সমাজ বিপ্লব বা হারকাতুল তাজদীদ বর্তমান সময়ে সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, তা নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য বাস্তবতা। এটি শুধুই কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক তাত্ত্বিক আন্দোলন নয়, বরং এর প্রভাব সরাসরি মানুষের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি ও জীবনের গতিপথে দৃশ্যমান। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই তাজদীদ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ও এর অন্তর্নিহিত সমাজবদলের আহ্বানের সাথে একমত পোষণ করি। এর অনেক দিক আমাকে আকর্ষণ করে, অনুপ্রাণিত করে। তবে এখানেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়ে যায়, যা আমাদের সবার বোঝা জরুরি—একটি আন্দোলনের সঙ্গে একমত হওয়া মানেই তার প্রতিটি কথাকেই অমোঘ সত্য ধরে নেওয়া নয়।
যেকোনো বিপ্লব বা আন্দোলন, যতই সুন্দর উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হোক না কেন, তাও একটি মানবিক প্রচেষ্টা—যার মধ্যে ভুল থাকার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাও থাকে। আমরা যেন এমন একটি অবস্থানে না চলে যাই, যেখানে কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে ‘ত্রুটিহীন’ ধরে নিয়ে তাদের সমস্ত বক্তব্য ও পদক্ষেপকে অনুসরণ করতে বাধ্য হই। এমনটি হলে, আন্দোলনটি চিন্তার মুক্তি নয় বরং এক নতুন ধরণের ‘অচিন্তনযোগ্যতা’র দিকে ঠেলে দেয়, যা ইসলামের মূল আহ্বান—তাদাব্বুর (চিন্তা-ভাবনা), তাহক্বীক (অন্বেষণ), ও হিদায়াহ্ (সঠিক পথ)—এরই বিপরীত।
সমাজ বিপ্লব বা তাজদীদ আন্দোলনকে আমি তাই একটি উপায় হিসেবে দেখি, কোনো চূড়ান্ত পথ হিসেবে নয়। বিশেষত ইসলামিক শারিয়া প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে আমি মনে করি, এই বিপ্লব হয়তো একটি দরজা খুলতে পারে, কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। ইসলামি শাসনব্যবস্থা কেবল বিপ্লবের আবেগ বা আন্দোলনের জোয়ারে স্থায়ী হয় না— তবে আমি এটাও মানি যে, একটি সচেতন ও অন্তর্জাগরিত সমাজ তৈরির জন্য এধরনের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিপ্লব যদি মানুষের হৃদয়ে পরিবর্তন আনে, চিন্তায় পুনর্জাগরণ ঘটায়, তবে সেই সমাজ ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারে—যে ভবিষ্যতে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কেবল দাবি নয়, বাস্তব প্রয়োগযোগ্য একটি শক্ত কাঠামো হয়ে উঠবে।
ইতিহাসও আমাদের এই বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের উদাহরণ নিতে পারি, যেখানে শাহ শাসনের বিরুদ্ধে এক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে বহু মুসলিমের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল, এবং দীর্ঘদিন পরে প্রথমবারের মতো এক রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু হয়। কিন্তু এই বিপ্লবের মধ্যেও রাজনৈতিক কৌশল, মতাদর্শগত জটিলতা এবং কিছু মৌলিক ইসলামি প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধা ছিল—যা দেখিয়ে দেয়, একটি বিপ্লব শুরু হতে পারে সত্যকে কেন্দ্র করে, কিন্তু তা নির্ভুলভাবে গন্তব্যে পৌঁছাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে, রাশিয়ার ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব কিংবা ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন বা এমনকি সাম্প্রতিক ‘আরব বসন্ত’—এই সকল বিপ্লব সমাজ কাঠামো বদলানোর কথা বললেও, শেষপর্যন্ত একটি নতুন দমনমূলক শক্তিকে নিয়ে এসেছে, অথবা পুরাতন অন্যায়ের জায়গায় নতুন অন্যায়কে স্থাপন করেছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের শেখায়—যদি বিপ্লবের ভিত্তি কেবল আবেগ, হিংসা কিংবা সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ হয়, তবে সে বিপ্লব কখনো জনগণের স্থায়ী কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বর্তমান যুগে যে তাজদীদ চেতনার তরঙ্গ উঠেছে, তা নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয় নয়। কিন্তু আমাদের উচিত হবে একে সঠিক জায়গায় রাখার চেষ্টা করা। এর জন্য অবশ্যই দরকার হবে একটি বৃহত্তর ইসলামি দৃষ্টিকোণ।
আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি—শরিয়তের হুকুম-আহকাম, ফিকহ বা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার মতো বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই, ছিলও না। বরং এসব বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেওয়া, শরঈ ফয়সালা নির্ধারণ করা, কোন কৌশল হালাল আর কোনটা হারাম—এই সমস্ত বিষয় আলেম-ওলামারাই বলতে পারেন, যারা দ্বীনের গভীরে পৌঁছেছেন, যাদের চিন্তা কুরআন-সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা দ্বারা পরিশুদ্ধ। আমার কাজ হলো উপলব্ধি করা, দেখা, বোঝা এবং তা বিনয় ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তুলে ধরা।
বাংলাদেশের যে সামাজিক বিপ্লব এখন আলোচিত ও আলোড়িত হচ্ছে, তা কোনো প্রাচীন প্রতিষ্ঠানিক ধারার উত্তরাধিকার নয়। এই চিন্তার বিস্তার খুব বেশি দিনের নয়। বরং একটি তুলনামূলক স্বল্প সময়ের মধ্যে, এই সামাজিক বিপ্লব এমন একটি উচ্চাভিলাষী অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে ইসলামী শরিয়ার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ইসলামী শাসনব্যস্থা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু সেই উচ্চারণ, সেই আশা, সেই প্রস্তাবনা দ্রুতই বাস্তবতার কঠোর দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছে—একটি নয়, বরং পরপর দুটি বড় ধাক্কা।
প্রথম যে ধাক্কাটি এসেছে, তা হলো কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। অনেকেই এই যুক্তি দিয়ে থাকেন—বাংলাদেশ তো ভারত দ্বারা প্রায় চারদিক থেকে পরিবেষ্টিত; একটি নিরস্ত্র রাষ্ট্র, যার নিরাপত্তা কাঠামো বৈদেশিক নির্ভরতার ওপর গঠিত, যে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা, বাণিজ্যিক ও সামরিক নীতির পেছনে রয়েছে বৃহৎ শক্তিগুলোর ছায়া—এইরকম একটি রাষ্ট্রে কীভাবে কোন সামরিক বিপ্লব বা সংঘাতের মাধ্যমে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা সম্ভব?
এই প্রশ্ন এক অর্থে যৌক্তিক—কিন্তু অপর অর্থে এটি ঈমানের দুর্বলতা, তাওয়াক্কুলহীনতা এবং ইতিহাস অস্বীকারের একটি চেহারা। কারণ, যদি আমরা শুধু চারপাশের শত্রু, শক্তির ভারসাম্য আর কূটনৈতিক ফাঁদ দেখেই হেরে যাই, তাহলে তো বদর, উহুদ, খন্দকের ইতিহাস আমাদের কোনো শিক্ষা দেয় না। তাহলে তো আল্লাহর সেই প্রতিশ্রুতি, যা সূরা আলে-ইমরানে এসেছে, কেবল পাঠ্য নয়—নিত্য সত্য হয়ে ওঠে না।
"যখন তাদের বলা হয়েছিল, মানুষ তো তোমাদের বিরুদ্ধে জমা হয়েছে, তাদের ভয় করো—তাদের ঈমান বরং বেড়ে গিয়েছিল।"
(সূরা আলে ইমরান, ১৭৩)
এই আয়াত যুদ্ধের দিনেও সত্য ছিল, আজকের দিনে আরও বেশি সত্য। কারণ আমাদের শত্রুরা সবসময়ই সংখ্যায় বেশি ছিল, তারা সবসময়ই অস্ত্রে উন্নত ছিল। ইসলামি বিজয় কখনোই সংখ্যার, প্রযুক্তির বা আন্তর্জাতিক মিত্রতার উপর নির্ভর করেনি। ইসলামি বিজয় এসেছে তাওয়াক্কুল, তাকওয়া এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর সঠিক অনুসরণের মাধ্যমে। কাজেই "চারপাশে ঘিরে আছে", "আন্তর্জাতিকভাবে অসম্ভব", এইসব কথাকে অজুহাত বানিয়ে ঈমানি স্পৃহা নিঃশেষ করা—এটি কখনো হকপন্থীর কাজ হতে পারে না।
দ্বিতীয় যে ধাক্কাটির কথা বলা যায়, তা আমরা বর্তমান ইরানের প্রেক্ষাপটে স্পষ্টভাবে দেখতে পারি। আমরা জানি, ইরানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পালাবদল সংঘটিত হয়েছিল একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে—একটি বিপ্লব, যা খোমেইনীর নেতৃত্বে রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ইসলামী নেতৃত্বকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। তৎকালীন শাহ শাসনের দুঃশাসন, পশ্চিমা দালালি এবং জনগণের চরম অসন্তোষের ফলে একটি সংগঠিত এবং দৃঢ় নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলন ইরানে পরিবর্তনের সূচনা করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপ্লব কি ইরানের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? বাস্তবতা বলছে, না। সেই বিপ্লবের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইরান একাধিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত থেকেছে। পশ্চিমা অবরোধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, এবং সর্বোপরি ইজরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত হুমকি ইরানকে কখনোই স্থিতিশীল অবস্থানে আসতে দেয়নি।
বর্তমানে যখন ইজরাইল ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি আগ্রাসন চালাচ্ছে, তখন অনেকে বলছেন এই আক্রমণের মূল লক্ষ্য শুধু পারমাণবিক কর্মসূচি নয়, বরং ইরানের অভ্যন্তরীণ শাসন কাঠামোকে টালমাটাল করে দেওয়া। অর্থাৎ, ইজরাইল এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য হলো—ইরানে একটি রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস ঘটানো, সেই ক্ষমতাকাঠামোকে এমনভাবে দুর্বল করে দেওয়া, যা বহিরাগত হস্তক্ষেপ বা দেশীয় বিদ্রোহের মাধ্যমে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি বিপ্লবের মাধ্যমে আসা শাসনব্যবস্থা কীভাবে টিকে থাকে? এবং কতটা শক্তিশালী ভিতর থেকে কিংবা বাহির থেকে চাপ সামাল দিতে পারে?
ইরানের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে, বিপ্লব জনতার শক্তিকে উজ্জীবিত করতে পারে, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাঠামোর সূচনা করতে পারে। কিন্তু বিপ্লবের পর সেই কাঠামোকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় রাষ্ট্রের কঠিন ও বাস্তব কাঠামোগত ক্ষমতা—বিশেষত সামরিক ও নিরাপত্তাগত সক্ষমতা। শুধুমাত্র আদর্শ দিয়ে রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না, যদি সেই আদর্শকে রক্ষা করার মতো বাস্তব শক্তি না থাকে। বাহ্যিক চাপ, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অবরোধ কিংবা সাইবার হামলার মতো আধুনিক আক্রমণের মুখে আদর্শবাদী কাঠামো যদি বাস্তব প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, তবে তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। ইরান তা বুঝেছে, এবং সে কারণেই আজকে তারা একদিকে বিপ্লবী আইডিওলজিকে সামনে রেখে জনগণের চেতনা জাগ্রত রাখছে, অন্যদিকে সামরিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে নিজেদের বহিরাগত হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করছে।
এখানে আমরা আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ টানতে পারি—সাম্প্রতিক বাংলাদেশের এক অভ্যুত্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যখন জনগণ নির্বাচনী স্বেচ্ছাচারিতা ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, তখন সরকার—বিশেষত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন—নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে দমন করার পথ বেছে নেয়। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সামান্য দিক পরিবর্তনে তা গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারত। জনতার ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং রাষ্ট্রের নির্যাতনের মাত্রা এমন ছিল যে সংঘর্ষ একটি পূর্ণমাত্রিক অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে রূপ নিতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
কারণ ছিল স্পষ্ট—যারা এই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা মূলত তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিলেন। বাস্তবতায়, তাদের মধ্যে কেউই সামরিক বা প্রতিরোধমূলক সক্ষমতা অর্জনের প্রস্তুতি নেননি। বিপ্লবের চিন্তাভাবনা কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার গণ্ডিতেই আবদ্ধ ছিল; তা মাটি স্পর্শ করেনি, অস্ত্র স্পর্শ করেনি। ফলে, এই অভ্যুত্থান একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবের রূপ নিতে পারেনি।
আর এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় রাষ্ট্রের সেই চিরচেনা যন্ত্র—আর্মি বা সামরিক বাহিনী। অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেই সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং জনগণের রক্ত ও প্রতিবাদে অর্জিত সম্ভাবনাকে অভ্যুত্থানকারীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। বিপ্লবের জোয়ার থেমে যায়, পরিবর্তনের সম্ভাবনা খর্ব হয়ে পড়ে, এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা আবারও ঘুরে আসে সেই পুরোনো কৌশলী শাসকের হাতে—যার হাতে আছে অস্ত্র, বাহিনী, সংগঠন এবং শাসনের বহুস্তর বিশিষ্ট অভিজ্ঞতা।
এ বিষয়ে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই যে সমাজে একটি মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে একটি সচেতনতা-নির্ভর সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে—একটি জাগরণ, যা মানুষের অন্তরে আদর্শ ও ইসলামী চিন্তাধারার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে জনগণ প্রস্তুত হচ্ছে, তাদের আমরা ইসলামী শাসনব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করতে পারব। কেউ সামনে থেকে সৈনিক হিসেবে সংগ্রামে অংশ নেবে, কেউ আনসার হয়ে আমাদেরকে সহায়তা করবে, আবার কেউ নিজের সম্পদ ও সামর্থ্য দিয়ে এই পথকে শক্তিশালী করবে।
তবে এটাও অনস্বীকার্য যে, কেবল এই গণজাগরণ বা জনঅভ্যুত্থান এককভাবে কোনো শাসনব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। আর যদি তা কখনো করে ফেলেও, সে পরিবর্তন হবে ক্ষণস্থায়ী, দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো। কারণ তত্ত্ব এবং বাস্তবতা—এই দুইয়ের মাঝে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না।
যেকোনো বিপ্লব বা আন্দোলন, যতই সুন্দর উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হোক না কেন, তাও একটি মানবিক প্রচেষ্টা—যার মধ্যে ভুল থাকার সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তাও থাকে। আমরা যেন এমন একটি অবস্থানে না চলে যাই, যেখানে কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তিকে ‘ত্রুটিহীন’ ধরে নিয়ে তাদের সমস্ত বক্তব্য ও পদক্ষেপকে অনুসরণ করতে বাধ্য হই। এমনটি হলে, আন্দোলনটি চিন্তার মুক্তি নয় বরং এক নতুন ধরণের ‘অচিন্তনযোগ্যতা’র দিকে ঠেলে দেয়, যা ইসলামের মূল আহ্বান—তাদাব্বুর (চিন্তা-ভাবনা), তাহক্বীক (অন্বেষণ), ও হিদায়াহ্ (সঠিক পথ)—এরই বিপরীত।
সমাজ বিপ্লব বা তাজদীদ আন্দোলনকে আমি তাই একটি উপায় হিসেবে দেখি, কোনো চূড়ান্ত পথ হিসেবে নয়। বিশেষত ইসলামিক শারিয়া প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গে আমি মনে করি, এই বিপ্লব হয়তো একটি দরজা খুলতে পারে, কিন্তু এটিই শেষ কথা নয়। ইসলামি শাসনব্যবস্থা কেবল বিপ্লবের আবেগ বা আন্দোলনের জোয়ারে স্থায়ী হয় না— তবে আমি এটাও মানি যে, একটি সচেতন ও অন্তর্জাগরিত সমাজ তৈরির জন্য এধরনের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিপ্লব যদি মানুষের হৃদয়ে পরিবর্তন আনে, চিন্তায় পুনর্জাগরণ ঘটায়, তবে সেই সমাজ ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারে—যে ভবিষ্যতে ইসলামি শাসনব্যবস্থা কেবল দাবি নয়, বাস্তব প্রয়োগযোগ্য একটি শক্ত কাঠামো হয়ে উঠবে।
ইতিহাসও আমাদের এই বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের উদাহরণ নিতে পারি, যেখানে শাহ শাসনের বিরুদ্ধে এক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। এটি নিঃসন্দেহে বহু মুসলিমের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছিল, এবং দীর্ঘদিন পরে প্রথমবারের মতো এক রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে পথচলা শুরু হয়। কিন্তু এই বিপ্লবের মধ্যেও রাজনৈতিক কৌশল, মতাদর্শগত জটিলতা এবং কিছু মৌলিক ইসলামি প্রশ্ন নিয়ে দ্বিধা ছিল—যা দেখিয়ে দেয়, একটি বিপ্লব শুরু হতে পারে সত্যকে কেন্দ্র করে, কিন্তু তা নির্ভুলভাবে গন্তব্যে পৌঁছাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে, রাশিয়ার ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লব কিংবা ফ্রেঞ্চ রেভল্যুশন বা এমনকি সাম্প্রতিক ‘আরব বসন্ত’—এই সকল বিপ্লব সমাজ কাঠামো বদলানোর কথা বললেও, শেষপর্যন্ত একটি নতুন দমনমূলক শক্তিকে নিয়ে এসেছে, অথবা পুরাতন অন্যায়ের জায়গায় নতুন অন্যায়কে স্থাপন করেছে। এই অভিজ্ঞতাগুলো আমাদের শেখায়—যদি বিপ্লবের ভিত্তি কেবল আবেগ, হিংসা কিংবা সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ হয়, তবে সে বিপ্লব কখনো জনগণের স্থায়ী কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
বর্তমান যুগে যে তাজদীদ চেতনার তরঙ্গ উঠেছে, তা নিশ্চয়ই উপেক্ষণীয় নয়। কিন্তু আমাদের উচিত হবে একে সঠিক জায়গায় রাখার চেষ্টা করা। এর জন্য অবশ্যই দরকার হবে একটি বৃহত্তর ইসলামি দৃষ্টিকোণ।
আমি আগেও বলেছি, আজও বলছি—শরিয়তের হুকুম-আহকাম, ফিকহ বা ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার মতো বিষয়ে চূড়ান্ত কথা বলার যোগ্যতা আমার নেই, ছিলও না। বরং এসব বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেওয়া, শরঈ ফয়সালা নির্ধারণ করা, কোন কৌশল হালাল আর কোনটা হারাম—এই সমস্ত বিষয় আলেম-ওলামারাই বলতে পারেন, যারা দ্বীনের গভীরে পৌঁছেছেন, যাদের চিন্তা কুরআন-সুন্নাহ ও উম্মাহর ইজমা দ্বারা পরিশুদ্ধ। আমার কাজ হলো উপলব্ধি করা, দেখা, বোঝা এবং তা বিনয় ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তুলে ধরা।
বাংলাদেশের যে সামাজিক বিপ্লব এখন আলোচিত ও আলোড়িত হচ্ছে, তা কোনো প্রাচীন প্রতিষ্ঠানিক ধারার উত্তরাধিকার নয়। এই চিন্তার বিস্তার খুব বেশি দিনের নয়। বরং একটি তুলনামূলক স্বল্প সময়ের মধ্যে, এই সামাজিক বিপ্লব এমন একটি উচ্চাভিলাষী অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে ইসলামী শরিয়ার পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ইসলামী শাসনব্যস্থা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু সেই উচ্চারণ, সেই আশা, সেই প্রস্তাবনা দ্রুতই বাস্তবতার কঠোর দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছে—একটি নয়, বরং পরপর দুটি বড় ধাক্কা।
প্রথম যে ধাক্কাটি এসেছে, তা হলো কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা। অনেকেই এই যুক্তি দিয়ে থাকেন—বাংলাদেশ তো ভারত দ্বারা প্রায় চারদিক থেকে পরিবেষ্টিত; একটি নিরস্ত্র রাষ্ট্র, যার নিরাপত্তা কাঠামো বৈদেশিক নির্ভরতার ওপর গঠিত, যে রাষ্ট্রের গোয়েন্দা, বাণিজ্যিক ও সামরিক নীতির পেছনে রয়েছে বৃহৎ শক্তিগুলোর ছায়া—এইরকম একটি রাষ্ট্রে কীভাবে কোন সামরিক বিপ্লব বা সংঘাতের মাধ্যমে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা সম্ভব?
এই প্রশ্ন এক অর্থে যৌক্তিক—কিন্তু অপর অর্থে এটি ঈমানের দুর্বলতা, তাওয়াক্কুলহীনতা এবং ইতিহাস অস্বীকারের একটি চেহারা। কারণ, যদি আমরা শুধু চারপাশের শত্রু, শক্তির ভারসাম্য আর কূটনৈতিক ফাঁদ দেখেই হেরে যাই, তাহলে তো বদর, উহুদ, খন্দকের ইতিহাস আমাদের কোনো শিক্ষা দেয় না। তাহলে তো আল্লাহর সেই প্রতিশ্রুতি, যা সূরা আলে-ইমরানে এসেছে, কেবল পাঠ্য নয়—নিত্য সত্য হয়ে ওঠে না।
"যখন তাদের বলা হয়েছিল, মানুষ তো তোমাদের বিরুদ্ধে জমা হয়েছে, তাদের ভয় করো—তাদের ঈমান বরং বেড়ে গিয়েছিল।"
(সূরা আলে ইমরান, ১৭৩)
এই আয়াত যুদ্ধের দিনেও সত্য ছিল, আজকের দিনে আরও বেশি সত্য। কারণ আমাদের শত্রুরা সবসময়ই সংখ্যায় বেশি ছিল, তারা সবসময়ই অস্ত্রে উন্নত ছিল। ইসলামি বিজয় কখনোই সংখ্যার, প্রযুক্তির বা আন্তর্জাতিক মিত্রতার উপর নির্ভর করেনি। ইসলামি বিজয় এসেছে তাওয়াক্কুল, তাকওয়া এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর সঠিক অনুসরণের মাধ্যমে। কাজেই "চারপাশে ঘিরে আছে", "আন্তর্জাতিকভাবে অসম্ভব", এইসব কথাকে অজুহাত বানিয়ে ঈমানি স্পৃহা নিঃশেষ করা—এটি কখনো হকপন্থীর কাজ হতে পারে না।
দ্বিতীয় যে ধাক্কাটির কথা বলা যায়, তা আমরা বর্তমান ইরানের প্রেক্ষাপটে স্পষ্টভাবে দেখতে পারি। আমরা জানি, ইরানে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পালাবদল সংঘটিত হয়েছিল একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে—একটি বিপ্লব, যা খোমেইনীর নেতৃত্বে রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে ইসলামী নেতৃত্বকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। তৎকালীন শাহ শাসনের দুঃশাসন, পশ্চিমা দালালি এবং জনগণের চরম অসন্তোষের ফলে একটি সংগঠিত এবং দৃঢ় নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলন ইরানে পরিবর্তনের সূচনা করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপ্লব কি ইরানের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? বাস্তবতা বলছে, না। সেই বিপ্লবের পর থেকে আজ পর্যন্ত ইরান একাধিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত থেকেছে। পশ্চিমা অবরোধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, অভ্যন্তরীণ ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, এবং সর্বোপরি ইজরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত হুমকি ইরানকে কখনোই স্থিতিশীল অবস্থানে আসতে দেয়নি।
বর্তমানে যখন ইজরাইল ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি আগ্রাসন চালাচ্ছে, তখন অনেকে বলছেন এই আক্রমণের মূল লক্ষ্য শুধু পারমাণবিক কর্মসূচি নয়, বরং ইরানের অভ্যন্তরীণ শাসন কাঠামোকে টালমাটাল করে দেওয়া। অর্থাৎ, ইজরাইল এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের একটি কৌশলগত উদ্দেশ্য হলো—ইরানে একটি রাজনৈতিক পুনর্বিন্যাস ঘটানো, সেই ক্ষমতাকাঠামোকে এমনভাবে দুর্বল করে দেওয়া, যা বহিরাগত হস্তক্ষেপ বা দেশীয় বিদ্রোহের মাধ্যমে ধ্বংস করা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, একটি বিপ্লবের মাধ্যমে আসা শাসনব্যবস্থা কীভাবে টিকে থাকে? এবং কতটা শক্তিশালী ভিতর থেকে কিংবা বাহির থেকে চাপ সামাল দিতে পারে?
ইরানের অভিজ্ঞতা আমাদের বলে, বিপ্লব জনতার শক্তিকে উজ্জীবিত করতে পারে, একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাঠামোর সূচনা করতে পারে। কিন্তু বিপ্লবের পর সেই কাঠামোকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন হয় রাষ্ট্রের কঠিন ও বাস্তব কাঠামোগত ক্ষমতা—বিশেষত সামরিক ও নিরাপত্তাগত সক্ষমতা। শুধুমাত্র আদর্শ দিয়ে রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না, যদি সেই আদর্শকে রক্ষা করার মতো বাস্তব শক্তি না থাকে। বাহ্যিক চাপ, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অবরোধ কিংবা সাইবার হামলার মতো আধুনিক আক্রমণের মুখে আদর্শবাদী কাঠামো যদি বাস্তব প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, তবে তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। ইরান তা বুঝেছে, এবং সে কারণেই আজকে তারা একদিকে বিপ্লবী আইডিওলজিকে সামনে রেখে জনগণের চেতনা জাগ্রত রাখছে, অন্যদিকে সামরিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে নিজেদের বহিরাগত হুমকি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করছে।
এখানে আমরা আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ উদাহরণ টানতে পারি—সাম্প্রতিক বাংলাদেশের এক অভ্যুত্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যখন জনগণ নির্বাচনী স্বেচ্ছাচারিতা ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে, তখন সরকার—বিশেষত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন—নির্বিচারে গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে দমন করার পথ বেছে নেয়। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, সামান্য দিক পরিবর্তনে তা গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারত। জনতার ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং রাষ্ট্রের নির্যাতনের মাত্রা এমন ছিল যে সংঘর্ষ একটি পূর্ণমাত্রিক অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে রূপ নিতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
কারণ ছিল স্পষ্ট—যারা এই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে অনুঘটক হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা মূলত তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণে ব্যস্ত ছিলেন। বাস্তবতায়, তাদের মধ্যে কেউই সামরিক বা প্রতিরোধমূলক সক্ষমতা অর্জনের প্রস্তুতি নেননি। বিপ্লবের চিন্তাভাবনা কেবল বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার গণ্ডিতেই আবদ্ধ ছিল; তা মাটি স্পর্শ করেনি, অস্ত্র স্পর্শ করেনি। ফলে, এই অভ্যুত্থান একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবের রূপ নিতে পারেনি।
আর এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় রাষ্ট্রের সেই চিরচেনা যন্ত্র—আর্মি বা সামরিক বাহিনী। অভ্যুত্থানের অব্যবহিত পরেই সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং জনগণের রক্ত ও প্রতিবাদে অর্জিত সম্ভাবনাকে অভ্যুত্থানকারীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়। বিপ্লবের জোয়ার থেমে যায়, পরিবর্তনের সম্ভাবনা খর্ব হয়ে পড়ে, এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা আবারও ঘুরে আসে সেই পুরোনো কৌশলী শাসকের হাতে—যার হাতে আছে অস্ত্র, বাহিনী, সংগঠন এবং শাসনের বহুস্তর বিশিষ্ট অভিজ্ঞতা।
এ বিষয়ে কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই যে সমাজে একটি মৌলিক পরিবর্তন আনা সম্ভব হচ্ছে একটি সচেতনতা-নির্ভর সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে—একটি জাগরণ, যা মানুষের অন্তরে আদর্শ ও ইসলামী চিন্তাধারার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যে জনগণ প্রস্তুত হচ্ছে, তাদের আমরা ইসলামী শাসনব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করতে পারব। কেউ সামনে থেকে সৈনিক হিসেবে সংগ্রামে অংশ নেবে, কেউ আনসার হয়ে আমাদেরকে সহায়তা করবে, আবার কেউ নিজের সম্পদ ও সামর্থ্য দিয়ে এই পথকে শক্তিশালী করবে।
তবে এটাও অনস্বীকার্য যে, কেবল এই গণজাগরণ বা জনঅভ্যুত্থান এককভাবে কোনো শাসনব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে পারবে না। আর যদি তা কখনো করে ফেলেও, সে পরিবর্তন হবে ক্ষণস্থায়ী, দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়ানো। কারণ তত্ত্ব এবং বাস্তবতা—এই দুইয়ের মাঝে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না।
Comment