পাকিস্তান দখলকারী জেনারেল এবং শাসকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা
পর্ব - ২
সত্যকে গোপন করে লুকানো যায় না.
২০১৩ ঈসায়ীতে তোমাদের সংস্থার লোকেরা লাহোরের পাঁচজন যুবককে তাদের পরিবারসহ একটি ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। অবরুদ্ধ পাঁচজন নারীর মধ্যে চারজন গর্ভবতীও ছিল। তোমাদের কর্মচারীরা তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, পুরুষেরা যদি অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করে তাহলে নারী এবং বাচ্চাদেরকে নিজ নিজ আত্মীয় স্বজনের কাছে নিরাপদে ফিরিয়ে দিবে। যুবকেরা আত্মসমর্পণ করল। কিন্তু তোমাদের সংস্থার গুণ্ডারা ঐ সমস্ত নারীদেরকে প্রকাশ্যে তাদের সাথে নিয়ে গেল।
ঘটনাটি মিডিয়াতেও প্রচার হয়েছিল, এখন যুবকদের থেকে কতককে শহীদ করে দেওয়ার সংবাদও শুনা যাচ্ছে। রাতের আধারে প্রকোষ্ঠ থেকে বের করে নিয়ে মাথায় গুলি করে দিয়েছে। কিন্তু নারীরা কোথায়?
আড়াই বছর যাবত তাদের কোন খোঁজ নেই! তাদের আত্মীয় স্বজনেরা আড়াই বছর পর নিজেদের নীরবতা ভেঙ্গে, তাদের ঐ–সমস্ত মেয়েদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার পর, তোমাদের দায়িত্বশীল শাসকরা পরিষ্কার অস্বীকার করে বলে যে, ঐ–সমস্ত নারী এবং বাচ্চাদের ব্যাপারে তাদের কোন কিছুই জানা নেই। বরং তারা তো বন্দিই হয়নি!
তোমাদের অপারেশন ‘জারবে আজব’ মার্কিন মেরিন সেনাদের পৃষ্ঠপোষকতায় চালু রয়েছে৷ মার্কিন ড্রোন আরব মুজাহিদীনদেরকে শহীদ করেছে। তোমাদের সেনারা তাঁদের নারী ও বাচ্চাদের উপর বোমাবর্ষণ করেছে। তারা যখন বাধ্য হয়ে এই এলাকা থেকে বের হতে লাগল তখন তোমাদের সেনারা ঐ–সমস্ত অসহায়, নিরস্ত্রদের বিরুদ্ধে ওঁত পেতে থেকে দু’বার আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা এবারও রক্ষা করেছেন। তখন এসমস্ত অসহায় লোকগুলো আশ্রয় খোঁজার সাহস হারিয়ে ফেলেছে। ড্রোন ছিল তাদের মাথার উপর। মার্কিনীদের নির্দেশে তোমাদের সেনাদের বিশেষ একটি গ্রুপ ঐ সমস্ত “ভয়ংকর” সন্ত্রাসীদেরকে উঠিয়ে নেওয়ার জন্য রাস্তায় এসেছিল।
বাসের বিচক্ষণ লোকেরা সাক্ষী যে, ঐ–সমস্ত নারী এবং বাচ্চাদেরকে তোমাদের বীর সেনারা গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছে। কোন জেলে বা ক্যাম্পে তাদেরকে রাখা হয়েছে? কোন আদালতে বিচারকার্য চলছে? মার্কিনীদের কাছে এদেরকে তোমরা বিক্রি করে দিয়েছ, নাকি এখন পর্যন্ত এসমস্ত নারীরা তোমাদের গুণ্ডা সেনাদের নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে? কি অবস্থায় এবং কার দয়া ও অনুগ্রহে আছে? এসকল প্রশ্নের কোন উত্তর নেই।
পাকিস্তান দখলকারী জেনারেল এবং শাসকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা
.
গ্রেফতারের সংবাদটা পর্যন্ত মিডিয়ার কোনো চ্যানেলে বা সংবাদপত্রে আসেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তলবকৃত ‘আ‘দনান শুকরি’ আরব মুজাহিদ ছিলেন। তাঁর অন্যায় ও অপরাধ ছিল জিহাদ এবং নিপীড়িত জাতির পক্ষে প্রতিরোধ করা। মার্কিন ড্রোনের তত্ত্বাবধানে তোমাদের সেনারা জ্ঞানী লোকদের মাঝে তার উপর অতর্কিত আক্রমণ করেছে। আ‘দনান রহিমাহুল্লাহকে শহীদ করে তোমাদের অফিসাররা মার্কিনীদের নিকট থেকে বাহবা এবং পুরষ্কার লাভ করেছে। আ‘দনান রহিমাহুল্লাহর বিধবা স্ত্রী ও বাচ্চাদেরকে ধরে তোমাদের এই সেনারা তাদের সাথে নিয়ে গিয়েছে। এই মুহাজিরাহ নারী কোথায় আছে এবং তার বাচ্চার কোন অবস্থায় আছে, কারও জানা নেই!
করাচী থেকে পেশাওয়ার পর্যন্ত পুরো পাকিস্তানের শহরে–শহরে ধর–পাকড়ের ধারাবাহিকতা চালু আছে। রাতের আধারে তোমাদের সেনারা ঘরে ঢুকে এমন যুবকদেরকে জোর–পূর্বক নিয়ে যায়, যাদের অপরাধ হলো তাদের ধার্মিকতা। তাদের গুনাহ হলো – তারা আল্লাহর কিতাবের উপর আমল করে। তাদের অপরাধের ভয়ংকর আলামত হলো তাঁদের চেহারায় থাকা নববী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ! যেখানে নেওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে সেখানেই নিয়ে যাচ্ছ। কোন কানুনের অধীনে এবং কার আদালতে এদেরকে উপস্থাপন করা হয়? কারও কোন কিছু জানা নেই!
তোমরা তাদের সংবাদটা পর্যন্ত মিডিয়াতে আসতে দাও না! মাতা–পিতা এবং আত্মীয়–স্বজনেরা কিছু বলার ইচ্ছা করলে তোমাদের কর্মচারীরা তাদেরকে ধমক দিয়ে দেয়। যুবকদেরকে গ্রেফতার করার পর তাদেরকে উধাও করা এতো পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যে, এ যুগে ‘আমাদের পাকিস্তানের’ রেকর্ড ইসরাইলের সমান পৌঁছে গিয়েছে! শুধুমাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে দেড়শত মুজাহিদীনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে৷ এটাতো হলো তাদের সংখ্যা, যাদেরকে তোমাদের জেনারেল এবং শাসকেরা তোমাদের প্রকাশ্য বিশেষ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছ। নতুবা আদালতের বাহিরে তোমাদের হাতে নিহত হওয়ার সংখ্যা আরও বেশি।
তোমাদের সেনা এবং সংস্থার কাছে অসংখ্য যুবক এবং বৃদ্ধ বন্দি আছে। তারা কখন এবং কীভাবে বন্দি হয়েছে তা আত্মীয়–স্বজন, নিকটাত্মীয় এবং এলাকার সমস্ত লোক জানে। গ্রেফতারের তারিখ পর্যন্ত তাদের স্মরণ আছে। কিন্তু ঐ–সমস্ত বন্দি যুবক এবং বৃদ্ধদেরকে হত্যা করে একথা বলে তাদের মৃতদেহগুলো ফেলে দেয় যে, তাঁরা পারস্পরিক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ–ছয়জন বন্দির শাহাদাত সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়ে গিয়েছে।
মিথ্যা আক্রমণ এবং কৃত্রিম পারস্পরিক যুদ্ধে তাদেরকে হত্যা করার নাটক প্রতি কয়েকদিন পর পর মিডিয়াতে প্রচার করে দাও। ঐ–সমস্ত বন্দিদের উপর কোন আদালত এবং নীতির অধীনে বিচার চলেছে? তাদের অবস্থান কী ছিল, অপরাধ কী ছিল? এটা কাউকে বলা হয়না!
তোমাদের গোপন সংস্থার কর্ণধাররা ঘরে ঢুকে সতী–সাধ্বী মা–বোনদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও দিন–দিন বেড়েই চলেছে৷ এসকল বোনেরা কোথায় চলে যায়, কেউ জানে না। মিডিয়ার কোন চ্যানেলই এই বিষয়ে কোন কথা বলেনা। এমন নীরবতা যে, মনে হয় কিছুই হয়নি। যদি নারীদের আত্মীয়–স্বজনেরা কথা বলার ইচ্ছা করে তোমরা তখন তাদেরকেও গুম করে ফেল। এক–দু’জন নয়, অপহরণ–কৃত বোনদের সংখ্যাও শত–শত ছাড়িয়ে গিয়েছে।
.
চলবে...
Comment