Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদকে ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখুন! || মুনশি আব্দুর রহমান

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদকে ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখুন! || মুনশি আব্দুর রহমান

    জিহাদকে ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখুন!
    মুনশি আব্দুর রহমান


    কাশ্মিরের জিহাদ এক সময় ছিল মুসলিম উম্মাহর হৃদয় থেকে উৎসারিত একটি প্রতিরোধ-চেতনার নাম। এটি ছিল সামরিক দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে একটি আত্মত্যাগভিত্তিক লড়াই, যেখানে মুজাহিদিনরা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ত ঢেলে স্বাধীনতা ও ইসলামের জন্য যুদ্ধ করতেন। কিন্তু এই আন্দোলন যখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর কৌশলগত ‘অ্যাসেট’-এ পরিণত হলো, তখন এর স্বতঃস্ফূর্ততা, ঈমানি বৈশিষ্ট্য ও আদর্শিক দৃঢ়তা বিপন্ন হতে থাকে।


    পাকিস্তানি ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণনীতি:

    পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটি, বিশেষ করে আইএসআই, দীর্ঘদিন ধরেই কাশ্মিরি মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট। তারা এমন সব দল ও নেতা সৃষ্টি করেছে বা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, যাদের মাধ্যমে ভারতকে চাপের মধ্যে রাখা যায়। কিন্তু এর বিনিময়ে তারা চায় সম্পূর্ণ আনুগত্য—আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণের অধিকার যেন থাকে তাদের হাতে। যারা এই শর্তে রাজি হয়নি, তাদের হয় হত্যা করা হয়েছে, নয়তো কাশ্মির ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। আল কায়েদার বিখ্যাত কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি রহিমাহুল্লাহ এই কারণেই কাশ্মীরের ময়দান ছেড়ে ওয়াজিরিস্তান হিজরত করেছিলেন।

    যাইহোক এর ফলে কাশ্মিরের জিহাদি আন্দোলন এক ধরনের "রাষ্ট্রীয়-নির্ধারিত জিহাদ"-এ রূপ নেয়, যা বাস্তবে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি যন্ত্রে পরিণত হয়। আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হারিয়ে যায়—তাকওয়া ও তাকদীর নির্ভর মুজাহিদিনদের জিহাদ যখন রাষ্ট্রীয় এজেন্ডায় লালিত লোকজনের নেতৃত্বে চলে আসে, তখন তা হয়ে পড়ে কৌশলগত ক্রীড়ানীতির অংশ।


    আল-কায়েদার সতর্কবার্তা ও আদর্শিক অবস্থান:

    আল-কায়েদা বহুবার এই নিয়ন্ত্রণনীতি সম্পর্কে মুজাহিদদের সতর্ক করে এসেছে। তাদের বার্তায় বারবার বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থেকে জিহাদকে দূরে রাখতে হবে। তাদের মতে, যে জিহাদ রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, তা আর আদর্শিক থাকে না—বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত একটি হাতিয়ার হয়ে পড়ে। কাশ্মিরে স্বাধীন, স্বশাসিত ও আত্মত্যাগভিত্তিক জিহাদি আন্দোলন গড়ে তোলাই ছিল আল-কায়েদার দাওয়াতের মূল লক্ষ্য। [১]

    কাশ্মীরের মুজাহিদদের নসিহত করতে গিয়ে শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি দুটি পয়েন্ট অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন-
    (১) ভারতকে কিভাবে আঘাত হানা উচিত, এবং
    (২) পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার কাশ্মীরি জিহাদ হাইজ্যাকের প্রচেষ্টা থেকে মুক্ত থাকার অনিবার্যতা।

    ১. ভারতকে কোথায় আঘাত করা জরুরি?

    শাইখ আইমান মুসলিম উম্মাহর অন্তর্দৃষ্টি প্রসারিত করতে চান। তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট—কাশ্মীরকে মুক্ত করতে চাইলে, শুধু নিয়ন্ত্রণরেখায় হঠাৎ আঘাত হেনেই কিছু হবে না। বরং ভারতের গভীর রাষ্ট্রযন্ত্র, তার অর্থনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, সেনা কাঠামো ও কূটনীতিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করাই হবে বাস্তব ও কৌশলগত জবাব। কারণ কাশ্মীরের জুলুম শুধু জওয়ানদের বুটে সীমাবদ্ধ নয়; এটি দিল্লির শাসনব্যবস্থার কেন্দ্র থেকে পরিচালিত হয়।

    (তবে, এর জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি, সাধনা ও পরিকল্পনা জরুরী। জিহাদের সম্মানিত আমীরদের নির্দেশ ছাড়া নিজে থেকে কিছু করে বসা হিতে বিপরীত হবে।)

    শাইখ যে বিষয়টি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, তা হলো—কাশ্মীর শুধু কাশ্মীর নয়। এটি গোটা ভারতের ইসলাম-বিদ্বেষী প্রকল্পের একটি চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং এই প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ করতে হলে ভারতের অন্তঃস্থ জুলুমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আঘাত হানতে হবে।

    এখানে ফ্রন্টলাইন জিহাদ কাশ্মীরে, কিন্তু স্ট্র্যাটেজিক জিহাদ দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ কিংবা বেঙ্গলুরুতে। কারণ এ শহরগুলো ভারতের ‘যুদ্ধ-ক্ষমতা ও বৈশ্বিক ভাবমূর্তির’ স্তম্ভ।

    ২. পাকিস্তানি হাইজ্যাকিং ও কাশ্মীরি জিহাদের আত্মরক্ষার প্রশ্ন:

    কাশ্মীরি জিহাদের আরেকটি বড় সংকট—এটির বড় একটি অংশ আজ আর স্বাধীন ও শুদ্ধভাবে উম্মাহর পক্ষ থেকে পরিচালিত কোনো ‘ফি সাবিলিল্লাহ জিহাদ’ নয়। বরং এটি হয়ে উঠেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি নিয়ন্ত্রিত প্যারালাল থিয়েটার। তারা যখন চায়, কিছু মুজাহিদদের মঞ্চে তুলে আনে; আবার যখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির চাপ আসে, তখন তাদের অদৃশ্য করে দেয় অথবা গৃহবন্দি করে রাখে।
    ইলিয়াস কাশ্মীরী রহিমাহুল্লাহ’র মত বহু মুজাহিদ নিজে এমন বিশ্বাসঘাতকতা, বন্দীত্ব ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এবং পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থেকে জিহাদ করলে কোনোদিনই কাশ্মীরকে মুক্ত করা যাবে না এই নির্মম বাস্তবতা সুনিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করেছেন।

    শাইখ আইমানের ভাষায়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী একটি ছিঁচকে চোর আর আমেরিকা হচ্ছে চোরদের সর্দার। তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হীনস্বার্থবাদী, উম্মাহর রক্ত তাদের নিকট কেবল একটি বাণিজ্যদ্রব্য। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা একদিকে আল-কায়েদা ও তালিবানদের উপর নির্মমতা চালিয়েছে, অন্যদিকে ক্রুসেডারদের তথ্য সরবরাহ করেছে—এটি ঐতিহাসিক বাস্তবতা।

    এই পরিস্থিতিতে কাশ্মীরি মুজাহিদদের জন্য প্রথম করণীয় হল, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার থাবা থেকে মুক্তি লাভ করা। কারণ তাদের অধীনে জিহাদ চললে তা কখনোই "আল্লাহর পথে জিহাদ" বলে গণ্য হবে না, বরং তা হবে আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ।

    সুতরাং এটি একটি স্পষ্ট করণীয় যে, কাশ্মীরের জিহাদকে যদি সত্যিই "উম্মাহর জিহাদ" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, তাহলে দুটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতেই হবে:

    ১. ভারতের অন্তঃস্থ শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত চালানোর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা,
    ২. পাকিস্তানি গোয়েন্দা ও সামরিক ষড়যন্ত্র থেকে কাশ্মীরি জিহাদকে মুক্ত করে শরিয়াহসম্মত কৌশলে পরিচালনা।

    শুধু তখনই এই জিহাদ ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের স্বার্থরক্ষার প্রজেক্ট’ না হয়ে পরিণত হবে ‘উম্মাহর সম্মান রক্ষার জিহাদ’-এ। আর কেবল তখনই, এই উপত্যকার রক্তরেখা গৌরবময় বিজয়ের পথে ধাবিত হবে ইনশা আল্লাহ। [২]

    এই বাস্তবতা থেকেই মূলত জাকির মুসা রহিমাহুল্লাহ’র মত মহান মুজাহিদগণ অত্যন্ত সীমিত সামর্থ্য নিয়েই কাশ্মীরে তাওহিদের আদর্শে পরিচালিত, সকল গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব থেকে মুক্ত স্বাধীন জিহাদী আন্দোলনের সুচনা করেছিলেন।
    উম্মাহর জিম্মাদারী হলো, এ ধরনের স্বাধীন এবং খালেস আন্দোলনগুলোর পাশে দাঁড়ানো, তাদেরকে ভরপুর নুসরত করা। পাকিস্তান কিংবা অন্য যে কোন সেক্যুলার রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করা।


    উপসংহার: সেক্যুলার রাষ্ট্রের কন্ট্রোল মুক্ত জিহাদি আন্দোলনের অনিবার্যতা:

    জিহাদি আন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় কন্ট্রোল থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থা যখন আন্দোলনের নীতিনির্ধারক হয়ে ওঠে, তখন ঈমান ও তাকওয়ার জায়গায় আসে হিসাব-নিকাশ ও বিশ্বাসঘাতকতা। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করেই আল-কায়েদা বারবার ডিপ-স্টেট থেকে দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলেছে।

    এখন সময় এসেছে, মুসলিম উম্মাহ নতুন করে ভাবুক—কাশ্মীর, আরাকান সহ যেকোনো জিহাদী ভূমিতেই আদর্শিক ভিত্তিতে আত্মনিয়ন্ত্রণকারী এক জিহাদি আন্দোলন গঠন করুক, যেখানে ঈমান, তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল হবে নেতৃত্বের মূল সূত্র। রাষ্ট্রীয় স্বার্থ নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুসলিম উম্মাহর স্বাধীনতা হবে যার একমাত্র লক্ষ্য।
    *****


    [১] কাশ্মির সম্পর্কিত আল কায়েদার কিছু বার্তা-

    কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনঃ একই দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি | শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ - https://archive.ph/B4K7I
    কাশ্মির ও দ্বিধাবিভক্ত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে লড়াই চলবেই – মাওলানা আসিম উমর হাফিজাহুল্লাহ - https://archive.ph/2ZWFV
    জাকির মূসা রহ. এক সংকল্প, এক বিপ্লব! -উস্তাদ উসামা মাহমুদ (হাফিজাহুল্লাহ) - https://archive.ph/FG8p7
    কাশ্মীর… সিংহদের জেগে উঠার সময় এখনই! – উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ - https://archive.ph/JoN7O
    কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনঃ পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ডাক! – উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ - https://archive.ph/0V2zM
    কাশ্মীর মুজাহিদদের অগ্রনায়ক ‘শহীদ জাকির মুসা রহিমাহুল্লাহ’ এর বিশেষ সাক্ষাৎকার - https://archive.ph/bBQOS
    গাজওয়ায়ে হিন্দের সিপাহী! || কাশ্মিরের শ্রীনগরের বাসিন্দা মুজাহিদ ফয়সাল ইশফাক বাট-এর আত্মজীবনী - https://archive.ph/00Zrd

    [২] কাশ্মীরকে ভুলে যেও না! – শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ - https://archive.ph/9uLko
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 3 days ago.
    “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
    -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

  • #2
    Munshi Abdur Rahman ভাই আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,

    এভাবে অনেকদিন পরে আপনার লেখা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি যে বিষয়ে লিখেছেন—কাশ্মীরি মুজাহিদদের উপর পাকিস্তানি ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণ ও এর মাধ্যমে উম্মাহর সংগ্রামকে একধরনের প্রক্সি যুদ্ধের রূপ দেওয়া—তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    মাশা’আল্লাহ, আপনি লেখাতে আল-কায়েদাতুল জিহাদের অবস্থান খুব সুচারুভাবে তুলে ধরেছেন। আমি ইনশা’আল্লাহ এই আলোচনায় কিছু ঐতিহাসিক দিক সংযোজন করতে চাই।

    ১৯৪৭ সালে কাশ্মীরের প্রথম যুদ্ধের সময় পাকিস্তান ‘কাবাইলি মুজাহিদিন’ পাঠিয়েছিল। এটি ছিল আদতে একধরনের রাষ্ট্রীয় কৌশল—যেখানে আদর্শিক মুজাহিদদের ব্যবহার করা হয়েছিল সামরিক কৌশলের হাতিয়ার হিসেবে। এরপরের সময়গুলোতে, বিশেষত ১৯৮০-৯০ এর দশকে, যখন আফগান জিহাদের ছায়ায় কাশ্মীরি জিহাদ পুনর্জীবিত হয়, তখন আইএসআই সরাসরি জড়িত হয় বিভিন্ন কাশ্মীরি মুজাহিদ গ্রুপ তৈরি ও নিয়ন্ত্রণে।

    হিজবুল মুজাহিদিন, জইশ-ই-মুহাম্মদ, লস্কর-ই-তইয়্যেবা ইত্যাদি সংগঠনের পেছনে আইএসআই’র পৃষ্ঠপোষকতা ছিল সুস্পষ্ট। প্রথমদিকে এই সম্পর্কগুলো ছিল পারস্পরিক সুবিধাভিত্তিক, কিন্তু ক্রমেই তা হয়ে পড়ে মনোপলি এবং নজরদারিমূলক। যারাই পাকিস্তান রাষ্ট্রের নীতির বাইরে গিয়ে কাশ্মীরকে ইসলামী খিলাফাহ বা উম্মাহভিত্তিক মুক্তির অংশ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে, তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়—কেউ নিখোঁজ হয়েছে, কেউ গৃহবন্দি, কেউ গুপ্তহত্যার শিকার।

    উদাহরণস্বরূপ, কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামী ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাসারত আলম বা সৈয়দ আলী শাহ গিলানী ছিলেন পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণাধীন রাজনীতির বিরোধী। গিলানী হাফিজাহুল্লাহ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অঙ্গ নয় বরং মুসলিম উম্মাহর অংশ হিসেবে দেখতে চাইতেন। তার মতাদর্শ আইএসআই-এর রাষ্ট্রভিত্তিক রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। ফলে তাকে বছরের পর বছর গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

    আইএসআই শুধুমাত্র কাশ্মীরি নেতৃত্বের উপর নয়, আফগান যুদ্ধ ফেরত মুজাহিদিনের উপরও ব্যাপক নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে। অনেক আফগান জিহাদ ফেরত যুবক যারা কাশ্মীরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চেয়েছিল, তাদেরকে হয়রানি, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং বন্দি করা হয়েছে।

    জইশ-ই-মুহাম্মদের创始ক মাওলানা মাসুদ আজহার নিজেও এক সময় জিহাদের শুদ্ধ পথ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কিন্তু ক্রমে তিনি রাষ্ট্রের এক অলিখিত মুখপাত্রে পরিণত হন। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই প্রতিষ্ঠানসমূহে জিহাদ আর ইসলামের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি।

    আইএসআই-এর কার্যকলাপ কেবল নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা মুজাহিদ গ্রুপগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে। কখনো এক গ্রুপকে অন্য গ্রুপের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম রেখেছে। এই বিভাজনের ফলে মুজাহিদিনদের মধ্যে সন্দেহ, দ্বন্দ্ব, এবং রক্তপাত বাড়ে—যার ফলে কাশ্মীরি আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।

    সবচেয়ে বিপজ্জনক বিষয় হলো, আইএসআই ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ‘জঙ্গিবাদ বিরোধী শক্তি’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে অনেক প্রকৃত মুজাহিদদের পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তুলে দিয়েছে অথবা তাদের উপর নিপীড়ন চালিয়েছে। বিশেষ করে ৯/১১ এর পর এই প্রবণতা আরও জোরালো হয়। তখন বহু জিহাদি সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়—কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা ছিল দ্বৈত চরিত্রের। কিছু সংগঠন প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ থাকলেও, গোপনে তারা আইএসআই-এর ‘স্টেট অ্যাসেট’ হিসেবে কাজ করে গেছে।

    এই ধরনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার ফলে কাশ্মীরি জিহাদ তার মৌলিক উদ্দেশ্য—একটি মুক্ত, ইসলামিক, উম্মাহ-ভিত্তিক কাশ্মীর গঠনের—থেকে ছিটকে পড়ে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত এক প্রহসনে পরিণত হয়। মুসলিম তরুণদের আত্মত্যাগ, শহীদদের রক্ত, আর নিরীহ জনগণের সংগ্রাম হয় ব্যবহারযোগ্য পণ্য—যার উপর সেনা ও গোয়েন্দা অফিসাররা তাদের পদোন্নতি, বাজেট ও কূটনৈতিক আলোচনার ভিত্তি গড়ে।

    এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিম উম্মাহ ও জিহাদের ভাবমূর্তি। পশ্চিমারা পুরো আন্দোলনকে “স্টেট স্পন্সরড টেররিজম” হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে—কারণ পাকিস্তান নিজের স্বার্থে সত্যিকারের জিহাদকে এক প্রকার ভাড়াটে মিশনে রূপান্তর করেছে।​
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

    Comment


    • #3
      এক কথায় বললে এভাবে বলা যায়ঃ ডিপ-স্টেট নিয়ন্ত্রিত জিহাদ আসলে জিহাদ ফি-সাবিলিল্লাহ্ না।
      আর এই জিহাদে লড়াকুরা মুজাহিদ না। বরং এটি একটি "পিএমসি" (private military company) কতৃক এমন কিছু অপারেশন, যার কমান্ড থেকে শুরু করে প্রতিটি মুভ কন্ট্রোল করবে ডিপ-স্টেট।
      হ্যা, কখনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে লড়াকুদের স্বাধীনতা থাকবে, তবে সেটা ডিপ-স্টেটের স্বার্থকে বাদ দিয়ে কিংবা উপেক্ষা করে নয় মোটেও।

      তবে পিএমসি ছাড়াও আরো সুন্দর একটি নাম দেয়া যায়, সেটা হলো "Paramilitary Group" কারণ মাঝে মাঝে ডিপ-স্টেট থেকে অস্ত্র এবং বিভিন্ন প্রকার লজিস্টিক সহায়তা মিলার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। বা অধিকাংশ সময় তাই হয়।
      نحن الذين بايعوا محمدا ﷺ على الجهاد ما بقينا أبدا

      Comment

      Working...
      X