Announcement

Collapse
No announcement yet.

গ্লোবাল মানহাজ তথা আল-কায়েদার একমাত্র শত্রু কি 'আমেরিকা'???

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গ্লোবাল মানহাজ তথা আল-কায়েদার একমাত্র শত্রু কি 'আমেরিকা'???

    আল-কায়েদার জিহাদ ও ক্বিতালের মূলে রয়েছে দুটি প্রধান লক্ষ্য: ফিতনা নিরসন এবং দ্বীনের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা। ফিতনা নিরসন বলতে বোঝানো হচ্ছে সেই বৈশ্বিক আগ্রাসনের প্রতিরোধ, যা ইসলাম, মুসলমান এবং শরিয়াহভিত্তিক জীবনব্যবস্থার ওপর পরিচালিত হচ্ছে। এই আগ্রাসন একক কোনো পক্ষের নয়—এর নেতৃত্বে রয়েছে পশ্চিমা ক্রুসেডার শক্তিগুলো, ইহুদি জিওনিস্ট চক্র, হিন্দু মূর্তিপূজক সম্প্রদায়, ধর্মনিরপেক্ষ ও নাস্তিক চিন্তাধারায় পরিচালিত মুসলিম নামধারী শ্রেণি, এমনকি কিছু তথাকথিত মুসলিম শাসক যারা আসলে তাগূত ও কুফরি ব্যবস্থার দোসর হিসেবে কাজ করছে। ইসলামের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই বহুপাক্ষিক আক্রমণ প্রতিহত করাই ফিতনা দূরীকরণের প্রথম ধাপ।

    এর পরবর্তী ধাপে রয়েছে মুসলিম ভূমিগুলোর পুনরুদ্ধার—যেসব অঞ্চল বর্তমানে কাফের, মুরতাদ বা তাগূত শাসকদের দখলে রয়েছে। আল-কায়েদার লক্ষ্য হলো এসব ভূখণ্ডকে মুক্ত করে সেখানে পূর্ণাঙ্গ শরিয়াহ্‌র ভিত্তিতে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা, যেখানে আইন, ন্যায় ও কর্তৃত্বের একমাত্র উৎস হবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। এই প্রচেষ্টা সীমিত কোনো ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে আবদ্ধ নয়; বরং উদ্দেশ্য হলো সারা দুনিয়াকে ইসলামী হুকুম ও বিচারব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসা—যতই তা কাফের, মুশরিক বা মুনাফিকদের জন্য অগ্রহণযোগ্য ও অপছন্দনীয় হোক না কেন।

    এই দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য যদি আপনার কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে প্রতিভাত হয়, তাহলে আমাদের কথাবার্তা সামনে এগোনো যেতে পারে। অন্যথায়, এ আলোচনার কোনো বাস্তবিক প্রয়োজন বা ফলপ্রসূতা নেই।

    লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই একটি পূর্ণাঙ্গ দৃশ্যপট মাথায় রাখতে হবে। ৯/১১ বা টুইন টাওয়ার হামলার আগেই এবং পরেও শাইখুল মুজাহিদীন ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ যে বিষয়টি বারবার জোর দিয়ে তুলে ধরতেন, তা ছিল একটি মৌলিক নীতিকথা: ইসলামের ভূমি—বিশেষত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাক্কা ও মদীনার পবিত্র ভূমি—থেকে পশ্চিমাদের সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপস্থিতিকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করা। এটি কেবল প্রতিরোধের একটি কৌশল ছিল না, বরং ইসলামী আকীদা ও উম্মাহর মর্যাদা রক্ষার একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য হিসেবে তিনি এ বিষয়টিকে দেখতেন। একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিন এবং বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইহুদি দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করার বিষয়টিকে জিহাদের কেন্দ্রীয় ও স্থায়ী একটি লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। তাঁর ভাষণে, লেখায় এবং ঘোষণায় বারবার এই মূলনীতি বারবার ফিরে ফিরে এসেছে।

    একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে—সম্ভবত শাইখ ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহর ছেলের বিয়ের সময়—তাঁকে এক সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন: “যদি পশ্চিমারা মুসলিম ভূমিতে তাদের আগ্রাসন বন্ধ করে দেয়, তাহলে কি আমাদের জিহাদ চলবে?” শাইখ রাহিমাহুল্লাহ এই প্রশ্নের উত্তরে যে কথাটি বলেন, তা ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু গভীরতর অর্থে পরিপূর্ণ: “আমাদের কিতাল (লড়াই) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’—এর জন্য।” যারা শাইখ ওসামা রাহিমাহুল্লাহকে উম্মাহর এক মুজাদ্দিদ হিসেবে সম্মান করেন, তাদের কর্তব্য হলো তাঁর এই বক্তব্যসহ অন্যান্য নসীহত ও বক্তব্য নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা, বারবার তাদাব্বুর করা এবং তা থেকে পথনির্দেশ খোঁজা।

    শায়েখ ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহর কথার সারমর্ম হলো—যদিও বর্তমানে আমাদের জিহাদের তাৎক্ষণিক লক্ষ্য হচ্ছে পশ্চিমা ক্রুসেডার শক্তি ও বিশ্বজুড়ে দমন-নিপীড়ন চালানো ইহুদি আগ্রাসন প্রতিহত করা, তবে আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য এই সীমিত কৌশলের মধ্যে আবদ্ধ নয়।

    আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এর ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শাসনব্যবস্থা কায়েম করা—যেখানে শুধু শিরক, কুফর ও তাগূতের প্রতিকৃতি ধ্বংসই নয়, বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে দুনিয়ার প্রতিটি কোণে। তবে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো সেই বৈশ্বিক কাফের জোট, যার নেতৃত্বে রয়েছে আমেরিকা—একটি রাষ্ট্র যেটি কেবল তার নিজস্ব স্বার্থে নয়, বরং একটি দাজ্জালি বিশ্বব্যবস্থার রক্ষক ও প্রবক্তা হিসেবে কাজ করে। এই আমেরিকান নেতৃত্বাধীন ক্রুসেডার-ইহুদি জোটকে যদি যথাযথভাবে প্রতিহত না করা যায়, তাহলে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"-র পূর্ণ প্রতিষ্ঠা কেবল এক চিন্তাগত আকাঙ্ক্ষা হিসেবেই রয়ে যাবে, বাস্তবতার ময়দানে তা সফল হবে না।

    লক্ষ্য নির্ধারণ ও কৌশল প্রণয়নের ক্ষেত্রে যদি আমরা সমগ্র চিত্র বা পূর্ণ দাওয়াহ ম্যানিফেস্টো সামনে না রাখি, তাহলে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত উপমহাদেশে একাধিক সমস্যা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় বা হতে পারে।

    প্রথমত, অনেকেই শায়খ ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ এবং কায়দাতুল জিহাদের নেতৃত্বে পরিচালিত জিহাদি আন্দোলনের নির্দিষ্ট কিতাবাদি এবং বক্তব্যসমূহের আংশিক অনুধাবন থেকে একরকম অসম্পূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তাদের মধ্যে একটি বিস্তৃত ভুল বোঝাবুঝি হলো এই যে—আমেরিকা যেহেতু ‘সাপের মাথা’ বা মূল নেতৃত্বদাতা, এবং যেহেতু মুজাহিদিনগণ আমেরিকাকে কাছের ও দূরের উভয় প্রকার প্রধান শত্রু হিসেবে গণ্য করেন, সেহেতু অন্যান্য সহযোগী শক্তি—যেমন মুসলিম দেশগুলোর তাগূত সরকার, তাদের বাহিনী কিংবা আঞ্চলিক কাফের রাষ্ট্রসমূহ—এসবকে আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে উপেক্ষা করা উচিত, বা কম গুরুত্ব প্রদান করা উচিত।

    আরেকটি জটিল অথচ বাস্তব সংকট হলো—অনেকেই মনে করে থাকেন, যখন আমরা কৌশলগতভাবে ‘আমেরিকা’কে প্রধান শত্রু হিসেবে অগ্রাধিকার দিই এবং তাকে ‘সাপের মাথা’ হিসেবে চিহ্নিত করি, তখন বুঝি অন্যান্য শত্রুর গুরুত্ব খর্ব করা হচ্ছে বা তাদেরকে শত্রু হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে না। এই ধারণা থেকে কেউ কেউ এটাও বলতে শোনা যায়—জিহাদের আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বা দুর্বলতা বসত আঞ্চলিক তাগূতদের, হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলোকে কিংবা শিয়া-নুসাইরী প্রভাবিত সরকারগুলোকে যথার্থ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের ভাষায়, এটা যেন একপ্রকার “Selective Jihad”—যেখানে আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে কেন্দ্র করে অন্য সব দিক আড়ালে পড়ে যাচ্ছে।

    শায়খ ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ ও কায়দাতুল জিহাদের ঘোষিত মানহাজ কি সত্যিই তা? যদি তাদের নীতিমালা কেবলমাত্র আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোকেই প্রধান শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে—টিটিপি কেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে? আল-শাবাব কেন সোমালিয়ার সরকারি বাহিনী ও প্রত্যন্ত গ্রামের দখলদারদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে? AQAP কেন হুতিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে? AQIM কেন স্থানীয় সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে?

    যদি আল-কায়েদার মানহাজ শুধুমাত্র আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তিগুলোকে লক্ষ্য করেই সীমাবদ্ধ থেকে থাকে, তাহলে গত কয়েক বছরে আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোর বিরুদ্ধে আল-কায়েদার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য হামলা কেন দেখা যায় না? সবচেয়ে স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ হলো—মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে পশ্চিমা স্থাপনা ও সামরিক উপস্থিতির তুলনায় স্থানীয় বাহিনী ও সরকারের বিরুদ্ধে হামলার সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন দেশের এসব হামলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে বলতে জয় যে, আল-কায়েদার কাজ ও কথার মধ্যে বড় ধরনের অসঙ্গতি বিদ্যমান।

    ভাসাভাসা বিশ্লেষণ, খণ্ডিত তথ্য এবং বাস্তবিক অভিজ্ঞতা না থাকা অবস্থায় অনেকেই মনে করে বসে - আল-কায়েদার চূড়ান্ত ও একমাত্র লক্ষ্য ছিল আমেরিকা, এবং সেখান থেকে বিচ্যুত হলেই বুঝি মানহাজে সংকট তৈরি হয়েছে। অথচ বাস্তবতা কখনোই এমন ছিল না—আর আজো তা নয়।

    আমি স্পষ্টভাবে পুনরায় বলছি: আল-কায়েদার চূড়ান্ত লক্ষ্য কখনোই আমেরিকা ছিল না। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জামা'আতের ঘোষিত ও অনুসৃত মানহাজ একটি মৌলিক, ঈমানভিত্তিক আকীদার ওপর দাঁড়িয়ে আছে—আল্লাহর জমিনে কেবল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দ্বীন ও শাসন কায়েম করা।

    শাইখ ওসামা রাহিমাহুল্লাহ ও ক্বায়দাতুল জিহাদের অন্যান্য নেতৃত্ব কখনোই আঞ্চলিক তাগূতদের দায়িত্বহীনভাবে উপেক্ষা করেননি। বরং তাদের লেখনীতে দেখা যায়, এসব সরকারকে "মুসলিম নামধারী মুরতাদ শক্তি", "ক্রুসেডারদের কুকুর" বা "দালাল পাহারাদার" হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। সুতরাং যারা এই কৌশলগত স্তরবিন্যাসকে জিহাদের দুর্বলতা বা সংকীর্ণতা বলে মনে করেন, তারা হয় পুরো সাহিত্যের প্রেক্ষাপট বোঝেননি, নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।

    উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই বিভ্রান্তি শুধু একটা ব্যক্তিগত ভুলফহমি নয়, বরং এর মাধ্যমে ময়দানে কর্মক্ষমতা, ফোকাস এবং সন্ত্রাসবাদ ও প্রতিরোধের পার্থক্য—সবকিছুকে গুলিয়ে ফেলা হয়। একারণে, যারা সত্যিই জিহাদকে ঈমানি ও আদর্শিক কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করেন, তাদের উচিত এই বিভ্রান্তিকে দূর করে পূর্ণ চিত্রের আলোকে প্রতিটি শত্রুকে তার যথাযথ অবস্থানে স্থাপন করা—কখন, কাকে, কতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা বুঝে কৌশল নির্ধারণ করা।

    শাইখ ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ সহ আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব—হোক তিনি শাইখ আয়মান আল-জাওয়াহরি, আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী, শাইখ আনওয়ার আল-আউলাকী, কিংবা অন্যান্য শায়খ—তাঁদের সকলের কিতাব, বয়ান ও বক্তব্যের মাঝে একটি বিষয় অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বারবার উচ্চারিত হয়েছে: আমেরিকা বা পশ্চিমা জোট কেবল একটি প্রধান প্রতিবন্ধক—আল-কায়েদার লক্ষ্য কখনোই শুধুমাত্র তাদের দমনে সীমিত নয়। বরং চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো—আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা, খেলাফাহ কায়েম করা, এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রকৃত মর্মবাণী বাস্তব সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।

    এই কথাগুলো বারবার, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন কিতাবে, এবং ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে শাইখরা বলেছেন। কেউ যদি এই বয়ানগুলোকে পুরোপুরি, প্রসঙ্গসহ, ধারাবাহিকভাবে অধ্যয়ন না করেন এবং কেবল কিছু খণ্ডিত উদ্ধৃতির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত টানেন—তাহলে তা একপ্রকার ইলম ও ইনসাফের সাথে অন্যায়। এমন বিক্ষিপ্ত ও খণ্ডিত বোঝাপড়া একদিকে যেমন সত্য বিকৃত করে, অন্যদিকে তেমনি মুজাহিদিনদের ভেতরে সন্দেহ, অবিশ্বাস এবং ফেতনা তৈরি করে, যা শত্রুর অন্যতম বড় সাফল্য।

    এই কারণে যারা জিহাদের মানহাজ, মুজাহিদদের সংগ্রাম, এবং আল-কায়েদার তাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে কথা বলবেন, তাদের উচিত প্রথমে সেই কিতাবাদী বয়ান, মূল উৎস, এবং শাইখদের ব্যক্তিগত ও যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি গভীরভাবে অধ্যয়ন করা। এই ইলমী আমানাহ রক্ষা না করলে, ব্যক্তি হয় নিজের অজান্তেই বিভ্রান্তিতে পড়েন, নয়তো জেনে-শুনে ফেতনার সূত্রপাত করেন।

    তাহলে আমরা আবার সেই কেন্দ্রীয় প্রশ্নে ফিরে আসি—আল-কায়েদার চূড়ান্ত লক্ষ্য কি আমেরিকা? যদি তাই হয়, তাহলে যুক্তি বলে, যতক্ষণ না আমেরিকা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়, তাকে মূল টার্গেট করে রাখা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা যদি এই হয় যে, আসল লক্ষ্য মুসলিম ভূমিগুলোকে পুনরুদ্ধার করে তাতে ইসলামী শাসন কায়েম করা, তাহলে আমেরিকা বা যে কোনো অন্য কাফির শক্তি, সে যদি এই পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়—তখন সে শত্রু, এবং যদি সে গর্তে সেঁধিয়ে যায়—তাহলে জিহাদ আবার নিজের মূল উদ্দেশ্যের দিকে ফিরে যায়।

    আজ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি—আল্লাহর তাওফিক ও মুজাহিদদের ত্যাগের কারণে সেই "সাপ", অর্থাৎ আমেরিকা ও তার পশ্চিমা জোট, অনেকটাই গর্তে ঢুকে পড়েছে।

    °আফগানিস্তানে তালিবান বিজয় অর্জন করেছে,
    °পাকিস্তানে তেহরিক-ই-তালিবানের প্রভাব বেড়েছে,
    °মালি ও উপসাহারা অঞ্চলের বিশাল অংশে মুজাহিদদের তামকিন গঠিত হয়েছে,
    °সোমালিয়ায় আল-শাবাব এখন শহরের বাইরে নয়, বরং প্রশাসনিক কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে।


    এইসব বিজয়ের পরেও আন্তর্জাতিক মিডিয়া, মানবাধিকার সংস্থা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন নিঃশব্দ, নির্লিপ্ত, এমনকি নোবেল শান্তি পুরস্কারের নামে ঠোঁটে হাসি লাগিয়ে বসে থাকে—তখনই বোঝা যায়, সাপ তার গর্তে ফিরে গেছে।

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা শায়খ ওসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করেছেন—আলহামদুলিল্লাহ। তাঁর রেখে যাওয়া মানহাজ ও রণকৌশল এখন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে, এবং শত্রুরা তা স্বীকার করুক বা না করুক, এর ফলাফল তারা ভোগ করছেই। আজ আমেরিকা, যে শক্তিকে একসময় অপ্রতিরোধ্য মনে করা হতো, সে-ই এখন তার ইতিহাসের সবচেয়ে গভীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দুর্বলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা শক্তি এখন তাদের অস্ত্র ও অভিজ্ঞান ছেড়ে প্রক্সি ওয়ারফেয়ারে অবতীর্ণ হয়েছে—আর তাতেও তারা সফল নয়।

    এই প্রেক্ষাপটে শায়েখগণ তাদের কৌশল ছড়িয়ে দিয়েছেন—বিভিন্ন অঞ্চলে, বিভিন্ন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে। এর বাস্তব রূপ হলো, আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট (AQIS)-এর প্রতিষ্ঠা। এখন প্রশ্ন হলো—ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল—এসব অঞ্চলে তো কোনো মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নেই, কোনো আমেরিকান সেনাও নেই। তাহলে কেন এই অঞ্চলে এক সুসংগঠিত শাখার গঠন? এর একটাই উত্তর: শায়েখ রাহিমাহুল্লাহ এবং জামাআতের নেতৃত্ব এখনো উপমহাদেশের মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। এখানকার সমস্যা, অপমান, এবং তাগূতী শাসনের অবসানকে তাঁরা বৈশ্বিক উম্মাহর পুনর্জাগরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন।

    বিশেষত, পাকিস্তান—এই ভূমিকে শায়খরা সর্বদা অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছেন। কারণ এখানকার মুজাহিদীন এমন আত্মত্যাগ করেছেন, যা ইতিহাসের পৃষ্ঠা রঞ্জিত করে দিয়েছে। তাদের ত্যাগ, বিজয় এবং সাহসিকতা আমাদের হৃদয়কে প্রশান্ত করেছে। আমাদের অন্তরগুলো ঠান্ডা হয়েছে—আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয়ের আগমনী বার্তা দেখে।

    কিন্তু কেবল পাকিস্তান নয়—বাংলাদেশ ও হিন্দুস্তানের মুসলমানদের অবস্থান ও সম্ভাবনা নিয়েও শায়খদের বক্তব্যে বারবার সরাসরি উল্লেখ রয়েছে। শায়খ ওসামা, শায়খ আয়মান, শায়খ আনোয়ার, শায়খ আসিম উমার, শায়খ উসামা মাহমুদ, শায়খ মাওলানা ফজলুল্লাহ, শায়খ নুর ওয়ালি মাহসুদ —তাঁদের সকলের কথায় এই উপমহাদেশের মুসলিমদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী আহ্বান ও প্রস্তুতির নির্দেশনা স্পষ্টভাবে রয়েছে। তারা আমাদের কখনো তাড়াহুড়া করতে বলেননি। তারা বলেননি: "আজকেই যুদ্ধ করো।" বরং বারবার বলেছেন: "প্রস্তুতি নাও, তাকওয়া অর্জন করো, ইখলাস রক্ষা করো, ও তোমাদের নিজেদের তৈরিতে মনোনিবেশ করো।"

    এখন কেউ যদি আমাদের এই প্রস্তুতিকে “নির্বিকারতা”, “অপরিপক্বতা” কিংবা “কোনো মানহাজ না থাকা” বলে ব্যাখ্যা করে—তাহলে তার জ্ঞানের স্বল্পতাই ফুটে ওঠে। বাস্তবতা হচ্ছে, যারা ইলম, অভিজ্ঞতা এবং তাওয়াক্কুলের দৃষ্টিতে তাকায় না—তারা দাওয়াহ ও তাদরিবের এই সময়কে নীরবতা মনে করে।​
    فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ
Working...
X