তালিবান ও আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব (২)
মুনশি আব্দুর রহমান
প্রথম অধ্যায় | প্রথম পরিচ্ছেদ (১)
প্রথম অধ্যায়
প্রথম অধ্যায় দুটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত। প্রথম পরিচ্ছেদে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআতে উজমা প্রদান সম্পর্কিত নয়টি দলিল পেশ করবো। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ এই বাইআত গ্রহণ করেছিলেন কিনা, সে সম্পর্কিত তিনটি দলিল পেশ করবো ইনশা আল্লাহ।
প্রথম পরিচ্ছেদঃ শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ কর্তৃক তালিবদের প্রথম আমীর মোল্লা মুহাম্মাদ উমর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআত প্রদান।
প্রথম দলিল: বাইআতে উজমা এবং শারঈ প্রমাণ
আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা শায়খ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ একবার একটি মজলিসে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তরের পর্বে এক প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন যে, তিনি তালিবান আমীর মোল্লা মুহাম্মদ উমর রহিমাহুল্লাহ-কে “বাইআতে উজমা” দিয়েছেন—যা ইসলামী পরিভাষায় খিলাফতের সর্বোচ্চ স্তরের আনুগত্য হিসেবে স্বীকৃত। (যাকে বাইআতে আকবর বা ইমামতের বাইআত বলা হয়) তিনি শুধু বাইআতের ঘোষণা দেননি; বরং সুন্নাহ ও ফিকহের দালিলিক ভিত্তি থেকে তা প্রতিষ্ঠিতও করেছেন।
এই প্রশ্নোত্তরের ধরণ দেখেই আমরা বুঝতে পারি যে, শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ যে মোল্লা উমর রহিমাহুল্লাহ-কে বাইআত দিয়েছিলেন, এটি ছিল দিবালোকের মত স্পষ্ট বিষয়; সবাই জানতেন। আমরা নিম্নে সেই প্রশ্নোত্তরটি উল্লেখ করছি-
প্রশ্নকারী বললেন:
আপনি উল্লেখ করেছেন যে আপনারা আমীরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের প্রতি আনুগত্যের বাইআত করেছেন। তো আপনার আনুগত্যের এই অঙ্গীকারটি কি বাইআতে উজমা নাকি এটি বাইআতে উজমার প্রস্তুতি স্বরূপ একটি অন্তর্বর্তীকালীন অঙ্গীকার?
আর একজন খলিফার জন্য আবশ্যকীয় কি কি শর্ত পূর্ণ করতে হয়?
আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
উত্তরে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আমীরুল মুমিনিনের প্রতি আমাদের আনুগত্যের অঙ্গীকার হল 'বাইআতে উজমা'। আমরা তাঁকে ওই বাইআতই দিয়েছি যে বাইআতের নির্দেশ কুরআন-সুন্নাহর নুসুসগুলোতে এসেছে।
সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে এসেছে-
تَلزَمُ جَماعةَ المُسلِمينَ وإمامَهم
অর্থাৎ, তুমি মুসলমানদের জামাআত এবং তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধরে থাকবে'
সহীহ মুসলিমের হাদীসে এসেছে,
وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيْتَةً جَاهِلِيَّةً
“যে ব্যক্তি এমতাবস্থায় মারা গেল যে, তার ঘাড়ে আনুগত্যের অঙ্গীকার নেই, সে যেনো জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করলো”।
আর এটুকুই সাহাবীদের জন্য যথেষ্ট ছিল, কেননা তাদের অবস্থা আমাদের আজকের অবস্থার মতো ছিলো না। ফলে তাদের জন্য 'জাহিলিয়াতের মৃত্যুর' হুমকিই যথেষ্ট ছিল।
কারণ, তারা ইসলাম পূর্ব যুগে জাহিলিয়াতের সেই নিন্দনীয় যুগে বাস করেছেন, যেই জীবনে তারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার পথ থেকে অনেক দূরে ছিলেন। ফলে তাদের মধ্যে কেউ যখন জাহিলিয়াতের মৃত্যুর কথা শুনতেন, তখন তাঁরা এমনভাবে পলায়ন করতেন, যেভাবে মানুষ সিংহ থেকে পলায়ন করতো। তাই বর্তমানেও প্রত্যেক মুসলমানকে এ বিষয়ের উপর মন স্থির করতে হবে যে, সে আমীরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমরের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছে। আর এটিই হচ্ছে ‘বাইআতে উজমা’।
অপরদিকে কিছু ভাই বিভ্রান্তিতে আছেন ইমাম হওয়ার শর্ত সম্পর্কিত মাসআলা নিয়ে। এ বিষয়ে শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহিমাহুল্লাহ বলেন: সালাফগণ সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছেন যে, কোনো ব্যক্তি যখন দেশসমূহ থেকে কোন একটি দেশের উপর বিজয় লাভ করেন, তখন আর তার ব্যাপারে অন্যান্য শর্ত সম্পর্কে কথা বলা যাবে না। কেননা তিনি এমন একজন মুসলিম (আমীর), যিনি বিজয়ী হয়েছেন, তামকিন অর্জন করেছেন।
আরো যে বিষয়টা নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে সেটা হল আহলুল ইলমগণ কি মোল্লা মুহাম্মাদ উমরের ইমারতের স্বীকৃতি দিয়েছেন বা তাঁকে বাইআত দেওয়ার উপর একত্রিত হয়েছেন? উত্তর হল- তিনি এ শর্তের ধাপও উত্তমভাবে অতিক্রম করেছেন। আহলুল-ইলম (আলিমগণ) তাঁর আনুগত্য করার এবং তাঁকে বাইআত দেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
আর আমীরুল মুমিনিন ডাকাত, যুদ্ধমাফিয়া এবং দস্যুদের পরাজিত করে এই বিষয়টি অর্জন করেছেন এবং তিনি রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব লাভ করেছেন। তাঁর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছেন ১৫ শতাধিক আলিম। সুতরাং তাঁর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করা বাধ্যতামূলক।
কিছু লোকের ধারণা, তিনি আমীর হওয়ার শর্তের ক্ষেত্রে কুরাইশী নন। অথচ এই শর্তটি হচ্ছে স্বাভাবিক হালাতে, যখন কুরাইশী যোগ্য আমীর পাওয়া সম্ভব তখন প্রযোজ্য। কিন্তু জরুরত, দুর্বলতা, এবং অপারগতার অবস্থায় কিংবা অকুরাইশী আমীর তাগাল্লুব তথা বিজয় ও তামকিন অর্জন করে ফেলার সূরতে এই শর্ত প্রযোজ্য নয়। আর এ কারণে আনুগত্যের অঙ্গীকার প্রত্যাহার করাও যাবে না যে, তিনি কুরাইশী নন অথবা অমুক যোগ্যতার অধিকারী নন...। বরং এক্ষেত্রে মুজতাহিদ আলিমগণ তাঁর দূর্বল দিকগুলোর অভাব পূরণ করে থাকেন। ওয়াল্লাহু আ'লাম” [1]
দ্বিতীয় দলিল: শায়খ উসামার রাষ্ট্রভিত্তিক অবস্থান
আরেক মজলিসে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমরা একটি শরীয়ত-ভিত্তিক রাষ্ট্রে কাজ করছি, যার আমীর রয়েছেন। যতদিন তিনি শরীয়াহ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন, আমরা তাঁর প্রতি আনুগত্য বজায় রাখবো।” নিম্নে আমরা শায়খের সংশ্লিষ্ট আলাপটুকু তুলে দিচ্ছি-
“আবার আপনাদের প্রশ্নে ফিরে আসছি। আমরা এখানে একটি রাষ্ট্র নিয়ে কাজ করছি। এই রাষ্ট্রের আমীর আছেন। যতক্ষণ তিনি শরীয়ত মাফিক রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, ততক্ষণ তাঁর আনুগত্য করা আমরা আবশ্যক মনে করি। আমরা এই রাষ্ট্রের জন্য কাজ করছি এবং এর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। অথবা এখানে সতর্ক করে দিতে চাই যে, আমেরিকার ইচ্ছা হলো, যেকোনো অজুহাতে আফগানিস্তানে আক্রমণ করা। কিন্তু উম্মাহকে বিভক্ত করার কৌশলস্বরূপ উসামাকে হস্তান্তরের বিষয়টি লাইম লাইটে নিয়ে এসেছে।” [2]
তৃতীয় দলিল: শায়খ যাওয়াহিরীর সাক্ষ্য
তালিবানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম আমীরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর রহিমাহুল্লাহ-কে শায়খ উসামা রহিমাহুল্লাহ বাইআত দিয়েছিলেন। এই ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়ে শায়খ যাওয়াহিরী বলেন-
“মুহাজির এবং মুজাহিদগণ এর মাঝে সত্যবাদিতা এবং ইখলাস অনুভব করতে পেরেছিলেন, তাই তারা ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ’র প্রতি আনুগত্যের বাইআত প্রদান করেছিলেন যেমনটা করেছিলেন, মুজাদ্দিদ, ইমাম উসামা রহিমাহুল্লাহ, এবং তিনি মুসলিমদেরকে আহবান করেছিলেন এর প্রতি আনুগত্যের বাইআত প্রদান করতে। আর তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে, তাঁর আনুগত্যের বাইআত ছিল বাইআতুল উযমা [বৃহত্তর বাইআত, ক্ষুদ্রতর বাইআতের বিপরীত], এবং তারাও (আমীরুল মুমিনিনের বাইআতের অধীনে আছেন) যারা উসামা রহিমাহুল্লাহ’র প্রতি আনুগত্যের বাইআত প্রদান করেছিলেন এবং এই আনুগত্যের ভিত্তিতে ক্বাইদাতুল জিহাদে দাখিল হয়েছিলেন।” [3]
*****
চলবে...ইনশা আল্লাহ
সংশ্লিষ্ট টীকা ও লিংক-
[1] মাজমু’ রাসায়িল ওয়া তাওজিহাত, বুশরয়াত, পৃষ্ঠা-৪০৭ নুখবাতুল ই’লাম আলজিহাদি, ২০১৫ ইংরেজি, ১৪৩৬ হিজরি
লিংক- https://archive.org/details/al_nokbah9_o_20151212
[2] আমিরুল ওয়াফা, সিলসিলাতু 'ইহমিল সিলাহাশ শাহীদ', আলহালাকাতুল উলা, ভিডিও সংস্করণ- আস সাহাব মিডিয়া, শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি, মাকতাবা বাইতুল মাকদিস কর্তৃক প্রকাশিত লিখিত মুদ্রণ- পৃষ্ঠা-৩২, ২০১৯ ইং- ১৪৪১ হিজরি
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/20211006_20211006_2357
মাকতাবা বাইতুল মাকদিস লিংক- https://archive.org/details/Ihmilsilahshahid
আলবুশরয়াত লিংক- https://archive.org/details/ihmil-silah
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/Pxp8D
[3] মাসিরাতুল ওয়াফা, আস সাহাব মিডিয়া, শনিবার, ১৬ শাওয়াল ১৪৩৬ হিজরী, ১ আগস্ট ২০১৫ ইং
ভিডিও লিংক- https://archive.org/details/longwar11_gmail
টেক্সট লিংক- https://archive.ph/db8Q8
বাংলা অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/m1iPm
ইংরেজি অনুবাদ লিংক- https://archive.ph/uSyf2
Comment