Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাংলাদেশের জিহাদকে ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখুন!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাংলাদেশের জিহাদকে ডিপ-স্টেটের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখুন!

    বর্তমান জিহাদি অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পটপরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে—তা হলো, বহু ব্যক্তি ও চিন্তাবিদ তাদের জিহাদি কর্মকাণ্ডকে সশস্ত্র কিতালের (قتال) গণ্ডি থেকে সরিয়ে এনে এক ধরনের "সামাজিক বিপ্লব" বা "জন বিপ্লব" (popular uprising) হিসেবে চিহ্নিত করতে চাচ্ছেন। এই প্রবণতা কেবল কৌশলগত নয়, বরং চিন্তাগত ও ব্যাখ্যাগত একটি বিরাট শিফট নির্দেশ করে—যেখানে জিহাদকে আর সামরিক প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ না রেখে, সামাজিক সচেতনতা, জনমত গঠন, শিক্ষা, মিডিয়া, সংস্কৃতি, এমনকি অর্থনীতি ও নীতিকথনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য একটি রূপ দেওয়া হচ্ছে।

    এই ধারা অনেকাংশে আরব বসন্ত, ফিলিস্তিনের ইনতিফাদা আন্দোলন, কিংবা মুসলিম বিশ্বের নিরস্ত্র গণআন্দোলনের অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবিত। তাদের ভাষায়, জিহাদ মানেই কিতাল নয়; বরং কিতাল জিহাদের একটি শাখা মাত্র—মূল জিহাদ হলো “তাগুতের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, উম্মাহকে জাগানো, এবং শিরকী ব্যবস্থার কাঠামো ভেঙে নতুন ইসলামী বিকল্প নির্মাণ।”

    এই চিন্তাধারার কিছু পজিটিভ দিক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এরা মুসলিম জনতার ভেতরে তাওহিদি চেতনা জাগানোর ওপর জোর দেন।

    কিন্তু, সমস্যা হলো—এই প্রবণতা কখনো কখনো এতটাই দুর্বল ও আপসনীতিক হয়ে পড়ে যে, তাগুতি শক্তির বিরুদ্ধে বাস্তব প্রতিরোধের পথটি একপ্রকার বিলুপ্ত হয়ে যায়।

    এই ধারার মানুষ ও সংগঠনগুলো সরাসরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হারাম ও বাতিল ঘোষণা করে, কিন্তু একইসাথে তারা বিশ্বাস করে যে সমাজের তাওহিদি সংশোধন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সাধারণ জনগণের ভিতরে ইসলামী রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করার মাধ্যমে একসময় একটি জনবিপ্লব সংঘটিত হবে। তারা মনে করেন—এই বিপ্লবের মাধ্যমেই শুধুমাত্র ক্ষমতার রদবদল নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার কাঠামো ও আইনব্যবস্থাও পরিবর্তিত হয়ে ইসলামী শাসনব্যবস্থায় রূপান্তরিত হতে পারে।

    এদের অবস্থান স্ববিরোধী মনে হলেও, একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে: তারা গণতন্ত্রের কাঠামো ব্যবহার করছে না, বরং জনগণকে একটি বিপ্লবী এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তাদের বক্তব্য হলো—আমরা নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাব না, বরং আমরা এমন একটি জনগণ গড়ে তুলব যারা নিজেরাই এই তাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থা উল্টে দিতে চাইবে এবং ইসলামী বিকল্প গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকবে।

    এধরনের সংগঠন ও চিন্তাধারাগুলো সমাজে নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারে—বিশেষ করে চিন্তাগত, দাওয়াতি এবং সাংগঠনিক দিক থেকে। তারা সমাজের ধর্মীয় সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে, জনগণের ভেতরে তাগুতবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে পারে, এবং কখনো কখনো জনগণের ক্ষোভ ও হতাশাকে একটি আদর্শিক দিকে চালিত করতে পারে। কিন্তু বাস্তব প্রশ্ন থেকে যায়—এই জনগণ যদি অস্ত্রহীন থাকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিপক্ষে বিপ্লবের পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন না করে, কিংবা ইসলামী নেতৃত্ব ও ফিকহি কাঠামো ছাড়া এগিয়ে আসে—তবে কীভাবে এই বিপ্লব বাস্তবায়িত হবে?

    তবে আজকের আলোচনায় আমরা এই কৌশলের শরীয়তগত হালাল-হারাম, ফিকহি গ্রহণযোগ্যতা, বা রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে যাচ্ছি না। এটি একটি আলাদা এবং গভীরতর আলোচনার দাবি রাখে। আমাদের আলোচনার মূল ফোকাস এই চিন্তাধারার উপস্থিতি, এর প্রভাব ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ। ইনশা’আল্লাহ অন্য কোনো সময় আমরা এর শরীয়তসম্মত দিক, দলিল, এবং উসুলি ব্যাখ্যা নিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করব।

    এখানেই ঘটে একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা—যা শত্রু পক্ষ, অর্থাৎ সরকার ও ডিপ-স্টেটের কাছে বিশাল কৌশলগত সুযোগ তৈরি করে।

    যখন রাষ্ট্রের সামনে দুইটি পথ বা দুইটি দল স্পষ্ট হয়—
    ১. একদল সরাসরি বিপ্লবী, অস্ত্রধারী, কিতালনির্ভর।
    ২. আরেকদল 'বুদ্ধিবৃত্তিক', 'জনমুখী', কিন্তু এখনও রাষ্ট্রবিরোধী চিন্তাধারার ধারক—

    তখন স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্র প্রথম দলটিকে চরমপন্থী, সহিংস, সন্ত্রাসী বলে ঘোষণা করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের বিরুদ্ধে সহিংস দমননীতি গ্রহণ করে।

    অন্যদিকে, দ্বিতীয় দলটিকে নিয়ে রাষ্ট্র একধরনের 'প্রক্সিমেট স্ট্র্যাটেজি' বা কাছাকাছি আনার কৌশল অবলম্বন করে। তাদেরকে “ব্যবহারযোগ্য বিরোধী” হিসেবে দেখা হয়। তাদের নেতৃত্বকে হয়তো চাপে রাখা হয়, কখনও ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়, আবার কখনও উৎসাহিতও করা হয়।

    আধুনিক জাতী রাষ্ট্র, তার গোয়েন্দা বাহিনী, এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাঠামো—একটি নতুন, কৌশলগত এবং সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। তারা কেবল ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি অস্ত্র ব্যবহার করছে না, বরং ইসলামের ব্যানারে এমন কিছু বিকল্প প্রস্তুত করছে যা মূল সংগ্রামকে প্রতিস্থাপন করতে পারে—নকল বিকল্প, বিকৃত প্রতিচ্ছবি, ‘harmless' ইসলামি আন্দোলন’।

    এই নকল বিকল্পের মূল কাজ হলো: মুসলমানদের সেই পথে চালিত করা, যা বাহ্যিকভাবে ইসলামী মনে হয়, কিন্তু যার অন্তঃসারহীনতা ও দুর্বলতা ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রকৃত পথকে ঢেকে ফেলে। যেমন, আজকের সময়ে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন দেশে এমন কিছু রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা হয়েছে—যারা মুখে ইসলামের কথা বলে, কিন্তু তার বাস্তবায়নের পথ হিসেবে ব্যালটকে, নির্বাচনী রাজনীতিকে এবং সাংবিধানিক কাঠামোর ভেতর থেকেই ‘ইসলামী সমাজ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলে। তাদের ভাষ্য হয়: “তোমার ভোটই জিহাদ”, “ভোট দিয়েই ইসলামী বিপ্লব সম্ভব”, “ব্যালটের মাধ্যমেই হবে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা”। এর ফলে, জনসাধারণের এক বিরাট অংশ একটি আত্মতুষ্টিমূলক ভ্রান্তিতে ভোগে—যেখানে নিজের আরাম-আয়েশ ও ব্যক্তিগত জীবনের নিরাপত্তা বজায় রেখেই মনে করে, সে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শামিল।

    আমাদের আলোচনায় উল্লিখিত যে দ্বিতীয় শ্রেণীর সংগঠনগুলো রয়েছে—যারা কেবলমাত্র ইসলামী দাওয়াত, নৈতিক সংশোধন বা সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে জনসাধারণকে মবিলাইজ করতে চায়, এবং বিশ্বাস করে যে এই পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার রূপান্তর সম্ভব—তাদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণভাবে বিশ্লেষণযোগ্য। কারণ, এই সংগঠনগুলোও বাস্তবতার নিরিখে সেই একই কাঠামোকে সহায়তা করে যেটি প্রকৃত জিহাদ ও খিলাফাহর পথকে প্রতিস্থাপন করতে চায়।

    এদের কার্যক্রমের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—এরা জনগণের মাঝে একটি নিরীহ আরামপ্রিয়তা বা আত্মতুষ্টিমূলক ধারার জন্ম দেয়। মানুষ মনে করে, যেহেতু আমি ইসলামের কোনো দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত, যেহেতু আমি ইসলামি বক্তৃতা শুনছি, ইসলামি রাজনীতির পক্ষে ভোট দিচ্ছি, অথবা কোনো ইসলামপন্থী সংগঠনের সদস্য—তাই আমি "ইসলামের পক্ষে" অবস্থান নিয়েছি। এর ফলে, সে আর কাঠামোগত সংগ্রামের কথা ভাবেও না, প্রয়োজনীয় ত্যাগের প্রশ্নই তার কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। এইভাবে, মানুষের মধ্যে যে বিপ্লবী চেতনা থাকা উচিত ছিল, সেটা ধীরে ধীরে এক প্রকার নিষ্ক্রিয় আত্মতুষ্টিতে রূপ নেয়।

    এই ধরনের সংগঠনগুলো যদিও সরাসরি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অংশ নয়, তবু তাদের ভূমিকা এক ধরনের 'নকল জিহাদি তানজিম' বা 'symbolic resistance group'-এর মতো হয়ে যায়। তারা ইসলামী আদর্শের কথা বলে, কিন্তু বাস্তবে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংঘর্ষ, যে ত্যাগ, যে কাঠামো ভাঙার প্রয়োজন—সেসব বিষয়ে নীরব থাকে, বা সচেতনভাবে এড়িয়ে চলে। এরা বিপ্লবের দাবি তোলে, কিন্তু বিপ্লবের বিপজ্জনক, অনিশ্চিত, আত্মত্যাগমূলক বাস্তবতার কথা বলে না। বরং এক ধরনের কল্পিত বিজয়ের বয়ান তৈরি করে—যেখানে "নেতা আসবে", "জনগণ জেগে উঠবে", "ইসলাম কায়েম হবে", কিন্তু কোন কাঠামো ধ্বংস হবে, কিভাবে ক্ষমতা দখল হবে, শাসনব্যবস্থা কিভাবে বদলাবে—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুপস্থিত থাকে।

    এই ব্যাখ্যার ফলাফল ভয়াবহ। একদিকে, প্রকৃত কিতালভিত্তিক সংগ্রাম যাঁরা করছেন—যাঁরা জান-মাল কুরবান করে, সম্মান-নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়ে, আসল পরিবর্তনের জন্য রক্ত ঢালছেন—তাঁদেরকে সমাজের একপ্রকার প্রান্তিক চরিত্রে পরিণত করা হয়। তাঁদের সাহসিকতা ও ত্যাগের প্রতি ‘charismatic but irrelevant’ জাতীয় মনোভাব গড়ে তোলা হয়। অর্থাৎ, তাঁরা হয়তো আদর্শবাদী, কিন্তু ‘বাস্তবতা বুঝেন না’, ‘রাজনীতি বোঝেন না’, ‘সমাজকে অগ্রসর করার ভাষা জানেন না’—এই জাতীয় উপহাসে পরিণত হন।

    এ অবস্থাকে ব্যবহার করে রাষ্ট্র এক চতুর দ্বিমুখী কৌশল বাস্তবায়ন করে। একদিকে, যারা প্রকৃত মুজাহিদ—তাদের বিরুদ্ধে চালানো হয় ভয়ংকর দমননীতি: নজরদারি, গুম, ফাঁসি, ক্রসফায়ার, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। অন্যদিকে, যারা ‘জনমুখী ইসলাম’, ‘ইসলাহি রাজনীতি’, কিংবা ‘দাওয়াতি বিপ্লব’ নামের ব্যানারে কাজ করছে—তাদেরকে রাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে সহনশীলতার চাদরে মুড়ে রাখে। এমনকি কখনো কখনো রাষ্ট্র তাদেরকে মিডিয়া কাভারেজ দেয়, নিরাপত্তা দেয়, মঞ্চ দেয়, এবং অনেক সময় পরোক্ষ সমর্থনও প্রদান করে।

    রাষ্ট্র জানে—যদি জনগণকে এই দ্বিতীয়, নিরাপদ ও harmless ধারার দিকে ঠেলে দেওয়া যায়, তবে মূল হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব। আসল হুমকি হচ্ছে সেই কাঠামো যা বর্তমান ব্যবস্থা উচ্ছেদের কথা বলে, যা অস্তিত্ববাদী প্রশ্ন তোলে, যা মূলে আঘাত হানে। আর harmless ধারার লোকেরা মূলত ক্ষমতার কাঠামোকে অক্ষত রেখেই ‘ধাপে ধাপে পরিবর্তন’ আর ‘কৌশলগত ধৈর্য’র কথা বলে। রাষ্ট্র জানে, এই ধারা জনমুখী হলে জনগণ আর আসল বিপ্লবের দিকে ফিরবে না।

    কিন্তু ষড়যন্ত্র এখানেই শেষ হয় না। রাষ্ট্র শুধু এই harmless ধারাকে সহ্য করে না—বরং সেটিকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রের এজেন্ট, বুদ্ধিজীবী, চিন্তানায়ক। তারা আন্দোলনের ভাষাকে নিয়ন্ত্রণ করে, দাওয়াতের গতিপথ নির্ধারণ করে, জনপ্রিয় চিন্তাগুলোর ব্যাখ্যার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তারা বিপ্লবের আগুনকে ‘পরিণত ভাবনা’, ‘নৈতিক দাওয়াত’, ‘অরাজনৈতিক তৎপরতা’র কুয়াশায় আচ্ছন্ন করে ফেলে। এবং যেহেতু এরা সহিংস নয়, মানবাধিকারের বুলি আউড়ায়, এবং মিডিয়ার ভাষায় কথা বলে—তাই আন্তর্জাতিক সমাজও এদেরকে “আধুনিক ইসলামি চিন্তাবিদ”, “সহনশীল আলেম”, “মডারেট মুসলিম প্রতিনিধি” হিসেবে তুলে ধরে।

    অন্যদিকে, যারা কিতালের কথা বলবে, যারা খিলাফাহর দাবি জানাবে, যারা আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার জাহিলিয়াতকে চিহ্নিত করে—তাদের গায়ে লেগে যাবে ‘ফিতনাবাজ’, ‘উগ্রপন্থী’, ‘সহিংস চরমপন্থী’ ইত্যাদি অপবাদ। অথচ বাস্তবতা হলো—এই ‘মডারেট’ শ্রেণিটিই হচ্ছে প্রকৃত ফিতনার উৎস। এরা নামাজ, হিজাব, শরিয়া—সব কিছুর কথা বলে; কিন্তু বলে এমনভাবে, যাতে এসবের বাস্তব রূপ কখনোই বাস্তবায়িত না হয়। তারা ইসলামের শেলটিকে তুলে ধরে, কিন্তু অন্তঃসারকে লুকিয়ে রাখে।

    এইভাবে, যখন কোনো দেশে ইসলামী জাগরণের আলোর রেখা দেখা যায়, তখন রাষ্ট্র ও তার গোয়েন্দা কাঠামো দ্রুত এই harmless ধারার সংগঠনের মাধ্যমেই সেই জাগরণকে দমন করে। প্রথমে তাদেরকেই জনগণের সামনে “আসল ইসলামি প্রতিনিধি” হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, তারপর তাঁদের মাধ্যমেই জনগণের আবেগ, আগ্রহ, এবং ইচ্ছাকে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়।

    ফলাফল হয় সুস্পষ্ট ও বেদনাদায়ক।

    মুজাহিদদের কাঠামো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারায়। সত্যিকারের আন্দোলনগুলো becomes fringe. উম্মাহর সন্তানরা বিভ্রান্ত হয়ে যায়, কে সত্য আর কে ধোঁকাবাজ—তা বুঝতে পারে না। এবং পরিশেষে যে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়—তা আর আদর্শ মুহাম্মদী ইসলাম নয়, বরং একটি আপোষকামী, বিকৃত, জাল সংস্করণ: যেমন “ইসলামী গণতন্ত্র”, “মডারেট খিলাফাহ”, বা “সংলাপ-ভিত্তিক শরিয়া”।

    এখানে যে আলোচনা উপস্থাপন করছি, তা অনেকের কাছে আক্রমণাত্মক মনে হতে পারে—অথবা এমনও মনে হতে পারে যে আমি কোনো একটি পথ বা দলকে একেবারেই বাতিল করে দিচ্ছি। কিন্তু বাস্তবে আমার উদ্দেশ্য এমন নয়। আমি কারো ব্যক্তিগত নিষ্ঠা, খালিস নিয়ত, বা দাওয়াতি শ্রমকে খাটো করতে চাই না। বরং এই কথাগুলো এসেছে গভীর পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপট থেকে—যেখানে বহু দেশে, বহুবার, রাষ্ট্রের ডিপ স্টেট কীভাবে ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং কৌশলে দাওয়াতি ও সংশোধনমুখী কাঠামোগুলোকে একটি ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে ব্যবহার করেছে, তা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়।

    আমাদের বোঝা উচিত, এই প্রক্রিয়া ব্যক্তিভিত্তিক নয়—এটি কাঠামোগত। এটি নিয়ত নয়—কৌশল। তাই সচেতনতার জায়গাটা আবেগ নয়, বিশ্লেষণের। আমার বক্তব্য এই নয় যে সংশোধনের প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়; বরং আমার উদ্বেগ হলো—এই সংশোধন বা দাওয়াত কখনো যেন এমনভাবে আমাদের ব্যস্ত করে না ফেলে, যে আমরা আমাদের রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি গঠনের ক্ষেত্রেই আপস করে ফেলি, বা ভুলে যাই যে এই দুনিয়ায় বাতিলের বিরুদ্ধে একটি বাস্তব প্রতিরোধ ছাড়া সত্যিকারের ইসলাম কায়েমের কোনো পথ নেই।

    আমার এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিরোধকে জাগিয়ে তোলা—কারণ প্রতিরোধ, প্রতিকারের চেয়ে উত্তম। দাওয়াত, সংশোধন, বা সামাজিক রিফর্ম তখনই কার্যকর হয়, যখন তা একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে; নয়তো, সেগুলো হয়ে পড়ে কেবল উপসর্গ চিকিৎসা—মূল রোগ অক্ষুণ্নই থেকে যায়। আমরা যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাই, তাহলে আমাদের কেবল আলো ছড়ানো নয়, আগুন জ্বালানোর সাহসও থাকতে হবে—যে আগুন অন্যায় কাঠামো পোড়ায় এবং ন্যায়ের বীজ বপন করে।
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

  • #2
    জাযাকাল্লাহ খাইরান ভাই, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কলম ধরেছেন।

    নিচের বইটি পড়া যেতে পারে, যারা বিপ্লবের স্বপ্ন অন্তরে লালন করেন

    একটি বিপ্লব নির্দেশিকা || বিপ্লবের রূপরেখা -মুহাম্মাদ সালাহুদ্দীন যায়দান
    https://dawahilallah.com/forum/জিহাদি-প্রকাশনা/চিঠি-ও-বার্তা/15484
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment


    • #3
      নিঃসন্দেহে উম্মাহকে জাগ্রতকারী এই দাওয়াহ অনেক অনেক প্রয়োজন। তবে জেনে রাখা উচিত, আবেগ এবং ভালোবাসা দিয়ে হয়ত অনেকের মন জয় করা যাবে। জনপ্রিয়তা পাওয়া যাবে। কিন্তু লড়াইটা যখন হবে অস্তিত্বের! বাঁচা-মরার! তখনই কেবল সবার আসল রুপ বেরিয়ে আসবে। ভাই আমার, আকিদার ভিন্নতায় বাবা-মা ও নিজেদের কলিজার টুকরা সন্তানদের সাথে আপোষ করে না।
      এর উদাহারণ কি আমাদের চোখে পরেনি?

      কিতাল হচ্ছে রবের পক্ষ থেকে দেওয়া একমাত্র সলুশন। অনেকগুলো সলুুশন থেকে একটি সলুশন এমন নয়। ঈমান আর কুফরের সংঘাত হবে না তা কীভাবে সম্ভব?! আর সংঘাতের সময় বুঝিয়ে, আদর করে অহংকারী এবং পাগলা কুকুরকে আপনি কীভাবে থামাবেন?
      نحن الذين بايعوا محمدا ﷺ على الجهاد ما بقينا أبدا

      Comment


      • #4
        সমাজ সংস্কার (তাজদীদ আন্দোলন) এই ধরনের ইসলামী আন্দোলনের কৌশলের শরীয়তগত হালাল-হারাম, ফিকহি গ্রহণযোগ্যতা, বা রাজনৈতিক বৈধতা নিয়ে বড়দের কাছ থেকে
        পোষ্ট আশা করছি

        এ বিষয়টি কেন্দ্র করে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা অভ্যন্তরীণ ফিতনা চলছে

        আমাদের উচিত হবে এ বিষয় গুলোর সংশয় চিহ্নিত করে তা নিরসন করা ।

        এ বিষয়ে ফোরামের অভিঙ্গ দাঈ আহলে এলেমে ভাইদের নিকট
        থেকে তাত্বিক গবেষণা ও বিশ্লেষণ মূলক পোস্ট আশা করছি
        বন্দী ভাই ও তাদের পরিবারের জন্য আপনার সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করুন

        Comment

        Working...
        X