করেছে, আল্লাহ তাদের বিরাট প্রতিদান দিবেন। কিন্তু সামষ্টিকভাবে যা হওয়া উচিৎ ছিল, তার কিছুই হয়নি। দরকার ছিল, মুসলিমদের আদর্শিক মুসলিম হওয়ার এবং নিজ পায়ে দাঁড়াবার দাওয়াত দেওয়া। নিজের হেফাযত ও আত্মরক্ষার জন্য তাদেরকে প্রস্তুত করা। সে দাওয়াতে ‘দেশ পূজা’র স্থানে আল্লাহর ইবাদত এবং নাস্তিকতার পরিবর্তে তাওহীদ ও এত্তেবায়ে শরীয়তের এমন প্রাণ সঞ্চার করা, যা দাওয়াত ও কর্মের মশাল নিয়ে অন্যদের সামনেও ইসলামের মহত্বের জ্বলন্ত নমুনা হয়ে থাকত। কিন্তু আফসোস, আমরা এখানে গ/ণ/ত/ন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার মিছিলে সঙ্গ তো দিয়েছি, কিন্তু ইসলাম এবং আমাদের অবস্থার নাজুকতা বলে দিচ্ছে, আমরা আমাদের উদ্দেশ্য পানে এক কদমও সামনে বাড়তে পারব না।
.।
ভারতে অবস্থানরত আমার প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা!
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, শুধু ভারত নয় বরং পুরা ভারতবর্ষে ইসলাম বিজয়ী বেশে থাকবে। শাহ আব্দুল আযীয দেহলবী রহ., সাইয়্যেদ আহমাদ শহীদ রহ. ও ইসমাইল শহীদ রহ. প্রমুখরা চোখের তারায় যে স্বপ্ন লালন করতেন, সেই স্বপ্ন পূরণের সময় খুব বেশি দূরে নয়। তাছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পবিত্র হাদীস আমাদের বিশ্বাসকে আরো সুদৃঢ় করছে যে, এখানে জুলুম ও কুফরের এ অন্ধকার স্থায়ী হবে না। সেই দিন অতিসত্ত্বর ঘনিয়ে আসছে, যেদিন কুফর ও শিরকের এ ঘোর অন্ধকার কেটে যাবে।
সুতরাং হে মুহাম্মাদ বিন কাসিম ও মাহমুদ গজনবীর আত্মিক সন্তানেরা! আপনারা চিন্তিত হবেন না, মনঃক্ষুণ্ন হবেন না এবং নিরাশ হবেন না...
.
এটা এক সুদৃঢ় বাস্তবতা যে, বিজয় ও সাহায্য কেবল আল্লাহ, শুধুমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে-
وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ﴿الأنفال: ١٠﴾
“আর সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হতে পারে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তির অধিকারী হেকমত ওয়ালা।” (সূরা আনফাল: ১০)
.
আমাদের পরীক্ষার বিষয় হচ্ছে, আমরা সে অন্ধকারের সাথে সন্ধি করি নাকি ইসলামের আলোর মশাল হাতে বাতিলের বিরুদ্ধে কাতাবন্দি হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। যদি আমরা হিম্মত ও প্রতিজ্ঞার সাথে দ্বীনের সাহায্যের শরয়ী পন্থা গ্রহণ করি এবং দ্বীনের সাহায্যকে সবার সামনে এবং সবার উপরে রেখে কাজের ময়দানে নেমে পড়ি, তবে নির্ঘাত বিজয় আমাদের পদচুম্বন করবে। মহান আল্লাহর বাণী-
وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ﴿الحج: ٤٠﴾
“আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।” (সূরা হাজ্জ: ৪০)
.
অতএব, জযবা যেন থেমে না যায়, প্রতিজ্ঞার মাঝে যেন দুর্বলতা না আসে। এখন কাজ করার এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। আমরা মু’মিন, ধৈর্য ও অবিচলতার রশি আমাদের থেকে কখনো আলাদা হয়নি... ফলে আমরা সব সময় সফলকাম। সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর বিতর্ক অনর্থক হয়ে যাবে। মিথ্যার শোরগোল ও চেচামেচি বাতাসে মিলিয়ে যাবে।
كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿البقرة: ٢٤٩﴾
সামান্য দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে। আর যারা ধৈর্য্যশীল আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন। (সূরা বাকারা: ২৪৯)
.
আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে এসব আয়াতের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং যে বরকতময় কাফেলা ভারতবাসীকে অন্ধকার থেকে মুক্ত করবে, আল্লাহ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত অন্তর্ভুক্ত করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।
.
চলবে...
Comment