পাকিস্তান দখলকারী জেনারেল এবং শাসকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা
পর্ব - ৪
পর্ব - ৪
এটা চিরন্তন সত্য এটাকে কেউ গোপন করতে পারবে না
তবে তোমরা যদি জাতির সামনে সত্যকে না বল, মিথ্যা বলার জিদ ধর এবং জাতিকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে রাখার চেষ্টা করো – তাহলে তোমাদেরকে একথা মেনে নিতে হবে যে, না তোমরা এই জাতির কল্যাণ–কামী, আর না এদেশের সাথে তোমাদের কোন মোহাব্বত আছে।
তোমাদের প্রিয় হলো শুধুমাত্র নিজেদের বিলাসিতা এবং রাজ খরচ। তোমাদের কাছে না ধর্মের কোন মূল্য আছে; আর না এখানের নির্যাতিত জনগণের কোন মর্যাদা আছে। তোমরা তোমাদের সন্তানেরও শত্রু এবং এই জাতির বাচ্চাদের ব্যাপারেও তোমরা দোষী। তোমাদের যদি জাতির প্রতি সামান্য পরিমাণও খেয়াল থাকত তাহলে তাদের সামনে সত্য কথা বলতে ভীত হতে না। সাহসিকতা ও বীরত্ব দেখিয়ে সত্যকে সত্য, আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে দিতে এবং জাতির শত্রুদের গোলাম হয়ে নিজেদের লোকদেরকে ব্যাপকভাবে হত্যা করতে না।
তবে কি তোমাদের এই মিথ্যা, ধোঁকা এবং প্রতারণা সত্যকে মিথ্যা প্রমাণিত করতে সফল হয়ে যাবে? হত্যা ও লুট–পাট, বোমাবাজি, ধরপাকড়, অপহরণ এবং গুণ্ডামির দ্বারা কি তোমরা এই বরকতময় জিহাদকে পরাজিত করতে পারবে? এটাই তোমাদের ভুল ধারণা এবং আত্ম প্রবঞ্চনা!
এসমস্ত মুজাহিদীনকে তোমাদের নিজের এবং নিজেদের সেনাদের ন্যায় ধারণা করাটাই তোমাদের সবচেয়ে বড় বোকামি। মুজাহিদীনদের কাফেলা উন্নতি, সুযোগ–সুবিধা, মাসিক ভাতা এবং ফ্ল্যাট অর্জনের জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ করে না। বরং জিহাদের মাঠে অবতরণের পূর্বেই এ পথের উত্থান–পতন সম্পর্কেও তাদের জানা থাকে এবং শাহাদাতের মাধ্যমে নিজেদের গন্তব্য স্থান সম্পর্কেও অধিক জানা থাকে।
তাদের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করা। আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত রাখতে যেয়ে এ পথে শহীদ হয়ে যাওয়া মুজাহিদদের আকাঙ্ক্ষা হয়ে থাকে। তোমরা তাদেরকে হত্যা এবং কারাবাসের যে ভয় দেখাও, তা আল্লাহর পথে আসা মুজাহিদীনরা নিজেদের জন্য পুরষ্কারের কারণ এবং শুভকামনার নিদর্শন মনে করে। এটা ঐ জিহাদি কাফেলারই বরকত যে, তাদের মুখোমুখি হওয়ার দ্বারাই তোমাদের নষ্টামি প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। এটা ঐ–সমস্ত মুজাহিদীনদের দয়া যে, তাদের কুরবানির কারণেই তোমাদের দ্বীনের সাথে শত্রুতা, বর্বরতা, স্বার্থপরতা এবং হীনমন্যতা সাধারণ মুসলমানদের দৃষ্টিতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
মুজাহিদ ভাইদের বন্দিত্ব এবং শাহাদাত অথবা মুসলিম বোনদের আর্তনাদ এ–সবকিছু তোমাদের দ্বীনের এবং জাতির সাথে গাদ্দারির মুখোশ উন্মুক্ত করে দেয়। যেই সত্য কিতাবে লেখা হয়েছে এবং বক্তব্যে আলোচিত হয়েছে, বর্তমানে জনগণ পথে–ঘাটে, বাজারে এবং শিক্ষাঙ্গনে তার বাস্তব চিত্র নিজ চোখের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করছে। সত্যকে তোমরা যতই চাপিয়ে রাখতে চাও, ততই তা আত্মপ্রকাশ করে। তোমরা বাস্তবতার উপর যতই পর্দা ফেলতে চাও, ততই তা পর্দা ভেদ করে তোমাদের কুফর এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ানোর প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রকাশিত হয়।
করাচী থেকে খায়বার পর্যন্ত যত মুজাহিদীনকে তোমরা বন্দি করো – শহীদ করে তাঁদের মৃতদেহগুলো ফেলে দাও অথবা নিজেদের আদালতের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলাও – তাঁদের প্রত্যেকের জীবনী এক একটি স্পষ্ট এবং উজ্জ্বল বই। তাঁদের অতীত জীবন এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, এসকল যুবকেরা তোমাদের ন্যায় জাতির শত্রু এবং জনগণের জন্য লুটপাট–কারী ছিল না। তাঁরা স্বার্থপর এবং লোভী ছিল না, বরং প্রত্যেকের একটি উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল।
প্রত্যেকে ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ব, হিতাকাঙ্ক্ষীতা ও সহমর্মিতা, ধার্মিকতা ও একনিষ্ঠতার জীবিত–জাগ্রত প্রতিচ্ছবি ছিলেন। ঐ–সমস্ত মহান যুবকদের ভূমিকা শিক্ষক, আত্মীয়–স্বজন এবং পরিচিতদের মাঝে প্রজ্বলিত আছে। তাঁদেরকে যখন তোমাদের বাহিনী, স্বার্থপর শাসক এবং মার্কিন গোলাম দুশ্চরিত্র জেনারেলদের সাথে তুলনা করা হয়, তখন নিশ্চিত আল্লামা ইকবাল রহ.-এর এই বাজপাখি; হৃদয়ের শাসক বনে যায়। এই নিয়ন্ত্রিত হৃদয়ও তখন তোমাদের অন্যায় ও কুফরির বিরুদ্ধে সারিবদ্ধ হয়ে জিহাদের মাঠে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়।
স্বয়ং আমি সাক্ষী যে, যখনই তোমরা কোন একজন মুজাহিদকে মেরে ফেলেছ, তখন তাঁর পরিচিতদের মধ্যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাচ্চাদের মধ্যে পর্যন্ত জিহাদের মোহাব্বত বৃদ্ধি পেয়েছে। জিহাদি কাফেলায় একজনের শাহাদাত দশজনের আসার কারণ হতে দেখেছি এবং একজনের নজরবন্দি বিশ জনের জীবন পরিবর্তনের মাধ্যম বলে প্রমাণিত হয়েছে।
.
.
চলবে...
Comment